Monday, July 5, 2021

My Friends

1996
নিয়ত (النية)

‘নিয়ত’ অর্থ ‘সংকল্প’। ছালাতের শুরুতে নিয়ত করা অপরিহার্য। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,إنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَاتِ وَ إِنَّمَا لِكُلٍّ امْرِءٍ مَّا نَوَى... ‘সকল কাজ নিয়তের উপরে নির্ভরশীল এবং প্রত্যেক ব্যক্তি তাই-ই পাবে, যার জন্য সে নিয়ত করবে’....। [2] অতএব ছালাতের জন্য ওযূ করে পবিত্র হয়ে পরিচ্ছন্ন পোষাক ও দেহ-মন নিয়ে কা‘বা গৃহ পানে মুখ ফিরিয়ে মনে মনে ছালাতের দৃঢ় সংকল্প করে স্বীয় প্রভুর সন্তুষ্টি কামনায় তাঁর সম্মুখে বিনম্রচিত্তে দাঁড়িয়ে যেতে হবে। মুখে নিয়ত পাঠের প্রচলিত রেওয়াজটি দ্বীনের মধ্যে একটি নতুন সৃষ্টি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছালাতে এর কোন স্থান নেই। অনেকে ছালাত শুরুর আগেই জায়নামাযের দো‘আ মনে করে ‘ইন্নী ওয়াজ্জাহ্তু...’ পড়েন। এই রেওয়াজটি সুন্নাতের বরখেলাফ। মূলতঃ জায়নামাযের দো‘আ বলে কিছু নেই।

[2] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ; ছহীহ বুখারী ও মিশকাত -এর ১ম হাদীছ।
তাকবীরে তাহরীমা ও বুকে হাত বাঁধা 
(التكبيرة التحريمة ووضع اليد اليمنى على ذراعه اليسرى على الصدر)

দুই হাতের আংগুল সমূহ ক্বিবলামুখী খাড়াভাবে কাঁধ অথবা কান পর্যন্ত উঠিয়ে দুনিয়াবী সবকিছুকে হারাম করে দিয়ে স্বীয় প্রভুর মহত্ত্ব ঘোষণা করে বলবে ‘আল্লা-হু আকবার’ (আল্লাহ সবার চেয়ে বড়)। অতঃপর বাম হাতের উপরে ডান হাত বুকের উপরে বেঁধে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সম্মুখে নিবেদিত চিত্তে সিজদার স্থান বরাবর দৃষ্টি রেখে[3] দন্ডায়মান হবে। আল্লাহ বলেন, وَقُوْمُوْا ِللهِ قَانِتِيْنَ- ‘আর তোমরা আল্লাহর জন্য নিবিষ্টচিত্তে দাঁড়িয়ে যাও’ (বাক্বারাহ ২/২৩৮)। হাত বাঁধার সময় দুই কানের লতি বরাবর দুই হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলী উঠানোর হাদীছ যঈফ। [4] ছালাতে দাঁড়ানোর সময় তাকবীরে তাহরীমার পর বুকে হাত বাঁধা সম্পর্কে প্রসিদ্ধ হাদীছগুলির কয়েকটি নিম্নরূপ:

১. সাহল বিন সা‘দ (রাঃ) বলেন,

كَانَ النَّاسُ يُؤْمَرُوْنَ أَنْ يَّضَعَ الرَّجُلُ يَدَهُ الْيُمْنَى عَلَى ذِرَاعِهِ الْيُسْرَى فِى الصَّلَوةِ، قَالَ أبو حَازِمٍ : لاَ أَعْلَمُ إِلاَّ يَنْمِىْ ذَالِكَ إِلَى النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ، رواه البخارىُّ-

‘লোকদেরকে নির্দেশ দেওয়া হ’ত যেন তারা ছালাতের সময় ডান হাত বাম হাতের উপরে রাখে। আবু হাযেম বলেন যে, ছাহাবী সাহল বিন সা‘দ এই আদেশটিকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর দিকে সম্পর্কিত করতেন বলেই আমি জানি’।[5]

‘যেরা‘ (ذِرَاعٌ) অর্থ কনুই থেকে মধ্যমা আঙ্গুলের অগ্রভাগ পর্যন্ত দীর্ঘ হাত’ (আল-মু‘জামুল ওয়াসীত্ব)। একথা স্পষ্ট যে, বাম হাতের উপরে ডান হাত রাখলে তা বুকের উপরেই চলে আসে। নিম্নোক্ত রেওয়ায়াত সমূহে পরিষ্কারভাবে যার ব্যাখ্যা এসেছে। যেমন-

২. ছাহাবী হুলব আত-ত্বাঈ (রাঃ) বলেন,

رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَضَعُ الْيُمْنَى عَلَى الْيُسْرَى عَلَى صَدْرِهِ فَوْقَ الْمَفْصِلِ، رواه أحمدُ- ‘আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বাম হাতের জোড়ের (কব্জির) উপরে ডান হাতের জোড় বুকের উপরে রাখতে দেখেছি’।[6]

৩. ওয়ায়েল বিন হুজ্র (রাঃ) বলেন,

صَلَّيْتُ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَوَضَعَ يَدَهُ الْيُمْنَى عَلَى يَدِهِ الْيُسْرَى عَلَى صَدْرِهِ، رواه ابْنُ خُزَيْمَةَ وَصَحَّحَهُ ‘আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে ছালাত আদায় করলাম। এমতাবস্থায় দেখলাম যে, তিনি বাম হাতের উপরে ডান হাত স্বীয় বুকের উপরে রাখলেন’। [7]

উপরোক্ত ছহীহ হাদীছ সমূহে ‘বুকের উপরে হাত বাঁধা’ সম্পর্কে স্পষ্ট বক্তব্য এসেছে। ইমাম শাওকানী বলেন, وَلاَ شَيْءَ فِي الْبَابِ أَصَحُّ مِنْ حَدِيْثِ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ الْمَذْكُوْرِ فِيْ صَحِيْحِ ابْنِ خُزَيْمَةَ- ‘হাত বাঁধা বিষয়ে ছহীহ ইবনু খুযায়মাতে ওয়ায়েল বিন হুজর (রাঃ) বর্ণিত হাদীছের চাইতে বিশুদ্ধতম কোন হাদীছ আর নেই’।[8] উল্লেখ্য যে, বাম হাতের উপরে ডান হাত রাখা সম্পর্কে ১৮ জন ছাহাবী ও ২ জন তাবেঈ থেকে মোট ২০টি হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। ইবনু আব্দিল বার্র বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে এর বিপরীত কিছুই বর্ণিত হয়নি এবং এটাই জমহূর ছাহাবা ও তাবেঈনের অনুসৃত পদ্ধতি।[9]

এক্ষণে ‘নাভির নীচে হাত বাঁধা’ সম্পর্কে আহমাদ, আবুদাঊদ, মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ প্রভৃতি হাদীছ গ্রন্থে চারজন ছাহাবী ও দু’জন তাবেঈ থেকে যে চারটি হাদীছ ও দু’টি ‘আছার’ বর্ণিত হয়েছে, সেগুলি সম্পর্কে মুহাদ্দেছীনের বক্তব্য হ’ল-لاَ يَصْلُحُ وَاحِدٌ مِنْهَا لِلْاِسْتِدْلاَلِ ‘(যঈফ হওয়ার কারণে) এগুলির একটিও দলীল হিসাবে গ্রহণযোগ্য নয়’।[10]

প্রকাশ থাকে যে, ছালাতে দাঁড়িয়ে মেয়েদের জন্য বুকে হাত ও পুরুষের জন্য নাভীর নীচে হাত বাঁধার যে রেওয়াজ চালু আছে, হাদীছে বা আছারে এর কোন প্রমাণ নেই। [11] বরং এটাই স্বতঃসিদ্ধ যে, ছালাতের মধ্যকার ফরয ও সুন্নাত সমূহ মুসলিম নারী ও পুরুষ সকলে একই নিয়মে আদায় করবে।[12]

বুকে হাত বাঁধার তাৎপর্য : ত্বীবী বলেন, ‘হৃৎপিন্ডের উপরে বুকে হাত বাঁধার মধ্যে হুঁশিয়ারী রয়েছে এ বিষয়ে যে, বান্দা তার মহা পরাক্রান্ত মালিকের সম্মুখে দাঁড়িয়েছে হাতের উপর হাত রেখে মাথা নিচু করে পূর্ণ আদব ও আনুগত্য সহকারে, যা কোনভাবেই ক্ষুণ্ণ করা যাবে না’।[13]

[3] . হাকেম, বায়হাক্বী, আলবানী, ছিফাতু ছালা-তিন্নবী (বৈরূত : ১৪০৩/১৯৮৩) পৃঃ ৬৯; ইরওয়া হা/৩৫৪-এর শেষে দ্রষ্টব্য।

[4] . আবুদাঊদ হা/৭৩৭।

[5] . বুখারী (দিল্লী ছাপা) ১/১০২ পৃঃ, হা/৭৪০, ‘আযান’ অধ্যায়-১০, অনুচ্ছেদ-৮৭; ঐ, মিশকাত হা/৭৯৮, ‘ছালাতের বিবরণ’ অনুচ্ছেদ-১০। উল্লেখ্য যে, ইসলামিক ফাউন্ডেশন (১৯৯১), আধুনিক প্রকাশনী (১৯৮৮) প্রভৃতি বাংলাদেশের একাধিক সরকারী ও বেসরকারী প্রকাশনা সংস্থা কর্তৃক অনুদিত ও প্রকাশিত বঙ্গানুবাদ বুখারী শরীফে উপরোক্ত হাদীছটির অনুবাদে ‘ডান হাত বাম হাতের কব্জির উপরে’ -লেখা হয়েছে। এখানে অনুবাদের মধ্যে ‘কব্জি’ কথাটি যোগ করার পিছনে কি কারণ রয়েছে বিদগ্ধ অনুবাদক ও প্রকাশকগণই তা বলতে পারবেন। তবে হাদীছের অনুবাদে এভাবে কমবেশী করা ভয়ংকর গর্হিত কাজ বলেই সকলে জানেন।

[6] . আহমাদ হা/২২৬১০, সনদ হাসান, আলবানী, আহকামুল জানায়েয, মাসআলা নং-৭৬, ১১৮ পৃঃ; তিরমিযী (তুহফা সহ, কায়রো : ১৪০৭/১৯৮৭) হা/২৫২, ‘ছালাত’ অধ্যায়-২, অনুচ্ছেদ-১৮৭, ২/৮১, ৯০; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১০৯।

[7] . ছহীহ ইবনু খুযায়মা হা/৪৭৯; আবুদাঊদ হা/৭৫৫, ইবনু মাস‘ঊদ হ’তে; ঐ, হা/৭৫৯, ত্বাঊস বিন কায়সান হ’তে; ‘ছালাত’ অধ্যায়-২, ‘ছালাতে বাম হাতের উপর ডান হাত রাখা’ অনুচ্ছেদ-১২০।

[8] . নায়লুল আওত্বার ৩/২৫।


ছানা বা দো‘আয়ে ইস্তেফতাহ পাঠ শেষে ‘আঊযুবিল্লাহ’ ও ‘বিসমিল্লাহ’ নীরবে পড়বে। অতঃপর সূরায়ে ফাতিহা পাঠ করবে। প্রকাশ থাকে যে, ‘আঊযুবিল্লাহ’ কেবল ১ম রাক‘আতে পড়বে, বাকী রাক‘আতগুলিতে নয়।[14] অমনিভাবে ‘বিসমিল্লাহ’ সূরায়ে ফাতিহার অংশ হওয়ার পক্ষে যেমন কোন ছহীহ দলীল নেই, [15] তেমনি ‘জেহরী’ ছালাতে ‘বিসমিল্লাহ’ সরবে পড়ার পক্ষে কোন নির্ভরযোগ্য ভিত্তি নেই।[16] বরং এটি দুই সূরার মধ্যে পার্থক্যকারী হিসাবে পঠিত হয়’ (কুরতুবী)।[17]

ইমাম কুরতুবী বলেন যে, সকল কথার মধ্যে সঠিক কথা হ’ল ইমাম মালেকের কথা যে, ‘বিসমিল্লাহ’ সূরা ফাতিহার অংশ নয়’। যেমন ‘কুরআন’ খবরে ওয়াহেদ অর্থাৎ একজন ব্যক্তির বর্ণনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় না। বরং তা প্রতিষ্ঠিত হয় অবিরত ধারায় অকাট্ট বর্ণনা সমূহের মাধ্যমে, যাতে কোন মতভেদ থাকে না। ইবনুল ‘আরাবী বলেন, এটি সূরা ফাতিহার অংশ না হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, এতে মতভেদ রয়েছে। আর কুরআনে কোন মতভেদ থাকে না। বরং ছহীহ-শুদ্ধ বর্ণনা সমূহ যাতে কোন আপত্তি নেই, একথা প্রমাণ করে যে, ‘বিসমিল্লাহ’ সূরা ফাতিহার অংশ নয়’। এটি সূরা নমলের ৩০তম আয়াত মাত্র। এ বিষয়ে ছহীহ মুসলিমে আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত হাদীছটি প্রণিধানযোগ্য’। [18]

(১) আনাস বিন মালিক (রাঃ) বলেন,

صَلَّيْتُ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبِيْ بَكْرٍ وَعُمَرَ وَعُثْمَانَ فَلَمْ أَسْمَعْ أَحَدًا مِّنْهُمْ يَقْرَأُ بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ، رَوَاهُ أَحْمَدُ وَمُسْلِمٌ وَاِبنُ خُزَيْمَةَ- وَفِي روايةٍ : لاَ يَجْهَرُوْنَ بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ-

অর্থ : আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ), আবুবকর, ওমর ও ওছমান (রাঃ)-এর পিছনে ছালাত আদায় করেছি। কিন্তু তাঁদের কাউকে ‘বিসমিল্লাহ’ জোরে পড়তে শুনিনি’। [19]

(২)দারাকুৎনীবলেন, إنَّهُ لَمْ يَصِحَّ فِي الْجَهْرِ بِهَا حَدِيْثٌ ‘বিসমিল্লাহ’ জোরে বলার বিষয়ে কোন হাদীছ ‘ছহীহ’ প্রমাণিত হয়নি। [20]

(৩) তবে ছহীহ হাদীছ সমূহের বিপরীতে সবল-দুর্বল মিলে প্রায় ১৪টি হাদীছের প্রতি লক্ষ্য রেখে হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হয়তোবা কখনো কখনো ‘বিসমিল্লাহ’ জোরে বলে থাকবেন। তবে অধিকাংশ সময় তিনি চুপে চুপেই পড়তেন। এটা নিশ্চিত যে, তিনি সর্বদা জোরে পড়তেন না। যদি তাই পড়তেন, তাহ’লে ছাহাবায়ে কেরাম, খুলাফায়ে রাশেদ্বীন, শহরবাসী ও সাধারণ মুছল্লীদের নিকটে বিষয়টি গোপন থাকত না’।.... অতঃপর বর্ণিত হাদীছগুলি সম্পর্কে তিনি বলেন, فَصَحِيْحُ تِلْكَ الْأَحَادِيْثِ غَيْرُ صَرِيْحٍ، وَصَرِيْحُهَا غَيْرُ صَحِيْحٍ ‘উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছগুলির মধ্যে যেগুলি ছহীহ, সেগুলির বক্তব্য স্পষ্ট নয় এবং স্পষ্টগুলি ছহীহ নয়’।[21]

[14] . ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১১২ পৃঃ ; নায়ল ৩/৩৬-৩৯ পৃঃ।

[15] . নায়লুল আওত্বার ৩/৫২ পৃঃ। বিস্তারিত আলোচনা দ্রষ্টব্য : নায়ল ৩/৩৯-৫২।

[16] . নায়লুল আওত্বার ৩/৪৬ পৃঃ।




My Friends Noman, Dr. Nuru, 
Gubanati Degree Collage 1996
আযানের অন্যান্য পরিত্যাজ্য বিষয়

(১) আযানের আগে ও পরে উচ্চৈঃস্বরে যিকর : জুম‘আর দিনে এবং অন্যান্য ছালাতে বিশেষ করে ফজরের আযানের আগে ও পরে বিভিন্ন মসজিদে মাইকে বলা হয়
(ক) ‘বিসমিল্লা-হ, আছ্ছালাতু ওয়াসসালা-মু ‘আলায়কা ইয়া রাসূলাল্লা-হ ... ইয়া হাবীবাল্লাহ, ... ইয়া রহমাতাল লিল ‘আ-লামীন। এভাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে সালাম দেওয়ার পরে সরাসরি আল্লাহকেই সালাম দিয়ে বলা হয়, আছ্ছালাতু ওয়াসসালামু ‘আলায়কা ইয়া রববাল ‘আ-লামীন’। এটা বিদ‘আত তো বটেই, বরং চরম মূর্খতা। কেননা আল্লাহ নিজেই ‘সালাম’। তাকে কে সালাম দিবে? তাছাড়া হাদীছে আল্লাহকে সালাম দিতে নিষেধ করা হয়েছে। [44]
(খ) আযানের পরে পুনরায় ‘আছছালা-তু রাহেমাকুমুল্লা-হ’ বলে বারবার উঁচু স্বরে আহবান করা (ইরওয়া ১/২৫৫) এতদ্ব্যতীত
(গ) হামদ, না‘ত, তাসবীহ, দরূদ, কুরআন তেলাওয়াত, ওয়ায, গযল ইত্যাদি শোনানো। অথচ কেবলমাত্র ‘আযান’ ব্যতীত এসময় বাকী সবকিছুই বর্জনীয়। এমনকি আযানের পরে পুনরায় ‘আছছালাত, আছছালাত’ বলে ডাকাও হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) প্রমুখ ছাহাবীগণ ‘বিদ‘আত’ বলেছেন।[45] তবে ব্যক্তিগতভাবে যদি কেউ কাউকে ছালাতের জন্য ডাকেন বা জাগিয়ে দেন, তাতে তিনি অবশ্যই নেকী পাবেন। [46]

(২) ‘তাকাল্লুফ’ করা : যেমন- আযানের দো‘আটি ‘বাংলাদেশ বেতারের’ কথক এমন ভঙ্গিতে পড়েন, যাতে প্রার্থনার আকুতি থাকেনা। যা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। কারণ নিজস্ব স্বাভাবিক সুরের বাইরে যাবতীয় তাকাল্লুফ বা ভান করা ইসলামে দারুণভাবে অপছন্দনীয়।[47]

(৩) গানের সুরে আযান দেওয়া : গানের সুরে আযান দিলে একদা আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) জনৈক মুওয়ায্যিনকে ভীষণভাবে ধমক দিয়ে বলেছিলেন إِنِّيْ لَأُبْغِضُكَ فِي اللهِ ‘আমি তোমার সাথে অবশ্যই বিদ্বেষ করব আল্লাহর জন্য’।[48]

(৪) আঙ্গুলে চুমু দিয়ে চোখ রগড়ানো : আযান ও এক্বামতের সময় ‘মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’ শুনে বিশেষ দো‘আ সহ আঙ্গুলে চুমু দিয়ে চোখ রগড়ানো, আযান শেষে দুই হাত তুলে আযানের দো‘আ পড়া কিংবা উচ্চৈঃস্বরে তা পাঠ করা ও মুখে হাত মোছা ইত্যাদির কোন শারঈ ভিত্তি নেই।[49]

(৫) বিপদে আযান দেওয়া : বালা-মুছীবতের সময় বিশেষভাবে আযান দেওয়ারও কোন দলীল নেই। কেননা আযান কেবল ফরয ছালাতের জন্যই হয়ে থাকে, অন্য কিছুর জন্য নয়।

(৬) এতদ্ব্যতীত শেষরাতে ফজরের আযানের আগে বা পরে মসজিদে মাইকে উচ্চৈঃস্বরে কুরআন তেলাওয়াত করা, ওয়ায করা ও এভাবে মানুষের ঘুম নষ্ট করা ও রোগীদের কষ্ট দেওয়া এবং তাহাজ্জুদে বিঘ্ন সৃষ্টি করা কঠিন গোনাহের কাজ।[50]

[44] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৯০৯, ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘তাশাহহুদ’ অনুচ্ছেদ-১৫।

[45] . তিরমিযী, মিশকাত হা/৬৪৬-এর টীকা; ঐ, ইরওয়া হা/২৩৬, ১/২৫৫; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৯৩।

[46] . বুখারী হা/৫৯৫, ‘ছালাতের সময়কাল’ অধ্যায়-৯, অনুচ্ছেদ-৩৫; মুসলিম, মিশকাত হা/৬৮৪ ‘দেরীতে আযান’ অনুচ্ছেদ-৬।


My Friends Md. Yeasin & Abdul Azim 2020

আযানের জওয়াব (إجابة المؤذن)

 রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

إِذَا سَمِعْتُمُ الْمُؤَذِّنَ فَقُوْلُوْا مِثْلَ مَا يَقُوْلُ

‘যখন তোমরা আযান শুনবে, তখন মুওয়ায্যিন যা বলে তদ্রুপ বল’...। [31] অন্যত্র তিনি এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি মুওয়ায্যিনের পিছে পিছে আযানের বাক্যগুলি অন্তর থেকে পাঠ করে এবং ‘হাইয়া ‘আলাছ ছালা-হ’ ও ‘ফালা-হ’ শেষে ‘লা-হাওলা অলা-কুবওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ’ (নেই কোন ক্ষমতা, নেই কোন শক্তি আল্লাহ ব্যতীত) বলে, সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে।[32] অতএব আযান ও এক্বামতে ‘হাইয়া ‘আলাছ ছালা-হ’ ও ‘ফালা-হ’ বাদে বাকী বাক্যগুলির জওয়াবে মুওয়ায্যিন যেমন বলবে, তেমনই বলতে হবে। ইক্বামতের জবাব একইভাবে দিবে। কেননা আযান ও ইক্বামত দু’টিকেই হাদীছে ‘আযান’ বলা হয়েছে। [33]

উল্লেখ্য যে, (১) ফজরের আযানে ‘আছ ছালা-তু খায়রুম মিনান নাঊম’-এর জওয়াবে ‘ছাদাক্বতা ওয়া বারারতা’ বলার কোন ভিত্তি নেই।[34] (২) অমনিভাবে এক্বামত-এর সময় ‘ক্বাদ ক্বা-মাতিছ ছালা-হ’-এর জওয়াবে‘আক্বা-মাহাল্লা-হু ওয়া আদা-মাহা’ বলা সম্পর্কে আবুদাঊদে বর্ণিত হাদীছটি ‘যঈফ’।[35] (৩) ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’ -এর জওয়াবে ‘ছাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহে ওয়া সাল্লাম’ বলারও কোন দলীল নেই।

আযানের দো‘আ

(دعاء الأذان) :

আযানের জওয়াব দান শেষে প্রথমে দরূদ পড়বে।[36] অতঃপর আযানের দো‘আ পড়বে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন ‘যে ব্যক্তি আযান শুনে এই দো‘আ পাঠ করবে, তার জন্য ক্বিয়ামতের দিন আমার শাফা‘আত ওয়াজিব হবে’।[37]

اَللَّهُمَّ رَبَّ هٰذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ، وَالصَّلاَةِ الْقَائِمَةِ، آتِ مُحَمَّدًانِ الْوَسِيْلَةَ وَالْفَضِيْلَةَ، وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَّحْمُوْدًا الَّذِىْ وَعَدْتَهُ -

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা রববা হা-যিহিদ দা‘ওয়াতিত তা-ম্মাহ, ওয়াছ ছলা-তিল ক্বা-য়েমাহ, আ-তে মুহাম্মাদানিল ওয়াসীলাতা ওয়াল ফাযীলাহ, ওয়াব‘আছ্হু মাক্বা-মাম মাহমূদানিল্লাযী ওয়া‘আদ্তাহ’ ।

অনুবাদ: হে আল্লাহ! (তাওহীদের) এই পরিপূর্ণ আহবান ও প্রতিষ্ঠিত ছালাতের তুমি প্রভু। মুহাম্মাদ (ছাঃ) -কে তুমি দান কর ‘অসীলা’ (নামক জান্নাতের সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থান) ও মর্যাদা এবং পৌঁছে দাও তাঁকে (শাফা‘আতের) প্রশংসিত স্থান ‘মাক্বামে মাহমূদে’ যার ওয়াদা তুমি তাঁকে করেছ’। [38] মনে রাখা আবশ্যক যে, আযান উচ্চৈঃস্বরে দেওয়া সুন্নাত। কিন্তু উচ্চৈঃস্বরে আযানের দো‘আ পাঠ করা বিদ‘আত। অতএব মাইকে আযানের দো‘আ পাঠের রীতি অবশ্যই বর্জনীয়। আযানের অন্য দো‘আও রয়েছে।[39]

আযানের দো‘আয় বাড়তি বিষয় সমূহ

(الزوائد في دعاء الأذان) :

আযানের দো‘আয় কয়েকটি বিষয় বাড়তিভাবে চালু হয়েছে, যা থেকে বিরত থাকা কর্তব্য। কারণ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কঠোরভাবে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার নামে মিথ্যারোপ করল, সে জাহান্নামে তার ঠিকানা করে নিল’।[40] ছাহাবী বারা বিন আযেব (রাঃ) রাতে শয়নকালে রাসূল (ছাঃ)-এর শিখানো একটি দো‘আয় ‘আ-মানতু বে নাবিইয়েকাল্লাযী আরসালতা’-এর স্থলে ‘বে রাসূলেকা’ বলেছিলেন। তাতেই রাসূল (ছাঃ) রেগে ওঠেন ও তার বুকে ধাক্কা দিয়ে ‘বে নাবিইয়েকা’ বলার তাকীদ করেন।[41] অথচ সেখানে অর্থের কোন তারতম্য ছিল না।

প্রকাশ থাকে যে, আযান একটি ইবাদত। এতে কোনরূপ কমবেশী করা জায়েয নয়। তবুও আযানের দো‘আয় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন শব্দ ও বাক্য যোগ হয়েছে, যার কিছু নিম্নরূপ :

(১) বায়হাক্বীতে (১ম খন্ড ৪১০ পৃ:) বর্ণিত আযানের দো‘আর শুরুতে ‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস-আলুকা বে হাকক্বে হা-যিহিদ দাওয়াতে’
(২) একই হাদীছের শেষে বর্ণিত ‘ইন্নাকা লা তুখ্লিফুল মী‘আ-দ
(৩) ইমাম ত্বাহাভীর ‘শারহু মা‘আনিল আছার’-য়ে বর্ণিত ‘আ-তে সাইয়িদানা মুহাম্মাদান’
(৪) ইবনুস সুন্নীর ‘ফী ‘আমালিল ইয়াওমে ওয়াল লায়লাহ’তে ‘ওয়াদ্দারাজাতার রাফী‘আতা’
(৫) রাফেঈ প্রণীত ‘আল-মুহার্রির’-য়ে আযানের দো‘আর শেষে বর্ণিত ‘ইয়া আরহামার রা-হেমীন’।[42] (৬) আযান বা ইক্বামতে ‘আশহাদু আন্না সাইয়েদানা মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’ বলা।[43]
(৭) বর্তমানে রেডিও বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ টেলিভিশন থেকে প্রচারিত আযানের দো‘আয় ‘ওয়ারঝুক্বনা শাফা‘আতাহূ ইয়াওমাল ক্বিয়া-মাহ’ বাক্যটি যোগ করা হচ্ছে। যার কোন শারঈ ভিত্তি জানা যায় না। এছাড়া ওয়াল ফাযীলাতা-র পরে ওয়াদ্দারাজাতার রাফী‘আতা এবং শেষে ইন্নাকা লা তুখলিফুল মী‘আ-দ যোগ করা হয়, যা পরিত্যাজ্য।
(৮) মাইকে আযানের দো‘আ পাঠ করা, অতঃপর শেষে লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লা-হ, ছাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলা।

[31] . মুসলিম, মিশকাত হা/৬৫৭ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘আযানের ফযীলত ও তার জবাব’ অনুচ্ছেদ-৫।

[32] . মুসলিম, মিশকাত হা/৬৫৮।

[33] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৬৬২; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৮৮ ‘আযান’ অধ্যায়, মাসআলা-৯।

[34] . মির‘আত ২/৩৬৩, হা/৬৬২-এর ভাষ্য দ্রষ্টব্য।

[35] . আবুদাঊদ হা/৫২৮; ঐ, মিশকাত হা/৬৭০; আলবানী, ইরওয়াউল গালীল হা/২৪১, ১/২৫৮-৫৯ পৃঃ।

[36] . মুসলিম, মিশকাত হা/৬৫৭। দরূদ-এর জন্য ১৭ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য।

[37] . বুখারী, মিশকাত হা/৬৫৯; রাবী জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ)।

[38] . এটি হবে শাফা‘আতে কুবরা-র জন্য (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৫৫৭২, ‘ক্বিয়ামতের অবস্থা’ অধ্যায়-২৮, ‘হাউয ও শাফা‘আত’ অনুচ্ছেদ-৪)। যেমন আল্লাহ বলেন, عَسَى أَنْ يَّبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَّحْمُوْدًا ইসরা ১৭/৭৯ (অর্থ- ‘সত্বর তোমার প্রভু তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে’)।

[39] . মুসলিম, মিশকাত হা/৬৬১।

[40] . مَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّار =বুখারী, মিশকাত হা/১৯৮ ‘ইল্ম’ অধ্যায়-২।

[41] . বুখারী হা/২৪৭ ‘ওযূ’ অধ্যায়-৪, অনুচ্ছেদ-৭৫; তিরমিযী হা/৩৩৯৪ ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৪৫, অনুচ্ছেদ-১৬; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২৩৮৫ ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, অনুচ্ছেদ-৬। ইবনু হাজার আসক্বালানী বলেন, এ কথার অর্থ এটা নয় যে, মর্ম ঠিক রেখে শব্দ পরিবর্তন করা যাবে না বা মর্মগত বর্ণনা (الرواية بالمعني) জায়েয নয়। যেমন ‘নবীউল্লাহ্’র স্থলে ‘রাসূলুল্লাহ’ বলা বা মূল নামের স্থলে উপনাম বলা। কেননা হাদীছ শাস্ত্রে এরূপ বর্ণনা বহুল প্রচলিত। কিন্তু বর্তমান হাদীছ তার বিপরীত। এর অনেকগুলি কারণ থাকতে পারে। যেমন (১) যিকরের শব্দ সমূহ তাওক্বীফী, যা পরিবর্তনযোগ্য নয়। (২) শব্দের মধ্যে কোন সূক্ষ্ম তাৎপর্য থাকতে পারে। (৩) জিব্রীলকে পৃথক করা। কেননা ‘রাসূল’ শব্দ দ্বারা জিব্রীলকে বুঝানো যায়। কিন্তু ‘নবী’ বললে কেবল রাসূল (ছাঃ)-কেই বুঝানো হয়। (৪) আল্লাহ তাঁকে ‘অহি’ করে থাকবেন এভাবেই দো‘আ পাঠের জন্য। ফলে তিনি সেভাবেই বলেন ইত্যাদি। ফাৎহুল বারী হা/২৪৭-এর আলোচনার সার-সংক্ষেপ, ১/৪২৭ পৃঃ।

[42] . দ্রষ্টব্য: আলবানী, ইরওয়াউল গালীল হা/২৪৩ পৃঃ ১/২৬০-৬১; মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী, মিরক্বাত ২/১৬৩।

[43] . ফিক্বহুস সুন্নাহ পৃঃ ১/৯২।


My Friend Abdul Azim 1998

সাহারীর আযান (الأذان في السحر)

সাহারীর আযান দেওয়া সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যামানায় তাহাজ্জুদ ও সাহারীর আযান বেলাল (রাঃ) দিতেন এবং ফজরের আযান অন্ধ ছাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতূম (রাঃ) দিতেন। তাই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘বেলাল রাত্রি থাকতে আযান দিলে তোমরা (সাহারীর জন্য) খানাপিনা কর, যতক্ষণ না ইবনে উম্মে মাকতূম আযান দেয়। কেননা সে ফজর না হওয়া পর্যন্ত আযান দেয় না’।[27] তিনি আরও বলেন, ‘বেলালের আযান যেন তোমাদেরকে সাহারী খাওয়া থেকে বিরত না করে। কেননা সে রাত্রি থাকতে আযান দেয় এজন্য যে, যেন তোমাদের তাহাজ্জুদ গোযার মুছল্লীগণ (সাহারীর জন্য) ফিরে আসে ও তোমাদের ঘুমন্ত ব্যক্তিগণ (তাহাজ্জুদ বা সাহারীর জন্য) জেগে ওঠে’।[28] এটা কেবল রামাযান মাসের জন্য ছিল না। বরং অন্য সময়ের জন্যও ছিল। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যামানায় অধিক সংখ্যক ছাহাবী নফল ছিয়াম রাখতেন।[29] আজও রামাযান মাসে সকল মসজিদে এবং অন্য মাসে যদি কোন মসজিদের অধিকসংখ্যক প্রতিবেশী নফল ছিয়ামে যেমন আশূরার দু’টি ছিয়াম, আরাফাহর একটি ছিয়াম, শাওয়ালের ছয়টি ছিয়াম ও তাহাজ্জুদে অভ্যস্ত হন, তাহ’লে ঐ মসজিদে নিয়মিতভাবে উক্ত আযান দেওয়া যেতে পারে। যেমন মক্কা ও মদ্বীনায় দুই হারামে সারা বছর দেওয়া হয়ে থাকে।

সুরূজী প্রমুখ কিছু সংখ্যক হানাফী বিদ্বান রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যামানার উক্ত আযানকে সাহারীর জন্য লোকজনকে আহবান ও সরবে যিকর বলে দাবী করেছেন। ছহীহ বুখারীর সর্বশেষ ভাষ্যকার হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী বলেন, এই দাবী ‘মারদূদ’ বা প্রত্যাখাত। কেননা লোকেরা ঘুম জাগানোর নামে আজকাল যা করে, তা সম্পূর্ণরূপে ‘বিদ‘আত’ যা ধর্মের নামে নতুন সৃষ্টি। উক্ত আযান-এর অর্থ সকলেই ‘আযান’ বুঝেছেন। যদি ওটা আযান না হয়ে অন্য কিছু হ’ত, তাহ’লে লোকদের ধোঁকায় পড়ার প্রশ্নই উঠতো না। আর রাসূল (ছাঃ)-কেও সাবধান করার দরকার পড়তো না।[30]

[27] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৬৮০, ‘দেরীতে আযান’ অনুচ্ছেদ-৬; নায়ল ২/১২০।

[28] . মুসলিম, মিশকাত হা/৬৮১; কুতুবে সিত্তাহর সকল গ্রন্থ তিরমিযী ব্যতীত, নায়ল ২/১১৭-১৮।

[29] . মির‘আত ২/৩৮২, হা/৬৮৫-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য।

[30] . ফাৎহুল বারী শরহ ছহীহ বুখারী ‘ফজরের পূর্বে আযান’ অনুচ্ছেদ ২/১২৩-২৪।


My Friend Md. Anwar International Airport Dhaka 2015
তারজী‘ আযান (الترجيع في الأذان)

তারজী‘ (الترجيع) অর্থ ‘পুনরুক্তি’। আযানের মধ্যে দুই শাহাদাত কালেমাকে প্রথমে দু’বার করে মোট চারবার নিম্নস্বরে, পরে দু’বার করে মোট চারবার উচ্চৈঃস্বরে বলাকে তারজী‘ বা পুনরুক্তির আযান বলা হয়। তারজী‘ আযানের কালেমা সংখ্যা হবে মোট ১৫+৪=১৯টি। তারজী‘ আযানের হাদীছটি হযরত আবু মাহযূরাহ (রাঃ) কর্তৃক আবু দাঊদে বর্ণিত হয়েছে।[23] ছহীহ মুসলিমে একই মর্মে একই রাবী হ’তে বর্ণিত অপর একটি রেওয়ায়াতে আযানে প্রথম তাকবীরের সংখ্যা চার-এর স্থলে দুই বলা হয়েছে।[24] তখন কলেমার সংখ্যা দাঁড়াবে তারজীসহ ১৭টি। আবু মাহযূরাহ বর্ণিত সুনানের হাদীছে এক্বামতের কালেমা ‘ক্বাদ ক্বা-মাতিছ ছালা-হ’ সহ মোট ১৭টি বর্ণিত হয়েছে।[25] এটি মূলতঃ তা‘লীমের জন্য ছিল।[26]

এক্ষণে ছহীহ হাদীছ মতে আযানের পদ্ধতি দাঁড়ালো মোট তিনটি ও এক্বামতের পদ্ধতি দু’টি। (১) আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ (রাঃ) বর্ণিত বেলালী আযান ও এক্বামত যথাক্রমে ১৫টি ও ১১টি বাক্য সম্বলিত, যা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যুগে মক্কা-মদ্বীনাসহ সর্বত্র চালু ছিল। (২) আবু মাহযূরাহ (রাঃ) বর্ণিত তারজী‘ আযানের ১৯টি ও ১৭টি এবং এক্বামতের ১৭টি। সবগুলিই জায়েয। তবে দু’বার করে আযান ও একবার করে এক্বামত বিশিষ্ট বেলালী আযান ও এক্বামত-এর পদ্ধতিটি নিঃসন্দেহে অগ্রগণ্য, যা মুসলিম উম্মাহ কর্তৃক সকল যুগে সমাদৃত।

[23] . আবুদাঊদ হা/৫০০, ৫০৩; (‘আওনুল মা‘বূদ সহ) হা/৪৯৬, মিশকাত হা/৬৪৫।

[24] . মুসলিম হা/৩৭৯।

[25] . ‘আওনুল মা‘বূদ হা/৪৯৬-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য, ২/১৭৬।

[26] . আহমাদ, তিরমিযী, আবুদাঊদ প্রভৃতি, মিশকাত হা/৬৪৪।


My maternal uncle Kazi Md. Idriss (Rh)

এক্বামত (الإقامة)

‘এক্বামত’ (الإقامة) অর্থ দাঁড় করানো। উপস্থিত মুছল্লীদেরকে ছালাতে দাঁড়িয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারী শুনানোর জন্য ‘এক্বামত’ দিতে হয়। জামা‘আতে হউক বা একাকী হউক সকল অবস্থায় ফরয ছালাতে আযান ও এক্বামত দেওয়া সুন্নাত।[14]

হযরত আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ (রাঃ) প্রমুখাৎ আবুদাঊদে বর্ণিত পূর্বোক্ত হাদীছ অনুযায়ী এক্বামতের কালেমা ১১টি। যথা :
১. আল্লা-হু আকবার (২ বার)
২. আশহাদু আল লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ,
৩. আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লা-হ,
৪. হাইয়া ‘আলাছ ছালা-হ,
৫. হাইয়া ‘আলাল ফালা-হ,
৬. ক্বাদ ক্বা-মাতিছ ছালা-হ, (২ বার),
৭. আল্লা-হু আকবার (২ বার),
৮. লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ = সর্বমোট ১১।[15]

উচ্চকণ্ঠের অধিকারী হওয়ায় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বেলাল (রাঃ)-কে ‘আযান’ দিতে বলেন এবং প্রথম স্বপ্ন বর্ণনাকারী আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ (রাঃ)-কে ‘এক্বামত’ দিতে বলেন। আনাস (রাঃ) বলেন, বেলালকে দু’বার করে আযান ও একবার করে এক্বামত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল’।[16] এইভাবে ইসলামের ইতিহাসে দু’বার করে আযান ও একবার করে এক্বামত-এর প্রচলন হয়। ৮ম হিজরী সনে মক্কা বিজয়ের পর মদ্বীনায় ফিরে এসে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বেলালকে মসজিদে নববীতে স্থায়ীভাবে মুওয়ায্যিন নিযুক্ত করেন। ১১ হিজরী সনে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পরে বেলাল (রাঃ) সিরিয়ায় হিজরত করেন এবং নিজ শিষ্য সা‘দ আল-ক্বারাযকে মদ্বীনায় উক্ত দায়িত্বে রেখে যান। হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) বলেন,

كَانَ الْأَذَانُ عَلَى عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَرَّتَيْنِ مَرَّتَيْنِ وَالْإِقَامَةُ مَرَّةً غَيْرَ أَنَّهُ كَانَ يَقُوْلُ قَدْ قَامَتِ الصَّلاَةُ قَدْ قَامَتِ الصَّلاَةُ، رواه أبو داؤد والنسائى-

‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যামানায় আযান দু’বার ও এক্বামত একবার করে দেওয়ার রেওয়াজ ছিল, ‘ক্বাদ ক্বা-মাতিছ ছালা-হ’ দু’বার ব্যতীত। [17]

প্রকাশ থাকে যে, এখানে দু’বার আল্লা-হু আকবার-কে একটি জোড়া হিসাবে ‘একবার’ (মার্রাতান) গণ্য করা হয়েছে। তাছাড়া ‘আল্লাহ’ (الله) শব্দের হামযাহ (ا) ‘ওয়াছ্লী’ হওয়ার কারণে প্রথম ‘আল্লা-হু আকবার’-এর সাথে পরের ‘আল্লা-হু আকবার’ মিলিয়ে পড়া যাবে। একবার ‘ক্বাদ ক্বা-মাতিছ ছালাহ’ এবং প্রথমে ও শেষে একবার করে ‘আল্লা-হু আকবার’ বলার মতামতটি ‘শায’ (شاذ) যা অগ্রহণযোগ্য।[18] কেননা আবুদাঊদে আযান ও এক্বামতের কালেমা সমূহের যথাযথ বিবরণ প্রদত্ত হয়েছে।[19]

ইমাম খাত্ত্বাবী বলেন, মক্কা-মদ্বীনা সহ সমগ্র হিজায, সিরিয়া, ইয়ামন, মিসর, মরক্কো এবং ইসলামী বিশ্বের প্রত্যন্ত অঞ্চলে একবার করে এক্বামত দেওয়ার নিয়ম চালু আছে এবং এটাই প্রায় সমস্ত ওলামায়ে ইসলামের মাযহাব।[20] ইমাম বাগাভী বলেন, এটাই অধিকাংশ বিদ্বানের মাযহাব। [21] দু’বার এক্বামত-এর রাবী হযরত আবু মাহযূরাহ (রাঃ) নিজে ও তাঁর পুত্র হযরত বেলাল (রাঃ) -এর অনুসরণে একবার করে ‘এক্বামত’ দিতেন।[22]

[14] . নাসাঈ হা/৬৬৭-৬৮; আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/৬৬৫, ‘আযানের ফযীলত’ অনুচ্ছেদ-৫।

[15] . আবুদাঊদ হা/৪৯৯, ‘আওনুল মা‘বূদ হা/৪৯৫।

[16] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৬৪১, ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘আযান’ অনুচ্ছেদ-৪।

[17] . আবুদাঊদ, নাসাঈ, দারেমী, মিশকাত হা/৬৪৩।

Ismail Hossain Polash 2019 
আযানের কালেমা সমূহ (كلمات الأذان)

আযানের কালেমা সমূহ (كلمات الأذان) : ১৫ টি:

১. আল্লা-হু আকবার (অর্থ : আল্লাহ সবার চেয়ে বড়) اللهُ أَكْبَرُ ....৪ বার

২. আশহাদু আল লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ أَشْهَدُ أَن لاَّ إلَهَ إِلاَّ اللهُ ....২ বার

(আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই)

৩. আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُوْلُ اللهِ ...২ বার

(আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল)

৪. হাইয়া ‘আলাছ ছালা-হ (ছালাতের জন্য এসো) حَيَّ عَلَى الصَّلاَةِ ...২ বার

৫. হাইয়া ‘আলাল ফালা-হ (কল্যাণের জন্য এসো) حَيَّ عَلَى الْفَلاَحِ ...২বার

৬. আল্লা-হু আকবার (আল্লাহ সবার চেয়ে বড়) اللهُ أَكْبَرُ ...২ বার

৭. লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ (আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই) لآ إلَهَ إِلاَّ اللهُ১ বার মোট= ১৫ বার। [12]

ফজরের আযানের সময় হাইয়া ‘আলাল ফালা-হ এর পরে اَلصَّلاَةُ خَيْرٌ مِّنَ النَّوْمِ আছছালা-তু খায়রুম মিনান নাঊম’ (নিদ্রা হতে ছালাত উত্তম) ২ বার বলবে।[13]

[12] . আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ (রাঃ) বর্ণিত; আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৬৫০; আবুদাঊদ হা/৪৯৯, ‘কিভাবে আযান দিতে হয়’ অনুচ্ছেদ-২৮; মির‘আত হা/৬৫৫, ২/৩৪৪-৩৪৫।

[13] . আবুদাঊদ হা/৫০০-০১, ৫০৪; ‘আওনুল মা‘বূদ, আবু মাহ্যূরাহ হ’তে, হা/৪৯৬; মিশকাত হা/৬৪৫। ইবনু রাসলান, আমীরুল ইয়ামানী ও শায়খ আলবানী একে তাহাজ্জুদের আযানের সাথে যুক্ত বলেন (সুবুলুস সালাম হা/১৬৭-এর ব্যাখ্যা, ১/২৫০; তামামুল মিন্নাহ ১৪৭ পৃঃ)। আবদুর রহমান মুবারকপুরী বলেন, বরং ফজরের আযানের সাথে হওয়াটাই ‘হক’ (حق) এবং এটাই ব্যাপকভাবে গৃহীত মাযহাব’ (তুহফা ১/৫৯৩, হা/১৯৮-এর ব্যাখ্যা দ্রঃ); রিয়াদ, লাজনা দায়েমাহ ফৎওয়া নং ১৩৯৬।


Sihab Uddin Member2012

সংজ্ঞা : ‘আযান’ অর্থ, ঘোষণা ধ্বনি (الإعلام)। পারিভাষিক অর্থ, শরী‘আত নির্ধারিত আরবী বাক্য সমূহের মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ে উচ্চকণ্ঠে ছালাতে আহবান করাকে ‘আযান’ বলা হয়। ১ম হিজরী সনে আযানের প্রচলন হয়।[1]

সূচনা : ওমর ফারূক (রাঃ) সহ একদল ছাহাবী একই রাতে আযানের একই স্বপ্ন দেখেন ও পরদিন সকালে ‘অহি’ দ্বারা প্রত্যাদিষ্ট হ’লে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তা সত্যায়ন করেন এবং বেলাল (রাঃ)-কে সেই মর্মে ‘আযান’ দিতে বলেন।[2]

ছাহাবী আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ (রাঃ) সর্বপ্রথম পূর্বরাতে স্বপ্নে দেখা আযানের কালেমা সমূহ সকালে এসে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকটে বর্ণনা করেন। পরে বেলালের কণ্ঠে একই আযান ধ্বনি শুনে হযরত ওমর (রাঃ) বাড়ী থেকে বেরিয়ে চাদর ঘেঁষতে ঘেঁষতে ছুটে এসে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলেন, ‘যিনি আপনাকে ‘সত্য’ সহকারে প্রেরণ করেছেন, তাঁর কসম করে বলছি আমিও অনুরূপ স্বপ্ন দেখেছি’। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ‘ফালিল্লা-হিল হাম্দ’ বলে আল্লাহর প্রশংসা করেন’।[3] একটি বর্ণনা মতে ঐ রাতে ১১ জন ছাহাবী একই আযানের স্বপ্ন দেখেন’। [4] উল্লেখ্য যে, ওমর ফারূক (রাঃ) ২০ দিন পূর্বে উক্ত স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ আগেই বলেছে দেখে লজ্জায় তিনি নিজের কথা প্রকাশ করেননি।[5]

আযানের ফযীলত (فضل الأذان) :

(১) আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,

لاَ يَسْمَعُ مَدَى صَوْتِ الْمُؤَذِّنِ جِنٌّ وَّلاَ إِنْسٌ وَّ لاَ شَيْئٌ إِلاَّ شَهِدَ لَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ رواه البخاريُّ-

‘মুওয়ায্যিনের আযানের ধ্বনি জিন ও ইনসান সহ যত প্রাণী শুনবে, ক্বিয়ামতের দিন সকলে তার জন্য সাক্ষ্য প্রদান করবে’। [6]

(২) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন যে, ‘ক্বিয়ামতের দিন মুওয়ায্যিনের গর্দান সবচেয়ে উঁচু হবে’।[7]

(৩) মুওয়ায্যিনের আযান ধ্বনির শেষ সীমা পর্যন্ত সজীব ও নির্জীব সকল বস্ত্ত তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে ও সাক্ষ্য প্রদান করে। ঐ আযান শুনে যে ব্যক্তি ছালাতে যোগ দিবে, সে ২৫ ছালাতের সমপরিমাণ নেকী পাবে। মুওয়ায্যিনও উক্ত মুছল্লীর সমপরিমাণ নেকী পাবে এবং তার দুই আযানের মধ্যবর্তী সকল (ছগীরা) গুনাহ মাফ করা হবে’।[8]

(৪) ‘আযান ও এক্বামতের ধ্বনি শুনলে শয়তান ছুটে পালিয়ে যায় ও পরে ফিরে আসে’।[9]

(৫) যে ব্যক্তি বার বছর যাবৎ আযান দিল, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেল। তার প্রতি আযানের জন্য ৬০ নেকী ও এক্বামতের জন্য ৩০ নেকী লেখা হয়’। [10]

(৬) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ইমাম হ’ল (মুছল্লীদের ছালাতের) যামিন ও মুওয়ায্যিন হ’ল (তাদের ছালাতের) আমানতদার। অতঃপর তিনি তাদের জন্য দো‘আ করে বলেন, হে আল্লাহ! তুমি ইমামদের সুপথ প্রদর্শন কর ও মুওয়ায্যিনদের ক্ষমা কর।[11]

[1] . মির‘আত ২/৩৪৪-৩৪৫, ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘আযান’ অনুচ্ছেদ-৪।

[2] . আবুদাঊদ হা/৪৯৯, ‘আওনুল মা‘বূদ হা/৪৯৪-৪৯৫, ২/১৬৫-৭৫; আবুদাঊদ, দারেমী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৬৫০।

[3] . আবুদাঊদ, (আওনুল মা‘বূদ সহ) হা/৪৯৫; মিশকাত হা/৬৫০।

[4] . মিরক্বাত শরহ মিশকাত ‘আযান’ অনুচ্ছেদ ২/১৪৯ পৃঃ।

[5] . আবুদাঊদ (আওনুল মা‘বূদ সহ) হা/৪৯৪ ‘আযানের সূচনা’ অনুচ্ছেদ।

[6] . বুখারী, মিশকাত হা/৬৫৬ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘আযানের ফযীলত’ অনুচ্ছেদ-৫।


Kazi Abdul Malek, 2012

তায়াম্মুমের বিবরণ (صفة التيمم)

সংজ্ঞা : তায়াম্মুম (التيمم) অর্থ ‘সংকল্প করা’। পারিভাষিক অর্থে : ‘পানি না পাওয়া গেলে ওযূ বা গোসলের পরিবর্তে পাক মাটি দ্বারা পবিত্রতা অর্জনের ইসলামী পদ্ধতিকে ‘তায়াম্মুম’ বলে’। এটি মুসলিম উম্মাহর জন্য আল্লাহর অন্যতম বিশেষ অনুগ্রহ। যা ইতিপূর্বে কোন উম্মতকে দেওয়া হয়নি। [77] আল্লাহ বলেন,

وَإِنْ كُنْتُمْ مَرْضَى أَوْ عَلَى سَفَرٍ أَوْ جَاءَ أَحَدٌ مِنْكُمْ مِنَ الْغَائِطِ أَوْ لآمَسْتُمُ النِّسَاءَ فَلَمْ تَجِدُوْا مَآءً فَتَيَمَّمُوْا صَعِيْدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوْا بِوُجُوْهِكُمْ وَأَيْدِيْكُمْ مِنْهُ

‘আর যদি তোমরা পীড়িত হও কিংবা সফরে থাক অথবা পায়খানা থেকে আস কিংবা স্ত্রী স্পর্শ করে থাক, অতঃপর পানি না পাও, তাহ’লে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা ‘তায়াম্মুম’ কর ও তা দ্বারা তোমাদের মুখমন্ডল ও হস্তদ্বয় মাসাহ কর’...।[78]

পদ্ধতি : পবিত্রতা অর্জনের নিয়তে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে মাটির উপর দু’হাত মেরে তাতে ফুঁক দিয়ে মুখমন্ডল ও দু’হাতের কব্জি পর্যন্ত একবার বুলাবে।[79] দুইবার হাত মারা ও কনুই পর্যন্ত মাসাহ করার হাদীছ যঈফ। [80]

তায়াম্মুমের কারণ সমূহ :

(১) যদি পাক পানি না পাওয়া যায়
(২) পানি পেতে গেলে যদি ছালাত ক্বাযা হওয়ার ভয় থাকে
(৩) পানি ব্যবহারে যদি রোগ বৃদ্ধির আশংকা থাকে
(৪) যদি কোন বিপদ বা জীবনের ঝুঁকি থাকে ইত্যাদি। উপরোক্ত কারণ সমূহের প্রেক্ষিতে ওযূ বা ফরয গোসলের পরিবর্তে প্রয়োজনে দীর্ঘদিন যাবৎ একটানা ‘তায়াম্মুম’ করা যাবে। [81]

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,

إِنَّ الصَّعِيْدَ الطَّيِّبَ وَضُوْءُ الْمُسْلِمِ وَإِنْ لَمْ يَجِدِ الْمَاءَ عَشْرَ سِنِيْنَ...

‘নিশ্চয়ই পবিত্র মাটি মুসলমানদের জন্য ওযূর মাধ্যম স্বরূপ। যদিও সে ১০ বছর পর্যন্ত পানি না পায়’। [82]

পবিত্র মাটি :

আরবী পরিভাষায় ‘মাটি’ বলতে ভূ-পৃষ্ঠকে বুঝায়।[83] আরব দেশের মাটি অধিকাংশ পাথুরে ও বালুকাময়। বিভিন্ন সফরে আল্লাহর নবী (ছাঃ) ও ছাহাবীগণ বালুকাময় মরুভূমির মধ্য দিয়ে বহু দূরের রাস্তা অতিক্রম করতেন। বিশেষ করে মদ্বীনা হ’তে প্রায় ৭৫০ কি: মি: দূরে ৯ম হিজরীর রজব মোতাবেক ৬৩০ খৃষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে তাবূক যুদ্ধের সফরে তাঁরা মরুভূমির মধ্যে দারুণ পানির কষ্টে পড়েছিলেন। কিন্তু ‘তায়াম্মুমের’ জন্য দূর থেকে মাটি বহন করে নিয়ে গিয়েছিলেন বলে জানা যায় না। অতএব ভূ-পৃষ্ঠের মাটি, বালি বা পাথুরে মাটি ইত্যাদি দিয়ে ‘তায়াম্মুম’ করা যাবে। তবে ধুলা-মাটিহীন স্বচ্ছ পাথর, কাঠ, কয়লা, লোহা, মোজাইক, প্লাষ্টার, টাইলস, চুন ইত্যাদি দ্বারা ‘তায়াম্মুম’ জায়েয নয়।[84]

জ্ঞাতব্য :

(১) ‘তায়াম্মুম’ করে ছালাত আদায়ের পরে ওয়াক্তের মধ্যে পানি পাওয়া গেলে পুনরায় ঐ ছালাত আদায় করতে হবে না। [85]

(২) ওযূর মাধ্যমে যেসব কাজ করা যায়, তায়াম্মুমের দ্বারা সেসব কাজ করা যায়। অমনিভাবে যেসব কারণে ওযূ ভঙ্গ হয়, সেসব কারণে ‘তায়াম্মুম’ ভঙ্গ হয়।

(৩) যদি মাটি বা পানি কিছুই না পাওয়া যায়, তাহ’লে বিনা ওযূতেই ছালাত আদায় করবে।[86]

[77] . ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৫৯। এটি ছিল মুসলিম উম্মাহর জন্য আবুবকর-পরিবারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অবদান। কেননা সম্ভবত: ৫ম হিজরী সনে বনুল মুছত্বালিক্ব যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে মদীনার উপকণ্ঠে ‘বায়দা’ (البَيْدَاء) নামক স্থানে পৌঁছে আয়েশা (রাঃ)-এর গলার হার হারিয়ে যায়। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সেটি খোঁজার জন্য কাফেলা থামিয়ে দেন। কিন্তু সেখানে কোন পানি ছিল না। ফলে এভাবেই পানি ছাড়া সকাল হয়ে যায়। তখন আল্লাহ তায়াম্মুমের আয়াত নাযিল করেন (মায়েদাহ ৬)। ছাহাবী উসায়েদ বিন হুযায়ের (রাঃ) হযরত আবুবকর (রাঃ)-কে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, হে আবুবকর-পরিবার! এটি উম্মতের জন্য আপনাদের প্রথম অবদান নয় (مَا هِىَ بِأَوَّلِ بَرَكَتِكُمْ يَا آلَ أَبِى بَكْرٍ)’। আয়েশা (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমরা উট উঠিয়ে দিলাম, যার উপরে আমরা ছিলাম এবং তার নীচে হারটি পেয়ে গেলাম’ (বুখারী, ফৎহুল বারী হা/৩৩৪ ‘তায়াম্মুম’ অধ্যায়-৭, হা/৪৬০৮ ‘তাফসীর’ অধ্যায়-৬৫, অনুচ্ছেদ-৩; মুসলিম হা/৮৪২ ‘তায়াম্মুম’ অনুচ্ছেদ-২৮)।

[78] . মায়েদাহ ৫/৬, নিসা ৪/৪৩।

[79] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১; তিরমিযী, ইবনু মাজাহ প্রভৃতি মিশকাত হা/৪০২ ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩, অনুচ্ছেদ-৪; আবুদাঊদ হা/১০১-০২; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৫২৮ ‘তায়াম্মুম’ অনুচ্ছেদ-১০।

[80] . আবুদাঊদ হা/৩৩০, অনুচ্ছেদ-১২৪; ঐ, মিশকাত হা/৪৬৬ ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩, অনুচ্ছেদ-৬।

[81] . মায়েদাহ ৫/৬; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৫২৭ ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩, ‘তায়াম্মুম’ অনুচ্ছেদ-১০ ; বুখারী হা/৩৪৪, ১/৪৯ পৃঃ; আহমাদ, তিরমিযী ইত্যাদি মিশকাত হা/৫৩০।

[82] . আহমাদ, তিরমিযী, আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/৫৩০, ‘তায়াম্মুম’ অনুচ্ছেদ-১০।


Monjurul Islam

গোসলের বিবরণ (صفة الغسل)

সংজ্ঞা : ‘গোসল’ (الغُسْلُ) অর্থ ধৌত করা। শারঈ পরিভাষায় গোসল অর্থ : পবিত্রতা অর্জনের নিয়তে ওযূ করে সর্বাঙ্গ ধৌত করা। গোসল দু’প্রকার : ফরয ও মুস্তাহাব।

(১) ফরয : ঐ গোসলকে বলা হয়, যা করা অপরিহার্য। বালেগ বয়সে নাপাক হ’লে গোসল ফরয হয়। যেমন- আল্লাহ বলেন, وَ إِنْ كُنْتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُوْا ‘যদি তোমরা নাপাক হয়ে থাক, তবে গোসল কর’ (মায়েদাহ ৬)

(২) মুস্তাহাব : ঐ গোসলকে বলা হয়, যা অপরিহার্য নয়। কিন্তু করলে নেকী আছে। যেমন- জুম‘আর দিনে বা দুই ঈদের দিনে গোসল করা। সাধারণ গোসলের পূর্বে ওযূ করা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। সাইয়িদ সাবিক্ব একে ‘মানদূব’ (পসন্দনীয়) বলেছেন।[62]

গোসলের পদ্ধতি : ফরয গোসলের জন্য প্রথমে দু’হাতের কব্জি পর্যন্ত ধুবে ও পরে নাপাকী ছাফ করবে। অতঃপর ‘বিসমিল্লাহ’ বলে ছালাতের ওযূর ন্যায় ওযূ করবে। অতঃপর প্রথমে মাথায় তিনবার পানি ঢেলে চুলের গোড়ায় খিলাল করে ভালভাবে পানি পৌঁছাবে। তারপর সারা দেহে পানি ঢালবে ও গোসল সম্পন্ন করবে। [63]

জ্ঞাতব্য : (১) গোসলের সময় মেয়েদের মাথার খোপা খোলার দরকার নেই। কেবল চুলের গোড়ায় তিনবার তিন চুল্লু পানি পৌঁছাতে হবে। অতঃপর সারা দেহে পানি ঢালবে। [64]

(২) রাসূল (ছাঃ) এক মুদ্দ (৬২৫ গ্রাম) পানি দিয়ে ওযূ এবং অনধিক পাঁচ মুদ্দ (৩১২৫ গ্রাম) বা প্রায় সোয়া তিন কেজি পানি দিয়ে গোসল করতেন। [65] প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি অপচয় করা ঠিক নয়।

(৩) নারী হৌক পুরুষ হৌক সকলকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পর্দার মধ্যে গোসল করতে নির্দেশ দিয়েছেন।[66]

(৪) বাথরুমে বা পর্দার মধ্যে বা দূরে লোকচক্ষুর অন্তরালে নগ্নাবস্থায় গোসল করায় কোন দোষ নেই।[67]

(৫) ওযূ সহ গোসল করার পর ওযূ ভঙ্গ না হ’লে পুনরায় ওযূর প্রয়োজন নেই।[68]

(৬) ফরয গোসলের পূর্বে নাপাক অবস্থায় পবিত্র কুরআন স্পর্শ করা যাবে না। তবে মুখে কুরআন পাঠ করা এবং মসজিদে প্রবেশ করা জায়েয আছে।[69] সাধারণ অপবিত্রতায় কুরআন স্পর্শ করা বা বহন করা জায়েয আছে। [70]

মুস্তাহাব গোসল সমূহ :

(১) জুম‘আর ছালাতের পূর্বে গোসল করা।[71]

(২) মোর্দা গোসল দানকারীর জন্য গোসল করা।[72]

(৩) ইসলাম গ্রহণের সময় গোসল করা।[73]

(৪) হজ্জ বা ওমরাহর জন্য ইহরাম বাঁধার পূর্বে গোসল করা।[74]

(৫) আরাফার দিন গোসল করা।[75]

(৬) দুই ঈদের দিন সকালে গোসল করা।[76]

[62] . ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৪১।

[63] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৩৫।

[64] . মুসলিম, মিশকাত হা/৪৩৮।

[65] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, ইরওয়াউল গালীল হা/১৩৯; চার মুদ্দে এক ছা‘ হয়। ইরওয়া, উক্ত হাদীছের টীকা ১/১৭০ পৃঃ; আবুদাঊদ হা/৯৬।

[66] . আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/৪৪৭।

[67] . মুসলিম হা/৩৩৯; বুখারী হা/২৭৮; ঐ, মিশকাত হা/৫৭০৬-০৭; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৫৮।

[68] . আবুদাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ, মিশকাত হা/৪৪৫।

[69] . ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৫১-৫২।

[70] . ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৪৩।


Abdul Kadir mamo
ওযূ ভঙ্গের কারণ সমূহ (نواقض الوضوء)

১. পেশাব পায়খানার রাস্তা দিয়ে দেহ থেকে কোন কিছু নির্গত হ’লে ওযূ ভঙ্গ হয়। বিভিন্ন ছহীহ হাদীছের আলোকে প্রমাণিত হয় যে, এটিই হ’ল ওযূ ভঙ্গের প্রধান কারণ। পেটের গন্ডগোল, ঘুম, যৌন উত্তেজনা ইত্যাদি কারণে যদি কেউ সন্দেহে পতিত হয় যে, ওযূ টুটে গেছে, তাহ’লে পুনরায় ওযূ করবে। আর যদি কোন শব্দ, গন্ধ বা চিহ্ন না পান এবং নিজের ওযূর ব্যাপারে নিশ্চিত থাকেন, তাহ’লে পুনরায় ওযূর প্রয়োজন নেই। ‘ইস্তেহাযা’ ব্যতীত কম হৌক বা বেশী হৌক অন্য কোন রক্ত প্রবাহের কারণে ওযূ ভঙ্গ হওয়ার কোন ছহীহ দলীল নেই।[61]

[61] . আলবানী, মিশকাত হা/৩৩৩ -এর টীকা দ্র:; দারাকুৎনী বর্ণিত ‘প্রত্যেক প্রবাহিত রক্তের জন্য ওযূ’ (الوضوء من كل دم سائل)-এর ব্যাখ্যায়।


Abul Kalam 2017

 ওযূ ও মাসাহর অন্যান্য মাসায়েল (مسائل أخري فى الوضوء والمسح)

(১) ওযূর অঙ্গগুলি এক, দুই বা তিনবার করে ধোয়া যাবে।[32] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তিনবার করেই বেশী ধুতেন। [33] তিনের অধিকবার বাড়াবাড়ি।[34] ধোয়ার মধ্যে জোড়-বেজোড় করা যাবে।[35]

(২) ওযূর মধ্যে ‘তারতীব’ বা ধারাবাহিকতা বজায় রাখা যরূরী।[36]

(৩) ওযূর অঙ্গগুলির নখ পরিমাণ স্থান শুষ্ক থাকলেও পুনরায় ওযূ করতে হবে।[37] দাড়ির গোড়ায় পানি পৌঁছানোর চেষ্টা করতে হবে। না পৌঁছলেও ওযূ সিদ্ধ হবে।[38]

(৪) শীতে হৌক বা গ্রীষ্মে হৌক পূর্ণভাবে ওযূ করতে হবে।[39] কিন্তু পানির অপচয় করা যাবে না। আল্লাহর নবী (ছাঃ) সাধারণতঃ এক ‘মুদ্দ’ বা ৬২৫ গ্রাম পানি দিয়ে ওযূ করতেন।[40]

(৫) ওযূর জন্য ব্যবহৃত পানি বা ওযূ শেষে পাত্রে অবশিষ্ট পানি নাপাক হয় না। বরং তা দিয়ে পুনরায় ওযূ বা পবিত্রতা হাছিল করা চলে। রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম একই ওযূর পাত্রে বারবার হাত ডুবিয়ে ওযূ করেছেন।[41]

(৬) ওযূর অঙ্গগুলি ডান দিক থেকে ধৌত করা সুন্নাত।[42]

(৭) ওযূ শেষে পবিত্র তোয়ালে, গামছা বা অনুরূপ কিছু দ্বারা ভিজা অঙ্গ মোছা জায়েয আছে।[43]

(৮) ওযূ থাক বা না থাক, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) প্রতি ওয়াক্ত ছালাতের পূর্বে ওযূ করায় অভ্যস্ত ছিলেন।[44] তবে মক্কা বিজয়ের দিন তিনি এক ওযূতে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করেন এবং এ সময় মোযার উপর ‘মাসাহ’ করেন।[45]

(৯) মুখে ওযূর নিয়ত পড়ার কোন দলীল নেই। ওযূ করাকালীন সময়ে পৃথক কোন দো‘আ আছে বলে জানা যায় না। অনুরূপভাবে ওযূর প্রত্যেক অঙ্গ ধোয়ার পৃথক পৃথক দো‘আর হাদীছ ‘জাল’।[46] ওযূ শেষে সূরায়ে ‘ক্বদর’ পাঠ করার হাদীছ মওযূ বা জাল। [47]

(১০) গর্দান মাসাহ করার কোন বিশুদ্ধ প্রমাণ নেই। ইমাম নবভী (রহঃ) একে ‘বিদ‘আত’ বলেছেন।[48] ‘যে ব্যক্তি ওযূতে ঘাড় মাসাহ করবে, ক্বিয়ামতের দিন তার গলায় বেড়ী পরানো হবেনা’ বলে যে হাদীছ বলা হয়ে থাকে, সেটি মওযূ বা জাল। [49]

(১১) ‘মাসাহ’ অর্থ স্পর্শ করা। পারিভাষিক অর্থ, ‘ওযূর অঙ্গে ভিজা হাত নরমভাবে বুলানো, যা মাথা বা মোযার উপরে করা হয়’। জুতা ব্যতীত যে বস্ত্ত দ্বারা পুরা পায়ের পাতা টাখনুর উপর পর্যন্ত ঢেকে রাখা হয়, তাকে ‘মোযা’ বলা হয়। চাই সেটা চামড়ার হৌক বা সুতী হৌক বা পশমী হৌক, পাতলা হৌক বা মোটা হউক’। আশারায়ে মুবাশশারাহ সহ ৮০ জন ছাহাবী মোযার উপর মাসাহর হাদীছ বর্ণনা করেছেন। এ হাদীছ মুতাওয়াতির পর্যায়ভুক্ত’। নববী বলেন, সফরে বা বাড়ীতে প্রয়োজনে বা অন্য কারণে মোযার উপর মাসাহ করা বিষয়ে বিদ্বানগণের ঐক্যমত রয়েছে।[50]

(১২) ওযূ সহ পায়ে মোযা পরা থাকলে[51] নতুন ওযূর সময়ে মোযার উপরিভাগে[52] দুই হাতের ভিজা আংগুল পায়ের পাতা হ’তে টাখ্নু পর্যন্ত টেনে এনে একবার মাসাহ করবে। [53] মুক্বীম অবস্থায় একদিন একরাত ও মুসাফির অবস্থায় তিনদিন তিনরাত একটানা মোযার উপরে মাসাহ করা চলবে, যতক্ষণ না গোসল ফরয হয় (অথবা খুলে ফেলা হয়)।[54]

(১৩) ওযূর অঙ্গে যখমপট্টি বাঁধা থাকলে এবং তাতে পানি লাগলে রোগ বৃদ্ধির আশংকা থাকলে তার উপর দিয়ে ভিজা হাতে মাসাহ করবে। [55]

(১৪) পবিত্র জুতা বা যে কোন ধরনের পাক মোযার উপরে মাসাহ করা চলবে।[56] জুতার নীচে নাপাকী লাগলে তা মাটিতে ভালভাবে ঘষে নিলে পাক হয়ে যাবে এবং ঐ জুতার উপরে মাসাহ করা চলবে।[57]

(১৫) হালাল পশুর মল-মূত্র পাক।[58] অতএব এসব পোষাকে লাগলে তা নাপাক হবে না।

(১৬) দুগ্ধপোষ্য কন্যাশিশুর পেশাব কাপড়ে লাগলে ঐ স্থানটুকু ধুয়ে ফেলবে। ছেলে শিশু হ’লে সেখানে পানির ছিটা দিবে। [59]

(১৭) বীর্য ও তার আগে-পিছে নির্গত সর্দির ন্যায় আঠালো বস্ত্তকে যথাক্রমে মনী, মযী ও অদী বলা হয়। উত্তেজনাবশে বীর্যপাতে গোসল ফরয হয়। বাকী দু’টিতে কেবল অঙ্গ ধুতে হয় ও ওযূ করতে হয়। কাপড়ে লাগলে কেবল ঐ স্থানটুকু ধুবে বা সেখানে পানি ছিটিয়ে দিবে। আর শুকনা হ’লে নখ দিয়ে খুটে ফেলবে। [60] ঐ কাপড়ে ছালাত সিদ্ধ হবে।

[32] . বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩৯৫-৯৭, ‘ওযূর সুন্নাত সমূহ’ অনুচ্ছেদ-৪।

[33] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মুসলিম, মিশকাত হা/২৮৭, ৩৯৭; নায়ল ১/২১৪, ২৫৮।

[34] . নাসাঈ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৪১৭।

[35] . ছহীহ ইবনু খুযায়মা হা/১৭২-৭৩।

[36] . সূরা মায়েদাহ ৬; নায়লুল আওত্বার ১/২১৪, ২১৮।

[37] . মুসলিম হা/২৪৩, সুবুলুস সালাম হা/৫০।

[38] . বুখারী হা/১৪০, নায়লুল আওত্বার ১/২২৩, ২২৬।

[39] . মুসলিম, মিশকাত হা/৩৯৮।

TahmidurRahman, Ramisha

ওযূর বিবরণ (صفة الوضوء)

ওযূর পূর্বে ভালভাবে মিসওয়াক করা সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,

لَوْلاَ أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِيْ لَأَمَرْتُهُم ْ بِتَأْخِيْرِ الْعِشَاءِ وَ بِِالسِّوَاكِ عِنْدَ كُلِّ صَلاَةٍ

‘আমার উম্মতের উপর কষ্টকর মনে না করলে আমি তাদেরকে এশার ছালাত দেরীতে এবং প্রতি ছালাতে মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম’।[11] এখানে ‘প্রতি ছালাতে’ অর্থ ‘প্রতি ছালাতের জন্য ওযূ করার সময়’। [12] অতএব ঘুম থেকে উঠে এবং প্রতি ওয়াক্ত ছালাতের জন্য ওযূর পূর্বে মিসওয়াক করা উত্তম। এই সময় জিহবার উপরে ভালভাবে হাত ঘষে গরগরা ও কুলি করবে।

ওযূর তরীকা :
(১) প্রথমে মনে মনে ওযূর নিয়ত করবে।[13] অতঃপর
(২) ‘বিসমিল্লাহ’ বলবে। [14] অতঃপর
(৩) ডান হাতে পানি নিয়ে[15] দুই হাত কব্জি সমেত ধুবে[16] এবং আঙ্গুল সমূহ খিলাল করবে।[17] এরপর
(৪) ডান হাতে পানি নিয়ে ভালভাবে কুলি করবে ও প্রয়োজনে নতুন পানি নিয়ে নাকে দিয়ে বাম হাতে ভালভাবে নাক ঝাড়বে।[18] তারপর
(৫) কপালের গোড়া থেকে দুই কানের লতী হয়ে থুৎনীর নীচ পর্যন্ত পুরা মুখমন্ডল ধৌত করবে [19] ও দাড়ি খিলাল করবে।[20] এজন্য এক অঞ্জলি পানি নিয়ে থুৎনীর নীচে দিবে।[21] অতঃপর
(৬) প্রথমে ডান ও পরে বাম হাত কনুই সমেত ধুবে। [22] এরপর
(৭) পানি নিয়ে[23] দু’হাতের ভিজা আংগুলগুলি মাথার সম্মুখ হ’তে পিছনে ও পিছন হ’তে সম্মুখে বুলিয়ে একবার পুরা মাথা মাসাহ করবে।[24] একই সাথে ভিজা শাহাদাত আংগুল দ্বারা কানের ভিতর অংশে ও বুড়ো আংগুল দ্বারা পিছন অংশে মাসাহ করবে।[25] পাগড়ীবিহীন অবস্থায় মাথার কিছু অংশ বা এক চতুর্থাংশ মাথা মাসাহ করার কোন দলীল নেই। বরং কেবল পূর্ণ মাথা অথবা মাথার সামনের কিছু অংশ সহ পাগড়ীর উপর মাসাহ অথবা কেবল পাগড়ীর উপর মাসাহ প্রমাণিত।[26] অতঃপর
(৮) ডান ও বাম পায়ের টাখনু সমেত ভালভাবে ধুবে [27] ও বাম হাতের আংগুল দ্বারা[28] পায়ের আংগুল সমূহ খিলাল করবে।
(৯) এভাবে ওযূ শেষে বাম হাতে কিছু পানি নিয়ে লজ্জাস্থান বরাবর ছিটিয়ে দিবে[29] ও নিম্নোক্ত দো‘আ পাঠ করবে-

أَشْهَدُ أَنْ لآ إلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ، اَللَّهُمَّ اجْعَلْنِيْ مِنَ التَّوابِيْنَ وَاجْعَلْنِيْ مِنَ الْمُتَطَهِّرِيْنَ-

উচ্চারণ : আশহাদু আল লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ লা-শারীকা লাহূ, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আব্দুহূ ওয়া রাসূলুহু। আল্লা-হুম্মাজ্‘আলনী মিনাত্ তাউয়াবীনা ওয়াজ্‘আলনী মিনাল মুতাত্বাহহিরীন।

অর্থ : ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তিনি একক ও শরীক বিহীন। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (ছাঃ) তাঁর বান্দা ও রাসূল’ (মুসলিম)। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে তওবাকারীদের ও পবিত্রতা অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন!! (তিরমিযী)।

ওমর ফারূক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত উক্ত হাদীছে রাসূল (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি পূর্ণভাবে ওযূ করবে ও কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ করবে, তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজাই খুলে দেওয়া হবে। যেটা দিয়ে ইচ্ছা সে প্রবেশ করবে’।[30] উল্লেখ্য যে, এই দো‘আ পাঠের সময় আসমানের দিকে তাকানোর হাদীছটি ‘মুনকার’ বা যঈফ।[31]

[11] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৩৭৬ ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩, ‘মিসওয়াক’ অনুচ্ছেদ-৩।

[12] . কেননা উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যা অন্য হাদীছে এসেছে مَعَ كُلِّ وُضُوْءٍও عِنْدَ كُلِّ وُضُوْءٍ অর্থাৎ ‘প্রত্যেক ওযূর সাথে বা সময়ে’ (আহমাদ ও বুখারী- তা‘লীক্ব ‘ছওম’ অধ্যায়, ২৭ অনুচ্ছেদ); আলবানী, ইরওয়াউল গালীল হা/৭০, ১/১০৯।

[13] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১।

[14] . আহমাদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৪০২, ‘ওযূর সুন্নাত সমূহ’ অনুচ্ছেদ-৪; আবুদাঊদ হা/১০১-০২; সুবুলুস সালাম হা/৪৬৩; নওয়াব ছিদ্দীক হাসান খান ভূপালী একে ‘ফরয’ গণ্য করেছেন- আর-রওযাতুন নাদিইয়াহ ১/১১৭।

[15] . আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪০১; নায়লুল আওত্বার ১/২০৬ ‘কুলি করার পূর্বে দু’হাত ধোয়া’ অনুচ্ছেদ।

[16] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, আহমাদ, নাসাঈ, নায়লুল আওত্বার ১/২০৬ ও ২১০।

[17] . নাসাঈ, আবুদাঊদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৪০৫ ‘ওযূর সুন্নাত সমূহ’ অনুচ্ছেদ-৪।

[18] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৩৯৪; দারেমী, মিশকাত হা/৪১১; মিরক্বাত ২/১৪ পৃঃ; মাজমূ‘ ফাতাওয়া উছায়মীন (রিয়াদ: ১ম সংস্করণ ১৪১৯/১৯৯৯) ১২/২৫৭ পৃঃ ।

[19] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, নায়লুল আওত্বার ১/২১০।


Kalim Uddin, Humayun Kabir, Shah Newaj with Ali Hossain Chairman,
ওযূ (الوُضوء)

ছালাতের আবশ্যিক পূর্বশর্ত হ’ল ত্বাহারৎ বা পবিত্রতা অর্জন করা। যা দু’প্রকারের : আভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক, অর্থাৎ দৈহিক। ‘আভ্যন্তরীণ পবিত্রতা’ বলতে বুঝায় হৃদয়কে যাবতীয় শিরকী আক্বীদা ও ‘রিয়া’ মুক্ত রাখা এবং আল্লাহর ভালবাসার ঊর্ধ্বে অন্যের ভালবাসাকে হৃদয়ে স্থান না দেওয়া। ‘দৈহিক পবিত্রতা’ বলতে বুঝায় শারঈ তরীকায় ওযূ, গোসল বা তায়াম্মুম সম্পন্ন করা। আল্লাহ বলেন,

 إِنَّ اللهَ يُحِبُّ التَّوَّابِيْنَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِيْنَ (البقرة ২২২)-

নিশ্চয়ই আল্লাহ (অন্তর থেকে) তওবাকারী ও (দৈহিকভাবে) পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালবাসেন’ (বাক্বারাহ ২/২২২) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,

 لاَ تُقْبَلُ صَلاَةٌ بِغَيْرِ طُهُوْرٍ وَلاَ صَدَقَةٌ مِنْ غُلُوْلٍ ‘ 

পবিত্রতা অর্জন ব্যতীত কারু ছালাত কবুল হয় না এবং হারাম মালের ছাদাক্বা কবুল হয় না’। [1]

মুছল্লীর জন্য দৈহিক পবিত্রতা অর্জন করা অত্যন্ত যরূরী। কেননা এর ফলে বাহ্যিক পবিত্রতা হাছিলের সাথে সাথে মানসিক প্রশান্তি সৃষ্টি হয়, শয়তানী খেয়াল দূরীভূত হয় এবং মুমিনকে আল্লাহর আনুগত্যের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে। ইসলামে দৈহিক পবিত্রতা হাছিলের তিনটি পদ্ধতি রয়েছে- ওযূ, গোসল ও তায়াম্মুম।


(ক) ওযূ (الوُضوء) আভিধানিক অর্থ স্বচ্ছতা (الوَضاءة)। পারিভাষিক অর্থে পবিত্র পানি দ্বারা শারঈ পদ্ধতিতে হাত, মুখ, পা ধৌত করা ও (ভিজা হাতে) মাথা মাসাহ করাকে ‘ওযূ’ বলে।

ওযূর ফরয : ওযূর মধ্যে ফরয হ’ল চারটি। ১. কুলি করা, নাকে পানি দেওয়া ও ঝাড়া সহ পুরা মুখমন্ডল ভালভাবে ধৌত করা। ২. দুই হাত কনুই সমেত ধৌত করা, ৩. (ভিজা হাতে) কানসহ মাথা মাসাহ করা ও ৪. দুই পা টাখনু সমেত ধৌত করা।

যেমন আল্লাহ বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلاَةِ فَاغْسِلُوْا وُجُوْهَكُمْ وَأَيْدِيْكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوْا بِرُءُوْسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ ... (المائدة 6)

অর্থ : ‘হে বিশ্বাসীগণ! যখন তোমরা ছালাতের জন্য প্রস্ত্তত হও, তখন তোমাদের মুখমন্ডল ও হস্তদ্বয় কনুই সমেত ধৌত কর এবং তোমাদের মাথা মাসাহ কর ও পদযুগল টাখনু সমেত ধৌত কর.....’ (মায়েদাহ ৬)।[2]

অত্র আয়াতে বর্ণিত চারটি ফরয বাদে ওযূর বাকী সবই সুন্নাত।

ওযূর ফযীলত ( فضائل الوضوء) :

(১) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,...... কালো ঘোড়া সমূহের মধ্যে কপাল চিতা ঘোড়া যেভাবে চেনা যায়.. ক্বিয়ামতের দিন আমার উম্মতের ওযূর অঙ্গগুলির ঔজ্জ্বল্য দেখে আমি তাদেরকে অনুরূপভাবে চিনব এবং তাদেরকে হাউয কাওছারের পানি পান করানোর জন্য আগেই পৌঁছে যাব’।[3] ‘অতএব যে চায় সে যেন তার ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে চেষ্টা করে’।[4]

(২) তিনি বলেন, ‘আমি কি তোমাদের বলব কোন্ বস্ত্ত দ্বারা আল্লাহ তোমাদের গোনাহ সমূহ অধিকহারে দূর করেন ও সম্মানের স্তর বৃদ্ধি করেন?..... সেটি হ’ল কষ্টের সময় ভালভাবে ওযূ করা, বেশী বেশী মসজিদে যাওয়া ও এক ছালাতের পরে আরেক ছালাতের জন্য অপেক্ষা করা’।[5]

(৩) তিনি আরও বলেন, ‘ছালাতের চাবি হ’ল ওযূ’।[6]

(৪) তিনি বলেন, ‘মুসলমান যখন ফরয ছালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে সুন্দরভাবে ওযূ করে এবং পূর্ণ মনোনিবেশ ও ভীতি সহকারে সুষ্ঠুভাবে রুকূ-সিজদা আদায় করে, তখন ঐ ওযূ ও ছালাত তার বিগত সকল গুনাহের কাফফারা হিসাবে গৃহীত হয়। তবে গোনাহে কাবীরাহ ব্যতীত’।[7] অন্য বর্ণনায় এসেছে, ঐ ব্যক্তি গোনাহ থেকে এমনভাবে মুক্ত হয়, যেমনভাবে তার মা তাকে পরিচ্ছন্নভাবে প্রসব করেছিল।[8]

(৫) ওযূ করার পর সর্বদা দু’রাক‘আত ‘তাহিইয়াতুল ওযূ’ এবং মসজিদে প্রবেশ করার পর দু’রাক‘আত ‘তাহিইয়াতুল মাসজিদ’ নফল ছালাত আদায় করবে। এই আকাংখিত সদভ্যাসের কারণেই জান্নাতে বেলাল (রাঃ)-এর অগ্রগামী পদশব্দ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) স্বপ্নের মধ্যে শুনেছিলেন।[9] তবে মসজিদে গিয়ে জামা‘আত চলা অবস্থায় পেলে কিংবা এক্বামত হয়ে গেলে সরাসরি জামা‘আতে যোগ দিবে।[10]

[1] . মুসলিম, মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৩০১, ৩০০ ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩, ‘যা ওযূ ওয়াজিব করে’ অনুচ্ছেদ-১।

[2] . সূরায়ে মায়েদাহ মদীনায় অবতীর্ণ হয়। সেকারণে অনেকের ধারণা ওযূ প্রথম মদীনাতেই ফরয হয়। এটা ঠিক নয়। ইবনু আবদিল বার্র বলেন, মাক্কী জীবনে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বিনা ওযূতে কখনোই ছালাত আদায় করেননি। তবে মাদানী জীবনে অত্র আয়াত নাযিলের মাধ্যমে ওটার ফরযিয়াত ঘোষণা করা হয় মাত্র (দ্র : ফাৎহুল বারী ‘ওযূ’ অধ্যায় ১/১৩৪ পৃঃ)। যায়েদ বিন হারেছাহ (রাঃ) রাসূল (ছাঃ) হ’তে বর্ণনা করেন যে, জিব্রীল প্রথম দিকে যখন তাঁর নিকটে ‘অহি’ নিয়ে আসেন, তখন তাঁকে ওযূ ও ছালাত শিক্ষা দেন’...(আহমাদ, ইবনু মাজাহ হা/৪৬২; দারাকুৎনী, মিশকাত হা/৩৬৬, ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩, ‘পেশাব-পায়খানার আদব’ অনুচ্ছেদ-২; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৮৪১)।

[3] . মুসলিম, মিশকাত হা/২৯৮, ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩, পরিচ্ছেদ-৩।

[4] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২৯০।

[5] . মুসলিম, মিশকাত হা/২৮২।

[6] . আবুদাঊদ, তিরমিযী, দারেমী, মিশকাত হা/৩১২, ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩, অনুচ্ছেদ-১।

[7] . মুসলিম, মিশকাত হা/২৮৬ ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩, পরিচ্ছেদ-১।



Fahim, Haifa With Kazi md Idrish Morhum2014
ছালাতের ওয়াক্ত সমূহ ( مواقيت الصلاة)

আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সময়ে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করা ফরয। আল্লাহ বলেন, إِنَّ الصَّلاَةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ كِتَابًا مَوْقُوْتًا ‘মুমিনদের উপরে ‘ছালাত’ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্ধারিত করা হয়েছে’ (নিসা ৪/১০৩) মি‘রাজ রজনীতে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ফরয হওয়ার পরের দিন [128] যোহরের সময় জিবরীল (আঃ) এসে প্রথম দিন আউয়াল ওয়াক্তে ও পরের দিন আখেরী ওয়াক্তে নিজ ইমামতিতে পবিত্র কা‘বা চত্বরে মাক্বামে ইবরাহীমের পাশে দাঁড়িয়ে দু’দিনে পাঁচ পাঁচ দশ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে ছালাতের পসন্দনীয় ‘সময়কাল ঐ দুই সময়ের মধ্যে’ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন।[129] তবে আউয়াল ওয়াক্তে ছালাত আদায় করাকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সর্বোত্তম আমল হিসাবে অভিহিত করেছেন।[130] ছালাতের ওয়াক্ত সমূহ নিম্নরূপ :

(১) ফজর: ‘ছুবহে ছাদিক’ হ’তে সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সর্বদা ‘গালাস’ বা ভোরের অন্ধকারে ফজরের ছালাত আদায় করতেন এবং জীবনে একবার মাত্র ‘ইসফার’ বা চারিদিকে ফর্সা হওয়ার সময়ে ফজরের ছালাত আদায় করেছেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এটাই তাঁর নিয়মিত অভ্যাস ছিল’। [131] অতএব ‘গালাস’ ওয়াক্তে অর্থাৎ ভোরের অন্ধকারে ফজরের ছালাত আদায় করাই প্রকৃত সুন্নাত।

(২) যোহর : সূর্য পশ্চিম দিকে ঢললেই যোহরের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং বস্ত্তর নিজস্ব ছায়ার এক গুণ হ’লে শেষ হয়। [132]

(৩) আছর : বস্ত্তর মূল ছায়ার এক গুণ হওয়ার পর হ’তে আছরের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং দু’গুণ হ’লে শেষ হয়। তবে সূর্যাস্তের প্রাক্কালের রক্তিম সময় পর্যন্ত আছর পড়া জায়েয আছে।[133]

(৪) মাগরিব : সূর্য অস্ত যাওয়ার পরেই মাগরিবের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং সূর্যের লালিমা শেষ হওয়া পর্যন্ত বাকী থাকে। [134]

(৫) এশা : মাগরিবের পর হ’তে এশার ওয়াক্ত শুরু হয় এবং মধ্যরাতে শেষ হয়।[135] তবে যরূরী কারণ বশতঃ ফজরের পূর্ব পর্যন্ত এশার ছালাত আদায় করা জায়েয আছে।[136]

প্রচন্ড গ্রীষ্মে যোহরের ছালাত একটু দেরীতে এবং প্রচন্ড শীতে এশার ছালাত একটু আগেভাগে পড়া ভাল। তবে কষ্টবোধ না হ’লে এশার ছালাত রাতের এক তৃতীয়াংশের পর আদায় করা উত্তম।[137]

ছালাতের নিষিদ্ধ সময় :

সূর্যোদয়, মধ্যাহ্ন ও সূর্যাস্ত কালে ছালাত শুরু করা সিদ্ধ নয়। [138]

অনুরূপভাবে আছরের ছালাতের পর হ’তে সূর্যাস্ত পর্যন্ত এবং ফজরের ছালাতের পর হ’তে সূর্যোদয় পর্যন্ত কোন ছালাত নেই’। [139]

তবে এ সময় ক্বাযা ছালাত আদায় করা জায়েয আছে। [140]

বিভিন্ন হাদীছের আলোকে অনেক বিদ্বান নিষিদ্ধ সময়গুলিতে ‘কারণবিশিষ্ট’ ছালাত সমূহ জায়েয বলেছেন। যেমন- তাহিইয়াতুল মাসজিদ, তাহিইয়াতুল ওযূ, সূর্য গ্রহণের ছালাত, জানাযার ছালাত ইত্যাদি। [141]

জুম‘আর ছালাত ঠিক দুপুরের সময় জায়েয আছে। [142]

অমনিভাবে কা‘বা গৃহে দিবারাত্রি সকল সময় ছালাত ও ত্বাওয়াফ জায়েয আছে। [143]

[128] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৫৮৬২-৬৩ ‘ফাযায়েল ও শামায়েল’ অধ্যায়-২৯, ‘মিরাজ’ অনুচ্ছেদ-৬; নায়লুল আওত্বার ২/২৮ পৃঃ।

[129] . (الوَقْتُ مَا بَيْنَ هَذَيْنِ الْوَقْتَيْنِ) আবুদাঊদ হা/৩৯৩; তিরমিযী হা/১৪৯; ঐ, মিশকাত হা/৫৮৩; মুসলিম, মিশকাত হা/৫৮২, ‘ছালাতের ওয়াক্তসমূহ’ অনুচ্ছেদ-১; নায়লুল আওত্বার ২/২৬ পৃঃ।

[130] . سُئِلَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَىُّ الْأَعْمَالِ أَفْضَلُ؟ قَالَ: الصَّلاَةُ لِأَوَّلِ وَقْتِهَا- আহমাদ, আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৬০৭, ‘ছালাত আগেভাগে পড়া’ অনুচ্ছেদ-২; দারাকুৎনী হা/৯৫৬-৫৭।

[131] . আবুদাঊদ হা/৩৯৪, আবু মাসঊদ আনছারী (রাঃ) হ’তে; নায়ল ২/৭৫ পৃঃ; অন্য হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, أَسْفِرُوْا بِالْفَجْرِ فَإِنَّهُ أَعْظَمُ لِلْأَجْرِ ‘তোমরা ফজরের সময় ফর্সা কর। কেননা এটাই নেকীর জন্য উত্তম সময়’ (তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৬১৪)। সাইয়িদ সাবিক্ব বলেন, এর অর্থ হ’ল গালাসে প্রবেশ কর ও ইসফারে বের হও। অর্থাৎ ক্বিরাআত দীর্ঘ কর এবং ফর্সা হ’লে ছালাত শেষে বের হও, যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) করতেন (আবুদাঊদ হা/৩৯৩)। তিনি ফজরের ছালাতে ৬০ হ’তে ১০০টি আয়াত পড়তেন। অথবা এর অর্থ এটাও হ’তে পারে যে, ‘তোমরা ফজর হওয়া সম্পর্কে নিশ্চিত হও। ধারণার ভিত্তিতে ছালাত আদায় করো না’ (তিরমিযী হা/১৫৪-এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৮০ পৃঃ)। আলবানী বলেন, এর অর্থ এই যে, গালাসে ফজরের ছালাত শুরু করবে এবং ইসফারে শেষ করে বের হবে’ (ইরওয়া ১/২৮৭ পৃঃ)।



Oli Vai with Dr. Sayed Abdullah Mohammed Ther Vai,
ছালাত বিনষ্টের কারণ সমূহ ( مفسدات الصلاة)

১. ছালাতরত অবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু খাওয়া বা পান করা।

২. ছালাতের স্বার্থ ব্যতিরেকে অন্য কারণে ইচ্ছাকৃতভাবে কথা বলা।

৩. ইচ্ছাকৃতভাবে বাহুল্য কাজ বা ‘আমলে কাছীর’ করা। যা দেখলে ধারণা হয় যে, সে ছালাতের মধ্যে নয়।

৪. ইচ্ছাকৃত বা বিনা কারণে ছালাতের কোন রুকন বা শর্ত পরিত্যাগ করা।

৫. ছালাতের মধ্যে অধিক হাস্য করা।[127]

[127] . ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২০৫ পৃঃ।


Tanim, Sayed, Shohid, M A Hoque
ছালাতের সুন্নাত সমূহ ( سنن الصلاة)

ফরয ও ওয়াজিব ব্যতীত ছালাতের বাকী সব আমলই সুন্নাত। যেমনঃ

(১) জুম‘আর ফরয ছালাত ব্যতীত দিবসের সকল ছালাত নীরবে ও রাত্রির ফরয ছালাত সমূহ সরবে পড়া।
(২) প্রথম রাক‘আতে ক্বিরাআতের পূর্বে আ‘ঊযুবিল্লাহ... চুপে চুপে পাঠ করা।
(৩) ছালাতে পঠিতব্য সকল দো‘আ
(৪) বুকে হাত বাঁধা
(৫) রাফ‘উল ইয়াদায়েন করা
(৬) ‘আমীন’ বলা
(৭) সিজদায় যাওয়ার সময় মাটিতে আগে হাত রাখা
(৮) ‘জালসায়ে ইস্তেরা-হাত’ করা
(৯) মাটিতে দু’হাতে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ানো
(১০) ছালাতে দাঁড়িয়ে সিজদার স্থানে নযর রাখা
(১১) তাশাহহুদের সময় ডান হাত ৫৩-এর ন্যায় মুষ্টিবদ্ধ করা ও শাহাদাত আঙ্গুল নাড়াতে থাকা। এছাড়া ফরয-ওয়াজিবের বাইরে সকল বৈধ কর্মসমূহ।




My Office
ছালাতের ওয়াজিব সমূহ ( واجبات الصلاة)

রুকন-এর পরেই ওয়াজিব-এর স্থান, যা আবশ্যিক। যা ইচ্ছাকৃতভাবে তরক করলে ছালাত বাতিল হয়ে যায় এবং ভুলক্রমে তরক করলে ‘সিজদায়ে সহো’ দিতে হয়। যা ৮টি। [118] যেমন-

১. ‘তাকবীরে তাহরীমা’ ব্যতীত অন্য সকল তাকবীর।[119]

২. রুকূতে তাসবীহ পড়া। কমপক্ষে ‘সুবহা-না রব্বিয়াল ‘আযীম’ বলা।[120]

৩. ক্বাওমার সময় ‘সামি‘আল্লা-হু লেমান হামেদাহ’ বলা।[121]

৪. ক্বওমার দো‘আ কমপক্ষে ‘রববানা লাকাল হাম্দ’ অথবা ‘আল্লা-হুম্মা রববানা লাকাল হাম্দ’ বলা। [122]

৫. সিজদায় গিয়ে তাসবীহ পড়া। কমপক্ষে ‘সুবহা-না রবিবয়াল আ‘লা’ বলা।[123]

৬. দুই সিজদার মাঝখানে স্থির হয়ে বসা ও দো‘আ পাঠ করা। যেমন কমপক্ষে ‘রবিবগফিরলী’ ২ বার বলা।[124]

৭. প্রথম বৈঠকে বসা ও ‘তাশাহহুদ’ পাঠ করা।[125]

৮. সালামের মাধ্যমে ছালাত শেষ করা।[126]

[118] . মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাব, ‘ছালাতের আরকান ও ওয়াজিবাত’ গৃহীত: মাজমূ‘আ রাসা-ইল ফিছ ছালাত (রিয়াদ: দারুল ইফতা, ১৪০৫ হিঃ) পৃঃ ৭৮।

[119] . বুখারী, মুসলিম ও অন্যান্য, মিশকাত হা/৭৯৯, ৮০১, ‘ছালাতের বিবরণ’ অনুচ্ছেদ-১০; ফিক্বহুস্ সুন্নাহ ১/১২০।

[120] . নাসাঈ, আবুদাঊদ তিরমিযী, মিশকাত হা/৮৮১ ‘রুকূ’ অনুচ্ছেদ-১৩।

[121] . বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/ ৮৭০, ৭৪, ৭৫, ৭৭।

[122] . বুখারী হা/৭৩২-৩৫, ৭৩৮, ‘আযান’ অধ্যায়, ৮২, ৮৩ ও ৮৫ অনুচ্ছেদ; মুসলিম হা/৮৬৮, ‘ছালাত’ অধ্যায়; মুসলিম হা/৯০৪, ৯১৩ ‘ছালাত’ অধ্যায়।

[123] . নাসাঈ, আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/ ৮৮১।

[124] . ইবনু মাজাহ হা/৮৯৭; আবুদাঊদ হা/৮৫০, তিরমিযী হা/২৮৪; নাসাঈ হা/১১৪৫, মিশকাত হা/৯০০, ৯০১ ‘সিজদা ও উহার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ-১৪; নায়ল ৩/১২৯ পৃঃ; মজমু‘আ রাসা-ইল ৭৮ পৃঃ।

Dubai Airport 2011 
ছালাতের রুকন সমূহ ( أركان الصلاة)

রুকন’ অর্থ স্তম্ভ। এগুলি অপরিহার্য বিষয়। যা ইচ্ছাকৃত বা ভুলক্রমে পরিত্যাগ করলে ছালাত বাতিল হয়ে যায়। যা ৭টি। যেমন-

(১) ক্বিয়াম বা দাঁড়ানো : আল্লাহ বলেন, وَقُوْمُوْا ِللهِ قَانِتِيْن َ ‘আর তোমরা আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠচিত্তে দাঁড়িয়ে যাও’ (বাক্বারাহ ২/২৩৮)

(২) তাকবীরে তাহরীমা : অর্থাৎ ‘আল্লাহু আকবর’ বলে দুই হাত কাঁধ অথবা কান পর্যন্ত উঠানো। আল্লাহ বলেন, وَلِرَبَّكَ فَكَبِّرْ ‘তোমার প্রভুর জন্য তাকবীর দাও’ (মুদ্দাছছির ৭৪/৩)। অর্থাৎ তাঁর বড়ত্ব ঘোষণা কর। রাসূলূল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, تَحْرِيْمُهَا التَّكْبِيْرُ وَتَحْلِيْلُهَا التَّسْلِيْمُ- ‘ছালাতের জন্য সবকিছু হারাম হয় তাকবীরের মাধ্যমে এবং সবকিছু হালাল হয় সালাম ফিরানোর মাধ্যমে’।[113]

(৩) সূরায়ে ফাতিহা পাঠ করা : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, لاَ صَلاَةَ لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ- (লা ছালা-তা লেমান লাম ইয়াক্বরা’ বেফা-তিহাতিল কিতা-বে) ‘ঐ ব্যক্তির ছালাত সিদ্ধ নয়, যে ব্যক্তি সূরায়ে ফাতিহা পাঠ করে না’।[114]

( ৪ ও ৫) রুকূ ও সিজদা করা : আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا ارْكَعُوْا وَاسْجُدُوْا... ‘হে মুমিনগণ! তোমরা রুকূ কর ও সিজদা কর...’(হজ্জ ২২/৭৭)।

(৬) তা‘দীলে আরকান বা ধীর-স্থির ভাবে ছালাত আদায় করা :

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ الْمَسْجِدَ فَدَخَلَ رَجُلٌ فَصَلَّى فَسَلَّمَ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَرَدَّ وَقَالَ ارْجِعْ فَصَلِّ فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلِّ فَرَجَعَ يُصَلِّي كَمَا صَلَّى ثُمَّ جَاءَ فَسَلَّمَ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ ارْجِعْ فَصَلِّ فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلِّ ثَلاَثًا فَقَالَ وَالَّذِيْ بَعَثَكَ بِالْحَقِّ مَا أُحْسِنُ غَيْرَهُ فَعَلِّمْنِيْ ....

‘আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, জনৈক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে ছালাত আদায় শেষে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে সালাম দিলে তিনি তাকে সালামের জওয়াব দিয়ে বলেন, তুমি ফিরে যাও এবং ছালাত আদায় কর। কেননা তুমি ছালাত আদায় করনি। এইভাবে লোকটি তিনবার ছালাত আদায় করল ও রাসূল (ছাঃ) তাকে তিনবার ফিরিয়ে দিলেন। তখন লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! যিনি আপনাকে সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন, তাঁর কসম করে বলছি, এর চাইতে সুন্দরভাবে আমি ছালাত আদায় করতে জানিনা। অতএব দয়া করে আপনি আমাকে ছালাত শিখিয়ে দিন! ........ (অতঃপর তিনি তাকে ধীরে-সুস্থে ছালাত আদায় করা শিক্ষা দিলেন)’।[115] হাদীছটি حديث مسيئ الصلاة বা ‘ছালাতে ভুলকারীর হাদীছ’ হিসাবে প্রসিদ্ধ।

(৭) ক্বা‘দায়ে আখীরাহ বা শেষ বৈঠক :

হযরত উম্মে সালামাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর যামানায় মহিলাগণ জামা‘আতে ফরয ছালাত শেষে সালাম ফিরানোর পরে উঠে দাঁড়াতেন এবং রাসূল (ছাঃ) ও পুরুষ মুছল্লীগণ কিছু সময় বসে থাকতেন। অতঃপর যখন রাসূল (ছাঃ) দাঁড়াতেন তখন তাঁরাও দাঁড়াতেন’।[116] এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, শেষ বৈঠকে বসা এবং সালাম ফিরানোটাই ছিল রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের নিয়মিত সুন্নাত।

প্রকাশ থাকে যে, কঠিন অসুখ বা অন্য কোন বাস্তব কারণে অপারগ অবস্থায় উপরোক্ত শর্তাবলী ও রুকন সমূহ ঠিকমত আদায় করা সম্ভব না হ’লে বসে বা শুয়ে ইশারায় ছালাত আদায় করবে।[117] কিন্তু জ্ঞান থাকা পর্যন্ত কোন অবস্থায় ছালাত মাফ নেই।

[113] . আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৩১২ ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩, ‘যা ওযু ওয়াজিব করে’ অনুচ্ছেদ-১; মুসলিম, মিশকাত হা/৭৯১, ‘ছালাতের বিবরণ’ অনুচ্ছেদ-১০।

[114] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৮২২, ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘ছালাতে ক্বিরাআত’ অনুচ্ছেদ-১২, রাবী ‘উবাদাহ বিন ছামিত (রাঃ)। দ্রষ্টব্য : কুতুবে সিত্তাহ সহ অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থ।

[115] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৭৯০, ‘ছালাতের বিবরণ’ অনুচ্ছেদ-১০।

[116] . বুখারী, মিশকাত হা/৯৪৮ ‘তাশাহহুদে দো‘আ’ অনুচ্ছেদ-১৭।

[117] . বুখারী; মিশকাত হা/১২৪৮ ‘কাজে মধ্যপন্থা অবলম্বন’ অনুচ্ছেদ-৩৪; ত্বাবারাণী কাবীর, ছহীহাহ হা/৩২৩।


21 October 2010
ছালাতের শর্তাবলী (شروط الصلاة)

ছালাতের বাইরের কিছু বিষয়, যা না হ’লে ছালাত সিদ্ধ হয় না, সেগুলিকে ‘ছালাতের শর্তাবলী’ বলা হয়। যা ৯টি। যেমন-

(১) মুসলিম হওয়া[89] (২) জ্ঞানসম্পন্ন হওয়া[90] (৩) বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়া ও সেজন্য সাত বছর বয়স থেকেই ছালাত আদায় শুরু করা[91] (৪) দেহ, কাপড় ও স্থান পাক হওয়া [92] (৫) সতর ঢাকা। ছালাতের সময় পুরুষের জন্য দুই কাঁধ ও নাভী হ’তে হাঁটু পর্যন্ত এবং মহিলাদের দুই হাতের তালু ও চেহারা ব্যতীত মাথা হ’তে পায়ের পাতা পর্যন্ত সর্বাঙ্গ সতর হিসাবে ঢাকা।[93] (৬) ওয়াক্ত হওয়া[94] (৭) ওযূ-গোসল বা তায়াম্মুমের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করা (মায়েদাহ ৬)। (৮) ক্বিবলামুখী হওয়া [95] (৯) ছালাতের নিয়ত বা সংকল্প করা।[96]

সতর ও লেবাস সম্পর্কে চারটি শারঈ মূলনীতি :

(১) পোষাক পরিধানের উদ্দেশ্য হবে দেহকে ভালভাবে আবৃত করা। যাতে দেহের গোপনীয় স্থান সমূহ অন্যের চোখে প্রকট হয়ে না ওঠে। [97] (২) ভিতরে-বাইরে তাক্বওয়াশীল হওয়া। এজন্য ঢিলাঢালা, ভদ্র ও পরিচ্ছন্ন পোষাক পরিধান করা। হাদীছে সাদা পোষাক পরিধানের নির্দেশ এসেছে।[98] (৩) অমুসলিমদের সদৃশ না হওয়া। [99] (৪) অপচয় ও অহংকার প্রকাশ না পাওয়া। এজন্য পুরুষ যেন সোনা ও রেশম পরিধান না করে এবং টাখনুর নীচে কাপড় না রাখে।[100]

মস্তকাবরণ :

পৃথিবীর প্রায় সকল জাতির মধ্যে মস্তকাবরণ ব্যবহারের নিয়ম আদিকাল থেকে ছিল, আজও আছে এবং আরবদের মধ্যেও এটা ছিল। আল্লাহ বলেন, خُذُوْا زِيْنَتَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ ‘তোমরা ছালাতের সময় সুন্দর পোষাক পরিধান কর’ (আ‘রাফ ৭/৩১)। সেকারণ ছালাতের সময় উত্তম পোষাক সহ টুপী, পাগড়ী প্রভৃতি মস্তকাবরণ ব্যবহার করা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের অভ্যাসগত সুন্নাত ছিল। আরবদের মধ্যে পূর্ব থেকেই এগুলির প্রচলন ছিল, যা ভদ্র পোষাক হিসাবে গণ্য হ’ত। ইসলাম এগুলিকে বাতিল করেনি। বরং মস্তকাবরণ ব্যবহার করা মুসলমানদের নিকট সৌন্দর্যের অন্তর্ভুক্ত।[101] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) শুধু টুপী অথবা টুপীসহ পাগড়ী বা টুপী ছাড়া পাগড়ী পরিধান করতেন।[102] ছাহাবীগণ টুপী ছাড়া খালি মাথায়ও চলতেন।[103] হাসান বাছরী বলেন, ছাহাবীগণ প্রচন্ড গরমে পাগড়ী ও টুপীর উপর সিজদা করতেন।[104] বিশেষ অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মাথায় বড় রুমাল ব্যবহার করেছেন। [105] তবে তিনি বা তাঁর ছাহাবীগণ এটিতে অভ্যস্ত ছিলেন না। বরং ইসলামের দুশমন খায়বারের ইহুদীদের অভ্যাস ছিল বিধায় আনাস বিন মালেক (রাঃ) প্রমুখ ছাহাবীগণ এটিকে দারুণভাবে অপছন্দ করতেন।[106] ক্বিয়ামতের প্রাক্কালে আগত দাজ্জালের সাথে সত্তুর হাযার ইহুদী থাকবে। তাদের মাথায় বড় ‘রুমাল’ (الطَيَالِسَة) থাকবে বলে হাদীছে এসেছে। [107] আরবদের মধ্যে মাথায় ‘আবা’ (العَبَاء) নামক বড় রুমাল ব্যবহারের ব্যাপকতা দৃষ্ট হয়। যা প্রাচীন যুগ থেকে সে দেশে ভদ্র পোষাক হিসাবে বিবেচিত।[108] তবে ছালাতের সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বা ছাহাবায়ে কেরাম কখনো বড় রুমাল মাথায় দিয়েছেন বলে জানা যায় না। এতে বরং ছালাতের চাইতে রুমাল ঠিক করার দিকেই মনোযোগ বেশী যায় এবং এর মধ্যে ‘রিয়া’-র সম্ভাবনা বেশী থাকে। পাগড়ীর পরিমাপ বা রংয়ের কোন বাধ্যবাধকতা নেই। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কালো পাগড়ী ব্যবহার করতেন।[109] মদ্বীনার সাতজন শ্রেষ্ঠ ফক্বীহ-এর অন্যতম শ্রেষ্ঠ তাবেঈ বিদ্বান খারেজাহ (মৃঃ ৯৯ হিঃ) বিন যায়েদ বিন ছাবেত (রাঃ) সাদা পাগড়ী ব্যবহার করতেন।[110] মহিলাদের মাথা সহ সর্বাঙ্গ আবৃত রাখা অপরিহার্য। চেহারা ও দুই হস্ততালু ব্যতীত’। [111]

অতএব সূরা আ‘রাফে (৭/৩১) বর্ণিত আল্লাহর নির্দেশ পালনার্থে পূর্বে বর্ণিত পোষাকের ইসলামী মূলনীতি সমূহ অক্ষুণ্ণ রেখে, যে দেশে যেটা উত্তম পোষাক হিসাবে বিবেচিত, সেটাই ছালাতের সময় পরিধান করা আবশ্যক। আল্লাহ সর্বাধিক অবগত।

জ্ঞাতব্য : জনগণের মধ্যে পাগড়ীর ফযীলত বিষয়ে বেশ কিছু হাদীছ প্রচলিত আছে। যেমন (১) ‘পাগড়ীসহ দু’রাক‘আত ছালাত পাগড়ীবিহীন ৭০ রাক‘আত ছালাতের চেয়ে উত্তম’ (২) ‘পাগড়ী সহ একটি ছালাত পঁচিশ ছালাতের সমান’ (৩) ‘পাগড়ীসহ ছালাতে ১০ হাযার নেকী রয়েছে’। (৪) ‘পাগড়ীসহ একটি জুম‘আ পাগড়ীবিহীন ৭০টি জুম‘আর সমতুল্য’ (৫) ফেরেশতাগণ পাগড়ী পরিহিত অবস্থায় জুম‘আর দিন হাযির হন এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত পাগড়ী পরিহিত মুছল্লীদের জন্য দো‘আ করতে থাকেন’ (৬) ‘আল্লাহর বিশেষ একদল ফেরেশতা রয়েছে, যাদেরকে জুম‘আর দিন জামে মসজিদ সমূহের দরজায় নিযুক্ত করা হয়। তারা সাদা পাগড়ীধারী মুছল্লীদের জন্য আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকে’। [112]

হাদীছের নামে প্রচলিত উপরোক্ত কথাগুলি জাল ও ভিত্তিহীন। এগুলি ছাড়াও পাগড়ীর ফযীলত বিষয়ে কথিত আরও অনেক হাদীছ ও ‘আছার’ সমাজে চালু আছে, যার সবগুলিই বাতিল, মিথ্যা ও বানোয়াট। আল্লাহভীরু মুসলিমের জন্য এসব থেকে দূরে থাকা কর্তব্য। বর্তমানে মুসলিম নারী-পুরুষের টুপী, পাগড়ী ও বোরক্বা-র মধ্যেও তারতম্য দেখা যায়। এ বিষয়ে সর্বদা হুঁশিয়ার থাকতে হবে, তা যেন অমুসলিমদের এবং মুসলিম নামধারী মুশরিক ও বিদ‘আতীদের সদৃশ না হয়।

[89] . وَمَنْ يَّبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلاَمِ دِيْنًا فَلَنْ يُّقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ আলে ইমরান ৩/৮৫; তওবা ৯/১৭।

[90] . رُفِعَ الْقَلَمُ عَنْ ثَلاَثَةٍ : عَنِ النَّائِمِ حَتَّى يَسْتَيْقِظَ وَعَنِ الصَّبِيِّ حَتَّى يَحْتَلِمَ وَعَنِ الْمَجْنُوْنِ حَتَّى يَعْقِلَ তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৩২৮৭ ‘বিবাহ’ অধ্যায়-১৩, ‘খোলা‘ ও তালাক’ অনুচ্ছেদ-১১; নায়ল, ‘ছালাত’ অধ্যায় ২/২৩-২৪ পৃঃ।

[91] . আহমাদ, আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৫৭২; নায়ল ২/২২ পৃঃ।

[92] . মায়েদাহ ৫/৬, আ‘রাফ ৭/৩১, মুদ্দাছ্ছির ৭৪/৪; মুসলিম মিশকাত হা/২৭৬০ ‘ক্রয়-বিক্রয়’ অধ্যায়, ১ অনুচ্ছেদ; আবুদাঊদ, তিরমিযী, দারেমী, মিশকাত হা/৭৩৭, ৭৩৯, অনুচ্ছেদ-৭।

[93] . ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১২৫; নায়ল ২/১৩৬; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৭৫৫ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪; সূরা নূর ২৪/৩১; আবুদাঊদ হা/৪১০৪ ‘পোষাক’ অধ্যায়, ৩৪ অনুচ্ছেদ; শামসুল হক আযীমাবাদী, আওনুল মা‘বূদ (কায়রো: মাকতাবা ইবনে তায়মিয়াহ, ৩য় সংস্করণ ১৪০৭/১৯৮৭) হা/৪০৮৬।

[94] . إِنَّ الصَّلاَةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ كِتَابًا مَوْقُوْتًا নিসা ৪/১০৩।

[95] . فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَحَيْثُ مَا كُنْتُمْ فَوَلُّوْا وُجُوْهَكُمْ شَطْرَهُ বাক্বারাহ ২/১৪৪।

[96] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ; ছহীহ বুখারী ও মিশকাত-এর প্রথম হাদীছ। রাবী হযরত ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ)। হজ্জ ও ওমরাহ্-র জন্য উচ্চৈঃস্বরে ‘তাল্বিয়াহ’ পাঠ ব্যতীত অন্য কোন ইবাদতের জন্য মুখে নিয়ত পড়া বিদ‘আত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ), ছাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈনে এযাম এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের বিগত ইমামগণের কেউ মুখে নিয়ত পাঠ করেছেন বা করতে বলেছেন বলে জানা যায় না। হানাফী ফিক্বহের প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘হেদায়া’-র খ্যাতনামা লেখক বুরহানুদ্দীন আবুল হাসান আলী বিন আবুবকর আল-ফারগানী আল-মারগীনানী (৫১১-৫৯৩ হিঃ) সহ পরবর্তী কালের কিছু ফক্বীহ অন্তরে নিয়ত করার সাথে সাথে মুখে তা পাঠ করাকে ‘সুন্দর’ বলে গণ্য করেন। যেমন হেদায়া-তে বলা হয়েছে,النية هى الإرادة والشرط أن يعلم بقلبه أيّ صلاة يصلي، أما الذكر باللسان فلا معتبر به ويحسن لاجتماع عزيمته - ‘নিয়ত অর্থ সংকল্প করা। তবে শর্ত হ’ল এই যে, মুছল্লী কোন ছালাত আদায় করবে, সেটা অন্তর থেকে জানা। মুখে নিয়ত পাঠ করার কোন গুরুত্ব নেই। তবে হৃদয়ের সংকল্পকে একীভূত করার স্বার্থে মুখে নিয়ত পাঠকে সুন্দর গণ্য করা চলে’ (অর্থাৎ সংকল্পের সাথে সাথে মুখে তা উচ্চারণ করা)। =হেদায়া (দেউবন্দ, ভারত: মাকতাবা থানবী ১৪১৬ হিঃ) ১/৯৬ পৃঃ ‘ছালাতের শর্তাবলী’ অধ্যায়।

মোল্লা আলী ক্বারী, ইবনুল হুমাম, আব্দুল হাই লাক্ষ্ণৌবী (রহঃ) প্রমুখ খ্যাতনামা হানাফী বিদ্বানগণ এ মতের বিরোধিতা করেছেন ও একে ‘বিদ‘আত’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। -মিরক্বাত শারহ মিশকাত (দিল্লী ছাপা, তাবি) ১/৪০-৪১ পৃঃ; হেদায়া ১/৯৬ পৃঃ টীকা-১৩ দ্রষ্টব্য। অন্যান্য স্থান সহ ভারতীয় উপমহাদেশের অধিকাংশ মুসলমানের মধ্যে ‘নাওয়াইতু ‘আন উছাল্লিয়া’ পাঠের মাধ্যমে মুখে নিয়ত পড়ার প্রথা চালু রয়েছে। অথচ এর কোন শারঈ ভিত্তি নেই। ছালাতের শুরু হ’তে শেষ পর্যন্ত পুরা অনুষ্ঠানটিই আল্লাহর ‘অহি’ দ্বারা নির্ধারিত। এখানে ‘রায়’ বা ‘ক্বিয়াস’-এর কোন অবকাশ নেই। অতএব মুখে নিয়ত পাঠ করা ‘সুন্দর’ নয় বরং ‘বিদ‘আত’- যা অবশ্যই ‘মন্দ’ ও পরিত্যাজ্য। বাস্তব কথা এই যে, মুখে নিয়ত পাঠের এই বাড়তি ঝামেলার জন্য অনেকে ছালাত আদায়ে ভয় পান। কারণ ভুল আরবী নিয়ত পাঠে ছালাত বরবাদ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী থাকে। অথচ যারা এই বিদ‘আতী নিয়ত পাঠে মুছল্লীকে বাধ্য করেন, তারাই আবার ইমামের পিছনে সূরায়ে ফাতেহা পাঠে মুক্তাদীর মুখে ‘মাটি ভরা উচিত বা পাথর মারা উচিত’ বলে ফৎওয়া দেন (মুফতী আব্দুল কুদ্দূস ও মুফতী সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ‘সহীহ হাদীসের আলোকে হানাফীদের নামাজ’ পৃঃ ১৩-১৪; হাদীছটি যঈফ, ইরওয়া হা/৫০৩)। অথচ সূরায়ে ফাতেহা পাঠের জন্য রাসূল (ছাঃ)-এর স্পষ্ট নির্দেশ মওজুদ রয়েছে।

[97] . মুসলিম, মিশকাত হা/৩৫২৪ ‘ক্বিছাছ’ অধ্যায়-১৬, অনুচ্ছেদ-২।

[98] . আ‘রাফ ৭/২৬; মুসলিম, মিশকাত হা/৫১০৮ ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়-২৫, ‘ক্রোধ ও অহংকার’ অনুচ্ছেদ-২০; তিরমিযী, মিশকাত হা/৪৩৫০ ‘পোষাক’ অধ্যায়-২২; আহমাদ, নাসাঈ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৪৩৩৭।

[99] . আহমাদ, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪৩৪৭ ‘পোষাক’ অধ্যায়-২২।

[100] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, বুখারী, মিশকাত হা/৪৩১১-১৪, ৪৩২১; নাসাঈ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৪৩৮১।

[101] . সিলসিলা যঈফাহ হা/২৫৩৮-এর আলোচনা শেষে দ্রষ্টব্য।

[102] . যা-দুল মা‘আদ ১/১৩০ পৃঃ।


A. Matin, S. jalal, M A Hoque, Bilal 2015
ছালাতের ফযীলত সমূহ (فضائل الصلاة)

(১) আল্লাহ পাক এরশাদ করেন, إِنَّ الصَّلاَةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ ‘নিশ্চয়ই ছালাত মুমিনকে নির্লজ্জ ও অপছন্দনীয় কাজ সমূহ হতে বিরত রাখে’ (আনকাবূত ২৯/৪৫)।

আবুল ‘আলিয়াহ বলেন, তিনটি বস্ত্ত না থাকলে তাকে ছালাত বলা যায় না।
(১) ইখলাছ (الإخلاص) বা একনিষ্ঠতা, যা তাকে সৎ কাজের নির্দেশ দেয়
(২) আল্লাহভীতি (الخشية), যা তাকে অন্যায় থেকে বিরত রাখে
(৩) কুরআন পাঠ (ذكر القرآن), যা তাকে ভাল-মন্দের নির্দেশনা দেয়।[34] আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, ‘একদা জনৈক ব্যক্তি এসে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলল যে, অমুক ব্যক্তি রাতে (তাহাজ্জুদের) ছালাত পড়ে। অতঃপর সকালে চুরি করে। জবাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে বলেন, তার রাত্রি জাগরণ সত্বর তাকে ঐ কাজ থেকে বিরত রাখবে, যা তুমি বলছ (إِنَّهُ سَيَنْهَاهُ مَا تَقُوْلُ)’। [35]
(২) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত, এক জুম‘আ হ’তে পরবর্তী জুম‘আ এবং এক রামাযান হ’তে পরবর্তী রামাযানের মধ্যকার যাবতীয় (ছগীরা) গুনাহের কাফফারা স্বরূপ, যদি সে কবীরা গোনাহসমূহ হ’তে বিরত থাকে (যা তওবা ব্যতীত মাফ হয় না)’।[36]

(৩) তিনি বলেন, তোমাদের কারু ঘরের সম্মুখ দিয়ে প্রবাহিত নদীতে দৈনিক পাঁচবার গোসল করলে তোমাদের দেহে কোন ময়লা বাকী থাকে কি?... পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতের তুলনা ঠিক অনুরূপ। আল্লাহ এর দ্বারা গোনাহ সমূহ বিদূরিত করেন।[37]

(৪) তিনি আরও বলেন, যে ব্যক্তি ছালাতের হেফাযত করল, ছালাত তার জন্য ক্বিয়ামতের দিন নূর, দলীল ও নাজাতের কারণ হবে....। [38]

(৫) আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন যে, ‘বান্দা যখন ছালাতে দন্ডায়মান হয়, তখন তার সমস্ত গুনাহ হাযির করা হয়। অতঃপর তা তার মাথায় ও দুই স্কন্ধে রেখে দেওয়া হয়। এরপর সে ব্যক্তি যখন রুকূ বা সিজদায় গমন করে, তখন গুনাহ সমূহ ঝরে পড়ে’। [39]

(৬) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,
(ক) যে ব্যক্তি ফজর ও আছরের ছালাত নিয়মিত আদায় করে, সে জাহান্নামে যাবে না’। ‘সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’। [40]
(খ) দিবস ও রাত্রির ফেরেশতারা ফজর ও আছরের ছালাতের সময় একত্রিত হয়। রাতের ফেরেশতারা আসমানে উঠে গেলে আল্লাহ তাদের জিজ্ঞেস করেন, তোমরা আমার বান্দাদের কি অবস্থায় রেখে এলে? যদিও তিনি সবকিছু অবগত। তখন ফেরেশতারা বলে যে, আমরা তাদেরকে পেয়েছিলাম (আছরের) ছালাত অবস্থায় এবং ছেড়ে এসেছি (ফজরের) ছালাত অবস্থায়’।[41] কুরআনে ফজরের ছালাতকে ‘মাশহূদ’ বলা হয়েছে(ইসরা ১৭/৭৮)। অর্থাৎ ঐ সময় ফেরেশতা বদলের কারণে রাতের ও দিনের ফেরেশতারা একত্রিত হয়ে সাক্ষী হয়ে যায়। [42]
গ) যে ব্যক্তি ফজরের ছালাত আদায় করল, সে আল্লাহর যিম্মায় রইল। যদি কেউ সেই যিম্মা থেকে কাউকে ছাড়িয়ে নিতে চায়, তাকে উপুড় অবস্থায় জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।[43]

(৭) তিনি বলেন, পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত যেগুলিকে আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের উপরে ফরয করেছেন, যে ব্যক্তি এগুলির জন্য সুন্দরভাবে ওযূ করবে, ওয়াক্ত মোতাবেক ছালাত আদায় করবে, রুকূ ও খুশূ‘-খুযূ‘ পূর্ণ করবে, তাকে ক্ষমা করার জন্য আল্লাহর অঙ্গীকার রয়েছে। আর যে ব্যক্তি এগুলি করবে না, তার জন্য আল্লাহর কোন অঙ্গীকার নেই। তিনি ইচ্ছা করলে তাকে ক্ষমা করতে পারেন, ইচ্ছা করলে আযাব দিতে পারেন’।[44]

(৮) আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন যে, আল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি আমার কোন প্রিয় বান্দার সাথে দুশমনী করল, আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দিলাম। আমি যেসব বিষয় ফরয করেছি, তার মাধ্যমে আমার নৈকট্য অনুসন্ধানের চাইতে প্রিয়তর আমার নিকটে আর কিছু নেই। বান্দা বিভিন্ন নফল ইবাদতের মাধ্যমে সর্বদা আমার নৈকট্য হাছিলের চেষ্টায় থাকে, যতক্ষণ না আমি তাকে ভালবাসি। অতঃপর যখন আমি তাকে ভালবাসি, তখন আমিই তার কান হয়ে যাই যা দিয়ে সে শ্রবণ করে। চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দর্শন করে। হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধারণ করে। পা হয়ে যাই, যার সাহায্যে সে চলাফেরা করে। যদি সে আমার নিকটে কোন কিছু প্রার্থনা করে, আমি তাকে তা দান করে থাকি। যদি সে আশ্রয় ভিক্ষা করে, আমি তাকে আশ্রয় দিয়ে থাকি’....।[45]

মসজিদে ছালাতের ফযীলত :

(১) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, আল্লাহর নিকটে প্রিয়তর স্থান হ’ল মসজিদ এবং নিকৃষ্টতর স্থান হ’ল বাজার’। [46]

(২) ‘যে ব্যক্তি সকালে ও সন্ধ্যায় (পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতে) মসজিদে যাতায়াত করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে মেহমানদারী প্রস্ত্তত রাখেন’। [47]

(৩) তিনি বলেন, সবচেয়ে বেশী নেকী পান ঐ ব্যক্তি যিনি সবচেয়ে দূর থেকে মসজিদে আসেন এবং ঐ ব্যক্তি বেশী পুরস্কৃত হন, যিনি আগে এসে অপেক্ষায় থাকেন। অতঃপর ইমামের সাথে ছালাত আদায় করেন।[48] তিনি বলেন, ‘প্রথম কাতার হ’ল ফেরেশতাদের কাতারের ন্যায়। যদি তোমরা জানতে এর ফযীলত কত বেশী, তাহ’লে তোমরা এখানে আসার জন্য অতি ব্যস্ত হয়ে উঠতে’।[49]

(৪) ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের ছায়াতলে যে সাত শ্রেণীর লোক আশ্রয় পাবে, তাদের এক শ্রেণী হ’ল ঐ সকল ব্যক্তি যাদের অন্তর মসজিদের সাথে লটকানো থাকে। যখনই বের হয়, পুনরায় ফিরে আসে।[50]

(৫) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, অন্যত্র ছালাত আদায়ের চেয়ে আমার এই মসজিদে ছালাত আদায় করা এক হাযার গুণ উত্তম এবং মাসজিদুল হারামে ছালাত আদায় করা এক লক্ষ গুণ উত্তম।[51]

উল্লেখ্য যে ‘অন্য মসজিদের চেয়ে জুম‘আ মসজিদে ছালাত আদায় করলে পাঁচশত গুণ ছওয়াব বেশী পাওয়া যাবে’ মর্মে বর্ণিত হাদীছটি ‘যঈফ’। [52]

মসজিদ সম্পর্কে জ্ঞাতব্য :

(১) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য একটি মসজিদ নির্মাণ করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি গৃহ নির্মাণ করেন। [53] তবে যদি ঐ মসজিদ ঈমানদারগণের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়, তাহ’লে তা ‘যেরার’ (ضِرَار) অর্থাৎ ক্ষতিকর মসজিদ হিসাবে গণ্য হবে’ (তওবাহ ৯/১০৭)। উক্ত মসজিদ নির্মাণকারীরা গোনাহগার হবে।

(২) মসজিদ থেকে কবরস্থান দূরে রাখতে হবে।[54] নিতান্ত বাধ্য হ’লে মাঝখানে দেওয়াল দিতে হবে। মসজিদ সর্বদা কোলাহল মুক্ত ও নিরিবিলি পরিবেশে হওয়া আবশ্যক।

(৩) মসজিদ অনাড়ম্বর ও সাধাসিধা হবে। কোনরূপ সাজ-সজ্জা ও জাঁকজমক পূর্ণ করা যাবে না বা মসজিদ নিয়ে কোনরূপ গর্ব করা যাবে না। [55]

(৪) মসজিদ নির্মাণে সতর্কতার সাথে ইসলামী নির্মাণশৈলী অনুসরণ করতে হবে। কোন অবস্থাতেই অমুসলিমদের উপাসনা গৃহের অনুকরণ করা যাবে না।

(৫) মসজিদে নববীতে প্রথমে মিম্বর ছিল না। কয়েক বছর পরে একটি কাঠের তৈরী মিম্বর স্থাপন করা হয়। যা তিন স্তর বিশিষ্ট ছিল। তিন স্তরের অধিক উমাইয়াদের সৃষ্ট। [56]

(৬) যে সব কবরে বা স্থানে পূজা হয়, সিজদা হয় বা যেখানে কিছু কামনা করা হয় ও মানত করা হয়, ঐসব কবরের বা স্থানের পাশে মসজিদ নির্মাণ করা হারাম এবং ঐ মসজিদে ছালাত আদায় করা বা কোনরূপ সহযোগিতা করাও হারাম। কেননা এগুলি শিরক এবং আল্লাহ শিরকের গোনাহ কখনই ক্ষমা করেন না (তওবা করা ব্যতীত)। [57]

(৭) মসজিদের এক পাশে ‘আল্লাহ’ ও একপাশে ‘মুহাম্মাদ’ লেখা পরিষ্কারভাবে শিরক। একইভাবে ক্বিবলার দিকে চাঁদতারা বা কেবল তারকার ছবি নিষিদ্ধ। মুসলমান ‘আল্লাহ’ নামক কোন শব্দের ইবাদত করে না। বরং তারা অদৃশ্য আল্লাহর ইবাদত করে। যিনি সূর্য, চন্দ্র, তারকা ও বিশ্বচরাচরের স্রষ্টা। যিনি সাত আসমানের উপরে আরশে সমাসীন (ত্বোয়াহা ২০/৫)। কিন্তু তাঁর জ্ঞান ও শক্তি সর্বত্র বিরাজমান। যিনি আমাদের সবকিছু দেখেন ও শোনেন (ত্বোয়াহা ২০/৪৬)। তাঁর নিজস্ব আকার আছে। কিন্তু তা কারু সাথে তুলনীয় নয় (শূরা ৪২/১১)

(৮) মসজিদে ক্বিবলার দিকে ‘আল্লাহ’ ও কা‘বা গৃহের ছবি এবং মেহরাবের দু’পাশে গম্বুজের আকৃতি বিশিষ্ট দীর্ঘ খাম্বাযুক্ত সুসজ্জিত টাইল্স বসানো যাবে না। মেহরাবের উপরে কোনরূপ লেখা বা নকশা করা যাবে না। মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী (রহঃ) মসজিদে চাকচিক্য করাকে বিদ‘আত বলেছেন। [58]

(৯) ‘আল্লাহ’ বা ‘মুহাম্মাদ’ বা ‘কালেমা’ খচিত ভেন্টিলেটর বা জানালার গ্রীল ইত্যাদি নির্মাণ করা যাবে না।

(১০) মসজিদের বাইরে, মিনারে বা গুম্বজে ‘আল্লাহ’ বা ‘আল্লাহু আকবর’ এবং দেওয়ালে ও ছাদের নীচে দো‘আ, কালেমা, আসমাউল হুসনা ও কুরআনের আয়াত সমূহ লেখা বা খোদাই করা যাবে না বা কা‘বা গৃহের গেলাফের অংশ ঝুলানো যাবে না। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মসজিদে এসবের কিছুই ছিল না।

(১১) মসজিদের ভিতরে-বাইরে কোথাও মাথাসহ পূর্ণদেহী বা অর্ধদেহী প্রাণীর প্রতিকৃতি বা ছবিযুক্ত পোস্টার লাগানো যাবে না। কেননা ‘যে ঘরে কোন (প্রাণীর) ছবি টাঙানো থাকে, সে ঘরে আল্লাহর রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না’।[59]

(১২) মসজিদে অবশ্যই নিয়মিতভাবে আযান ও ইবাদতের ব্যবস্থা থাকতে হবে।

(১৩) মসজিদে (নারী ও পুরুষের জন্য পৃথক) ওযূখানা ও টয়লেটের ব্যবস্থা থাকতে হবে।

(১৪) মসজিদ ও তার আঙিনা সর্বদা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং ইবাদতের নির্বিঘ্ন ও সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখতে হবে।

(১৫) মসজিদে আগত আলেম ও মেহমানদের প্রতি পূর্ণ সম্মান প্রদর্শন করতে হবে ও সর্বোচ্চ আপ্যায়ন করতে হবে। কেননা তারা আল্লাহর ঘরের মেহমান।

(১৬) পুরুষের কাতারের পিছনে মহিলা মুছল্লীদের জন্য পৃথকভাবে পর্দার মধ্যে পুরুষের জামা‘আতের সাথে ছালাতের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যামানায় মহিলাগণ নিয়মিতভাবে পুরুষদের সাথে জুম‘আ ও জামা‘আতে যোগদান করতেন।[60] তবে এজন্য পরিবেশ নিরাপদ ও অভিভাবকের অনুমতি প্রয়োজন হবে এবং তাকে সুগন্ধিবিহীন অবস্থায় আসতে হবে।[61]

(১৭) কেবল মসজিদ নির্মাণ নয়, বরং মসজিদ আবাদের প্রতি দৃষ্টি দিতে হবে এবং নিয়মিতভাবে বিশুদ্ধ দ্বীনী তা‘লীম ও তারবিয়াতের ব্যবস্থা করতে হবে। যেমন মসজিদে নববীতে ছিল। বর্তমানে মসজিদগুলিতে ছহীহ হাদীছ ভিত্তিক বিশুদ্ধ দ্বীনী তা‘লীমের বদলে অশুদ্ধ বিদ‘আতী তা‘লীম বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তাছাড়া জামা‘আত শেষে দলবদ্ধভাবে সর্বোচ্চ স্বরে ও সুরেলা কণ্ঠে মীলাদ ও দরূদের অনুষ্ঠান করা কোন কোন মসজিদে নিয়মে পরিণত হয়েছে। ফলে ঐসব মসজিদ এখন ইবাদত গৃহের বদলে বিদ‘আত গৃহে পরিণত হয়েছে। সংশ্লিষ্টগণ আল্লাহকে ভয় করুন!

(১৮) সুন্নাত থেকে বিরত রাখার জন্য ‘সুন্নাতের নিয়ত করিবেন না’ লেখা বা মসজিদে লালবাতি জ্বালানোর ব্যবস্থা রাখা ঠিক নয়। কেননা ইক্বামত হয়ে গেলে সুন্নাত ছেড়ে দিয়ে জামা‘আতে যোগ দিলে ঐ ব্যক্তি পূর্ণ ছালাতের নেকী পেয়ে যায়।[62]

(১৯) জামে মসজিদের সাথে (প্রয়োজন বোধে) ইমাম ও মুওয়াযযিনের পৃথক কোয়ার্টার ও তাদের থাকা-খাওয়ার ও জীবন-জীবিকার সম্মানজনক ব্যবস্থা থাকা আবশ্যক।

(২০) মসজিদের আদব : (ক) মসজিদে প্রবেশ করে আল্লাহর উদ্দেশ্যে দু’রাক‘আত ‘তাহিইয়াতুল মাসজিদ’ নফল ছালাত আদায় করবে।[63] সরাসরি বসবে না। (খ) মসজিদে (খুৎবা ব্যতীত) উঁচু স্বরে কথা বলবে না বা শোরগোল করবে না।[64] (গ) সেখানে কোন হারানো বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা যাবে না।[65] (ঘ) মসজিদে কাতারের মধ্যে কারু জন্য কোন স্থান নির্দিষ্ট করা যাবে না (ইমাম ব্যতীত)।[66] অতএব কোন মুছল্লীর জন্য পৃথকভাবে কোন জায়নামায বিছানো যাবে না। (ঙ) মসজিদে নববী ও মসজিদুল আক্বছা ব্যতীত[67] সকল মসজিদের মর্যাদা সমান। অতএব বেশী নেকী হবে মনে করে বড় মসজিদে যাওয়া যাবে না।

(২১) মসজিদ কমিটির সভাপতি ও সদস্যবৃন্দকে সর্বদা মসজিদের তদারকি করতে হবে এবং এর সংরক্ষণের প্রতি দৃষ্টি রাখতে হবে। নইলে তাদেরকে আল্লাহর নিকট জবাবদিহি করতে হবে।[68] তাদেরকে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের নির্ভীক অনুসারী, আল্লাহভীরু ও নিষ্ঠাবান মুছল্লী হ’তে হবে (তওবা ৯/১৮)। তারা যেন মসজিদে কোন বিদ‘আত ও বিদ‘আতীকে প্রশ্রয় না দেন। কেননা তাহ’লে তাদের উপর আল্লাহর লা‘নত হবে এবং তাদের কোন নেক আমল আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না।[69]

জামা‘আতে ছালাতের গুরুত্ব ও ফযীলত :

(১) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ঘরে অথবা বাজারে একাকী ছালাতের চেয়ে মসজিদে জামা‘আতে ছালাত আদায়ে ২৫ বা ২৭ গুণ ছওয়াব বেশী।’ তিনি বলেন, দুই জনের ছালাত একাকীর চাইতে উত্তম। ...এভাবে জামা‘আত যত বড় হয়, নেকী তত বেশী হয় (وما كَثُرَ فَهُوَ أَحَبُّ إِلَى اللهِ)।[70]

(২) তিনি বলেন, ‘যাঁর হাতে আমার জীবন তাঁর কসম করে বলছি, আমার মন চায় আযান হওয়ার পরেও যারা জামা‘আতে আসে না, ইমামতির দায়িত্ব কাউকে দিয়ে আমি নিজে গিয়ে তাদের ঘরে আগুন লাগিয়ে জ্বালিয়ে দিয়ে আসি’।[71]

(৩) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
(ক) আল্লাহ ও ফিরিশতাগণ ১ম কাতারের লোকদের উপর বিশেষ রহমত নাযিল করে থাকেন। কথাটি আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) তিনবার বলেন। অতঃপর বলেন, ২য় কাতারের উপরেও।[72] অন্য বর্ণনায় এসেছে, সামনের কাতার সমূহের উপরে (عَلَى الصُّفُوْفِ الْمُقَدَّمَةِ)।[73]

(খ) তিনি বলেন, যদি লোকেরা জানত যে, আযান, প্রথম কাতার ও আউয়াল ওয়াক্তে ছালাত আদায়ে কি নেকী রয়েছে, তাহ’লে তারা পরস্পরে প্রতিযোগিতা করত। অনুরূপভাবে যদি তারা জানত এশা ও ফজরের ছালাতে কি নেকী রয়েছে, তবে তারা হামাগুড়ি দিয়ে হ’লেও ঐ দুই ছালাতে আসত’।[74]

(গ) তিনি বলেন, যে ব্যক্তি এশার ছালাত জামা‘আতে পড়ল, সে যেন অর্ধরাত্রি ছালাতে কাটাল এবং যে ব্যক্তি ফজরের ছালাত জামা‘আতে পড়ল, সে যেন সমস্ত রাত্রি ছালাতে অতিবাহিত করল’।[75]

(ঘ) তিনি বলেন, মুনাফিকদের উপরে ফজর ও এশার চাইতে কঠিন কোন ছালাত নেই।[76]

(ঙ) তিনি বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য ৪০ দিন তাকবীরে ঊলা সহ জামা‘আতে ছালাত আদায় করল, তার জন্য দু’টি মুক্তি লেখা হয়। একটি হ’ল জাহান্নাম হ’তে মুক্তি। অপরটি হ’ল নিফাক্ব হ’তে মুক্তি।[77] ইবনু হাজার বলেন, ‘তাকবীরে ঊলা’ (التكبيرة الأولى) পাওয়া সুন্নাতে মুওয়াক্কাদাহ। সালাফে ছালেহীন ইমামের সাথে প্রথম তাকবীর না পেলে ৩ দিন দুঃখ প্রকাশ করতেন। আর জামা‘আত ছুটে গেলে ৭ দিন দুঃখ প্রকাশ করতেন’। [78]

(৪) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘কোন গ্রাম বা বস্তিতে যদি তিন জন মুসলমানও থাকে, যদি তারা জামা‘আতে ছালাত আদায় না করে, তাহ’লে তাদের উপর শয়তান বিজয়ী হবে। আর বিচ্ছিন্ন বকরীকেই নেকড়ে ধরে খেয়ে ফেলে’।[79]

(৫) ‘যখন কোন মুছল্লী সুন্দরভাবে ওযূ করে ও স্রেফ ছালাতের উদ্দেশ্যে ঘর হ’তে বের হয়, তখন তার প্রতি পদক্ষেপে আল্লাহর নিকটে একটি করে নেকী হয় ও একটি করে মর্যাদার স্তর উন্নীত হয় ও একটি করে গোনাহ ঝরে পড়ে। যতক্ষণ ঐ ব্যক্তি ছালাতরত থাকে, ততক্ষণ ফেরেশতারা তার জন্য দো‘আ করতে থাকে ও বলে যে, ‘হে আল্লাহ! তুমি তার উপরে শান্তি বর্ষণ কর’। ‘তুমি তার উপরে অনুগ্রহ কর’। যতক্ষণ সে কথা না বলে ততক্ষণ পর্যন্ত ফেরেশতারা আরও বলতে থাকে, ‘হে আল্লাহ! তুমি তাকে ক্ষমা কর’ ‘তুমি তার তওবা কবুল কর’।[80]

(৬) যখন জামা‘আতের এক্বামত হ’বে, তখন ঐ ফরয ছালাত ব্যতীত আর কোন ছালাত নেই।[81] অতএব ফজরের জামা‘আতের ইক্বামতের পর সুন্নাত পড়া জায়েয নয়, যা প্রচলিত আছে। বরং জামা‘আত শেষ হওয়ার পরেই সুন্নাত পড়বে।[82]

(৭) যে অবস্থায় জামা‘আত পাওয়া যাবে, সেই অবস্থায় শরীক হবে এবং ইমামের অনুসরণ করবে।[83] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সুন্দরভাবে ওযূ করল। অতঃপর মসজিদে রওয়ানা হ’ল এবং জামা‘আতে যোগদান করল, আল্লাহ তাকে ঐ ব্যক্তির ন্যায় পুরস্কার দিবেন, যে ব্যক্তি ছালাত আদায় করেছে ও শুরু থেকে হাযির রয়েছে। তাদের নেকী থেকে তাকে মোটেই কম করা হবে না’।[84]

(৮) জামা‘আতের পরে আসা মুছল্লীগণ এক্বামত দিয়ে পুনরায় জামা‘আত করবেন। একজন হ’লে আরেকজন মুছল্লী (যিনি ইতিপূর্বে ছালাত আদায় করেছেন) তার সঙ্গে যোগ দিতে পারেন জামা‘আত করার জন্য এবং এর নেকী অর্জনের জন্য।[85] তবে স্থানীয় মুছল্লীদের নিয়মিতভাবে জামা‘আতের পরে আসা উচিৎ নয়।

(৯) তিনি বলেন, তোমরা সামনের কাতারের দিকে অগ্রসর হও। কেননা যারা সর্বদা পিছনে থাকবে, আল্লাহ তাদেরকে (স্বীয় রহমত থেকে) পিছনে রাখবেন (মুসলিম)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, আল্লাহ তাদেরকে জাহান্নাম পর্যন্ত পিছিয়ে দিবেন (আবুদাঊদ)।[86]

ছালাতের নিষিদ্ধ স্থান :

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন যে, সমগ্র পৃথিবীই সিজদার স্থান, কেবল কবরস্থান ও গোসলখানা ব্যতীত’। [87] সাতটি স্থানে ছালাত নিষিদ্ধ হওয়ার হাদীছটি যঈফ।[88]

[34] ইবনু কাছীর, তাফসীর আনকাবুত ২৯/৪৫।

[35] . আহমাদ হা/৯৭৭৭; বায়হাক্বী-শু‘আব, মিশকাত হা/১২৩৭, ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘রাত্রি জাগরণে উৎসাহ দান’ অনুচ্ছেদ-৩৩; মির‘আত ৪/২৩৫।

[36] . মুসলিম, মিশকাত হা/৫৬৪ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪।

[37] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৫৬৫।

[38] . আহমাদ হা/৬৫৭৬, ‘হাসান’; দারেমী হা/২৭২১, ‘ছহীহ’; মিশকাত হা/৫৭৮ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, আলবানী প্রথমে ‘জাইয়িদ’ ও পরবর্তীতে ‘যঈফ’ বলেছেন (তারাজু‘আত হা/২৯)।

[39] . ত্বাবারাণী, বায়হাক্বী; আলবানী, ছহীহুল জামে‘ হা/১৬৭১।

[40] . মুসলিম, মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৬২৪-২৫, ‘ছালাতের ফযীলতসমূহ’ অনুচ্ছেদ-৩।

[41] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৬২৬।

[42] . তিরমিযী, মিশকাত হা/৬৩৫।


2015
ছালাত তরককারীর হুকুম ( حكم تارك الصلاة)

ইচ্ছাকৃতভাবে ছালাত তরককারী অথবা ছালাতের ফরযিয়াতকে অস্বীকারকারী ব্যক্তি কাফির ও জাহান্নামী। ঐ ব্যক্তি ইসলাম হ’তে বহিষ্কৃত। কিন্তু যে ব্যক্তি ঈমান রাখে, অথচ অলসতা ও ব্যস্ততার অজুহাতে ছালাত তরক করে কিংবা উদাসীনভাবে ছালাত আদায় করে ও তার প্রকৃত হেফাযত করে না, সে ব্যক্তি সম্পর্কে শরী‘আতের বিধান সমূহ নিম্নরূপ :

(ক) আল্লাহ বলেন, فَوَيْلٌ لِلْمُصَلِّيْنَ، الَّذِيْنَ هُمْ عَنْ صَلاَتِهِمْ سَاهُوْنَ، الَّذِيْنَ هُمْ يُرَآءُوْنَ... ‘অতঃপর দুর্ভোগ ঐ সব মুছল্লীর জন্য’ ‘যারা তাদের ছালাত থেকে উদাসীন’। ‘যারা তা লোকদেরকে দেখায়’... (মা‘ঊন ১০৭/৪-৬)

(খ) অলস ও লোক দেখানো মুছল্লীদের আল্লাহ মুনাফিক ও প্রতারক বলেছেন। যেমন তিনি বলেন,

إِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ يُخَادِعُوْنَ اللهَ وَهُوَ خَادِعُهُمْ وَإِذَا قَامُوْا إِلَى الصَّلاَةِ قَامُوْا كُسَالَى يُرَآءُوْنَ النَّاسَ وَلاَ يَذْكُرُوْنَ اللهَ إِلاَّ قَلِيلاً 142

‘নিশ্চয়ই মুনাফিকরা প্রতারণা করে আল্লাহর সাথে। অথচ তিনি তাদেরকেই ধোঁকায় নিক্ষেপ করেন। তারা যখন ছালাতে দাঁড়ায়, তখন অলসভাবে দাঁড়ায় লোক দেখানোর জন্য। আর তারা আল্লাহকে অল্পই স্মরণ করে’ (নিসা ৪/১৪২)। অন্যত্র আল্লাহ তাদের ‘ফাসেক্ব’ (পাপাচারী) বলেছেন এবং বলেছেন যে, ‘তিনি তাদের ছালাত ও অর্থ ব্যয় কিছুই কবুল করবেন না’ (তওবা ৯/৫৩-৫৪)

(গ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,... ‘যে ব্যক্তি ছালাতের হেফাযত করল না ...সে ব্যক্তি ক্বিয়ামতের দিন ক্বারূণ, ফেরাঊন, হামান ও উবাই বিন খালাফের সঙ্গে থাকবে’।[24]

ছালাতের হেফাযত করা অর্থ রুকূ-সিজদা ইত্যাদি ফরয ও সুন্নাত সমূহ সঠিকভাবে ও গভীর মনোযোগ সহকারে আদায় করা। [25] উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (৬৯১-৭৫১ হিঃ) বলেন, (১) যে ব্যক্তি অর্থ-সম্পদের মোহে ছালাত হ’তে দূরে থাকে, তার হাশর হবে মূসা (আঃ)-এর চাচাত ভাই বখীল ধনকুবের ক্বারূণ-এর সাথে। (২) রাষ্ট্রীয় বা রাজনৈতিক ব্যস্ততার অজুহাতে যে ব্যক্তি ছালাত হ’তে গাফেল থাকে, তার হাশর হবে মিসরের অত্যাচারী শাসক ফেরাঊনের সাথে। (৩) মন্ত্রীত্ব বা চাকুরীগত কারণে যে ব্যক্তি ছালাত হ’তে গাফেল থাকে, তার হাশর হবে ফেরাঊনের প্রধানমন্ত্রী হামান-এর সাথে। (৪) ব্যবসায়িক ব্যস্ততার অজুহাতে যে ব্যক্তি গাফেল থাকে, তার হাশর হবে মক্কার কাফের ব্যবসায়ী নেতা উবাই বিন খালাফের সাথে।[26] বলা বাহুল্য ক্বিয়ামতের দিন কাফের নেতাদের সাথে হাশর হওয়ার অর্থই হ’ল জাহান্নামবাসী হওয়া। যদিও সে দুনিয়াতে একজন মুছল্লী ছিল। অতএব শুধু ছালাত তরক করা নয় বরং ছালাতের হেফাযত বা রুকূ-সিজদা সঠিকভাবে আদায় না হ’লেও জাহান্নামী হ’তে হবে। (আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন। আমীন!)।

(ঘ) ছালাত তরক করাকে হাদীছে ‘কুফরী’ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।[27] ছাহাবায়ে কেরামও একে ‘কুফরী’ হিসাবে গণ্য করতেন।[28] তারা নিঃসন্দেহে জাহান্নামী। তবে এই ব্যক্তিগণ যদি খালেছ অন্তরে তাওহীদ, রিসালাত ও আখেরাতে বিশ্বাসী হয় এবং ইসলামের হালাল-হারাম ও ফরয-ওয়াজিব সমূহের অস্বীকারকারী না হয় এবং শিরক না করে, তাহ’লে তারা ‘কালেমায়ে শাহাদাত’কে অস্বীকারকারী কাফিরগণের ন্যায় ইসলাম থেকে খারিজ নয় বা চিরস্থায়ী জাহান্নামী নয়। কেননা এই প্রকারের মুসলমানেরা কর্মগতভাবে কাফির হ’লেও বিশ্বাসগতভাবে কাফির নয়। বরং খালেছ অন্তরে পাঠ করা কালেমার বরকতে এবং কবীরা গোনাহগারদের জন্য শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর শাফা‘আতের ফলে শেষ পর্যায়ে এক সময় তারা জান্নাতে ফিরে আসবে।[29] তবে তারা সেখানে ‘জাহান্নামী’ (اَلْجَهَنَّمِيُّوْنَ) বলেই অভিহিত হবে। [30] যেটা হবে বড়ই লজ্জাকর বিষয়।

(ঙ) বিভিন্ন হাদীছের আলোকে আহলেসুন্নাত বিদ্বানগণের মধ্যে ইমাম মালেক (৯৩-১৭৯ হিঃ), ইমাম শাফেঈ (১৫০-২০৪ হিঃ) এবং প্রাথমিক ও পরবর্তী যুগের প্রায় সকল বিদ্বান এই মর্মে একমত হয়েছেন যে, ঐ ব্যক্তি ‘ফাসিক্ব্’ এবং তাকে তওবা করতে হবে। যদি সে তওবা করে ছালাত আদায় শুরু না করে, তবে তার শাস্তি হবে মৃত্যুদন্ড। ইমাম আবু হানীফা (৮০-১৫০হিঃ) বলেন, তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে এবং ছালাত আদায় না করা পর্যন্ত জেলখানায় আবদ্ধ রাখতে হবে। [31] ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (১৬৪-২৪১ হিঃ) বলেন, ঐ ব্যক্তিকে ছালাতের জন্য ডাকার পরেও যদি সে ইনকার করে ও বলে যে ‘আমি ছালাত আদায় করব না’ এবং এইভাবে ওয়াক্ত শেষ হয়ে যায়, তখন তাকে কতল করা ওয়াজিব।[32] অবশ্য এরূপ শাস্তিদানের দায়িত্ব হ’ল ইসলামী সরকারের। ঐ ব্যক্তির জানাযা মসজিদের ইমাম বা বড় কোন বুযর্গ আলেম দিয়ে পড়ানো যাবে না। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) গণীমতের মালের (আনুমানিক দুই দিরহাম মূল্যের) তুচ্ছ বস্ত্তর খেয়ানতকারী এবং আত্মহত্যাকারীর জানাযা পড়েননি বরং অন্যকে পড়তে বলেছেন। [33] এক্ষণে আল্লাহ্কৃত ফরয ছালাতের সঙ্গে খেয়ানতকারী ব্যক্তির সাথে মুমিন সমাজের আচরণ কেমন হওয়া উচিৎ, তা সহজেই অনুমেয়।

[24] . আহমাদ হা/৬৫৭৬, ‘হাসান’; দারেমী হা/২৭২১, ‘ছহীহ’; মিশকাত হা/৫৭৮ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, আলবানী প্রথমে ‘জাইয়িদ’ ও পরবর্তীতে ‘যঈফ’ বলেছেন (তারাজু‘আত হা/২৯)।

[25] . মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী, মিরক্বাতুল মাফাতীহ শরহ মিশকাতুল মাছাবীহ (দিল্লী: তাবি) ২/১১৮ পৃঃ।

[26] . ইবনুল ক্বাইয়িম, ‘আছ-ছালাত ওয়া হুক্মু তারিকিহা’ (বৈরূত : দার ইবনু হযম, ১ম সংস্করণ ১৪১৬/১৯৯৬), পৃঃ ৬৩; সাইয়িদ সাবিক্ব, ফিক্বহুস সুন্নাহ (কায়রো : ১৪১২/১৯৯২), ১/৭২।

[27] . মুসলিম, মিশকাত হা/৫৬৯; তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৫৭৪, ৫৮০; মির‘আত ২/২৭৪, ২৭৯।

[28] . তিরমিযী, মিশকাত হা/৫৭৯; মির‘আত ২/২৮৩।

[29] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, বুখারী, মিশকাত হা/৫৫৭৩-৭৪; তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৫৫৯৮-৫৬০০ ‘ক্বিয়ামতের অবস্থা’ অধ্যায়-২৮, ‘হাউয ও শাফা‘আত’ অনুচ্ছেদ-৪।

[30] . বুখারী, মিশকাত হা/৫৫৮৫, অধ্যায়-২৮, অনুচ্ছেদ-৪।

[31] . ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৭৩ পৃঃ ; শাওকানী, নায়লুল আওত্বার (কায়রো: ১৩৯৮/১৯৭৮), ২/১৩ পৃঃ।

[32] . নায়লুল আওত্বার ২/১৫; মিরক্বাত ২/১১৩-১৪ পৃঃ।

[33] . নায়ল ৫/৪৭-৪৮, ‘জিহাদ’ অধ্যায়, ‘মুত্যুদন্ডে নিহত ব্যক্তির জানাযা’ অনুচ্ছেদ; এতদ্ব্যতীত আহমাদ, আবুদাঊদ, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৪০১১; যা-দুল মা‘আদ ৩/৯৮ পৃঃ; আলবানী, তালখীছু আহকামিল জানায়েয পৃঃ ৪৪; মুসলিম হা/২২৬২ (৯৭৮) ‘জানায়েয’ অধ্যায়-১১, অনুচ্ছেদ-৩৭; বুলূগুল মারাম হা/৫৪২।


2015
ছালাতের গুরুত্ব ( أهمية الصلاة)

1) কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ করার পরেই ইসলামে ছালাতের স্থান।[11]

2) ছালাত ইসলামের শ্রেষ্ঠতম ইবাদত, যা মি‘রাজের রাত্রিতে ফরয হয়।[12]

3) ছালাত ইসলামের প্রধান স্তম্ভ[13] যা ব্যতীত ইসলাম টিকে থাকতে পারে না।

4) ছালাত একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা ৭ বছর বয়স থেকেই আদায়ের অভ্যাস করতে হয়।[14]

5) ছালাতের বিধ্বস্তি জাতির বিধ্বস্তি হিসাবে পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে।[15]

6) পবিত্র কুরআনে সর্বাধিকবার আলোচিত বিষয় হ’ল ছালাত।[16]

7) মুমিনের জন্য সর্বাবস্থায় পালনীয় ফরয হ’ল ছালাত, যা অন্য ইবাদতের বেলায় হয়নি।[17]

8) ইসলামের প্রথম যে রশি ছিন্ন হবে, তা হ’ল তার শাসনব্যবস্থা এবং সর্বশেষ যে রশি ছিন্ন হবে তা হ’ল ‘ছালাত’। [18]

9) দুনিয়া থেকে ‘ছালাত’ বিদায় নেবার পরেই ক্বিয়ামত হবে।[19]

10) ক্বিয়ামতের দিন বান্দার সর্বপ্রথম হিসাব নেওয়া হবে তার ছালাতের। ছালাতের হিসাব সঠিক হ’লে তার সমস্ত আমল সঠিক হবে। আর ছালাতের হিসাব বেঠিক হ’লে তার সমস্ত আমল বরবাদ হবে।[20]

11) দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত হিসাবে ‘ছালাত’-কে ফরয করা হয়েছে, যা অন্য কোন ফরয ইবাদতের বেলায় করা হয়নি।[21]

12) মুমিন ও কাফির-মুশরিকের মধ্যে পার্থক্য হ’ল ‘ছালাত’।[22]

13) জাহান্নামী ব্যক্তির লক্ষণ এই যে, সে ছালাত বিনষ্ট করে এবং প্রবৃত্তির পূজারী হয় (মারিয়াম ১৯/৫৯)

14) ইবরাহীম (আঃ) আল্লাহর নিকটে নিজের জন্য ও নিজ সন্তানদের জন্য ছালাত কায়েমকারী হওয়ার প্রার্থনা করেছিলেন (ইবরাহীম ১৪/৪০)

15) মৃত্যুকালে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সর্বশেষ অছিয়ত ছিল ‘ছালাত’ ও নারীজাতি সম্পর্কে।[23]

[11] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৭৭২ ‘যাকাত’ অধ্যায়-৬, পরিচ্ছেদ-১।

[12] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৫৮৬২-৬৫ ‘ফাযায়েল ও শামায়েল’ অধ্যায়-২৯, ‘মি‘রাজ’ অনুচ্ছেদ-৬।

[13] . আহমাদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/২৯ (..عموده الصلاة..) ‘ঈমান’ অধ্যায়-১।

[14] . مُرُوْا أَوْلاَدَكُمْ بِالصَّلاَةِ وَهُمْ أَبْنَاءُ سَبْعِ سِنِيْنَ وَاضْرِبُوْهُمْ عَلَيْهَا وَهُمْ أَبْنَاءُ عَشْرِ سِنِيْنَ وَفَرِّقُوْا بَيْنَهُمْ فِي الْمَضَاجِعِ = আবুদাঊদ হা/২৪৭, মিশকাত হা/৫৭২ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, পরিচ্ছেদ-২।

[15] . মারিয়াম ১৯/৫৯ (فَخَلَفَ مِنْ بَعْدِهِمْ خَلْفٌ أَضَاعُوا الصَّلاَةَ وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَاتِ فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا)

[16] . কুরআনে অনূন্য ৮২ জায়গায় ‘ছালাতের’ আলোচনা এসেছে। - আল-মু‘জামুল মুফাহরাস লি আলফাযিল কুরআনিল কারীম (বৈরূত : ১৯৮৭)।

[17] . বাক্বারাহ ২/২৩৮-৩৯; নিসা ৪/১০১-০৩।

[18] ও [19]. عَنْ أَبِيْ أُمَامَةَ الْبَاهِلِيِّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَتُنْقَضَنَّ عُرَى الْإِسْلاَمِ عُرْوَةً عُرْوَةً فَكُلَّمَا انْتَقَضَتْ عُرْوَةٌ تَشَبَّثَ النَّاسُ بِالَّتِيْ تَلِيْهَا وَأَوَّلُهُنَّ نَقْضًا الْحُكْمُ وَآخِرُهُنَّ الصَّلاَةُ

আহমাদ, ছহীহ ইবনু হিববান; আলবানী, ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫৬৯; আলবানী, ছহীহ জামে‘ ছাগীর হা/৫০৭৫, ৫৪৭৮।

[20] عَنْ أَنَسِ بْنِ حُكَيْمٍ عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَوَّلُ مَا يُحَاسَبُ بِهِ الْعَبْدُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الصَلاَةُ ، فَإِنْ صَلَحَتْ صَلَحَ سَائِرُ عَمَلِهِ، وَإِنْ فَسَدَتْ فَسَدَ سَائِرُ عَمَلِهِ

ত্বাবারাণী আওসাত্ব, ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৩৬৯, সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৩৫৮; আবুদাঊদ হা/৮৬৪-৬৬; নাসাঈ, তিরমিযী, মিশকাত হা/১৩৩০ ‘ছালাতুত তাসবীহ’ অনুচ্ছেদ-৪০।

[21] মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মুসলিম, মিশকাত হা/৫৮৬২-৬৫ ‘মি‘রাজ’ অনুচ্ছেদ; নিসা ৪/১০৩।

[22]. عَنْ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللهِ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: بَيْنَ الرَّجُلِ وَبَيْنَ الشِّرْكِ وَالْكُفْرِ تَرْكُ الصَّلاَةِ = মুসলিম হা/১৩৪ ‘ঈমান’ অধ্যায়; ঐ, মিশকাত হা/৫৬৯ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪; ইবনু মাজাহ হা/১০৮০।

[23] . عَنْ عَلِيٍّ قَالَ كَانَ آخِرُ كَلاَمِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الصَّلاَةُ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ = ইবনু মাজাহ হা/২৬৯৮ ‘অছিয়তসমূহ’ অধ্যায়; আবুদাঊদ হা/৫১৫৬ ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৩৩।


2019
ছালাতের ফরযিয়াত ও রাক‘আত সংখ্যা (فى فرضية الصلوة وعدد ركعاتها)

নবুঅত প্রাপ্তির পর থেকেই ছালাত ফরয হয়। তবে তখন ছালাত ছিল কেবল ফজরে ও আছরে দু’ দু’ রাক‘আত করে (কুরতুবী)। যেমন আল্লাহ স্বীয় রাসূলকে বলেন, وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ بِالْعَشِيِّ وَالْإِبْكَارِ ‘আপনি আপনার প্রভুর প্রশংসা জ্ঞাপন করুন সূর্যাস্তের পূর্বে ও সূর্যোদয়ের পূর্বে’।[3] আয়েশা (রাঃ) বলেন, শুরুতে ছালাত বাড়ীতে ও সফরে ছিল দু’ দু’ রাক‘আত করে।[4] এছাড়া রাসূল (ছাঃ)-এর জন্য ‘অতিরিক্ত’ (نَافِلَةً) ছিল তাহাজ্জুদের ছালাত (ইসরা/বনু ইস্রাঈল ১৭/৭৯)। সেই সাথে ছাহাবীগণও নিয়মিতভাবে রাত্রির নফল ছালাত আদায় করতেন।[5] মি‘রাজের রাত্রিতে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ফরয করা হয়।[6] উক্ত পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত হ’ল- ফজর, যোহর, আছর, মাগরিব ও এশা।[7] এছাড়া রয়েছে জুম‘আর ফরয ছালাত, যা সপ্তাহে একদিন শুক্রবার দুপুরে পড়তে হয়।[8] জুম‘আ পড়লে যোহর পড়তে হয় না। কেননা জুম‘আ হ’ল যোহরের স্থলাভিষিক্ত। [9]

পাঁচ ওয়াক্ত ফরয ছালাতে দিনে-রাতে মোট ১৭ রাক‘আত ও জুম‘আর দিনে ১৫ রাক‘আত ফরয এবং ১২ অথবা ১০ রাক‘আত সুন্নাতে মুওয়াক্কাদাহ। যেমন(১) ফজর : ২ রাক‘আত সুন্নাত, অতঃপর ২ রাক‘আত ফরয (২) যোহর : ৪ অথবা ২ রাক‘আত সুন্নাত, অতঃপর ৪ রাক‘আত ফরয। অতঃপর ২ রাক‘আত সুন্নাত (৩) আছর : ৪ রাক‘আত ফরয (৪) মাগরিব : ৩ রাক‘আত ফরয। অতঃপর ২ রাক‘আত সুন্নাত (৫) এশা : ৪ রাক‘আত ফরয। অতঃপর ২ রাক‘আত সুন্নাত। অতঃপর শেষে এক রাক‘আত বিতর।

জুম‘আর ছালাত ২ রাক‘আত ফরয। তার পূর্বে মসজিদে প্রবেশের পর বসার পূর্বে কমপক্ষে ২ রাক‘আত ‘তাহিইয়াতুল মাসজিদ’ এবং জুম‘আ শেষে ৪ অথবা ২ রাক‘আত সুন্নাত। উপরে বর্ণিত সবগুলিই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিয়মিত আমল দ্বারা নির্ধারিত এবং ছহীহ হাদীছ সমূহ দ্বারা প্রমাণিত, [10] যা অত্র বইয়ের সংশ্লিষ্ট অধ্যায় সমূহে দ্রষ্টব্য।

[3] . গাফির/মুমিন ৪০/৫৫; মিরআত ২/২৬৯।

[4] . মুসলিম হা/৬৮৫; আবুদাঊদ হা/১১৯৮; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২১১।

[5] . মুযযাম্মিল ৭৩/২০; তাফসীরে কুরতুবী।


2019

তাশাহহুদ (আত্তাহিইয়া-তু):

اَلتَّحِيَّاتُ ِللهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ، السَّلاَمُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ، السَّلاَمُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِيْنَ، أَشْهَدُ أَنْ لاَّ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ

উচ্চারণ : আত্তাহিইয়া-তু লিল্লা-হি ওয়াছ্ ছালাওয়া-তু ওয়াত্ ত্বাইয়িবা-তু আসসালা-মু ‘আলায়কা আইয়ুহান নাবিইয়ু ওয়া রহমাতুল্লা-হি ওয়া বারাকা-তুহু। আসসালা-মু ‘আলায়না ওয়া ‘আলা ‘ইবা-দিল্লা-হিছ ছা-লেহীন। আশহাদু আল লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহূ ওয়া রাসূলুহু।

অনুবাদ : যাবতীয় সম্মান, যাবতীয় উপাসনা ও যাবতীয় পবিত্র বিষয় আল্লাহর জন্য। হে নবী! আপনার উপরে শান্তি বর্ষিত হৌক এবং আল্লাহর অনুগ্রহ ও সমৃদ্ধি সমূহ নাযিল হউক। শান্তি বর্ষিত হউক আমাদের উপরে ও আল্লাহর সৎকর্মশীল বান্দাগণের উপরে। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল’ (বুখারী, মুসলিম)।[4]

(খ) দরূদ :

اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَّعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ- اَللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَّعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ-

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ছাল্লে ‘আলা মুহাম্মাদিঁউ ওয়া ‘আলা আ-লে মুহাম্মাদিন কামা ছাল্লায়তা ‘আলা ইবরা-হীমা ওয়া ‘আলা আ-লে ইবরা-হীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বা-রিক ‘আলা মুহাম্মাদিঁউ ওয়া ‘আলা আ-লে মুহাম্মাদিন কামা বা-রকতা ‘আলা ইবরা-হীমা ওয়া ‘আলা আ-লে ইবরা-হীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।

অনুবাদ : ‘হে আল্লাহ! আপনি রহমত বর্ষণ করুন মুহাম্মাদ ও মুহাম্মাদের পরিবারের উপরে, যেমন আপনি রহমত বর্ষণ করেছেন ইবরাহীম ও ইবরাহীমের পরিবারের উপরে। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত। হে আল্লাহ! আপনি বরকত নাযিল করুন মুহাম্মাদ ও মুহাম্মাদের পরিবারের উপরে, যেমন আপনি বরকত নাযিল করেছেন ইবরাহীম ও ইবরাহীমের পরিবারের উপরে। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত’।[5]

(গ) দো‘আয়ে মাছূরাহ :

اَللَّهُمَّ إِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ ظُلْمًا كَثِيْرًا وَّلاَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلاَّ أَنْتَ، فَاغْفِرْ لِيْ مَغْفِرَةً مِّنْ عِنْدَكَ وَارْحَمْنِيْ إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ

উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী যালামতু নাফসী যুলমান কাছীরাঁও অলা ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা, ফাগফিরলী মাগফিরাতাম মিন ‘ইনদিকা ওয়ারহামনী ইন্নাকা আন্তাল গাফূরুর রহীম’।

অনুবাদ : ‘হে আল্লাহ! আমি আমার নফসের উপরে অসংখ্য যুলুম করেছি। ঐসব গুনাহ মাফ করার কেউ নেই আপনি ব্যতীত। অতএব আপনি আমাকে আপনার পক্ষ হ’তে বিশেষভাবে ক্ষমা করুন এবং আমার উপরে অনুগ্রহ করুন। নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান’।[6]

এর পর অন্যান্য দো‘আ সমূহ পড়তে পারে।

[4] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৯০৯ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘তাশাহহুদ’ অনুচ্ছেদ-১৫।



2019


তাকবীরে তাহরীমা : ওযূ করার পর ছালাতের সংকল্প করে ক্বিবলামুখী দাঁড়িয়ে ‘আল্লা-হু আকবর’ বলে দু’হাত কাঁধ বরাবর উঠিয়ে তাকবীরে তাহরীমা শেষে বুকে বাঁধবে। এ সময় বাম হাতের উপরে ডান হাত কনুই বরাবর রাখবে অথবা বাম কব্জির উপরে ডান কব্জি রেখে বুকের উপরে হাত বাঁধবে। অতঃপর সিজদার স্থানে দৃষ্টি রেখে বিনম্রচিত্তে নিম্নোক্ত দো‘আর মাধ্যমে মুছল্লী তার সর্বোত্তম ইবাদতের শুভ সূচনা করবে।-

اَللَّهُمَّ بَاعِدْ بَيْنِيْ وَبَيْنَ خَطَايَايَ كَمَا بَاعَدْتَ بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ اَللَّهُمَّ نَقِّنِيْ مِنَ الْخَطَايَا كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الْأَبْيَضُ مِنَ الدَّنَسِ، اَللَّهُمَّ اغْسِلْ خَطَايَايَ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَد-

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা বা-‘এদ বায়নী ওয়া বায়না খাত্বা-ইয়া-ইয়া, কামা বা-‘আদতা বায়নাল মাশরিক্বি ওয়াল মাগরিবি। আল্লা-হুম্মা নাকক্বিনী মিনাল খাত্বা-ইয়া, কামা ইউনাকক্বাছ ছাওবুল আব্ইয়াযু মিনাদ দানাসি। আল্লা-হুম্মাগসিল খাত্বা-ইয়া-ইয়া বিল মা-য়ি ওয়াছ ছালজি ওয়াল বারাদি’।

অনুবাদ : হে আল্লাহ! আপনি আমার ও আমার গোনাহ সমূহের মধ্যে এমন দূরত্ব সৃষ্টি করে দিন, যেমন দূরত্ব সৃষ্টি করেছেন পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে পরিচ্ছন্ন করুন গোনাহ সমূহ হ’তে, যেমন পরিচ্ছন্ন করা হয় সাদা কাপড় ময়লা হ’তে। হে আল্লাহ! আপনি আমার গুনাহ সমূহকে ধুয়ে ছাফ করে দিন পানি দ্বারা, বরফ দ্বারা ও শিশির দ্বারা’।[2]

একে ‘ছানা’ বা দো‘আয়ে ইস্তেফতাহ বলা হয়। ছানার জন্য অন্য দো‘আও রয়েছে। তবে এই দো‘আটি সর্বাধিক বিশুদ্ধ।

[1] . বুখারী হা/৬৩১, ৬০০৮, ৭২৪৬; মিশকাত হা/৬৮৩, ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, অনুচ্ছেদ-৬।

[2] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৮১২ ‘তাকবীরের পর যা পড়তে হয়’ অনুচ্ছেদ-১১।
রুকূ

(৪) রুকূ : ক্বিরাআত শেষে ‘আল্লা-হু আকবর’ বলে দু’হাত কাঁধ অথবা কান পর্যন্ত উঠিয়ে ‘রাফ‘উল ইয়াদায়েন’ করে রুকূতে যাবে। এ সময় হাঁটুর উপরে দু’হাতে ভর দিয়ে পা, হাত, পিঠ ও মাথা সোজা রাখবে এবং রুকূর দো‘আ পড়বে। রুকূর দো‘আ : سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيْمِ ‘সুবহা-না রব্বিয়াল ‘আযীম’ (মহাপবিত্র আমার প্রতিপালক যিনি মহান) কমপক্ষে তিনবার পড়বে। 

সিজদা : ক্বওমার দো‘আ পাঠ শেষে ‘আল্লা-হু আকবর’ বলে প্রথমে দু’হাত ও পরে দু’হাঁটু মাটিতে রেখে সিজদায় যাবে ও বেশী বেশী দো‘আ পড়বে। এ সময় দু’হাত ক্বিবলামুখী করে মাথার দু’পাশে কাঁধ বা কান বরাবর মাটিতে স্বাভাবিকভাবে রাখবে। কনুই ও বগল ফাঁকা থাকবে। হাঁটুতে বা মাটিতে ঠেস দিবে না। সিজদা লম্বা হবে ও পিঠ সোজা থাকবে। যেন নীচ দিয়ে একটি বকরীর বাচ্চা যাওয়ার মত ফাঁকা থাকে।

সিজদা থেকে উঠে বাম পায়ের পাতার উপরে বসবে ও ডান পায়ের পাতা খাড়া রাখবে। এ সময় স্থিরভাবে বসে দো‘আ পড়বে। অতঃপর ‘আল্লা-হু আকবর’ বলে দ্বিতীয় সিজদায় যাবে ও দো‘আ পড়বে। রুকূ ও সিজদায় কুরআনী দো‘আ পড়বে না। ২য় ও ৪র্থ রাক‘আতে দাঁড়াবার প্রাক্কালে সিজদা থেকে উঠে সামান্য সময়ের জন্য স্থির হয়ে বসবে। একে ‘জালসায়ে ইস্তিরা-হাত’ বা ‘স্বস্তির বৈঠক’ বলে। অতঃপর মাটিতে দু’হাতে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে যাবে।

সিজদার দো‘আ : سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى (সুবহা-না রবিয়াল আ‘লা) অর্থঃ ‘মহাপবিত্র আমার প্রতিপালক যিনি সর্বোচ্চ’। কমপক্ষে তিনবার পড়বে। রুকূ ও সিজদার অন্য দো‘আও রয়েছে।

দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠকের দো‘আ :

اَللَّهُمَّ اغْفِرْ لِيْ وَارْحَمْنِيْ وَاجْبُرْنِيْ وَاهْدِنِيْ وَعَافِنِيْ وَارْزُقْنِيْ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাগফিরলী ওয়ারহামনী ওয়াজ্বুরনী ওয়াহদিনী ওয়া ‘আ-ফেনী ওয়ারঝুক্বনী।

অনুবাদ : ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আমার উপরে রহম করুন, আমার অবস্থার সংশোধন করুন, আমাকে সৎপথ প্রদর্শন করুন, আমাকে সুস্থতা দান করুন ও আমাকে রূযী দান করুন’।[3]

[3] . তিরমিযী হা/২৮৪; ইবনু মাজাহ হা/৮৯৮; আবুদাঊদ হা/৮৫০; ঐ, মিশকাত হা/৯০০, অনুচ্ছেদ-১৪; নায়লুল আওত্বার ৩/১২৯ পৃঃ।



1995 batch

ক্বওমা : অতঃপর রুকূ থেকে উঠে সোজা ও সুস্থিরভাবে দাঁড়াবে। এ সময় দু’হাত ক্বিবলামুখী খাড়া রেখে কাঁধ পর্যন্ত উঠাবে এবং ইমাম ও মুক্তাদী সকলে বলবে ‘সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ’ (আল্লাহ তার কথা শোনেন, যে তার প্রশংসা করে)। অতঃপর ‘ক্বওমা’র দো‘আ একবার পড়বে।

ক্বওমার দো‘আ : رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ রব্বানা লাকাল হামদ’ (হে আমাদের প্রতিপালক! আপনার জন্যই সকল প্রশংসা)। অথবা পড়বে- رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ حَمْدًا كَثِيْرًا طَيِّبًا مُّبَارَكًا فِيْهِ রব্বানা ওয়া লাকাল হাম্‌দু হাম্‌দান কাছীরান ত্বাইয়েবাম মুবা-রাকান ফীহি’ (হে আমাদের প্রতিপালক! আপনার জন্য অগণিত প্রশংসা, যা পবিত্র ও বরকতময়)। ক্বওমার জন্য অন্য দো‘আও রয়েছে।




2018





2014




2014





2011





Nassir, A. Rahman, A. Hoque, Sofiullah, H. Azad 2019




My Boss With Us on 2018






2012




No comments:

Post a Comment