بسم الله الرحمن الرحيم
إِنَّ الْحَمْدَ ِللهِ نَحْمَدُهُ وَنَسْتَعِيْنُهُ مَنْ يَهْدِهِ اللهُ فَلاَ مُضِلَّ لَهُ وَمَنْ يُضْلِلْ فَلاَ هَادِىَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنْ لآ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ، أَمَّا بَعْدُ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মহান আল্লাহর কাছে দোয়ার চেয়ে অধিক মর্যাদাপূর্ণ বিষয় আর নেই।’ (তিরমিজি) আর আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে তাঁর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করতে বলেছেন- তোমাদের পালনকর্তা বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।’ (সুরা মুমিন : আাত ৬০)
يا أيها الذين آمنوا اتقوا الله حق تقاته ولا تموتن إلا وأنتم مسلمون.
ইয়া আইয়্যুহাল্লাযিনা আমানুত তাকুল্লাহা হাক্কা তুকাতিহি ওয়ালা তামুতুন্না ইল্লা ওয়া আনতুম মুসলিমুন।
يا أيهـا الناس اتقوا ربكم الذي خلقكم من نفس واحدة وخلق منها زوجها وبث منهما رجالا كثيرا ونساء واتقوا الله الـذي تساءلون به والأرحام إن الله كان عليكم رقيبا
ইয়া আইয়্যুহান্নাসুত তাকু রাব্বাকুমুল লাযি খালাকাকুম মিন নাফসিও ওয়াহিদাতিও ওয়া খালাকা মিনহা যাওজাহা ওয়া বাসসা মিনহা রিজালান কাসিরাও ওয়া নিসা, ওয়াত তাকুল্লাহাল্লাযি তাসা আলুনা বিহি ওয়াল আরহাম, ইন্নাল্লাহা কানা আলাইকুম রাকিবা।
يا أيهـا الذين آمنوا اتقوا الله وقولوا قولا سديدا يصلح لكـم أعمالكم ويغفر لكم ذنوبكم ومن يطع الله ورسوله فقـد فاز فوزا عظيما.
ইয়া আইয়্যুহাল্লাযিনা আমানুত তাকুল্লাহা ওয়া কূলূ কাওলান সাদিদা। ইউসলিহ লাকুম আমালাকুম ওয়াগ ফির লাকুম যুনুবাকুম, ওয়ামাই ইউতিয়িল্লাহা ওয়া রাসূলাহু ফাকাদ ফাযা ফাওযা আযিমা।
أما بعد فيا أيها المسلمون ، قال الله تعالى : حـافظوا على الصلوات والصلاة الوسطى وقوموا لله قانتين. فإن خفتم فرجالا أو ركبانا فإذا أمنتم فاذكروا الله كما علمكم ما لم تكونوا تعلمون.
আম্মা বাদ, ফায়া আইয়্যুহাল মুসাল্লুনাল কিরাম, কালাল্লাহু তায়ালা, হাফিযু আলাস সালাওয়াতি ওয়াস সালাতিল উসতা, ওয়া কূমু লিল্লাহি কানিতিন। ফা ইন খিফতুম ফারিজালান আও রুকবানা, ফা ইযা আমিনতুম, ফাযকুরুল্লাহা কামা আল্লামাকুম মালাম তাকুনু তালামুন।
اللهُمَّ أَعِزَّ الإِسْلامَ وَالمُسْلِمِينَ، اللهُمَّ أَعِزَّ الإِسْلامَ وَالمُسْلِمِينَ، وَأَذِلَّ الشِّرْكَ وَالمُشْرِكِينَ وَدَمِّرْ أَعْدآءَ الدِّينِ وَاحْمِ حَوْزَةَ الإسْلامِ يَا رَبَّ العَالَمِينَ.
আল্লাহুম্মা আ’ইজ্জাল-ইসলামা ওয়াল-মুসলিমীন, আল্লাহুম্মা আইজ্জাল-ইসলামা ওয়াল-মুসলিমীন, ওয়া আযিল্লাশ-শিরকা ওয়াল-মুশরিকীন, ওয়া দামির আ’দা‘আদ-দ্বীন, ওয়াহমি হাওযাতাল-ইসলামী ইয়া রাব্বাল-3আলামীন।
অর্থ: হে আল্লাহ, ইসলাম ও মুসলমানদের লালন কর, হে আল্লাহ, ইসলাম ও মুসলমানদের লালন কর, শিরক ও মুশরিকদের লাঞ্ছিত কর, ধর্মের শত্রুদের ধ্বংস কর এবং ইসলামের অধিকার রক্ষা কর, হে সমস্ত জাহানের প্রতিপালক।
سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ
আল্লাহ পবিত্র এবং আপনার প্রশংসা সহ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আপনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, আমি আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং আপনার কাছে তওবা করছি।
وقال رسول الله صلى الله عليه وسلم : مـن تـرك الصلاة فقد كفر.
ওয়াকালা রাসূলুল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিন তারকিস সালাতি ফাকাদ কাফার।
সাইয়েদুল ইস্তেগফার
*রাসূলুল্লাহ(ছাঃ)বলেন, যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এই দো‘আ পাঠ করবে, দিনে পাঠ করে রাতে মারা গেলে কিংবা রাতে পাঠ করে দিনে মারা গেলে, সে জান্নাতী হবে।
اَللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّىْ لآ إِلهَ إلاَّ أَنْتَ خَلَقْتَنِىْ وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوْذُبِكَ مِنْ شَرِّمَا صَنَعْتُ، أبُوْءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَىَّ وَأَبُوْءُ بِذَنْبِىْ فَاغْفِرْلِىْ، فَإِنَّهُ لاَيَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلاَّ أَنْتَ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা আনতা রব্বী লা ইলা-হা ইল্লা আনতা খালাক্বতানী, ওয়া আনা ‘আবদুকা ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাসতাত্বা‘তু, আ‘ঊযুবিকা মিন শার্রি মা ছানা‘তু। আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়া ওয়া আবূউ বিযাম্বী ফাগফিরলী ফাইন্নাহূ লা ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা আনতা।
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার পালনকর্তা। তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমার দাস। আমি আমার সাধ্যমত তোমার নিকটে দেওয়া অঙ্গীকারে ও প্রতিশ্রুতিতে দৃঢ় আছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট হ’তে তোমার নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি আমার উপরে তোমার দেওয়া অনুগ্রহকে স্বীকার করছি এবং আমি আমার গোনাহের স্বীকৃতি দিচ্ছি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা কর। কেননা তুমি ব্যতীত পাপসমূহ ক্ষমা করার কেউ নেই’।
اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي مِنَ التَّوَّابِينَ وَاجْعَلْنِي مِنَ الْمُتَطَهِّرِينَ
হে আল্লাহ, আমাকে তওবাকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন এবং আমাকে পবিত্রতা অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন।
বাজারে প্রবেশকালে দো‘আ :
হযরত ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি বাজারে প্রবেশকালে নিম্নোক্ত দো‘আটি পাঠ করে, আল্লাহ তার জন্য ১ লক্ষ নেকী লিখেন, ১ লক্ষ ছগীরা গোনাহ দূর করে দেন, তার মর্যাদার স্তর ১ লক্ষ গুণ উন্নীত করেন এবং তার জন্য জান্নাতে একটি গৃহ নির্মাণ করেন’।-
لآ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِي وَيُمِيْتُ وَهُوَ حَيٌّ لاَ يَمُوْتُ، بِيَدِهِ الْخَيْرُ وَ هُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ-
উচ্চারণ : লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু য়ুহ্য়ী ওয়া য়ুমীতু ওয়া হুয়া হাইয়ুন লা ইয়ামূতু, বেইয়াদিহিল খাইরু ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লে শাইয়িন ক্বাদীর।
অনুবাদ : নেই কোন উপাস্য আল্লাহ ব্যতীত, যিনি একক, যার কোন শরীক নেই। তাঁর জন্যই সকল রাজত্ব ও তাঁর জন্যই সকল প্রশংসা। যিনি বাঁচান ও মারেন। যিনি চিরঞ্জীব, কখনোই মরেন না। তাঁর হাতেই যাবতীয় কল্যাণ। তিনি সকল কিছুর উপরে ক্ষমতাবান’।[142]
কুরআনুল কারীমের ৩৩ আয়াতের আমল ও ফযীলত
নিরাপত্তার রক্ষাকবচ আল কুরআনের ৩৩ আয়াত (33 Ayat of Al Quran)।এই ৩৩টি আয়াত হচ্ছে নিরাপত্তার ৩৩টি দেয়াল।শত্রুর অনিষ্টতা, বদ-জ্বীনের আসর ইত্যাদি থেকে রক্ষা পেতে সকাল সন্ধ্যা পূর্ণ একিনের সাথে আমল করতে হবে।
ইবনে নাজ্জার রহ. ‘যাইলু তরিখি বাগদাদ’ গ্রন্থে (৩/২৫৩-২৫৫) বর্ণনা করেছেন যে, ইবনে সিরীন রহ. বলেছেন, আমরা ‘নাহরে তাইরী’তে অবতরণ করলাম। সেখানকার লোকেরা আমাদেরকে বলল, তোমরা চলে যাও কেননা এখানে যারাই অবস্থান করেছে তাদের মাল ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। আমার সকল সাথী চলে গেল।
কিন্তু আমি হযরত ইবনে উমর রা. এর সূত্রে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত হাদীসটির কারণে থেকে গেলাম। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি রাতের বেলা তেত্রিশ আয়াত পড়বে তাকে কোনো হিংস্র জন্তু অথবা আগন্তুক চোর ক্ষতি করতে পারবে না। আর সকাল পর্যন্ত তাকে এবং তার পরিবার-পরিজন এবং তার মালকে রক্ষা করা হবে।
রাতের বেলা আমি ঘুমালাম না। আমি দেখতে পেলাম, তারা ত্রিশ বারেরও বেশি তলোয়ার খাপমুক্ত করে এসেছে কিন্তু আমার কাছে পৌঁছতে পারে নি।
সকালবেলা আমি চলতে শুরু করলাম, তখন তাদের এক সর্দার আমার সাথে সাক্ষাৎ করে বলল, তুমি মানুষ না জিন। আমি বললাম মানুষ। সে বলল আমরা সত্তরবারের বেশি তোমার কাছে আসলাম, যখনই এসেছি তোমার এবং আমাদের মাঝে লোহার একটি দেয়াল বাধা হয়ে দাড়িয়ছে। আমি তাকে উপরোক্ত হাদীসটি শুনালাম।
ইবনে সীরীন বলেন, আমি এই হাদীস সম্পর্কে শুআইব ইবনে হারবকে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি বললেন, আমরা এটাকে ‘আয়াতুল হিরয’ বলি। বলা হয়, এতে একশত অসুখ থেকে মুক্তি রয়েছে। এরপর তিনি এগুলোর মধ্যে পাগলামী, কোষ্ঠরোগ ইত্যদির কথা উল্লেখ করলেন।’’
মুহাম্মদ বিন আলী বলেন, আমাদের এক শায়খের অর্ধাঙ্গ হলে আমি তা পাঠ করলাম। আল্লাহ তাআলা এর উসিলায় তার রোগ দূর করে দিলেন। (যাইলু তরিখি বাগদাদ, ইবনে নাজ্জার,: ৩/২৫৩-২৫৫ আদ দুররুল মানছুর, সুয়ুতী: ১/১৫০-১৫২)
উপরে হযরত ইবনে উমরা. থেকে যে হাদীস বর্ণিত হয়েছে সনদের বিচারে হাদীসটি দুর্বল। তবে ফযীলত বর্ণনার ক্ষেত্রে যেহেতু মুহাদ্দিসীনে কেরামের দিদ্ধান্ত অনুযায়ী কিছু শর্ত সাপেক্ষে দুর্বল হাদীস গ্রহণযোগ্য। তাই উক্ত হাদীসের উপর আমল করতে কোনো অসুবিধা নেই। তেত্রিশ আয়াত বা আয়াতুল হিরয অথবা আয়াতুল হারব এর ফযীলত সম্পর্কে এতটুই পাওয়া যায়।
এছাড়া অভিজ্ঞতার আলোকেও এর অনেক উপকারিতা প্রত্যক্ষ করা গেছে। যেমন আমালে কোরআনী গ্রন্থে আছে এগুলো যথারীত পাঠ করলে যাদু-টুনা, জীন, দেও-দানব, চুর-ডাকাত, এবং সকল প্রকার আপদ-বিপদ দূর হয়।
তাছাড়া এই তেত্রিশ আয়াতের মধ্যে আয়াতুল কুরসীও রয়েছে। রাতে শয়তানের আক্রমন থেকে বাঁচার জন্য নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা পাঠ করার কথা বলেছেন, যা সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং শয়তান, জিন, যাদু-টুনা ইত্যাদি থেকে রক্ষার জন্য এটি পড়তে কোন অসুবিধা নেই।
তেত্রিশ (৩৩) আয়াত ও আমলের নিয়ম:
প্রথমে বিসমিল্লাহ সহ সূরা ফাতিহা পড়তে হবে। তারপর পড়তে হবে নিম্নলিখিত আয়াত সমূহ:
বাকারা:১-৫
বাকারা(আয়াতুল কুরসি):২৫৫-২৫৭
বাকারা:২৮৪-২৮৬
আ’রাফ:৫৪-৫৬
বনি ইসরাইল: ১১০-১১১
সাফ্ফাত:১-১১
আর রহমান-৩৩-৩৫
হাশর:২১-২৪
সূরা জ্বীন: ১-৪
শেষ করতে হবে ৪টি সূরা দিয়ে:কাফিরুন,ইখলাস, ফালাক ও সূরা নাস।তারপর দুই হাতের তালুতে ফুঁ দিয়ে মাথা থেকে পা পর্যন্ত মুছেহ করতে হবে।
ইসলামে যেসব নারীদের বিয়ে করা হারাম
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বংশ পরম্পরায় মানব প্রজন্মকে দুনিয়ায় টিকিয়ে রেখে দুনিয়াকে আবাদ রাখার জন্য বিবাহ বন্ধনকে বৈধ করেছেন। এটাকে আল্লাহ তাআলার একটা গুরুত্বপূর্ণ নীতি ও পদ্ধতি। এ ছাড়া বিয়ের মাধ্যমে দাম্পত্য জীবন গঠন করা নবীদেরও সুন্নত।
আল্লাহ তাআলা বলেন: নিশ্চয় আপনার পুর্বে অনেক রাসুলকে প্রেরণ করেছি। আমি তাদেরকে স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দান করেছি। (সুরা রা’দ ৩৮) তবে, বিয়ের ক্ষেত্রে ইসলামে কিছু বিধান রয়েছে। যে কাউকে বিয়ে করার ক্ষেত্রে ইসলামে কঠোর নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে।
ইসলামের দৃষ্টিতে যেসব নারীদের বিয়ে করা হারাম:
মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেন- মাতা, দুধ মা, বোন, দুধ বোন, কন্যা, খালা, ফুফু, ভ্রাতৃকন্যা, ভগণীকণ্যা, স্ত্রীদের মাতা, ঔরসজাত পুত্রদের স্ত্রী, দুই বোনকে একত্রে বিয়ে করা হারাম, অন্যের বৈধ স্ত্রীকে বিয়ে করা হারাম, তোমরা যাদের সঙ্গে সহবাস করেছ, সে স্ত্রীদের কন্যা যারা তোমাদের লালন-পালনে আছে। যদি তাদের সাথে সহবাস না করে থাক, তবে এ বিয়েতে তোমাদের কোন গোনাহ নেই।
বংশগত সম্পর্কের কারণে যারা হারাম-
১. আপন জননীদের বিয়ে করা হারাম। এ ক্ষেত্রে দাদি, নানি সবার এ বিধান প্রযোজ্য।
২. নিজের ঔরসজাত কন্যাকে বিয়ে করা হারাম। এ ক্ষেত্রে পৌত্রী, প্রপৌত্রী, দৌহিত্রী, প্রদৌহিত্রী তাদেরও বিয়ে করা হারাম।
৩. সহোদরা ভগ্নিকে বিয়ে করা হারাম। এমনইভাবে বৈমাত্রেয়ী ও বৈপিত্রেয়ী ভগ্নিকেও বিয়ে করা হারাম।
৪. পিতার সহোদরা, বৈমাত্রেয়ী ও বৈপিত্রেয়ী বোনকে (ফুফুকে) বিয়ে করা হারাম।
৫. আপন জননীর সহোদরা, বৈমাত্রেয়ী ও বৈপিত্রেয়ী বোনকে (খালা) বিবাহ করা হারাম।
৬. ভ্রাতুষ্পুত্রীর সঙ্গেও বিয়ে হারাম, আপন হোক, বৈমাত্রীয় হোক।
৭. বোনের কন্যাকে বিয়ে করা হারাম। চাই সে বোন সহোদরা, বৈমাত্রেয়ী ও বৈপিত্রেয়ী যে কোনো ধরনের বোনই হোক না কেন, তাদের কন্যাদের বিবাহ করা ভাইয়ের জন্য বৈধ নয়।
বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে যারা হারাম-
১. স্ত্রীদের মাতাগণ (শাশুড়ি) স্বামীর জন্য হারাম। এতে স্ত্রীদের নানি, দাদি সবার জন্য এ বিধান প্রযোজ্য।
২. নিজ স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহের পর সহবাস করার শর্তে ওই স্ত্রীর অন্য স্বামীর ঔরসজাত কন্যাকে বিবাহ করা হারাম।
৩. পুত্রবধূকে বিয়ে করা হারাম।
৪. দুই বোনকে বিবাহের মাধ্যমে একত্র করা অবৈধ।
তবে, খালাতো, মামাতো, চাচাতো বা ফুফাতো বোনকে বিয়ে করা বৈধ। চাচা মারা গেলে কিংবা তালাক দিয়ে দিলে চাচীকে বিয়ে করার বৈধতা দিয়েছে ইসলাম। তবে, তাদেরকে বিয়ে করবেন কি করবেন না সেটা আপনার ইচ্ছা।
সদকাতুল ফিতরার বিধান, কারা দিবে, কাদের দিবে! (Fitra)
সদকা অর্থ দান, ফিতর মানে রোজা সমাপন; সদকাতুল ফিতর অর্থ হলো রোজা শেষে ঈদুল ফিতরের দিনে সকালবেলায় শোকরিয়া ও আনন্দস্বরূপ যে নির্ধারিত সদকা আদায় করা হয়। এর দ্বারা রোজার ত্রুটিবিচ্যুতি মার্জনা হয়। গরিব মানুষ ঈদের আনন্দে শামিল হতে পারে। এই সদকা ঈদের নামাজের আগেই আদায় করতে হয়; সময়–সুযোগ না পেলে পরে হলেও আদায় করতে হবে। অনেকেই ঈদের আগে তথা রমজানেই আদায় করে থাকেন; এতেও কোনো অসুবিধা নেই; বরং এর দ্বারা গ্রহণকারী তা ঈদ উদ্যাপনে কাজে লাগাতে পারে।
ঈদের নামাজে যাওয়ার আগেই ফিতরা আদায় করা সর্বোত্তম। তবে আগে থেকে ফিতরা আদায়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। আর যদি কেউ কোনো কারণে ঈদের নামাজের আগে আদায় করতে না পারে তবে ঈদের পরেও তা আদায় করা যাবে।
কারা ফিতরা দেবেন, কাদের দেবেন?
ঈদের দিন সকালবেলায় যিনি সাহেবে নিসাব থাকবেন, তাঁর নিজের ও পরিবারের সদস্যদের পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব। ছোট-বড় সবারই ফিতরা দিতে হবে। যাঁরা সাহিবে নিসাব নন, তাঁদের জন্যও ফিতরা আদায় করা সুন্নত ও নফল ইবাদত। অসহায় গরিব, ফকির, মিসকিন যারা জাকাত পাওয়ার যোগ্য, তারাই ফিতরার হকদার। ফিতরা নির্ধারিত খাদ্যসামগ্রী বা তার মূল্যে টাকায়ও আদায় করা যায় এবং অন্য কোনো বস্তু কিনেও দেওয়া যায়।
সদকাতুল ফিতরের ইতিহাস
আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, নবীজি (সা.)-এর জমানায় আমরা সদকাতুল ফিতর দিতাম এক সা (প্রায় সাড়ে তিন কেজি) খাদ্যবস্তু, তিনি বলেন, তখন আমাদের খাদ্য ছিল: যব, কিশমিশ, পনির ও খেজুর। (বুখারি, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ২০৪)। তিনি আরও বলেন: আমরা সদকাতুল ফিতর আদায় করতাম এক সা খাদ্যবস্তু বা (১) এক সা যব বা (২) এক সা খেজুর বা (৩) এক সা পনির অথবা (৪) এক সা কিশমিশ। (বুখারি, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ২০৫)।
সাহাবায়ে কিরামদের (রা.) অধিকাংশই খেজুর দ্বারা ফিতরা আদায় করতেন। ইবনে কুদামা (রা.) আবু মিজলাজের বর্ণনা উল্লেখ করে বলেন, তিনি আবদুল্লাহ ইবনে উমরকে (রা.) বললেন, ‘আল্লাহ তাআলা যখন প্রাচুর্য দিয়েছেন আর গম যেহেতু খেজুর অপেক্ষা উত্তম, তবুও আপনি খেজুর দ্বারা ফিতরা আদায় করছেন কেন?’ এর উত্তরে তিনি বলেছেন, ‘সাহাবিরা যে পথে চলেছেন আমিও সে পথে চলা পছন্দ করি।’
কীভাবে নিসফ সা (পৌনে দুই কেজি) প্রচলন হলো
নবী করিম (সা.)-এর যুগে মদিনায় গমের প্রচলন ছিল না বললেই চলে। পরবর্তী সময়ে যখন হজরত ওমর (রা.) খলিফা ও হজরত মুআবিয়া (রা.) শামের গভর্নর তখন মদিনায় গমের প্রচলন হয়। এ সময় হজরত মুআবিয়া (রা.)-এর ব্যাখ্যা ও খলিফা হজরত উমর (রা.)-এর নির্দেশে গম দ্বারা ফিতরা আদায়ের নিয়ম প্রবর্তন করা হয়।
আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন আমাদের মাঝে ছিলেন তখন আমরা ছোট, বড়, মুক্ত ক্রীতদাস সবার পক্ষ থেকে সদকাতুল ফিতর আদায় করতাম এক সা পনির বা এক সা যব বা এক সা খেজুর অথবা এক সা কিশমিশ। আমরা এভাবেই আদায় করছিলাম। একবার মুআবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান (রা.) হজ বা ওমরাহ করার জন্য এলেন, তিনি জনগণের উদ্দেশে মিম্বারে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিলেন। তখন তিনি বললেন, আমি দেখছি শামের দুই মুদ (নিসফ সা বা পৌনে দুই কেজি) আটা সমান হয় (মূল্যমান হিসেবে) এক সা খেজুরের। অতঃপর মানুষ এই মত গ্রহণ করলেন।
চার মাজহাবের ইমামদের মতামত
ইমাম আজম আবু হানিফা (রা.)-এর মতে, সদকাতুল ফিতর যেকোনো খাদ্যবস্তু এক সা; তবে গম হলে নিসফ সা। ইমাম মালিক (রা.), ইমাম শাফিয়ি (রা.) ও ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রা.)-এর মতে, সদকাতুল ফিতর এক সা পরিমাণ যেকোনো খাদ্যবস্তু।
ইমাম আজম আবু হানিফা (রা.)-এর মতে, বেশি মূল্যের দ্রব্য দ্বারা ফিতরা আদায় করা অতি উত্তম; অর্থাৎ যা দ্বারা আদায় করলে গরিবদের বেশি উপকার হয়, সেটাই উত্তম ফিতরা। ইমাম মালিক (রা.)-এর মতে, খেজুর দ্বারা ফিতরা আদায় করা উত্তম। ইমাম শাফিয়ি (রা.)–এর মতে, হাদিসে উল্লিখিত বস্তুসমূহের মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট ও সর্বোচ্চ মূল্যের দ্রব্য দ্বারা সদকা আদায় করা উচিত। ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রা.)-এর মতে, সাহাবায়ে কিরাম (রা.)-এর অনুসরণ হিসেবে খেজুর দ্বারা ফিতরা আদায় করা উত্তম।
কোনো কোনো ফকিহ মনে করেন, যেকোনো খাদ্যদ্রব্য দ্বারা ফিতরা আদায় করা যায় এবং যেখানে যা প্রধান খাদ্য তা দ্বারা আদায় করাই শ্রেয়। অনেক গবেষক ফকিহ মনে করেন, বাংলাদেশের প্রধান খাদ্য চাল, তাই আমাদের সদকাতুল ফিতর এক সা চাল হতে পারে। মুজতাহিদ ইমামদের মতে, যেসব খাদ্যবস্তু ১. সহজে সংরক্ষণযোগ্য, ২. সহজে বিনিময়যোগ্য ও ৩. বাজারমূল্য স্থিতিশীল থাকে; সেসব খাদ্যদ্রব্য দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করা যায়।
উত্তম ও ইনসাফপূর্ণ ফিতরা
খেজুর বা চাল বিভিন্ন দামের রয়েছে, এর মধ্যে কোনটি দ্বারা ফিতরা আদায় করা হবে? আসলে উত্তম হলো সর্বোচ্চ মূল্যের খেজুর বা চাল আদায় করা। তবে ধনীদের সর্বোচ্চ এবং সাধারণ মানুষদের মাঝামাঝি মূল্যে আদায় করাই শ্রেয়। ইনসাফ হলো যাঁরা যে চালের ভাত খান বা যাঁরা যে খেজুর দ্বারা ইফতার করেন, তাঁরা সে সমমানের বা সমমূল্যে ফিতরা আদায় করবেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ‘তা-ই উত্তম, দাতার কাছে যা সর্বোৎকৃষ্ট এবং যার মূল্যমান সবচেয়ে বেশি।’ (বুখারি, খণ্ড: ৩, পৃষ্ঠা: ১৮৮)।
মাসআলাঃ যাকাত হিসাব ও আদায়ের পদ্ধতি, প্রশ্ন ও উত্তর
মাসআলাঃ সম্পদের ৪০ ভাগের একভাগ যাকাত আদায় করা ফরজ। অর্থাৎ শতকরা আড়াই টাকা। কাজেই কারো ৮০,০০০( আশি হাজার) টাকা যাকাতযোগ্য সম্পদ থাকলে সে ২,০০০ ( দুই হাজার ) টাকা যাকাত দিবে।
মাসআলাঃ যাকাতের অর্থবছর চান্দ্র মাস হিসেবে নির্ধারণ হবে। ধরা যাক কেউ রজব মাসের ৫ তারিখে নেসাবের মালিক হল। তাহলে আগামী বছর রজবের ৪ তারিখে তার বছর পূর্ণ হবে। ঐ দিন তার নিকট যে সম্পদ থাকবে তার যাকাত আদায় করবে।
মাসআলাঃ যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য শর্ত হল বছরের শুরু ও শেষে নেসাব পরিমান সম্পদ থাকতে হবে। উপরে উল্লেখিত তারিখ অনুযায়ী রজবের ৫ তারিখে তো তার নিকট নেসাব পরিমান সম্পদ থাকবেই। যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য পরের বছর রজবের চার তারিখে তার নিকট কমপক্ষে নেসাব পরিমান সম্পদ থাকতে হবে। যদি না থাকে তবে তার উপরে যাকাত ফরজ হবে না। নতুন ভাবে যেদিন নেসাবের মালিক হবে সেদিন থেকে নতুন করে বছর শুরু হবে।
মাসআলাঃ যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য বছরের শুরু ও শেষে নেসাব পরিমান মাল থাকা যথেষ্ট। মাঝখানে যদি মাল কমে যায় এমনকি নেসাব থেকে কমে গেলেও যাকাত ফরজ থাকবে। তবে যদি মাঝখানে পুরো সম্পদ নষ্ট হয়ে যায়, তার কাছে কোন সম্পদ না থাকে তাহলে পূর্বের হিসাব বাতিল হবে। আবার যখন নেসাবের মালিক হবে নতুন করে হিসাব ধরা হবে।
মাসআলাঃ প্রতিটি মালের উপর বছর পুরা হওয়া জরুরী নয়। বরং যেদিন সে নেসাবের মালিক হবে ঐ দিন থেকে এক বছর পূর্ণ হওয়ার পরই তার নিকট থাকা সকল সম্পদের যাকাত দিতে হবে। যদি বছর পূর্ণ হওয়ার মাত্র দুদিন আগে তার নিকট দশ লক্ষ টাকা আসে তবে ঐ দশ লক্ষ টাকার যাকাত দিতে হবে। অথচ ঐ টাকা তার নিকট এক বছর থাকেনি। বরং মাত্র দুই দিন ছিল। অনুরুপভাবে নেসাবের বছর পূর্ণ হওয়ার দু দিন আগে যদি তার থেকে দশ লক্ষ টাকা খোয়া যায় তবে ঐ দশ লক্ষ টাকার যাকাত দিতে হবে না। মোটকথা বছরের মাঝে যা আসে ও চলে যায় তা ধর্তব্য হবে না। বরং বছরের শেষের সম্পদ হিসাব করা হবে।
মাসআলাঃ যাকাত হিসাব করে আদায় করা জরুরী। যে দিন বছর পূর্ণ হবে সেদিন তার যাকাতযোগ্য সকল সম্পদ হিসাব করবে। ব্যবসা থাকলে তার সকল স্টক মিলাবে। অতঃপর শতকরা আড়াই পার্সেন্ট হারে যাকাত আদায় করবে। ধারনা বা আন্দাজ করে যাকাত দিবে না।
মাসআলাঃ সোনা-রুপার যাকাত হিসাব করার ক্ষেত্রে বিক্রয়মূল্য ধর্তব্য হবে। চাই ক্রয়মূল্য কম বা বেশী হোক। যেমন সোনার ভরি ৬০,০০০ টাকা হলে বিক্রি করতে গেলে স্বর্ণকার সাধারণত ৪৫ থেকে ৪৮ হাজার টাকা দেয়। কাজেই এই ৪৫ বা ৪৮ হাজার টাকার যাকাত আদায় করতে হবে। ক্রয়মূল্যের নয়।
মাসআলাঃ ব্যবসার পন্যের যাকাত বাজারদর হিসেবে আদায় করতে হবে। চাই তার ক্রয়মূল্য বেশি বা কম হোক। ব্যবসার পন্যের মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে তিনটি সুরত হতে পারে। এক. খুচরা মুল্য দুই. পাইকারি মূল্য বা হোল সেল প্রাইস তিন. সমস্ত স্টক একত্রে একবারে বিক্রি করলে যত টাকা হয়। ব্যবসায়ীরা এই তৃতীয় সুরতটি এখতিয়ার করতে পারে। তবে দ্বিতীয় সুরত তথা হোল সেল প্রাইস গ্রহন করার মধ্যই সতর্কতা।
মাসআলাঃ সোনা-রুপা ও ব্যবসার পন্য এর যাকাত হিসাবের ক্ষেত্রে যেদিন বছর পূর্ণ হবে এবং যাকাত হিসাব করা হবে সেদিনের বাজার দর হিসাব করতে হবে। ঐ দিন উক্ত জিনিসগুলো বিক্রি করতে গেলে যত টাকা পাওয়া যাবে তার উপর যাকাত আসবে।
মাসআলাঃ যে জিনিসের যাকাত আদায় করা হবে তা যে স্থানে রয়েছে সেখানকার বাজারদর হিসেবে যাকাত আদায় করতে হবে। যাকাতদাতার স্থান ধর্তব্য নয়।
মাসআলাঃ যাকাত যেমন টাকা-পয়সা দ্বারা আদায় করা যায় তেমনিভাবে কোন পন্য দ্বারাও আদায় করা যায়। যেমন- পরিধেয় বস্ত্র, খাবার, কিতাবাদি ইত্যাদি। তবে এক্ষেত্রে শর্ত হল তা প্রাপককে মালিক বানিয়ে দিতে হবে। কাজেই ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসায়ীক পন্য মূল্য নির্ধারণ করে সরাসরি যাকাত বাবদ দিতে পারবে। তবে যদি পন্যটি এমন হয় যে, গ্রহনকারীর তা দ্বারা কোন ফায়েদা হবে না সেক্ষেত্রে মূল্য দিয়ে দিবে।
মাসআলাঃমানুষ তার দৈনন্দিন প্রয়োজনে যে ঋণ নিয়ে থাকে তা যাকাতের হিসাব থেকে বিয়োগ করতে হয়। বিয়োগ করার পর যদি নেসাব পরিমান সম্পদ না থাকে তবে যাকাত ফরজ হবে না।তবে প্রবৃদ্ধির জন্য যে ঋণ নিয়ে থাকে তা যাকাতের হিসাব থেকে বিয়োগ হবে না।আর বর্তমানে যে বড় বড় শিল্প ঋণ বা উন্নয়নমূলক ঋণ নেওয়া হয়ে থাকে তার হুকুম পরে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ।
মাসআলাঃযাকাতের হিসাবের ক্ষেত্রে চান্দ্রমাস অনুযায়ী হিসাব করতে হবে। প্রথম যে দিন সে নেসাবের মালিক হবে তা লিখে রাখবে। যেমন কেউ রজবের ৫ তারিখে নেসাবের মালিক হলে পরের বছর রজবের ৪ তারিখে যাকাত আদায় করবে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই সে কোনদিন নেসাবের মালিক হয়েছে তার হিসাব রাখে না। বরং খেয়াল খুশী মত আদায় করতে থাকে। এভাবে যাকাত আদায় করা জায়েয নয়।
বরং যে নেসাবের মালিক কবে হয়েছিল তা জানে না, সে এখন থেকে তার হিসাব করা সহজ হয় এমন একটি আরবী তারিখ নির্ধারণ করে নিবে। এরপর থেকে সে ঐ তারিখেই যাকাত হিসাব করবে। ইচ্ছা করলে রমযানেও সে তারিখটি নির্ধারণ করতে পারে। এমতবস্থায় সে এস্তেগফার করবে এবং সতর্কতামূলক কিছু বেশি আদায় করবে। আর নেসাবের মালিক হওয়ার দিনটি স্পষ্ট জানা থাকলে ঐ তারিখ পরিবর্তন করা জায়েয নেই।
মাসআলাঃ অনেকে ৭০ গুন সওয়াবের আশায় তার তারিখ জানা সত্ত্বেও রমযানে যাকাত আদায় করে। এবং বিনা কারনে যাকাতকে রমযান পর্যন্ত বিলম্বিত করে। অথচ বিনা কারনে এমনটি করা গুনাহের কাজ। তবে সে এমনটি করতে পারে, যেহেতু যাকাত অগ্রিম আদায় করা যায় তাই যখন সে নেসাবের মালিক হবে তখন বছর পূর্ণ হবার পূর্বে যে রমযান আসবে সেই রমযানে একটি অংশ আদায় করবে যাকাতের নিয়তে। পরবর্তীতে বছর পূর্ণ হওয়ার পর হিসাব করে দেখবে যদি বেশি দেয়া হয় তবে তা নফল দান হবে। আর কম হলে বাকিটুকু আদায় করবে। আর যদি রমযানে বছর পূর্ণ হয় তাহলে তো রমযানেই আদায় করবে।
মাসআলাঃ ব্যবসায়ীদের আদায়যোগ্য বকেয়া টাকার যাকাত আদায় করতে হবে। অর্থাৎ বাকিতে যে সকল পন্য বিক্রি করে থাকে তার মূল্যের উপরও যাকাত আসবে। এক্ষেত্রে ঐ টাকা হস্তগত হওয়ার পর যাকাত আদায় এর সুযোগ রয়েছে। তখন বিগত বছরগুলোর যাকাত হিসাব করে আদায় করেবে। তবে হিসাব করে প্রতি বছর নিয়মমত যাকাত আদায় করাই উত্তম। কেননা পরিমান বেশি হলে একসাথে দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। আর যদি ঐ টাকা পাবার কোন আশা না থাকে তবে যাকাত দিতে হবে না। তবে পেয়ে গেলে বিগত বছরগুলো সহ আদায় করে দিতে হবে।
মাসআলাঃ যে ঋন ফেরত পাওয়ার আশা নেই তার উপর যাকাত ফরজ নয়। তবে পেয়ে গেলে বিগত বছরের যাকাত হিসাব করে আদায় করে দিতে হবে।
মাসআলাঃ স্ত্রীকে মালিক বানিয়ে সে অলংকার বা সম্পদ স্বামী বা পিতা দিয়ে থাকে তার মালিক উক্ত স্ত্রী বা মেয়ে। কাজেই সেই তার যাকাত আদায় করবে। স্বামী বা পিতা তার অনুমতিক্রমে সইচ্ছায় আদায় করলে সেটা ভিন্ন কথা।
মাসআলাঃ মহিলাকে তার স্বামী বা পিতা ব্যবহারের জন্য অলংকার দিলে তার মালিক স্বামী বা পিতাই থাকবেন। কাজেই যাকাত তাদের জিম্মায় থাকবে।
মাসআলাঃ নাবালেগ সন্তানের নামে যে সম্পদ সংরক্ষণ করে রাখা হয় বা নাবালেগ মেয়ের ভবিষ্যতের জন্য তার নামে যে অলংকারদী বানিয়ে রাখা হয় বা তাদের নামে ব্যাংক একাউন্টে যে টাকা রাখা হয় বা তাদের নামে ব্যবসায় যে টাকা খাটানো হয় তার মালিক নাবালেগ সন্তানেরা। এগুলোর যাকাত পিতামাতার উপর আসবে না।
মাসআলাঃ আর বালেগ সন্তানের নামে যে অলংকার বানানো হয় বা টাকা ব্যবসায় লাগানো হয় বা তাদের নামে যে সম্পদ সংরক্ষণ করে রাখা হয় তার মালিক পিতা/মাতা। তাদেরকে এগুলো বুঝিয়ে দেওয়ার পূর্বে তারা মালিক হবে না।
মাসআলাঃ যাকাত আদায়ের জন্য নিয়ত জরুরি। নিয়ত ব্যতীত যাকাত আদায় হবে না। এই নিয়ত যাকাত দেওয়ার সময় করা যায়। আবার যাকাতের নিয়তে সম্পদ আলাদা করে রাখলেও নিয়তের জন্য যথেষ্ট। যদিও দেওয়ার সময় নিয়ত না থাকে।
মাসআলাঃ কেউ ফকীরকে মাল দেওয়ার সময় যাকাতের নিয়ত করেনি। এখন যদি ঐ মাল ফকিরের হাতে থাকা অবস্থায় নিয়ত করে তবে যাকাত আদায় হয়ে যাবে। আর যদি ফকীর খরচ করে ফেলে তবে যাকাত আদায় হবে না।
মাসআলাঃ যাকাত যেমনিভাবে নিজে দেওয়া যায় তেমনিভাবে কাউকে উকীল বানিয়ে তার দ্বারা দেওয়া যায়। এক্ষেত্রে মুআক্কিলের(যাকাত দাতার)নিয়তই যথেষ্ট। উকিলের নিয়ত না থাকলেও সমস্যা নেই।
মাসআলাঃ উকীল যদি মুআক্কিলের (যাকাত দাতার) যাকাত বাবদ প্রদেয় টাকা না দিয়ে নিজের টাকা দেয় তবে যাকাত আদায়ের জন্য শর্ত হল উক্ত যাকাতের টাকা উকিলের নিকট মউজুদ থাকতে হবে। উকীল যদি উক্ত টাকা খরচ করে ফেলে বা নিজের টাকার সাথে মিশিয়ে ফেলে অতঃপর নিজের টাকা থেকে যাকাত আদায় করে তবে যাকাত আদায় হবে না। অনুরূপভাবে নিজের টাকা থেকে দেবার সময় উকীল নিয়ত না করলে যাকাত আদায় হবে না।
মাসআলাঃকেউ কাউকে না জানিয়ে তার যাকাত আদায় করলে যাকাত আদায় হবে না। অনুমতিসাপেক্ষে আদায় করলে আদায় হয়ে যাবে।
মাসআলাঃ একজন ফকীরকে কমপক্ষে এতটুকু যাকাত দেওয়া উত্তম যাতে সে অন্তত ঐ দিন কারো নিকট মুখাপেক্ষী না হয়। অবশ্য এর কম দিলেও আদায় হয়ে যাবে।
মাসআলাঃ কাউকে এই পরিমান যাকাত দেওয়া মাকরূহ যার দ্বারা সে নেসাবের মালিক হয়ে যায় এবং যাকাত ওয়াজিব হয়ে যায়। তবে দিলে আদায় হয়ে যায়।
মাসআলাঃ এক শহরের যাকাত অন্য শহরে পাঠান মাকরূহ তবে যদি অন্য শহরে তার গরীব আত্মীয় থাকে বা অন্য শহরের লোক বেশি অভাবগ্রস্ত হয় বা দ্বীনী কোন উপকারীতা থাকে তবে পাঠান জায়েয।
মাসআলাঃ যাকাতের অর্থ দেবার সময় যাকাতের কথা বলে দেওয়া জরুরী নয়। বরং না বলাই উত্তম। কারন এর দ্বারা অনেকে কষ্ট পেতে পারে। যাকাতের নিয়তে হাদিয়া, পুরষ্কার বা ব্খশিশ এর নামে দিলেও যাকাত আদায় হয়ে যাবে। অনুরূপভাবে যদি এমন কোন গরীব মানুষকে যাকাতের নামে ঋন দেয় যে, সে উক্ত ঋন পরিশোধ করতে পারবে না তবে এর দ্বারাও যাকাত আদায় হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে তার এ নিয়তও থাকতে হবে যে, সে কখনও ঋন পরিশোধ করলে তা গ্রহন করবে না।
মাসআলাঃ যাকাত অগ্রিম প্রদান করা যায়। অর্থাৎ নেসাবের উপর বছর পূর্ণ হওয়ার পূর্বে আদায় করা যায় তবে শর্ত হল নেসাবের মালিক হতে হবে। কেউ যদি নেসাবের মালিক হবার পূর্বেই যাকাতের নিয়েতে কিছু দেয় তবে পরবর্তীতে নেসাবের মালিক হলে এবং যাকাত ফরজ হলে উক্ত দান নফল হিসেবে গন্য হবে। যাকাত আদায় হবে না।
মাসআলাঃ কারো যাকাত ওয়াজিব হওয়ার পর সমস্ত সম্পদ ছদকাহ করে দিলে তার যাকাত মাফ হয়ে যাবে।
মাসআলাঃ কারো যাকাত ওয়াজিব হওয়ার পর যদি সমস্ত মাল বা কিছু অংশ খোয়া যায় বা নষ্ট হয়ে হয় তবে তার পুরো বা আংশিক অংশের যাকাত মাফ হয়ে যাবে। তবে যদি সে ইচ্ছাকৃতভাবে নষ্ট করে তবে তার মাফ হবে না। যাকাত আদায় করতে হবে।
মাসআলাঃ যাকাতের উপযুক্ত মনে করে কাউকে যাকাত দেওয়ার পর জানা গেল সে মালদার বা সাইয়্যেদ বংশ অথবা রাতের অন্ধকারে যাকাত দেওয়ার পর জানতে পারল সে তার উসুল বা ফুরুর অন্তর্ভুক্ত অথবা যাকাতের উপযুক্ত নয় তবে তার যাকাত আদায় হয়ে যাবে। তবে মুসলমান মনে করে কোন কাফেরকে যাকাত দিলে আদায় হবে না। পুনরায় উপযুক্ত ব্যক্তিকে দিতে হবে।
মাসআলাঃ কেউ কারো নিকট টাকা পাবে। এখন যাকাতের নিয়তে উক্ত ঋন মাফ করে দিলে যাকাত আদায় হবে না বরং তাকে যাকাত দিয়ে তার থেকে পাওনা উসূল করে নিবে।
মাসআলাঃ দ্বীনী ইলম চর্চারত আলেম-তালেবে এলম যাকাতের উপযুক্ত হলে তাদেরকে দেওয়া সবচেয়ে উত্তম। এক্ষেত্রে দিগুন ছওয়াব পাওয়া যাবে। অতঃপর নিকট আত্মীয়কে দেওয়া উত্তম।
সোনা-রুপার যাকাতের নিয়ম
সোনা-রুপার যাকাত দেয়া ফরজ; ইরশাদ হয়েছে:
(وَٱلَّذِينَ يَكۡنِزُونَ ٱلذَّهَبَ وَٱلۡفِضَّةَ وَلَا يُنفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ فَبَشِّرۡهُم بِعَذَابٍ أَلِيمٖ ٣٤ ) [التوبة:34]
সোনা-রুপার নিসাব
১ – সোনার নিসাব বিশ দিনার তথা (৮৫) গ্রাম। একদিনার পরিমাণ = ৪.২৫ গ্রাম। অতএব যাকাতের নিসাব হবে: ৪.২৫*২০=৮৫ গ্রাম নিরেট সোনা।
রুপার নিসাব হলো দু’শ দিরহাম অর্থাৎ (৫৯৫) গ্রাম। রুপার এক দিরহামের পরিমাণ হলো ২.৯৭৫ গ্রাম, তাই রুপার নিসাব হবে ২.৯৭৫*২০০= ৫৯৫ গ্রাম নিরেট রুপা।
৩ -টাকাকড়ির যাকাত আদায়ের মুহুর্তে, সোনা অথবা রুপার মূল্যের ভিত্তিতে নির্ণয় করতে হবে। যদি টাকাকড়ি এ দুটির যেকোনো একটির নিসাবের সমান হয় তাহলে যাকাত ফরজ হবে।
উদাহরণত: যদি এক গ্রাম সোনার মূল্য ৩০ ডলার হয়, এবং কোনো ব্যক্তির কাছে অবশ্য প্রয়োজনীয় খরচের বাইরে (৮৫*৩০=২৫৫০) দু হাজার পাঁচশ পঞ্চাশ ডলার জমা থাকে এবং এর ওপর এক বছর অতিক্রান্ত হয়, তবে তাতে যাকাত ফরজ হবে।
ইসলামের দৃষ্টিতে ভ্রু প্লাগ

ওযু কাকে বলে? ওযুর ফরজ কয়টি ও কি কি?
ওযুঃ (Wudu) শরীয়তের দৃষ্টিতে পবিত্রতা হাসিল করার উদ্দেশে নিয়্যত করে উভয় হাতের অঙ্গুলির মাথা থেকে হাতের কনুই পর্যন্ত ধৌত করা, গড়গড়াসহ কুল্লি করা, নাকে পানি দেয়া (রােযা ব্যতীত অন্য সময় গড়গড়া সহ কুল্লি করা এবং নাকের ভেতরের নরম স্থান পর্যন্ত পানি পৌছান) মুখমণ্ডল ধৌত করা এবং মাথা মাছেহ করা ও পায়ের উভয় গিরা পর্যন্ত ধৌত করাকে ওযু বলে।
ওজুর প্রয়োজনীয়তাঃ ওযু করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরয। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ওযুর নির্দেশ প্রদান করেছেন। তাঁর ইবাদতের জন্য ওযু করার সময় ওযুর ফরযসমূহের প্রতি বিশেষ সতর্কতার সাথে লক্ষ্য রাখতে হবে। ফরযসমূহের যে, কোন একটি ফরয ছুটে গেলে ওযূ শুদ্ধ হবে না। পুনরায় নতুন ওযু করতে হবে এবং ওযুর সুন্নাত ও মুস্তাহাবের দিকেও সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
ওযূর ফরয কয়টি এবং কি কি?
ওযুর ফরয ৪টিঃ
১. মুখমণ্ডল ধৌত করা ও অর্থাৎ কপালের চুলের গােড়া হতে তুথনীর নিচ পর্যন্ত ও ডান কানের লতি থেকে বাম কানের লতি পর্যন্ত ভাল করে ধােয়া।
২. উভয় হাত ধৌত করা ও অর্থাৎ দু হাতের অঙ্গুলির মাথা থেকে কনুই পর্যন্ত ধৌত করা। প্রথমে ডান হাত পরে বাম হাত।
৩. মাথা মাছেহ করা ও অর্থাৎ মাথার এক চতুর্থাংশ মাছেহ করা।
৪. উভয় পায়ের গিরা পর্যন্ত ধৌত করাও অর্থাৎ পায়ের অঙ্গুলিগুলাে মাথা থেকে গিরা পর্যন্ত এবং পায়ের অঙ্গুলির মাঝখানের খালি স্থান ভাল করে ধৌত করা।
শিরকী গুনাহ
১। আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারাে উপাসনা করা ও অন্য কারাে কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা।
২। কা’বা ঘর তওয়াফের ন্যায় কোন কবর বা মাজারের চতুর্দিকে তওয়াফ করা, মাজারের বুজুর্গের নিকট কোন সাহায্য প্রার্থনা করা। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারাে উদ্দেশ্যে নামায পড়া কিংবা রােযা রাখা, আল্লাহ তা’আলার ন্যায় অন্য কারাে নামে তাসবীহ বা অজিফা পাঠ করা।
৩। কোন মুরীদ যদি তার পীরের প্রতি এরূপ ধারণা করে যে, সে গায়েব জানেন। অথবা পীর আওলিয়াদের কারামাত প্রত্যক্ষ করে যদি ধারণা করে যে, আল্লাহ তাআলা স্বীয় খােদায়িত্বের কিছু অংশ তাকে প্রদান করেছেনকিংবা তাঁর জাতের সাথে ফানা করে দিয়েছেন।
৪। আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে বা বস্তুকে সিজদা করা শিরেকী গুণাহ্। আল্লাহ্ তা’আলা কোরআন শরীফে সূরা হা-মীম-সিজদা এর ৩৭তম আয়াতে বলেন-
উচ্চারণঃ ওয়া মিন্ আ-ইয়াতিহি ল্লাইলু ওয়ার্নাহা-রু ওয়াশ্ শামসু ওয়াল্ কামারু ; লা-তাস্জুদূ লিশৃশামসি ওয়ালা-লিলকবামারি; ওয়াসজুদু লিল্লা- হিল্লাবী- খলাক্বাহুন্না ইন কুরনতুম ইয়্যা-হু তা’বুদূ-ন।
অর্থঃ “রাত, দিন এবং চন্দ্র, সূর্য তাঁরই নিদর্শনের মধ্য হতে ; তােমরা সূর্য ও চন্দ্রকে সিজদাহ্ করােও না বরং তােমরা আল্লাহকে সিজদা কর যিনি এ সমস্ত সৃষ্টি করেছেন যদি তােমরা একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলারই এবাদতকারীহও।”
অনেক জ্ঞানহীন লােক তাঁদের পীর-মুরশিদকে সিজদা করে থাকে এটা সর্বাবস্থায় হারাম ও শেরেকী গুনাহ। আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কাকেও সিজদা করলে সে কাফের হয়ে যাবে।
রিযিক বৃদ্ধি, উদ্দেশ্য লাভ করা, রােগ-ব্যধি হতে মুক্তি লাভ করার নিয়তে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারাে কাছে প্রার্থনা করা, মান্নত করা বা জপ করা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও শেরেকী গুনাহ্। যে কোন উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য পীর-অলীদের নিকট প্রার্থনা করা শেরেকী গুনাহ্। গণককে হাত দেখিয়ে তার কথায় ভাগ্যের ভাল-মন্দ বিশ্বাস করা শেরেকী গুনাহ্। শেরেকী গুনাহের ভেতরে কোন কোন শেরেক স্পষ্ট বা প্রকাশ্য রয়েছে, যেমন- চন্দ্র, সূর্য, অগ্নি ও দেব-দেবীর মূর্তি পূজা করা। এ ধরনের শেরেককে শিরকে জলী’ বলা হয়ে থাকে। আবার অনেক শেরেকী গুনাহ এমনি অস্পষ্টযে, তা সাধারণ লােকেরা জ্ঞানের অভাবে বুঝিতে সক্ষম হয় না বলে শেরেকী গুনাহে লিপ্ত হয়ে থাকে। যেমন ঔষধ সেবন করতঃ আরগ্য লাভ করে ধারণা করা যে, ঔষধই নিরাময়কারী। যদি কোন মানুষকে বলে যে, “উপরে আল্লাহ নীচে আপনি ব্যতীত আমার আর কেউ সাহায্যকারী নেই।” অথবা এইরূপ কথা বলা যে, “অমুকে আমাকে বাঁচিয়েছে কিংবা অমুকে আমার সর্বনাশ করেছে”। ইত্যাদি ধারনা করা বা বলা শেরেকী গুনাহ হবে। একে “শিরকেখফী” বলা হয়ে থাকে।

কোরান হাদিসের আলোকে নারীর পর্দার বিধান
নারীকে হাদীস শরীফে ‘আওরত’ বলা হয়। আওরত শব্দের অর্থ – গুপ্ত বা আবৃত। সুতরাং নারীর নামেই বুঝা যায় – নারীর জন্য পর্দা আবশ্যকীয় ( Screen Women)। পারিপার্শ্বিকতার বিবেচনায় বিবেকের দাবীও তাই।
নারীদের যেমন পর্দা করা ফরজ, তেমনি তাদেরকে পর্দামত চলতে সুযোগ দেয়া পুরুষের ওপর ফরজ। আর যেসব পুরুষরা নারীদের অভিভাবক, তাদের জন্য ফরজ হল – নারীদেরকে পর্দায় রাখা।
পবিত্র কুরআনে পর্দার নির্দেশ
আল্লাহ তা‘আলা আরো ইরশাদ করেন : “(হে নবী!) আপনি আপনার পত্মীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, যখন কোন প্রয়োজনে বাইরে বের হতে হয়, তখন তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দাংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। (যেন পর্দার ফরজ লংঘন না করে। এমনকি চেহারাও যেন খোলা না রাখে। তারা যেন বড় চাদরের ঘোমটা দ্বারা নিজেদের চেহারাকে আবৃত করে রাখে।) ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। (সূরাহ আহযাব, আয়াত : ৬০)
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র ইরশাদ করেন : “মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হিফাজত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা রয়েছে। নিশ্চয় তারা যা করে, আল্লাহ তা অবহিত আছেন। আর ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হিফাজত করে। তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশমান – তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের ওড়না বক্ষদেশে দিয়ে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক, অধিকারভুক্তবাদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ ও বালক – যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ তাদের ব্যতীত কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে।” (সূরাহ নূর, আয়াত : ৩০ – ৩১)
হাদীস শরীফে পর্দার নির্দেশ
রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন – “যে সতর দেখবে এবং যে দেখাবে, তাদের উপর আল্লাহ লা‘নত করেন।” (বাইহাকী)
রাসূলুল্লাহ (সা.) আরো ইরশাদ করেন – “স্ত্রীজাতির পর্দায় গুপ্ত থাকার সত্তা। কিন্তু যখনই তারা পর্দার বাহিরে আসে, তখন শয়তান তাদের দিকে ঝুঁকে।” (তিরমিযী)
রাসূলুল্লাহ (সা.) আরো ইরশাদ করেন – “খবরদার! কোন পুরুষ যেন কোন মেয়েলোকের সাথে একাকী না থাকে। কেননা, যখনই কোন পুরুষ কোন মেয়েলোকের সাথে একাকী হয়, তখনই শয়তান তাদের তৃতীয়জন হয়ে যায় এবং তাদের পিছনে লাগে।” (তিরমিযী)
নবীজী (সা.) আরো ইরশাদ করেন – “মেয়েরা যখন বালিগা হয়ে যায়, তখন তাদের শরীরের কোন অংশ দেখা বা দেখানো জায়িয নয়। অনেক কাপড় পরিধানকারিণী (পাতলা কাপড়ের কারণে) কিয়ামতের দিন উলংগ সাব্যস্ত হবে।” (মুসলিম)
নারীকে হাদীস শরীফে ‘আওরত’ বলা হয়। আওরত শব্দের অর্থ – গুপ্ত বা আবৃত। সুতরাং নারীর নামেই বুঝা যায় – নারীর জন্য পর্দা আবশ্যকীয় ( Screen Women)। পারিপার্শ্বিকতার বিবেচনায় বিবেকের দাবীও তাই।
নারীদের যেমন পর্দা করা ফরজ, তেমনি তাদেরকে পর্দামত চলতে সুযোগ দেয়া পুরুষের ওপর ফরজ। আর যেসব পুরুষরা নারীদের অভিভাবক, তাদের জন্য ফরজ হল – নারীদেরকে পর্দায় রাখা।
পবিত্র কুরআনে পর্দার নির্দেশ
আল্লাহ তা‘আলা আরো ইরশাদ করেন : “(হে নবী!) আপনি আপনার পত্মীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, যখন কোন প্রয়োজনে বাইরে বের হতে হয়, তখন তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দাংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। (যেন পর্দার ফরজ লংঘন না করে। এমনকি চেহারাও যেন খোলা না রাখে। তারা যেন বড় চাদরের ঘোমটা দ্বারা নিজেদের চেহারাকে আবৃত করে রাখে।) ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। (সূরাহ আহযাব, আয়াত : ৬০)
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র ইরশাদ করেন : “মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হিফাজত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা রয়েছে। নিশ্চয় তারা যা করে, আল্লাহ তা অবহিত আছেন। আর ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হিফাজত করে। তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশমান – তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের ওড়না বক্ষদেশে দিয়ে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক, অধিকারভুক্তবাদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ ও বালক – যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ তাদের ব্যতীত কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে।” (সূরাহ নূর, আয়াত : ৩০ – ৩১)
হাদীস শরীফে পর্দার নির্দেশ
রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন – “যে সতর দেখবে এবং যে দেখাবে, তাদের উপর আল্লাহ লা‘নত করেন।” (বাইহাকী)
রাসূলুল্লাহ (সা.) আরো ইরশাদ করেন – “স্ত্রীজাতির পর্দায় গুপ্ত থাকার সত্তা। কিন্তু যখনই তারা পর্দার বাহিরে আসে, তখন শয়তান তাদের দিকে ঝুঁকে।” (তিরমিযী)
রাসূলুল্লাহ (সা.) আরো ইরশাদ করেন – “খবরদার! কোন পুরুষ যেন কোন মেয়েলোকের সাথে একাকী না থাকে। কেননা, যখনই কোন পুরুষ কোন মেয়েলোকের সাথে একাকী হয়, তখনই শয়তান তাদের তৃতীয়জন হয়ে যায় এবং তাদের পিছনে লাগে।” (তিরমিযী)
নবীজী (সা.) আরো ইরশাদ করেন – “মেয়েরা যখন বালিগা হয়ে যায়, তখন তাদের শরীরের কোন অংশ দেখা বা দেখানো জায়িয নয়। অনেক কাপড় পরিধানকারিণী (পাতলা কাপড়ের কারণে) কিয়ামতের দিন উলংগ সাব্যস্ত হবে।” (মুসলিম)
দৃষ্টি নত রাখতে হবে
দৃষ্টি নত রাখা পর্দার একটি বিধান। আল্লাহ তা‘আলা নর-নারীদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন দৃষ্টি নত রাখতে।
দৃষ্টি নত রাখার অর্থ – দৃষ্টিকে এমন বস্তু থেকে ফিরিয়ে রাখা, যার প্রতি দেখা শরীয়তে নিষিদ্ধ ও অবৈধ।
বেগানা নারীর প্রতি বদ নিয়তে দেখা হারাম ও কবীরা গুনাহ এবং বিনা নিয়তে বা ফ্রিমাইন্ড নিয়ে দেখাও নাজায়িয। কোন নারী অথবা পুরুষের গোপনীয় অঙ্গের প্রতি দেখা মারাত্মক গুনাহর কাজ। এছাড়া কারো গোপন বিষয় দেখার জন্য তার গৃহে উঁকি মেরে বা বেড়ার ফাঁক দিয়ে গোপনে দেখা জঘন্য পাপ।
যৌনাঙ্গকে হিফাজত করতে হবে
যৌনাঙ্গকে হিফাজত করা ও সংযত রাখা পর্দার বড় বিধান। আল্লাহ তা‘আলা নারী-পুরুষ উভয়কে যৌনাঙ্গ হিফাজত করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেছেন।
যৌনাঙ্গকে হিফাজত করার অর্থ হল – কুপ্রবৃত্তি চরিতার্থ করার যত পন্থা প্রক্রিয়া আছে, সবগুলো থেকে যৌনাঙ্গকে দূরে রাখা। এতে ব্যভিচার, সমমৈথুন, হস্তমৈথুন, ঘর্ষণ ইত্যাদি সব কাম চরিতার্থমূলক কর্ম নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
কাম প্রবৃত্তির প্রথম ও প্রারম্ভিক কারণ হচ্ছে দৃষ্টিপাত করা ও দেখা এবং সর্বশেষ পরিণতি হচ্ছে ব্যভিচার। সূরাহ নূরের ৩১ নং আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা এসব বিষয় জোড়ালোভাবে নিষিদ্ধ করে হারাম করে দিয়েছেন। সেই সাথে এতদুভয়ের অন্তর্বতী ভূমিকাসমূহ যেমন – পরস্পর কথাবার্তা বলা, শোনা, স্পর্শ করা, চিঠিপত্র বা এসএমএস আদান-প্রদান করা ইত্যাদি সবই নিষিদ্ধ ও হারাম পরিগণিত হয়েছে।
গাইরে মাহরামদের সংশ্রব থেকে দূরে থাকতে হবে
নারীদের পর্দা রক্ষার জন্য বিশেষভাবে জরুরী হল – সকল বেগানা পুরুষের সং¯্রব থেকে দূরে থাকতে হবে। এ জন্য মাহরাম ও গাইরে মাহরামদের সম্পর্কে পূর্ণরূপে অবগত হওয়া তাদের কর্তব্য।
যেসব পুরুষদেরকে দেখা দেয়া নারীদের জন্য জায়িয নয়, তারা হচ্ছে বেগানা বা গাইরে মাহরাম। নিম্নে তাদের কিছু ফিরিস্তি তুলে ধরা হল –
১। হুরমতের রক্তের সম্পর্কহীন যে কোন বেগানা পুরুষ – নিজ গ্রামের লোক হোক বা ভিন্ন গ্রামের এবং চাই একই স্কুল বা কলেজ বা ভার্সিটির হোক না কেন, কিংবা কাসমেট বা সহপাঠি হোক না কেন বা একই অফিসে চাকুরী করুক না কেন, তারা গাইরে মাহরাম।
২। ধর্মবাপ, ধর্মভাই, উকিল বাপ, মুখডাকা বাপ-ভাই বা মামা-চাচা, শিক্ষক, পীর প্রমুখ গাইরে মাহরাম।
৩। দুলাভাই।
৪। খালু, ভাসুর ও ভাসুরের ছেলে।
৫। দেবর ও দেবরের ছেলে।
৬। ননদের স্বামী ও তার ছেলে।
৭। চাচার ছেলে/চাচাতো ভাই।
৮। জেঠাতো ভাই।
৯। মামার ছেলে/মামাতো ভাই।
১০। স্বামীর অন্য যত প্রকারের ভাই বা দুলাভাই আছে।
উল্লিখিত তারা সকলেই বেগানা। তাদের সাথে পর্দা করা ফরজ। এক কথায়, যাদের সাথে বিবাহ বৈধ, তারা সবাই গাইরে মাহরাম। তাই তাদের সাথে দেখা দেয়া জায়িয নয়।
আর যাদের সাথে বিবাহ জায়িয নয়, বরং তা চিরতরে হারাম, তাদেরকে মাহরাম বলা হয়। মেয়েদের জন্য যারা মাহরাম অর্থাৎ যাদের সাথে দেখা সাক্ষাত জায়িয, তারা হচ্ছে –
১। স্বামী।
২। স্বামীর পিতা, দাদা যত উপরে যাক।
৩। আপন পিতা, দাদা যত উপরে যাক।
৪। আপন ভাই, বিমাতা ভাই, বৈপিত্রিক ভাই।
৫। সতীনের ছেলে।
৬। আপন মামা।
৭। আপন চাচা।
৮। আপন ছেলে।
৯। আপন ভাইয়ের ছেলে (যত নীচে যাক)।
১০। আপন ভগ্নির পুত্র (যত নীচে যাক)।
এছাড়াও নিম্নে বর্ণিত ব্যক্তিগণের সাথে নারীর দেখা দেয়া জায়িয –
১০। নাবালিগ ছোট ছেলে – নারীদের বিষয়ে এখনো যার বুঝ হয়নি।
১১। ঈমানদার স্ত্রীলোক। (কাফির-বেদ্বীন স্ত্রীলোকের সঙ্গে দেখা দেয়া দুরস্ত নয়।)
১৪। অশীতিপর বৃদ্ধ যার একেবারে চাহ্ওয়াত নেই এবং স্ত্রীলোকের প্রতি কোনরকম আসক্তি নেই।
উল্লিখিত লোকদের সাথে নারীর দেখা দেয়া জায়িয অর্থাৎ দেখা দিলে কোন গুনাহ হবে না। এদের ছাড়া সকল পুরুষ থেকে নারীদের পর্দা করতে হবে। তাদের কারো সামনে নারীর পর্দা ছাড়া আসা বা দেখা দেয়া জায়িয হবে না। তা সম্পূর্ণ হারাম ও কবীরা গুনাহ।
পর্দার উপকারিতা
ইসলামে যে পর্দার বিধান দেয়া হয়েছে, সে সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করলে আমরা এর তিনটি উপকারিতা উপলব্ধি করতে পারি –
প্রথমত এতে নারী ও পুরুষের নৈতিক চরিত্রের হিফাজত হয় এবং নর-নারীর অবাধ ও প্রতিবন্ধকহীন মেলামেশা পথ রুদ্ধ হয়।
দ্বিতীয়ত নারী ও পুরুষের কর্মক্ষেত্র পৃথক হওয়ার দ্বারা প্রকৃতি নারীদের ওপর যে গুরুদায়িত্ব ন্যস্ত করেছে, তা তারা নির্বিঘেœ ও সুষ্ঠুভাবে পালন করতে পারে।
তৃতীয়ত পারিবারিক ব্যবস্থা সুরক্ষিত ও সুদৃঢ় হয়। কারণ, পর্দার দ্বারা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে পরকিয়াবিহীন পবিত্র জীবন গঠিত হয় এবং চরিত্রহীনতা ও অবিশ্বাস তাদের থেকে বিদায় নেয়।
পক্ষান্তরে বেপর্দা থেকে পরকিয়া ও চরিত্রহীনতার জন্ম হয়। আর এর দ্বারা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিশ্বাস উঠে গিয়ে অশান্তির উদ্ভব হয়।
পর্দাহীনতার ক্ষতি
পর্দাহীনতার দ্বারা পরিবারে অবিশ্বাস ও অশান্তি নেমে আসে তা পূর্বেই বলা হয়েছে। তেমনিভাবে বেপর্দেগীর দ্বারা পাশ্চাত্যের বল্গাহীন জীবনধারায় অভ্যস্ত হয়ে নারীরা তাদের দ্বীন ও ঈমান বরবাদ করে দেয়। বলতে কি, বল্গাহীন চলাফেরার ফলেই পাশ্চাত্যবাসীদের নৈতিক ও চারিত্রিক কাঠামো আজ চূড়ান্ত বিপর্যয়ের সম্মুখীন।
তেমনিভাবে বেপর্দার দ্বারা সমাজে ইভটিজিং জন্ম নেয় এবং যৌন সন্ত্রাস প্রকট আকার ধারণ করে। এর বাস্তবতা আজ আমাদের নখদর্পণে।
অনুরূপভাবে পর্দাহীনতার পরিবেশে নারীদেরকে তাদের নিজস্ব কর্মক্ষেত্র থেকে টেনে এনে পুরুষের কর্মক্ষেত্রে নামিয়ে দেয়া হয়। তখন নারী তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও স্বাতন্ত্র্যকে বিসর্জন দিয়ে পুরুষের সাথে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়। এর ফলে নানা অঘটনসহ ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবন বিপর্যস্ত হয় – যার বাস্তব চিত্র পেপার-পত্রিকা খুললেই চোখে পড়ে।
কিছু প্রশ্ন ও উত্তরঃ
১. কোন গায়র মাহরাম ড্রাইভারের সাথে মহিলার একাকিনী কোথাও যাওয়া বৈধ কি?
না। গাড়ী, রিক্সা বা বাইকে এমন কোন পুরুষের সাথে মহিলার একাকিনী যাওয়া বৈধ নয়, যার সাথে কোনও সময় তার বিবাহ বৈধ।
বৈধ নয় বাস, ট্রেন বা জলজাহাজের কোন সফরে একাকী যাওয়া, এমনকি কোন ইবাদতের সফরেও নয়। মহানবী (সঃ) বলেন, “আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি যে নারী ঈমান রাখে, তার মাহরামের সঙ্গ ছাড়া একাকিনী এক দিন এক রাতের দূরত্ব সফর বৈধ নয়।” ৪৯৩ (বুখারী, মুসলিম ৩৩৩১ নং)
২. পত্র-পত্রিকা, টিভি বা নেটের ছবিতে মহিলা দেখা কি হারাম?
হ্যাঁ। ছবিতেও গম্য মহিলা দেখা হারাম। যেহেতু তাতেও ফিতনা আছে। আর মহান আল্লাহ বলেছেন, “বিশ্বাসীদেরকে বল, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের যৌন অঙ্গকে সাবধানে সংযত রাখে; এটিই তাদের জন্য অধিকতর পবিত্র। ওরা যা করে, নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে অবহিত।” (নূরঃ ৩০) ৪৯৮ (ইবনে বায)
৩. স্বামী যদি পর্দা করতে বাঁধা দেয়, তাহলে স্ত্রীর করণীয় কি?
স্বামীর জন্য ওয়াজেব স্ত্রীকে পর্দার ব্যবস্থা করে দেওয়া। তাকে বেপর্দার দিকে ঠেলে দেওয়া নয়। বন্ধু বান্ধব এর সামনে দেখা সাক্ষাৎ করতে নিয়ে নিজের জন্য তথা তার সর্বনাশ আনায়ন করা মোটেই বৈধ নয়। মহান আল্লাহ বলেন, “হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং নিজেদের পরিবার পরিজনকে রক্ষা কর অগ্নি থেকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে নিয়োজিত আছে নির্মম হৃদয়, কঠোর স্বভাব ফিরিশতাগণ, যারা আল্লাহ যা তাঁদেরকে নির্দেশ করেন, তা অমান্য করে না এবং তারা যা করতে আদিষ্ট হয়, তাই করে।” (তাহরীমঃ ৬)
আর স্ত্রীর জন্য উচিৎ নয়, বেপর্দা হওয়ার ব্যাপারে স্বামীর আনুগত্য করা। স্বামীর আনুগত্য ওয়াজেব। কিন্তু গোনাহর বিষয়ে তার অনুগত্য বৈধ নয়। মহানবী (সঃ) বলেন, “স্রষ্টার অবাধ্যতা করে কোন সৃষ্টির বাধ্য হওয়া বৈধ নয়।”৫০৯ (আহমাদ, হাকেম, সঃ জামে ৭৫২০ নং)
বিশুদ্ধ ঈমান ও আক্বীদা : গুরুত্ব ও অপরিহার্যতা
লেখক: মুযাফফর বিন মুহসিন
বিশ্বাস বা দর্শন মানবজীবনের এমন একটি বিষয় যা তার জীবনের গতিপথ নির্ধারণ করে দেয়। এটা এমন এক ভিত্তি যাকে অবলম্বন করেই মানুষ তার সমগ্র জীবনধারা পরিচালনা করে। এই যে মৌলিক জীবনদর্শনকে কেন্দ্র করে দুনিয়ার বুকে মানুষ আবর্তিত হচ্ছে, যে আদর্শ ও বিশ্বাসকে লালন করে তার সমগ্র জীবন পরিচালিত হচ্ছে তাকে ইসলামী পরিভাষায় ‘আক্বীদা’ শব্দ দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা হয়।
এটা এমন এক অতুলনীয় শক্তির আঁধার যা একজন মুসলমানকে তার আদর্শের প্রতি শতভাগ আস্থাবান করে তুলে এবং জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে সেই বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটাতে বিরামহীনভাবে সচেষ্ট রাখে। অপরপক্ষে মানবজগতের যাবতীয় পথভ্রষ্টতার মূলে রয়েছে এই মৌলিক আক্বীদা থেকে বিচ্যুত হওয়া। এজন্য একজন মুসলমানের জন্য আক্বীদা-বিশ্বাসের ব্যাপারে সুস্পষ্ট জ্ঞান রাখা এবং সে বিশ্বাসের যথার্থতা নিশ্চিত করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। কেননা বিশ্বাসের বিশুদ্ধতা ব্যতীত কোন ব্যক্তি প্রকৃত অর্থে মুসলিম হতে পারে না। প্রতিটি কথা ও কর্ম যদি বিশুদ্ধ আক্বীদা ও বিশ্বাস থেকে নির্গত না হয় তবে তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আল্লাহ বলেন: “যে ব্যক্তি বিশ্বাসের বিষয়ে অবিশ্বাস রাখে তার শ্রম বিফলে যাবে এবং পরকালে সে ক্ষতিগ্রস্থ হবে।” [সূরা মায়েদা – ৫]
তিনি আরো বলেন: “(হে নবী!) তোমাকে এবং এবং তোমার পূর্বসূরিদের আমি প্রত্যাদেশ করেছি যে, যদি তুমি আমার শরীক স্থাপন কর তবে তোমার যাবতীয় শ্রম বিফলে যাবে এবং তুমি ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” [সূরা যুমার: ৬৫]
মানুষ যুগে যুগে পথভ্রষ্ট হয়েছে মূলতঃ আক্বীদার ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি ঘটার কারণে। এজন্য বিষয়টি সূক্ষ্মতা ও সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে জানা অপরিহার্য। নিম্নে ইসলামী আক্বীদার পরিচিতি ও মানব জীবনে বিশুদ্ধ আক্বীদা পোষণের গুরুত্ব আলোচনা করা হল।
আক্বীদার সংজ্ঞা:
শাব্দিক অর্থ: আক্বীদা শব্দটির আভিধানিক অর্থ হল সম্পর্ক স্থাপন করা বা শক্তভাবে আকড়ে ধরা, অথবা কোন কিছুকে সাব্যস্ত করা বা শক্তিশালী হওয়া। অতএব মানুষ যার সাথে নিজের অন্তরের সুদৃঢ় যোগাযোগ স্থাপন করে তাকেই আক্বীদা বলা যায়।
পারিভাষিক অর্থ: সাধারণভাবে সেই সুদৃঢ় বিশ্বাস ও অকাট্য কর্মধারাকে আক্বীদা বলা হয় যার প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকারী ব্যক্তির মনে সামান্যতম সন্দেহের অবকাশ থাকে না। আর ইসলামী আক্বীদা বলতে বুঝায়- আসমান-যমীন ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছুর যিনি সৃষ্টিকর্তা সেই মহান প্রভুর প্রতি সুনিশ্চিত বিশ্বাস স্থাপন করা, তাঁর উলূহিয়্যাত, রুবূবিয়্যাত ও গুণবাচক নামসমূহকে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করা। তাঁর ফেরেশতামন্ডলী, নবী-রাসূলগণ, তাঁদের উপর নাযিলকৃত কিতাবসমূহ, তাক্বদীরের ভাল-মন্দ এবং বিশুদ্ধ দলীল দ্বারা প্রমাণিত দ্বীনের মৌলিক বিষয়সমূহ ও অদৃশ্য বিষয়াদি সম্পর্কিত সংবাদসমূহ ইত্যাদি যে সব বিষয়াদির উপর সালাফে ছালেহীন ঐক্যমত পোষণ করেছেন তার প্রতি সুনিশ্চিত বিশ্বাস রাখা। আল্লাহর নাযিলকৃত যাবতীয় আহকাম-নির্দেশনার প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্য প্রদর্শন এবং রাসূল (ছা:)-এর প্রচারিত শরী‘আতের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য ও অনুসরণ নিশ্চিত করা ইসলামী আক্বীদার অন্তর্ভুক্ত।
আক্বীদা এবং শরী‘আত দু’টি পৃথক বিষয়। কেননা শরী‘আত হল দ্বীনের কর্মগত রূপ এবং আক্বীদা হলো দ্বীনের জ্ঞানগত রূপ যার প্রতি একজন মুসলমানের আন্তরিক বিশ্বাস রাখা অপরিহার্য।
আক্বীদা শব্দটির বিভিন্ন ব্যবহার:
আক্বীদা শব্দটি ইসলামী পরিভাষায় আরো কয়েকটি শব্দ দ্বারা ব্যাখ্যা করা হয়। যেমন- তাওহীদ, সুন্নাত, উছূলুদ্দীন, ফিকহুল আকবার, শরী‘আত, ঈমান ইত্যাদি। যদিও আক্বীদা শব্দটি এগুলোর তুলনায় সামগ্রিক একটি শব্দ। আর আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত ব্যতীত অন্যান্য ফেরকা এক্ষেত্রে আরো কয়েকটি পরিভাষা ব্যবহার করে। যেমন-
যুক্তিবিদ্যা (ইলমুল কালাম): মু‘তাযিলা, আশ‘আরিয়া এবং তাদের অনুসারীগণ এই পরিভাষাটি ব্যবহার করে। এটা সালাফে ছালেহীনের নীতি বিরোধী অনর্থক কর্ম, যার সাথে শরী‘আতের সম্পর্ক নেই।
দর্শন: দার্শনিকগণ এই পরিভাষা ব্যবহার করে। তবে আক্বীদাকে দর্শন শব্দ দ্বারা ব্যাখ্যা করা চলে না। কেননা দর্শনের ভিত্তি হল অনুমান, বুদ্ধিবৃত্তিক কল্পনা ও অজ্ঞাত বিষয়াদি সম্পর্কে কুসংস্কারাচ্ছন্ন দৃষ্টিভঙ্গির সমষ্টি, যার সাথে ইসলামী আক্বীদার সম্পর্ক নেই।
তাসাওউফ: কোন কোন দার্শনিক, প্রাচ্যবিদ ও ছূফীবাদীরা আক্বীদাকে ছুফিতত্ত্ব হিসাবে ব্যাখ্যা দেয়। এটাও অগ্রহণযোগ্য। কেননা সুফিতত্ত্বও নিরর্থক কল্পনা ও কুসংস্কারের উপর নির্ভরশীল। এর অতীন্দ্রিয় ও কাল্পনিক ভাবমালার সাথে শরী‘আতের কোন সম্পর্ক নেই।
ধর্মতত্ত্ব (Theology): এটাও দার্শনিক, প্রাচ্যবিদ, যুক্তিবাদীদের আবিস্কৃত শব্দ। এর দ্বারাও ইসলামী আক্বীদার ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। কেননা এর উদ্দেশ্য কেবল স্রষ্টা সম্পর্কে দার্শনিক, যুক্তিবাদী এবং নাস্তিকদের ধারণাসমূহ ব্যাখ্যা করা।
অধিবিদ্যা: দার্শনিক ও পশ্চিমা লেখকরা একে Metaphisycs নামে অভিহিত করে। এটি অনেকটা ধর্মতত্ত্বের কাছাকাছি পরিভাষা।
সাধারণভাবে ধর্ম সম্পর্কিত বা ধর্মহীন বিভিন্ন বাতিল চিন্তাধারাকেও আক্বীদা বলা যায়। যেমন – ইহুদীবাদ, বৌদ্ধবাদ, হিন্দুবাদ, খৃষ্টবাদ, নাস্তিক্যবাদ ইত্যাদি।
বিশুদ্ধ আক্বীদা বনাম ভ্রষ্ট আক্বীদা:
বিশুদ্ধ আক্বীদা বলতে বুঝান হয় ইসলামী আক্বীদা তথা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আক্বীদাকে যা আল্লাহ রাববুল আলামীন নির্দেশিত ও রাসূল (ছা:) কর্তৃক প্রচারিত অর্থাৎ যা পূর্ণাঙ্গভাবে কুরআন ও ছহীহ হাদীছ দ্বারা সমর্থিত এবং সালাফে ছালেহীনের ঐকমত্যে প্রতিষ্ঠিত। এতদ্ভিন্ন পৃথিবীর যাবতীয় আক্বীদা ও বিশ্বাস মিশ্রিত, কাল্পনিক, কুসংস্কারযুক্ত এবং মিথ্যার উপর ভিত্তিশীল। যা নিশ্চিতভাবে মানবজাতির গন্তব্যপথকে ভ্রষ্টতার দিকে নিয়ে যায়।
আক্বীদার মৌলিক বিষয়বস্ত্ত:
আক্বীদার মৌলিক বিষয়বস্ত্ত ছয়টি। যথা:-
এক: আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস : আল্লাহ রাববুল আলামীন নিজেকে যেভাবে মানবজগতের কাছে উপস্থাপন করেছেন ঠিক সেভাবে তা সত্তাগতভাবে, গুণগতভাবে এবং কর্মগতভাবে সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস করা।
দুই: ফেরেশতাগণের প্রতি বিশ্বাস : তাদের প্রত্যেকের ব্যাপারে কুরআন ও ছহীহ হাদীছে যেরূপ বর্ণনা এসেছে ঠিক সেভাবে বিশ্বাস করা।
তিন: রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস : তাঁদের নবুওয়াত ও তাদের চারিত্রিক পবিত্রতার উপর নির্দ্বিধায় বিশ্বাস স্থাপন করা।
চার: আসমানী কিতাবসমূহের প্রতি বিশ্বাস : মূল চারটি কিতাব তথা যাবুর, ইঞ্জীল, তাওরাত ও কুরআনসহ নাযিলকৃত অন্যান্য ছোট ছোট কিতাব ও ছহীফাসমূহের প্রতি বিশ্বাস রাখা।
পাঁচ: শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস : অর্থাৎ মৃত্যুপরবর্তী জীবন সম্পর্কে যাবতীয় সংবাদসমূহ যা আল্লাহ রাববুল আলামীন তাঁর রাসূলের মাধ্যমে দুনিয়াবাসীকে জানিয়ে দিয়েছেন, তার প্রতি বিশ্বাস রাখা।
ছয়: তাক্বদীরের উপর বিশ্বাস : অর্থাৎ যা কিছু দুনিয়ার বুকে ঘটছে তা আল্লাহ রাববুল আলামীনের জ্ঞাতসারেই ঘটছে এবং তিনি সৃষ্টিজগত তৈরীর বহু পূর্বেই ভবিষ্যৎ ঘটনাবলী লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন- এই বিশ্বাস জাগ্রত জ্ঞান সহকারে পোষণ করা।
আলোচিত ছয়টি বিষয়ের প্রতি পূর্ণাঙ্গভাবে বিশ্বাস স্থাপন করা একজন মুসলমানের জন্য অপরিহার্য। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের বহু দলীল দ্বারা এগুলো প্রমাণিত [বাকারা ১৭৭, ২৮৫, নিসা ১৩৬, ক্বামার ৪৯,ফুরকান ২, মিশকাত হা/২ ‘ঈমান অধ্যায়’]
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা) এর জীবনী
সকল মুসলমানের কাছে বড় প্রিয় একটি নাম- মহানবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। মুসলমান হিসেবে আমাদের সকলেরই “প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ সাঃ এর জীবনী” পাঠ করা একান্ত কর্তব্য। “মহানবীর জীবনী” –তে মুসলিম ও অমুসলিম সকলের জন্যই মানবতার শিক্ষা রয়েছে।
“হযরত মুহাম্মাদ সঃ এর জীবনী” পাঠ করলে মহানবীর আদর্শ জীবন ও শিক্ষা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। “নবীজীর জীবনী” (nobijir jiboni) জানা থাকলে আমরা আরও ভালভাবে ইসলামকে জানতে পারবো, আরও সুন্দরভাবে ইসলামকে মানতে পারবো।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী
জন্ম ও শৈশবঃ
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্তমান সৌদি আরবে অবস্থিত মক্কা নগরীর কুরাইশ গোত্রের বনি হাশিম বংশে জন্মগ্রহণ করেন। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ৫৭০ খৃীস্টাব্দে ১২ই রবিউল আউয়াল সোমবার জন্মগ্রহণ করেন। তার মায়ের নাম আমিনা এবং পিতার নাম আব্দুল্লাহ। অতি অল্প বয়স থেকেই আল্লাহ তাকে কঠিন পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করে নেন। জন্মের পূর্বে পিতা, ৬ বছর বয়সে মা আমিনাকে হারান। এবং ৮ বছর বয়সে তার দাদা মৃত্যু বরণ করেন। ইয়াতীম শিশু বড় হয়ে উঠে চাচার সযত্ন ভালবাসায়।
নামকরণঃ
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম হওয়ার পরই মা আমেনা এ সংবাদ দাদা আব্দুল মুত্তালিবকে পাঠান। সংবাদ পাওয়ার পরেই তিনি ছুটে আসেন। পরম স্নেহে দেখেন, যত্নের সঙ্গেঁ কোলে নিয়ে কা’বার ভেতর প্রবেশ করেন, আল্লাহর হামদ বর্ণনা করেন এবং দোয়া করেন। অতঃপর তাঁর নাম রাখেন ‘মুহাম্মদ’(প্রশংসিত)।
আহমদ নামকরণঃ
বিবি আমিনা গর্ভাবস্থায় স্বপ্নযোগে প্রাপ্ত নাম অনুসারে ‘আহমদ’ (উচ্চ প্রশংসিত’) নাম রাখেন। বাল্যকাল হতে মুহাম্মদ ও আহমদ উভয় নামি প্রচলিত ছিল। উভয় নামই পবিত্র কুরআনে উল্লেখ রয়েছে।
দুগ্ধ পান কালঃ
সর্ব প্রথম তাঁকে তাঁর মাতা হযরত আমেনা দুগ্ধ পান করান। অতঃপর আবু লাহাবের বাঁদী ‘সুওয়াইবা’ তাকে দুগ্ধ পান করায়। অতঃপর ধাত্রীর সন্ধান করতে থাকেন। ‘হাওয়াযিন’ গোত্রের বানী সা’দ এর মহিলা হালীমা ছা’দিয়া এই বিরল সৌভাগ্যের অধিকারী হন। এমন ভাবে যে, অন্য কোন ধাত্রী শিশু মুহাম্মদকে গ্রহণ করলনা পক্ষান্তরে হালীমা সাদীয়াও অন্য কোন শিশু পেলনা। ফলে বাধ্য হয়ে রসূল কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম কে গ্রহণ করলেন। গ্রহণ করার পর থেকেই হালীমার ঘরে ইলাহী বরকতের জোয়ার শুরু হল। দুবছর দুগ্ধ পানের পর বিবি হালীমা শিশু মুহাম্মদকে নিয়ে তাঁর মায়ের নিকট হাজির হন এবং সাথে সাথে এই আকাঙ্খাও ব্যক্ত করেন যে, শিশুকে আরো কিছু দিনের জন্য তাঁর নিকট যেন থাকতে দেয়া হয়। এদিকে মক্কায় তখন মহামারী চলছিল। উভয় দিক চিন্তা করে বিবি আমেনা তাঁর শিশুকে হালীমার নিকট ফিরিয়ে দেন। এমনি ভাবে পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত হযরত মুহাম্মদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম বানী সাদে লালিত পালিত হন। সেখানে তিনি তাঁর দুধ ভাইদের সঙ্গে জঙ্গঁলে ছাগল চরাতেন। (সহীহ আল বুখারী, কিতাবুন নিকাহ, সীরাতুননবীঃ ১/১৭২)
দাদা ও চাচার তত্ত্বাবধানেঃ
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) -এর মাতা-পিতার মৃত্যুর পর দাদা আব্দুল মুত্তালিব তাঁর লালন পালনের দায়িত্ব নেন। তিনি তাকে খুব স্নেহ করতেন। এমনকি নিজের ছেলেদের উপরও তাঁকে প্রাধান্য দিতেন। নিজের আসনে বসাতেন। দাদা আব্দুল মুত্তালিবের মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্তই তিনি তাঁর তত্ত্বাবধানে ছিলেন।
দাদা আব্দুল মুত্তালিবের মৃত্যুর পর চাচা আবু তালিব তাঁর দায়িত্ব নেন। তখন তার বয়স ছিল আট বছর। তিনি চাচা আবু তালিবকে বকরী লালন-পালন ও শাম দেশের ব্যবসার কাজে সহযোগিতা করতেন।
খাদীজা (রাঃ) এর সঙ্গে বিবাহঃ
পঁচিশ বছর বয়সে মক্কার ধনবতী মহিলা খাদিজা বিনতে খোয়ালিদের সাথে রাসূল (সাঃ) এর বিয়ে হয়। অভিজাত সতী, ধনবতী, মহিলা খাদিজা বিভিন্ন লোককে পণ্য দিয়ে ব্যবসা করাতেন এবং তিনি লাভের একটা অংশ গ্রহণ করতেন। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সততা, সত্যবাদীতা ও বিশ্বস্ততা তখন সুবিদিত ছিল। আল-আমীন, আসসাকিন এর প্রশংসা শুনে তিনি তার কাছে ব্যবসার প্রস্তাব পাঠান। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) রাজী হন এবং ব্যবসা শেষে অনেক বেশি লাভসহ তার সব কিছু বুঝিয়ে দেন।
রাসূলের গুণ মুগ্ধ ও অলৌকিক সংকেতের কথা শুনে মা খাদিজা বিয়ের প্রস্তাব পাঠায় এবং উভয়ের সম্মতির ভিত্তিতে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। তখন খাদিজার বয়স ছিল ৪০ বছর। যতদিন তিনি জীবিত ছিলেন রাসূল (সা:) আর কোনো বিয়ের প্রয়োজন অনুভব করেননি। এরপর আদর্শিক প্রয়োজনে এবং নারী সমাজের বিভিন্ন উপকারের জন্য তিনি মোট ১১টি বিয়ে করেন। দু’জন তার মৃত্যুর পূর্বে মারা যান আর ৯ জনের সাথে তিনি বৈবাহিক জীবন অতিবাহিত করেন।
শান্তি প্রতিষ্ঠায় মহানবী (সাঃ)
মহা গ্রন্থ আল কোরআন, ইতিহাস এর যুক্তি-প্রমাণ এবং বিভিন্ন গ্রন্থের তথ্য অনুযায়ী রমজান মাসের শেষ পর্যায়ে মহানবী (সাঃ) এর কাছে আল্লাহর দূত জিবরাইল (আ:) কে দিয়ে ওহী (আল্লাহর বাণী) প্রেরন করেন। এ সময় তার বয়স ৪০ পূর্ণ হয়। প্রথমে তিনি স্বপ্নে সে নিদর্শন পান এবং পরে সরাসরি পেয়েছিলেন।
ওহী নাযিলের সূচনাঃ
বেশীর ভাগ সময় তিনি মক্কার প্রসিদ্ধ পাহাড় ‘জাবালে নূরে’ অবস্থিত ‘গারে হেরা’ তথা হেরা গুহায় অবস্থান করতেন এবং ক্রমান্বয়ে কয়েক রাত সেখানে অতিবাহিত করতেন। থাকার ব্যবস্থাও তিনি আগে থেকেই করে নিতেন। এভাবে একদা তিনি হেরা গুহায় তাশরীফ আনেন এমন সময় তাঁকে নুবুওয়াতের পদমর্যাদা দিয়ে সৌভাগ্যবান করার পবিত্র মুহুর্ত এসে যায়। জন্মের ৪১ তম বছরে ২৭ ই রজব (হিজরতের ১৩ বছর পূর্বে) মুতাবিক ৬১০ খৃষ্টাব্দ তারিখে জাগ্রত ও চৈতন্য অবস্থায় এঘটনা সংঘটিত হয়। আল্লাহর ফেরেশতা জিবরাইল (আঃ) প্রথমবারের মত তাঁর কাছে, পৃথিবীবাসীদের জন্য আল্লাহর সর্বশেষ ঐষীবাণী, বিশ্বমানবতার মুক্তির পথের দিশারী, জ্বিন ও ইনসানের জন্য পরিপূর্ণ জীবন বিধান ‘আল্ কুরআনুল কারীম’ এর সর্বপ্রথম কথাগুলো নিয়ে তাঁর কাছে উপস্থিত হলেন।
“পড় তোমার প্রতিপালকের নামে
তাঁর সামনে হেরা গুহায় ফেরেশতা আগমন করেন এবং বলেনঃ পড়ুন। তিনি উত্তর দিলেন আমি কি ভাবে পড়ব? ফেরেশতা বললেনঃ
পড় তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে, তোমার পালনকর্তা মহা দয়ালু।
যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানতো না”। (সূরা আলাকঃ ১-৫।)
মি‘রাজ তথা উর্দ্ধারোহনঃ
রাসূলুল্লাহ (সঃ) -এর বয়স যখন ৫১ বছর নয় মাস হয়, তখন তাঁকে সশরীরে মর্যাদাপূর্ণ ইসরা ও মি’রাজ ভ্রমণের মাধ্যমে সম্মানিত করা হয়। মি’রাজে রাসূলুল্লাহ (সঃ) প্রথমে কা’বা থেকে বাইতুল মুকাদ্দাসে যান, অতঃপর সেখান থেকে এক এক করে সাত আসমান অতিক্রম করে মহান আল্লাহর আরশে আজীমে তাশরীফ গ্রহণ করেন। এ মি’রাজ সফরে রাসুলুল্লাহ (সঃ) পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে বিধান লাভ করেন। মি’রাজে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (সঃ) জান্নাত এবং জাহান্নাম স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেন।
দাওয়াতের আদেশঃ
মহান আল্লাহ তায়ালা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ইসলামের দাওয়াতের আদেশ দিয়ে ইরশাদ করেন,
يَاأَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ ﴿১﴾ قُمْ فَأَنْذِرْ ﴿২﴾ وَرَبَّكَ فَكَبِّرْ ﴿৩﴾ . (سورة المدثر)
হে চাদরাবৃত ব্যক্তি! ওঠ এবং সতর্ক কর।
গোপনে ইসলামের দাওয়াতঃ
রাসলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় প্রতিপালকের আদেশ যথাযথ পালন করেন এবং গোপনে মানুষের মাঝে ইসলাম প্রচার করতে শুরু করেন। তিনি সর্বপ্রথম আপন পরিবার- পরিজন ও বন্ধু-বর্গকে ইসলামের দাওয়াত দেন। সর্বপ্রথম খাদীজা রা. তাঁর দাওয়াত গ্রহণ করেন। পুরুষদের মধ্যে সর্বপ্রথম আবূ বকর সিদ্দীক (রা), ছোটদের মধ্যে আলী ইবনে আবূ তালিব রা. এবং ক্রীতদাসদের মধ্যে যায়েদ ইবনে হারেসা রা. ইসলাম গ্রহণ করেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিন বছর পর্যন্ত গোপনে তার নিকটস্থ’ লোকদের মাঝে ইসলাম প্রচার করেন।
প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াতঃ
তিন বছর গোপনে দাওয়াত দেয়ার পর মুহাম্মাদ প্রকাশ্যে ইসলামের প্রচার শুরু করেন। নবী (সাঃ) সাফা পর্বতের ওপর দাড়িয়ে চিৎকার করে সকলকে সমবেত করেন। এরপর প্রকাশ্যে বলেন যে, আল্লাহ ছাড়া কোন প্রভু নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহ্র রাসূল। এই সময় থেকে ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়।
ধৈর্য ও অবিচলঃ
মুসলমানগণ মুশরিকদের সকল নির্যাতন ও নিপীড়ন ধৈর্য ও দৃঢ়তার সাথে মোকাবিলা করতেন। কেননা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে সাওয়াব ও জান্নাত লাভের আশায় বিপদে ধৈর্য ধারণ ও অনড় থাকার পরামর্শ দেন। মুশরিকদের নির্যাতন ভোগ করেছেন এমন কয়েকজন উল্লেখযোগ্য সাহাবী হলেন : বিলাল ইবনে রাবাহ ও আম্মার ইবনে ইয়াসির রা. প্রমুখ। মুশরিকদের নির্যাতনের শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন ইয়াসির ও সুমাইয়া রা. এবং ইসলামের ইতিহাসে তারাই সর্বপ্রথম শহীদ।
আল-আমীন উপাধি লাভঃ
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বাল্যকাল হতেই চিন্তামগ্ন থাকতেন। তিনি ছিলেন দুর্দশাগ্রস্থ ও নিপিড়ীত মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল। আরববাসী তার নম্রতা, বিনয়, সত্যবাদিতা ও সৎস্বভাবের জন্য তাঁকে ‘আল-আমীন’ বা বিশ্বাসী উপাধিতে ভূষিত করেন।
তায়েফ গমনঃ
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর আশ্রয়দাতা চাচা আবূ তালিবের মৃত্যুকে কুরাইশরা সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করল। তার উপর নির্যাতনের মাত্রা পূর্বের চেয়ে অনেক বাড়িয়ে দিল। এ কঠিন পরিস্থিতে সহযোগিতা ও আশ্রয় পাওয়ার আশায় তিনি তায়েফ গমন করলেন। কিন্ত সেখানে উপহাস ও দুর্ব্যবহার ছাড়া আর কিছুই পেলেন না। তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে পাথর নিক্ষেপ করে আহত করে। ফলে তিনি আবার মক্কায় ফিরে যান।
মদিনায় হিজরতঃ
কুরাইশরা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করে। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয় এবং আল্লাহ তায়ালা তাকে হেফাযত করেন।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) স্বীয় ঘর থেকে বের হন এবং আল্লাহ তাআলা কাফেরদের চক্ষু অন্ধ করে দেন যাতে তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখতে না পারে। তিনি চলতে চলতে মক্কার বাইরে আবু বকর সিদ্দীক রা. এর সাথে মিলিত হন। অতঃপর তারা এক সাথেই পথ চলা আরম্ভ করেন। সওর নামক পাহাড়ে পৌঁছে একটি গুহায় তিন দিন পর্যন্ত আত্মগোপন করেন। এ সময়টিতে আব্দুল্লাহ বিন আবূ বকর রা. তাদের নিকট কুরাইশদের সংবাদ পৌঁছাতেন এবং তার বোন আসমা খাদ্য ও পানীয় পৌঁছে দিতেন। তারপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার সঙ্গী আবু বকর (রা) গুহা হতে বের হন এবং মদীনার পথে যাত্রা শুরু করেন।
মদীনায় নতুন অধ্যায়ের সূচনাঃ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনায় পৌঁছে তাকওয়ার ভিত্তিতে ইসলামের সর্বপ্রথম মসজিদ নির্মাণ করেন। বর্তমানে মদীনা শরীফে এ মসজিদটি “মসজিদে কু’বা” নামে পরিচিত।
মদীনাতে রাসুল (স) সর্বপ্রথম যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন তা হলো মসজিদে নববী নির্মাণ এবং আনসার ও মুহাজিরদের মাঝে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন।
মক্কা বিজয়ঃ
হুদায়বিয়ার সন্ধির পর হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বিভিন্ন গোত্রে তাঁর দাওয়াতী কর্মসূচী অধিক পরিমাণে বিস্তৃতি ঘটাতে সক্ষম হন। ফলে এক বছরের মাথায় মুসলমানদের সংখ্যা অধিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এরই মাঝে কুরাইশদের সাথে মৈত্রী চুক্তিতে আবদ্ধ বনু বকর মুসলমানদের মিত্র কবীলায়ে খুযা‘আর উপর আক্রমণ করল। এর অর্থ দাঁড়াল কুরাইশ এবং তার মিত্ররা হুদায়বিয়ার সন্ধি চুক্তি ভঙ্গ করল।
নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সংবাদ পেয়ে অত্যধিক ক্রুদ্ধ হন এবং মক্কা বিজয়ের উদ্দেশ্যে দশ হাজার যোদ্ধার একটি বিশাল সেনাদল গঠন করেন।
তখন ছিল হিজরী অষ্টম বর্ষের রমযান মাস। এদিকে কুরাইশরা নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মক্কাভিমুখে অভিযানের সংবাদ পেয়ে তাদের নেতা ও মুখপাত্র আবূ সুফিয়ানকে ক্ষমা প্রার্থনা, সন্ধি চুক্তি বলবৎ এবং চুক্তির মেয়াদ আরো বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়ে নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট প্রেরণ করেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের ক্ষমার আবেদন নাকচ করে দিলেন। কারণ তারা অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে। আবূ সুফিয়ান ইসলাম গ্রহণ ব্যতিত আর কোন উপায় না দেখে ইসলাম গ্রহণ করেন। অতঃপর সেনাদল (মক্কাভিমুখে) রওয়ানা হয়ে মক্কার কাছাকাছি আসলে মক্কাবাসী বিশাল দল দেখে আত্মসমর্পণ করে। আর নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলমানদের সঙ্গে নিয়ে বিজয়ী বেশে মক্কায় প্রবেশ করেন।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করেন এবং নিজ হাতের লাঠি দ্বারা কা‘বার আশেপাশে রাখা সকল প্রতিমা ভেঙে চুরমার করে দেন। আর স্বীয় রবের শেখানো আয়াত পাঠ করতে থাকেন,
وَقُلْ جَاءَ الْحَقُّ وَزَهَقَ الْبَاطِلُ إِنَّ الْبَاطِلَ كَانَ زَهُوقًا-
“বল, সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে, নিশ্চয় মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল।” (সূরা ইসরা : ৮১)
অতঃপর নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকলের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। ঘোষণা করেন মক্কা পবিত্র ও নিরাপদ।
বিদায় হজ্জঃ
দশম হিজরী সনে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলমানদেরকে তাঁর সাথে হজব্রত পালন ও হজের আহকাম শিক্ষা গ্রহণ করতে মক্কায় যাওয়ার জন্য আহ্বান জানান।
قول الله تعالى : الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا (سورة المائدة : ৩)
তাঁর আহ্বানে এক লক্ষের মত লোক সাড়া দিল। তাঁরা যুলকা’দাহ্ মাসের পঁচিশ তারিখ তাঁর সাথে মক্কা পানে বের হন। বাইতুল্লায় পৌঁছে প্রথমে তওয়াফ করেন। অতঃপর যিলহজ্জ মাসের আট তারিখ মিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। এরপর নয় তারিখ জাবালে আরাফাহ অভিমুখে যাত্রা করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখানে অবস্থান করেন এবং মুসলমানদের উদ্দেশ্যে তার ঐতিহাসিক অমর ভাষণ দান করে তাদেরকে ইসলামী বিধি-বিধান ও হজের আহকাম শিক্ষা দেন এবং আল্লাহ তাআলার নিম্নোক্ত বাণী তিলাওয়াত করেন- “আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম। তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম।”
বিদায় হজ্জ থেকে ফেরার পর হিজরী ১১ সালের সফর মাসে মুহাম্মদ (স) জ্বরে আক্রান্ত হন। জ্বরের তাপমাত্রা প্রচন্ড হওয়ার কারণে পাগড়ির ওপর থেকেও উষ্ণতা অনুভূত হচ্ছিল। অসুস্থ অবস্থাতেও তিনি এগারো দিন নামাজের ইমামতি করেন। অসুস্থতা তীব্র হওয়ার পর তিনি সকল স্ত্রীর অনুমতি নিয়ে আয়েশা (রাঃ)এর কামরায় অবস্থান করতে থাকেন। তাঁর কাছে সাত কিংবা আট দিনার ছিল,মৃত্যুর একদিন পূর্বে তিনি এগুলোও দান করে দেন। অবশেষে ১১ হিজরী সালের রবিউল আউয়াল মাসের ১ তারিখ সন্ধ্যায় তিনি মহান প্রতিপালকের সান্নিধ্যে চলে যান। এ সময় হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) -এর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। সর্বোপরি, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্টায় এক অনন্য নজির স্থাপন করেন, সর্বক্ষেত্রে তিনি ছিলেন সফল ব্যক্তিত্ব।
হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস ও বানী
[লি-আলীল আখবার, পৃ. ১৯৩]
আল্লাহর নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন তোমরা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার জন্য সৃষ্টি হওনি, বরং তোমরা অবশিষ্ট থাকার জন্য সৃষ্টি হয়েছো। আর তোমরা [মৃত্যুর মাধ্যমে] এক স্থান হতে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হবে’। (বিহারুল আনওয়ার, খণ্ড ৩, পৃ. ১৬১)
আল্লাহর নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন আশা-আকাঙ্খা আমার উম্মতের জন্য একটি রহমত স্বরূপ, যদি আশা না থাকতো তবে কোন মা তার সন্তানকে দুধ পান করাতো না এবং কোন মালিই গাছ লাগাতো না’ (তথা কোন কৃষকই চাষাবাদ করতো না)।
(সাফিনাহ, আমাল, পৃ. ৩০)
সাত শ্রেনীর ব্যাক্তির জন্য ফেরেশতারা দোয়া করে থাকেন:
মুসলিম বিশ্বে যে মানুষটি স্বর্ণ যুগের শ্রেষ্ঠ চিকিৎসক
ইবন আল নাফীস (১২১৩ – ১২৮৮) একজন বিখ্যাত আরব বিজ্ঞানী ও চিকিৎসাবিদ ছিলেন।তার পুরো নাম আলা আদদিন আবু আল হাসান আলি ইবনে আবি হাজামম আল কুরায়শি আল দামেস্কি। ইবনে নাফিস তার ডাকনাম। এ নামেই তিনি বেশি পরিচিতি লাভ করেন। কেউ আবার তাকে জানেন ইবনে আল নাফিস নামে।তিনি সিরিয়ার দামেস্কে জন্মগ্রহণ করেন এবং মিশরের কায়রোতে কর্মজীবন অতিবাহিত করেন।মানবদেহে বায়ু ও রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া আবিষ্কারের জন্য বিখ্যাত ছিলেন ইবনুন নাফিস। তিনি মানবদেহে রক্ত সঞ্চালন পদ্ধতি, ফুসফুসের সঠিক গঠন পদ্ধতি, শ্বাসনালি, হৃৎপিণ্ড, শরীরে শিরা উপশিরায় বায়ু ও রক্তের প্রবাহ ইত্যাদি সম্পর্কে তথ্য দিয়ে বিশ্বের চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেন।তিনি সর্বপ্রথম (উইলিয়াম হার্ভের ৩০০ বৎসর পূর্বে) রক্ত সঞ্চালন পদ্ধতি সম্বন্ধে সঠিক বর্ণনা করেন। রক্ত চলাচল সম্বন্ধে তৎকালীন প্রচলিত গ্যালেনের মতবাদকে ভুল প্রমাণ করে চিকিৎসাবিজ্ঞানে ১৩০০ শতাব্দীতে বিপ্লবের সূচনা করেছিলেন তিনি। ‘আল-শামিল ফি আল-তিব’ নামের ৩০০ খণ্ডের এক বিশাল বই লিখেছিলেন। এ বইয়ের পাণ্ডুলিপি বর্তমানে দামেস্কে সংরক্ষিত আছে।চিকিৎসাবিজ্ঞানের রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহৃত তার লেখা বুগিয়াত আল তালিবিন ওয়া হুজ্জাত আল মুতাতাব্বিন বইটি ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে। চোখের চিকিৎসায় বিশেষ সহযোগী বই তার লেখা আল মুহাদ্দাব ফি ই-কাহ্ল চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
ইসলামে ইবাদতের তাৎপর্য
প্রশ্ন:ইসলামে উবুদিয়্যত তথা আল্লাহর দাসত্ব ও মানুষের দাসত্বের স্বরূপ বিস্তারিতভাবে তুলে ধরবেন আশা করছি। |
সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ্র জন্য।
মুসলমান একমাত্র আল্লাহ্র ইবাদত করবে, তাঁরই দাসত্ব করবে। এ ব্যাপারে তিনি তাঁর কিতাবে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন এবং তাঁর দাসত্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্যই তিনি রাসূলদেরকে প্রেরণ করেছেন। তিনি বলেন,
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولاً أَنِ اعْبُدُواْ اللَّهَ وَاجْتَنِبُواْ الطَّاغُوتَ
“অবশ্যই আমি প্রত্যেক জাতির মধ্যে রাসূল পাঠিয়েছি এ নির্দেশ দিয়ে যে, তোমরা আল্লাহ্র উপাসনা (দাসত্ব) কর এবং তাগুতকে বর্জন কর।”[সূরা নাহল, ১৬:৩৬] عُبُودِيَّة (উবুদিয়্যাহ্) শব্দটি تَعْبِيْدٌ (তা’বীদ) শব্দ হতে উদ্ভূত। কোন একটি অমসৃণ রাস্তাকে পদদলিত করে চলার উপযুক্ত করা হলে তখন বলা হয়: عَبَّدتُّ الطَّرِيْقَ। আল্লাহ্র জন্য বান্দার দাসত্বের দুটি অর্থ রয়েছে। একটি ‘আম’ তথা সাধারণ। অপরটি ‘খাস্’ তথা বিশেষ।
যদি عُبُودِيَّة দ্বারা مُعَبَّد তথা করায়ত্ব-অধীন-বশীভূত এ অর্থ উদ্দেশ্য নেয়া হয়, তখন এ দাসত্বের পরিধি অতি ব্যাপক। মহাবিশ্বে আল্লাহ্র যত সৃষ্টি রয়েছে সকল সৃষ্টি এ দাসত্বের আওতায় এসে যায়। চলন্ত-স্থির, শুষ্ক-ভিজা, বুদ্ধিমান-নির্বোধ, মুমিন-কাফির, সৎকর্মশীল-পাপী… সকলেই আল্লাহ্র সৃষ্ট, তাঁর বশীভূত এবং তাঁর পরিচালনাধীন। একটা নির্ধারিত সীমানায় এসে সকলকে থেমে যেতে হয়।
আর যদি عبد (আবদ) দ্বারা আল্লাহ্র আদেশ-নিষেধের আজ্ঞাবহ, তাঁর দাসত্বস্বীকারকারী কাউকে উদ্দেশ্য করা হয় তবে এ দাসত্বের আওতায় শুধু মুমিনগণ পড়ে, কাফেরেরা নয়। কেননা মুমিনরাই হলো আল্লাহ্র প্রকৃত দাস। যারা একমাত্র তাঁকে তাদের প্রতিপালক হিসেবে মানে এবং একমাত্র তাঁরই ইবাদত (দাসত্ব) করে। তাঁর সাথে কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করে না। যেমনটা আল্লাহ্ তায়ালা ইবলিসের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন:
قَالَ رَبِّ بِمَا أَغْوَيْتَنِي لَأُزَيِّنَنَّ لَهُمْ فِي الْأَرْضِ وَلَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ (39) إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ (40) قَالَ هَذَا صِرَاطٌ عَلَيَّ مُسْتَقِيمٌ (41) إِنَّ عِبَادِي لَيْسَ لَكَ عَلَيْهِمْ سُلْطَانٌ إِلَّا مَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْغَاوِينَ (42)
سورة الحجر
“সে (ইবলিস) বললো, হে আমার প্রতিপালক! আপনি যে আমাকে বিপথগামী করলেন, তার জন্য আমি পৃথিবীতে মানুষের নিকট পাপকর্মকে অবশ্যই শোভনীয় করে তুলব এবং তাদের সকলকেই আমি বিপথগামী করে ছাড়ব। তবে তাদের মধ্যে আপনার একনিষ্ঠ দাসগণ (বান্দাগণ) ছাড়া। তিনি (আল্লাহ্) বললেন: এটাই আমার নিকট পৌঁছার সরল পথ। বিভ্রান্তদের মধ্য হতে যারা তোমার অনুসরণ করবে তারা ছাড়া আমার (একনিষ্ঠ) দাসদের উপর তোমার কোন আধিপত্য থাকবে না।”[সূরা হিজর ৩৯-৪২]
আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন যে প্রকার দাসত্ব তথা ইবাদতের আদেশ নাযিল করেছেন সেটা হলো- “এমন একটি বিষয় যা আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের পছন্দনীয় সকল প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য কথা ও কাজকে অন্তর্ভুক্ত করে এবং তার অপছন্দনীয় সবকিছুকে বের করে দেয়। ইবাদতের এ পরিচয়ের আওতায় শাহাদাতাইন (কালিমা ও রিসালাতের দুইটি সাক্ষ্যবাণী), সালাত, হজ্ব, সিয়াম, জিহাদ, সৎকাজের আদেশ, অসৎকাজের নিষেধ, আল্লাহ্র প্রতি ঈমান, ফেরেশতা-রাসূল-শেষ বিচারের দিনের প্রতি ঈমান…ইত্যাদি সবকিছু অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। এ ইবাদতের মূল ভিত্তি হলো ‘ইখলাস’। অর্থাৎ বান্দাহ্ সকল কাজের মাধ্যমে একমাত্র আল্লাহ্র সন্তুষ্টি ও পরকালীন মুক্তি কামনা করবে। ইরশাদ হচ্ছে- “আর সে আগুন থেকে রক্ষা পাবে; যে পরম মুত্তাকী। যে স্বীয় সম্পদ দান করে আত্মশুদ্ধির উদ্দেশ্যে। তার প্রতি কারো অনুগ্রহের প্রতিদান হিসেবে নয়। বরং তার মহান প্রতিপালকের সন্তোষ লাভের প্রত্যাশায় এবং সেতো অচিরেই সন্তোষ লাভ করবে।” [সূরা লাইল, ৯২:১৭-২১]
সুতরাং একনিষ্ঠতা (ইখলাস) এবং বিশ্বস্ততা থাকতে হবে। এ গুণদুটি প্রকাশ পাবে একজন মুমিনের আল্লাহ্র আদেশ পালন, তাঁর নিষেধ থেকে বিরত থাকা, তাঁর সাথে সাক্ষাতের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা, অক্ষমতা ও অলসতা ত্যাগ করা এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে সংযম অবলম্বন করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে। আল্লাহ্ বলেন- “হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ্কে ভয় করো এবং যারা সত্যবাদী (কথা ও কাজে) তাদের সঙ্গে থাকো।”[সূরা তাওবাহ্, ৯:১১৯]
এরপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ইত্তেবা (অনুসরণ) করতে হবে। অর্থাৎ আল্লাহ প্রদত্ত বিধান (শরিয়ত) অনুযায়ী ইবাদত পালন করবে। মাখলুকের মনমত অথবা নতুন কোন পদ্ধতি উদ্ভাবন করে আল্লাহর ইবাদত করবে না। এটাই হলো রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ইত্তেবা বা অনুসরণের মর্মার্থ। সুতরাং একনিষ্ঠতা, বিশ্বস্ততা বা অকপটতা এবং ইত্তেবায়ে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ তিনটি উবুদিয়্যাহ্ বা আল্লাহর দাসত্বের অনিবার্য উপসর্গ। এ তিনটির সাথে যা কিছু সাংঘর্ষিক সেগুলো ‘মানুষের দাসত্ব’। রিয়া বা লৌকিকতা ‘মানুষের দাসত্ব’। শির্ক ‘মানুষের দাসত্ব’। আল্লাহ্র নির্দেশ ত্যাগ করে, আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করে মানুষকে সন্তুষ্ট করা ‘মানুষের দাসত্ব’। এভাবে যে ব্যক্তি তার খেয়ালখুশিকে আল্লাহ্র আনুগত্যের উপরে প্রাধান্য দেবে সে আল্লাহর দাসত্বের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে যাবে এবং সরল পথ (সিরাতুল মুস্তাকীম) থেকে ছিটকে পড়বে। তাইতো রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “দিনার ও দিরহামের পূজারি ধবংস হোক। ধবংস হোক কারুকাজের পোশাক ও মখমলের বিলাসী। যদি তাকে কিছু দেওয়া হয় সে সন্তুষ্ট থাকে; আর না দেওয়া হলে অসন্তুষ্ট হয়। সে মুখ থুবড়ে পড়ুক অথবা মাথা থুবড়ে পড়ুক। সে কাটা বিদ্ধ হলে কেউ তা তুলতে না পারুক।”
“আল্লাহ্র দাসত্ব” ভালোবাসা, ভয়, আশা ইত্যাদিকে শামিল করে। সুতরাং বান্দা তার রবকে ভালোবাসবে, তাঁর শাস্তিকে ভয় করবে, তাঁর সওয়াব ও করুণার প্রত্যাশায় থাকবে। এই তিনটি আল্লাহর দাসত্বের মৌলিক উপাদান।
আল্লাহ্র দাস হওয়া বান্দার জন্য সম্মানজনক; অপমানকর নয়। কবি বলেছেন,
আপনার সম্বোধন ‘হে আমার বান্দারা’ এর অন্তর্ভুক্ত হতে পেরে এবং আহমাদকে আমার নবী মনোনীত করাতে আমার মর্যাদা আরো বেড়ে গেছে। মনে হচ্ছে যেন আমি আকাশের নক্ষত্রকে পায়ের নীচে মাড়িয়ে চলেছি।
মহান আল্লাহ্ আমাদেরকে তার সৎকর্মশীল বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করে নিন। আমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
সূত্র: শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ
পিতামাতার জন্য দো‘আ :(1) رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِيْ صَغِيْراً، (الإسراء 24)-
‘রব্বীরহামহুমা কামা রববাইয়া-নী ছগীরা’
(হে আমার প্রতিপালক! তুমি তাদের উপরে দয়া কর, যেমন তারা আমাকে ছোটকালে দয়ার সাথে প্রতিপালন করেছিলেন)’ (ইসরা ১৭/২৪)। কুরআনের আয়াত হওয়ার কারণে দো‘আটি সিজদায় পড়া যাবে না। তবে শেষ বৈঠকে দো‘আয়ে মাছূরাহর পরে পড়া যাবে।
(২) رَبَّنَا اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسَابُ-
রব্বানাগফিরলী ওয়ালিওয়া-লিদাইয়া ওয়া লিলমু’মিনীনা ইয়াউমা ইয়াক্বূমুল হিসা-ব’
(হে আমাদের প্রতিপালক! আমাকে, আমার পিতামাতাকে ও মুমিনদেরকে ক্ষমা কর, যেদিন হিসাব কায়েম হবে’ (ইবরাহীম ১৪/৪১)।
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ জান্নাতে তার নেককার বান্দাদের মর্যাদার স্তর উন্নীত করবেন। তখন বান্দা বলবে, হে আল্লাহ! কেন এটা আমার জন্য করা হচ্ছে? জবাবে আল্লাহ বলবেন, তোমার জন্য তোমার সন্তানের ক্ষমা প্রার্থনার কারণে (بِاسْتِغْفَارِ وَلَدِكَ لَكَ)’। [136]
[136] . আহমাদ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/২৩৫৪ ‘ দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, ‘ক্ষমা প্রার্থনা ও তওবা’ অনুচ্ছেদ-৪; ছহীহাহ হা/১৫৯৮।
(1) رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِيْ صَغِيْراً، (الإسراء 24)-
‘রব্বীরহামহুমা কামা রববাইয়া-নী ছগীরা’
(হে আমার প্রতিপালক! তুমি তাদের উপরে দয়া কর, যেমন তারা আমাকে ছোটকালে দয়ার সাথে প্রতিপালন করেছিলেন)’ (ইসরা ১৭/২৪)। কুরআনের আয়াত হওয়ার কারণে দো‘আটি সিজদায় পড়া যাবে না। তবে শেষ বৈঠকে দো‘আয়ে মাছূরাহর পরে পড়া যাবে।
(২) رَبَّنَا اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسَابُ-
রব্বানাগফিরলী ওয়ালিওয়া-লিদাইয়া ওয়া লিলমু’মিনীনা ইয়াউমা ইয়াক্বূমুল হিসা-ব’
(হে আমাদের প্রতিপালক! আমাকে, আমার পিতামাতাকে ও মুমিনদেরকে ক্ষমা কর, যেদিন হিসাব কায়েম হবে’ (ইবরাহীম ১৪/৪১)।
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ জান্নাতে তার নেককার বান্দাদের মর্যাদার স্তর উন্নীত করবেন। তখন বান্দা বলবে, হে আল্লাহ! কেন এটা আমার জন্য করা হচ্ছে? জবাবে আল্লাহ বলবেন, তোমার জন্য তোমার সন্তানের ক্ষমা প্রার্থনার কারণে (بِاسْتِغْفَارِ وَلَدِكَ لَكَ)’। [136]
নিজের জন্য দো‘আ [সোলায়মান (আঃ)-এর দো‘আর ন্যায়] :
رَبِّ أَوْزِعْنِيْ أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِيْ أَنْعَمْتَ عَلَيَّ وَعَلَى وَالِدَيَّ وَأَنْ أَعْمَلَ صَالِحًا تَرْضَاهُ وَأَدْخِلْنِيْ بِرَحْمَتِكَ فِيْ عِبَادِكَ الصَّالِحِيْنَ- (النمل 19)-
উচ্চারণ : ‘রবেব আওঝি‘নী আন আশকুরা নি‘মাতাকাল্লাতী আন‘আমতা ‘আলাইয়া, ওয়া ‘আলা ওয়ালেদাইয়া, ওয়া আন আ‘মালা ছ-লেহান তারযা-হু, ওয়া আদখিলনী বি রহমাতিকা ফী ‘ইবা-দিকাছ ছ-লেহীন।
অনুবাদ : ‘হে আমার পালনকর্তা! আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে যে নে‘মত তুমি দান করেছ, তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার শক্তি আমাকে দান কর এবং আমি যেন এমন সৎকর্ম করতে পারি, যা তুমি পছন্দ কর এবং আমাকে তোমার অনুগ্রহে তোমার সৎকর্মশীল বান্দাগণের অন্তর্ভুক্ত কর’ (নমল ২৭/১৯)।
রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর প্রতি কিভাবে ওহী শুরু হয়েছিল
পরিচ্ছেদঃ ১
হুমায়দী (রহঃ) … আলকামা ইবনু ওয়াক্কাস আল-লায়সী (রহঃ) থেকে বর্ণিত, আমি উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-কে মিম্বরের ওপর দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছিঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ প্রত্যেক কাজ নিয়তের সাথে সম্পর্কিত। আর মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী ফল পাবে। তাই যার হিজরত হবে দুনিয়া লাভের অথবা নারীকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে- সেই উদ্দেশ্যেই হবে তার হিজরতের প্রাপ্য।
حَدَّثَنَا الْحُمَيْدِيُّ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الزُّبَيْرِ، قَالَ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، قَالَ حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ الأَنْصَارِيُّ، قَالَ أَخْبَرَنِي مُحَمَّدُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ التَّيْمِيُّ، أَنَّهُ سَمِعَ عَلْقَمَةَ بْنَ وَقَّاصٍ اللَّيْثِيَّ، يَقُولُ سَمِعْتُ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ ـ رضى الله عنه ـ عَلَى الْمِنْبَرِ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ “ إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى، فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى دُنْيَا يُصِيبُهَا أَوْ إِلَى امْرَأَةٍ يَنْكِحُهَا فَهِجْرَتُهُ إِلَى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ ”.
তাহক্বীক: মারফু হাদিস। তাখরীজ : বুখারীঃ তাওহীদ.পাবলিকেশান্স ১, ৫৪, ২৫২৯, ৩৮৯৮, ৫০৭০, ৬৬৮৯, ৬৯৫৩; মুসলিমঃ ৫০৩৬; আবূ দাউদঃ ২২০৩; তিরমিযীঃ ১৭৪৮; দারাকুতনীঃ ১৩৪; নাসাঈঃ ৭৫, ৩৪৫০, ৩৮১০; আহমাদঃ ১৭০, ৩০৭। মুসলিম ২৩/৪৫ হা: ১৯০৭ , (আধুনিক প্রকাশনী. ১ , ইসলামিক ফাউন্ডেশন. ১) |
ব্যাখ্যা
ইমাম নববী (রহঃ) বলেনঃ নিয়ত বলতে অন্তরের সংকল্প বুঝায়। অন্তরের দৃঢ় সংকল্পই নিয়ত; কিন্তু কিরমানী বলেন, “দৃঢ়তা” নিয়তের শর্ত নয়। এটি একটি অতিরিক্ত বিশেষণ যা নিয়ত শব্দটির পূর্বে যোগ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেছেনঃ ফকীহগনের মধ্যে নিয়ত সম্পর্কে মতবিরোধ আছে। এটা কি রুকন, না শর্ত? মোটকথা এই যে, কাজের প্রারম্ভে নিয়ত করা রুকন আর কাজের মধ্যে নিয়ত করা জরুরী। নিয়তের মধ্যে শরিয়ত বিরধী কোন সংকল্প থাকতে পারবে না। এটা নিয়তের প্রধান শর্ত।
কোন কাজ করতে যাওয়ার পূর্বে নিয়ত করা অপরিহার্য। শরীয়তের পরিভাশায় আল্লাহর সন্তোষটি এবং তাঁর নির্দেশ পালনের উদ্দেশ্য কাজ করার সংকল্পকে নিয়ত বলা হয়। সৎকাজ করে পুণ্য লাভ করতে হলে তাঁর উদ্দেশ্যও সৎ হতে হবে। কাজের শুভ পরিনতি লাভের জন্য ভালো নিয়ত বা সৎ উদ্দেশ্য একান্ত অপরিহার্য। যথাযথ নিয়ত বা সংকল্প ব্যাতিরেকে আমল সঠিক, পরিপূর্ণ ও পুন্যবহ হতে পারে না।
হিজরত অর্থ পরিত্যাগ করা। এক বস্ত হতে অন্য বস্তুর দিকে প্রস্থান করাকে হিজরত বলা হয়। শরীয়তের পরিভাষায় আল্লাহ্ এবং তদীয় রাসুল (সাঃ) যা নিষেধ করেছে তা পরিহার করাকে হিজরত বলে। ইসলামী শরীয়তে দু’ভাবে হিজরত হতে পারে।
১) ভয়-ভীতিপূর্ণ ভূখণ্ড হতে হিজরত করে শান্তিপূর্ণ ভূখণ্ডে চলে যাওয়া। যেমনঃ ইসলামের প্রথম দিকে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর অনুমতিক্রমে কিছু সংখ্যক সাহাবী মক্কাবাসীদের অত্যাচারের আশঙ্কায় শান্তি ও নিরাপত্তাপূর্ণ ভূখণ্ড হাবশায় হিজরত করেছিলেন। এমনিভাবে স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ও আল্লাহর নির্দেশক্রমে মক্কা হতে সঙ্গী-সাথীসহ মদীনায় হিজরত করেছিলেন।
২) যে ভূখণ্ডে কাফেরদের প্রভাব-প্রতিপত্তি রয়েছে সেই ভূখণ্ডে অবস্থান করে ঈমান রক্ষা করা অসম্ভব হলে মু’মিনদের প্রভাবিত নিরাপদ ভূখণ্ডে হিজরত করে চলে যাওয়ায় একান্ত যুক্তিযুক্ত। এই জাতীয় হিজরতের অবকাশ সর্বদাই রয়েছে।
এই হাদিসটি মুহাজিরে উম্মে কায়েসের নামে মুহাদ্দিস মহলে পরিচিত। ঘটনার সারমর্ম এই যে, উম্মে কায়েস নাম্নী এক মহিলার নিকট এক ব্যাক্তি বিবাহের প্রস্তাব দিলে সে ঐ ব্যাক্তির হিজরত না করা পর্যন্ত তাঁর সাথে বিবাহে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে। ফলে সেই ব্যাক্তি উম্মে কায়েসকে বিবাহ করার উদ্দেশ্যে হিজরত করে মদীনায় আগমনপূর্বক তাঁর সাথে দাম্পত্য প্রণয় স্থাপন করে। এই লোকটিকে মুহাজিরে উম্মে কায়েস নামে অভিহিত করা হয়। ওহীর প্রারম্ভ পরবের সাথে হাদিসটির সামঞ্জস্য বিধানের ব্যাপারে হাদিসের ভাষ্যকরগন বিভিন্ন মতামত ব্যাক্ত করেছেন। তাঁর সার সংক্ষেপ নিম্নরূপঃ
প্রথমতঃ মহান আল্লাহ্ নবী রাসুলগনকে সাধারনভাবে এবং বিশ্বনবী মুহাম্মাদ (সাঃ) কে বিশেষভাবে এ মর্মে অহী করেছেন যে, আমলসমূহের পারিতোষিক সহিহ নিয়তের উপর নির্ভরশীল। কাজেই আমল সম্বলিত অহীর বর্ণনা প্রসঙ্গে সর্বপ্রথমে এই হাদিসটির সংকলন অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক বলে সঙ্গতভাবেই বিবেচনা করা যেতে পারে।
দ্বিতীয়তঃ ইমাম বুখারী (রাহেমাহুল্লাহ) তার সহিহ হাদিস গ্রন্থের সূচনায় এই হাদিসটি সংকলন করে নিয়তের গুরুত্ব বর্ণনা করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) মক্কা হতে হিজরত করে মদীনায় গমনপূর্বক খুতবা ডান প্রসঙ্গে এই হাদিস বলেছিলেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর ওহী প্রাপ্তির সূচনাই ছিল হিজরত। তিনি তদীয় বাসস্থান হতে হিজরত করে হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন অবস্থায় সর্বপ্রথম ওহীর সন্ধান লাভ করেছিলেন। সুতরাং ওহীর প্রারম্ভ পর্বের সাথে হিজরত সম্বলিত এই হাদিসটির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
তৃতীয়তঃ কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ শুরু করতে হলে নিয়তকে খালেস করা একান্ত অপরিহার্য। ইমাম বুখারী (রাহেমাহুল্লাহ) তাঁর সহীহ গন্থ সংকলনের ন্যায় একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ কাজ শুরু করতে গিয়ে প্রথমে নিয়ত এবং হিজরতের গুরুত্ব সম্বলিত এই হাদিসটি সংকলন করার মাধ্যমে বরকত হাসিল করার ইচ্ছা করেছেন। অধ্যায়ের সাথে হাদিসটির সামঞ্জস্য বিধানের অনুকুলে আরও অনেক যুক্তি প্রমান পেশ করা যেতে পারে।
আলোচ্য হাদিসে মুহাদ্দিস ইমামগণের ব্যাখ্যা হতে সুস্পষ্টতঃই জানা যায় যে, নিয়ত অন্তরের ব্যাপার, মুখে উচ্চারণ করার ব্যাপার নয়। কুরআন-হাদিসের কোথাও নামায, রোজা বা যে কোন আমলের আরম্ভ করার পূর্বে কোন ভাষায় মুখে উচ্চারণপূর্বক নিয়ত করতে হবে এমন কোনই প্রমান নেই। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সাহাবায়ে কিরাম, তাবেয়ী ও তাবা-তাবেয়ীদের আমলেও মুখে নিয়ত উচ্চারনের প্রমান বিদ্যমান নেই। শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী বলেন, “মুখে উচ্চারণ না করার মধ্যে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সুন্নতের অনুসরণ রয়েছে-“ আশে’আতুল লোম’আত। বহু গ্রন্থ প্রণেতা আশরাফ আলী থানভী (রাহেমাহুল্লাহ) লিখেছেনঃ “মুসল্লি মনে মনে নামাযের নিয়ত বা সংকল্প করবে যে, আমি যোহরের নামায পড়তেছি। তারপর আল্লাহু আকবার বলে হাত বাঁধলেই হয়ে যাবে। সমাজে প্রচলিত লম্বা-চওড়া নিয়ত পাঠের প্রয়োজনীয়তা নাই।“ (বেহেশতী জেওর ২য় খণ্ড ১৭,১৮ পৃষ্ঠা) মাওলানা কারামত আলী জৌনপুরী (রাহেমাহুল্লাহ) লিখেছেন, “অন্তরেই নামাজের মনস্থ করে নিতে হবে। অর্থাৎ মনে মনে ধারনা করবে যে, আমি ফজরের নামায পড়তেছি। মুখে নিয়ত করার কোনই প্রয়োজন নেই”। (রাহে নাজাতঃ ৯ পৃষ্ঠা)
টীকাঃ চার মাযহাবের ইমামগন একমত হয়েছেন যে, নিয়ত ব্যাতিত নামায শুদ্ধ হবে না। (কিতাবুল ফিকহে “আলাল মাযাহিবিল আরবাআহঃ ১ম খণ্ড ২১০ পৃষ্ঠা)
২।রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর প্রতি কিভাবে ওহী শুরু হয়েছিল
আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, হারিস ইবনু হিশাম (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনার প্রতি ওহী কিভাবে আসে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কোন সময় তা ঘন্টাধ্বনির ন্যায় আমার নিকট আসে। আর এটি-ই আমার উপর সবচাইতে কষ্টদায়ক হয় এবং তা সমাপ্ত হতেই ফিরিশতা যা বলেন আমি তা মুখস্থ করে নই, আবার কখনো ফিরিশতা মানুষের আকৃতিতে আমার সঙ্গে কথা বলেন। তিনি যা বলেন আমি তা মুখস্থ করে ফেলি। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি প্রচন্ড শীতের দিনে ওহী নাযিলরত অবস্থায় তাঁকে দেখেছি। ওহী শেষ হলেই তাঁর কপাল থেকে ঘাম ঝরে পড়ত।
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يُوسُفَ، قَالَ أَخْبَرَنَا مَالِكٌ، عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَائِشَةَ أُمِّ الْمُؤْمِنِينَ ـ رضى الله عنها ـ أَنَّ الْحَارِثَ بْنَ هِشَامٍ ـ رضى الله عنه ـ سَأَلَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ كَيْفَ يَأْتِيكَ الْوَحْىُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “ أَحْيَانًا يَأْتِينِي مِثْلَ صَلْصَلَةِ الْجَرَسِ ـ وَهُوَ أَشَدُّهُ عَلَىَّ ـ فَيُفْصَمُ عَنِّي وَقَدْ وَعَيْتُ عَنْهُ مَا قَالَ، وَأَحْيَانًا يَتَمَثَّلُ لِيَ الْمَلَكُ رَجُلاً فَيُكَلِّمُنِي فَأَعِي مَا يَقُولُ ”. قَالَتْ عَائِشَةُ رضى الله عنها وَلَقَدْ رَأَيْتُهُ يَنْزِلُ عَلَيْهِ الْوَحْىُ فِي الْيَوْمِ الشَّدِيدِ الْبَرْدِ، فَيَفْصِمُ عَنْهُ وَإِنَّ جَبِينَهُ لَيَتَفَصَّدُ عَرَقًا.
তাহক্বীক: মারফু হাদিস। তাখরীজ: ( বুখারীঃ তা.পা ২, ৩২১৫; তিরমিযীঃ ৩৯৯৪; নাসাঈঃ ৯৪২; আহমাদঃ ২৬৯৫২; মুয়াত্তাঃ ৪৭৯। মুসলিম ৪৩/২৩, হা: ২৩৩৩ , আহমাদ ২৫৩০৭ ( আধুনিক প্রকাশনী. ২ , ই.ফা. ২) শরীআহর মূল উৎস হচ্ছে ওয়াহী। ওয়াহী ২ প্রকার । ওয়াহী মাতলু (আল-কুরআন) ও ওয়াহী গাইরে মাতলু (সুন্নাহ ও হাদীস) । এবং দ্বীনে ইলাহীর ভিত্তি শুধু ২ টি জিনিসের উপর প্রতিষ্ঠিত । ইজমা ও কিয়াস কোন শারঈ দলীল নয়। বরং ইজমা ও কিয়াস ওয়াহীর পক্ষে অর্থাৎ কুরআন ও সুন্নাহ মুতাবিক হবে তা গ্রহণযোগ্য এবং যেটা বিপক্ষে যারে সেটা পরিত্যাজ্য ও অগ্রহণযোগ্য। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর বানী : [يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنكُمْ ۖ فَإِن تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ۚ ذَٰلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا [٤:٥٩]] [يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَلَا تُبْطِلُوا أَعْمَالَكُمْ [٤٧:٣٣]] [ওহে যারা ঈমান এনেছ! আল্লাহকে অনুসরণ করো, ও রসূলের অনুগমন করো, আর তোমাদের মধ্যে যাদের হুকুম দেবার ভার আছে। তারপর যদি কোনো বিষয়ে তোমরা মতভেদ করো তবে তা পেশ করো আল্লাহ ও রসূলের কাছে, যদি তোমরা আল্লাহতে ও আখেরাতের দিনে বিশ্বাস করে থাকো। এটিই হচ্ছে শ্রেষ্ঠ ও সর্বাঙ্গ সুন্দর সমাপ্তিকরণ। (নিসাঃ ৪ : ৫৯) ওহে যারা ঈমান এনেছ! আল্লাহকে মেনে চলো ও রসূলের আজ্ঞা পালন করো, আর তোমাদের ক্রিয়াকর্ম বিফল করো না (মুহাম্মাদঃ ৪৭ : ৩৩)] কিন্তু বাতিলি ফির্কার লোকেরা ইজমা ও কিয়াসকে ওয়াহীর আসনে বসিয়েছে এবং বলে থাকে : শরীআহর ভিত্তি ভিত্তি ৪ টি বিষয়ের উপর । কুরআন , সুন্নাহ , ইজমা, কিয়াস । বড় আশ্চর্জের বিষয় এই যে, সাহাবায়ে কেরাম যাদের উপর আল্লাহ তা’আলা তার সন্তুষ্টির ঘোষনা দিয়েছেন, তাদেরকে সত্যবাদী বলে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে এবং মুসলিম উম্মাহ এ ব্যপারে সকলেই একমত। অথচ তারা সাহবায়ে কেরামকে ২ ভাগে ভাগ করেছেন। [১] ফকীগ [২] গাইরে ফকীহ। আর বলেছেন যে সকল সাহাবী ফকীহ ছিলেন তার আযদি কিয়াসের বীপরীতে হাদীস বর্ণনা করেন তবে তা গ্রহণযোগ্য কিন্তু যে সকল সাহাবী গাইরে ফকীহ অর্থাৎ ফকীহ নন তাঁরা যদি কিয়াসের খেলাফ হাদীস বর্ণনা করেন তাহলে তা গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে না। প্রকৃতপক্ষে এটা উম্মতে মুহাম্মাদিয়াকে সিরাতে মুস্তাকীমের পথ হতে সরিয়ে দেয়ার একটা বড় অস্ত্র এবং পরিকল্পনা। কেননা তারা কিয়াসকে মূল আর হাদীসকে ২য় স্থানে রেখেছেন। সকল সাহাবীর উপর আল্লাহ তা’আলা সন্তুষ্ট কিন্তু তারা খুশী নন। সকল সাহাবীর ব্যাপারে উম্মতের ঐক্যমত রয়েছে। কিন্তু তাদের নিকট গাইরে ফকীহ সাহাবীগণ ‘আদীল নন। ধোকাঁবাজির কিছু নমুনা : তারা বলেন, ফকীহ সাহাবীগণ কিয়াসের খেলাফ হাদীস বর্ণনা করলে তা গ্রহণীয় হবে। কিন্তু গাইরে ফকীহ সাহাবীগণ কিয়াসের খেলাফ হাদীস বর্ণনা করলে তা গ্রহণীয় হবে না এবং কিয়াসের উপর আ‘মাল করতে হবে। বাই’য়ি মুসারাহ এর হাদীস আবূ হুরাইরাহ হতে বর্ণিত এবং কিয়াসের খেলাফ। এই জন্য তা বাতিল। এবং কিয়াসের উপর আ‘মালযোগ্য । অথচ এই হাদীস ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ হতেও বর্ণিত হয়েছে। (দেখুন সহীহ বুখারী ২৮৮ পৃষ্ঠা রশিদিয়া ছাপা) |
ব্যাখ্যা:
এই হাদিস পাঠে জানা যাচ্ছে যে, সাহাবী হারিস ইবনে হিশাম (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার নিকট ওহী কিভাবে আসে? কিন্তু ইমাম বুখারী (রহঃ) অধ্যায় রচনা করেছেন, এই বলে যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর নিকট ওহী কিভাবে শুরু হয়েছিল? বস্তুতঃ ওহীর অবস্থা আর ওহী শুরু হওয়ার অবস্থা এক কথা নয়। অধ্যায় রচনার সাথে সামঞ্জস্য বিধান করতে যেয়ে আমরা বলব-সাহাবী হারিস (রাঃ) এর জিজ্ঞাসার তাৎপর্য এটাই যে, প্রথমে ওহী কিভাবে এসেছে?
হযরত মুহাম্মদ (সঃ)এর স্ত্রীদের তালিকা
নাম | গোত্র | বিয়ের পূর্বের অবস্থা | বয়স | মন্তব্য | বিয়ের তারিখ | মৃত্যুর তারিখ |
খাদিজা বিনতু খুওয়াইলিদ | বনু আসাদ | বিধবা | ২৫ - ৪০ | প্রথম বিয়ে এবং নবুয়াত প্রাপ্তির আগে একমাত্র বিয়ে | ৫৯৫ | ৬১৯ |
সাওদা বিনতে জামআ | বনু আব্দু শাম্স | বিধবা | ৬৫ | বৃদ্ধ, গরিব এবং বিধবা; আবিসিনিয়া হিজরতের পর | ৬১৯-এর পরপর | হযরত মুহাম্মদ (সঃ)এর ওফাতের পর |
আয়েশা বিনতু আবু বকর | বনু তাইম | কুমারী | ৯ (মতান্তর:বিয়ের সময় আয়েশার বয়স) | মুহাম্মদের সাথে পারিবারিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য আবু বকর তার মেয়েকে বিয়ে দেন।[1] | ৬২২ | হযরত মুহাম্মদ (সঃ)এর ওফাতের পর |
হাফসা বিনতে উমর | বনু আদি | বিধবা | উমরের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের উদ্দেশ্যে তার মেয়েকে | ৬২৪ – ৬২৫ | হযরত মুহাম্মদ (সঃ)এর ওফাতের পর | |
জয়নব বিনতু খুযায়মা | বিধবা | ৬২৬ – ৬২৭ | বিয়ের পরপরই | |||
উম্মে সালামা হিন্দ বিনতু আবি উমাইয়া | বনু উমাইয়া | উহুদ যুদ্ধে বিধবা হন | প্রায় ৬৫ | সাহায্যের জন্য, ৪ জনের জননী ছিলেন | ৬২৬ | মুহাম্মাদের ওফাতের পর |
রায়হানা বিনতে জায়েদ | বনু নাদির | |||||
জয়নব বিনতে জাহশ | তালাকপ্রাপ্ত এবং বিধবা | ৬২৫ – ৬২৭ | মুহাম্মাদের ওফাতের পর | |||
জুওয়াইরিয়া বিনতে আল-হারিস | বনু মুস্তালিক | বিধবা; মা মালাকাত আইমানুকুম-এর আওতায়। | ৬২৭ – ৬২৮ | মুহাম্মাদের ওফাতের পর | ||
রামালাহ বিনতে আবি সুফিয়ান | বনু উমাইয়া | আবু সুফিয়ানের কন্যা। প্রথম উমাইয়া খলিফা মুয়াবিয়া'র বোন। তালাকপ্রাপ্ত, তার স্বামী আবিসিনিয়ায় খ্রিস্টান হয়ে যায়। | সাহায্য | ৬২৯ | হযরত মুহাম্মদ (সঃ)এর ওফাতের পর | |
সাফিয়া বিনতে হুওয়াই | বনু নাদির | বিধবা; মা মালাকাত আইমানুকুম-এর আওতায়। | ৬২৯ | মুহাম্মাদের ওফাতের পর | ||
মায়মুনা বিনতে আল-হারিস | বিধবা | ২৬ | ৬২৯ | হযরত মুহাম্মদ (সঃ)এর ওফাতের পর | ||
মারিয়া আল-কিবতিয়া | মিশরীয় | মিশরের সম্রাট মুকাউকিসের পক্ষ হতে মুহাম্মাদের জন্য উপহার | ৬২৮ – ৬২৯ | হযরত মুহাম্মদ (সঃ)এর ওফাতের পর |
বিবাহের সময়রেখা

(ক) يَا حَىُّ يَا قَيُّوْمُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيْثُ ‘
ইয়া হাইয়ু ইয়া ক্বাইয়ূমু বিরাহমাতিকা আস্তাগীছ’
(হে চিরঞ্জীব! হে বিশ্বচরাচরের ধারক! আমি আপনার রহমতের আশ্রয় প্রার্থনা করছি)। আনাস বিন মালেক (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) যখন কোন দুঃখ বা সংকটের সম্মুখীন হতেন, তখন এই দো‘আটি পড়তেন। [123]
(খ) ভূমিকম্প বা যে কোন আকস্মিক বিপদে বলবে,
, لآ إِلَهَ اِلاَّ اللهُ
লা ইলাহা ইল্লাল্লা-হ’
(নেই কোন উপাস্য আল্লাহ ব্যতীত)।[124] অথবা এর সাথে উপরের দো‘আটি পড়বে। অথবা বলবে,আল্লা-হুম্মা হাওয়া-লায়না অলা ‘আলায়না (হে আল্লাহ! আমাদের থেকে ফিরিয়ে নাও। আমাদের উপর দিয়ো না)। [125]
(গ) اَللَّهُمَّ إِنِّىْ أَعُوْذُبِكَ مِنْ جَهْدِ الْبَلاَءِ وَدَرَكِ الشَّقَاءِ وَسُوْءِ الْقَضَاءِ وَشَمَاتَةِ الْأَعْدَاءِ
আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন জাহদিল বালা-ই, ওয়া দারাকিশ শাক্বা-ই, ওয়া সূ’ইল ক্বাযা-ই ওয়া শামা-তাতিল আ‘দা-ই’।
(হে আল্লাহ! আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি অক্ষমকারী বিপদের কষ্ট হ’তে, দুর্ভোগের আক্রমণ হ’তে, মন্দ ফায়ছালা হ’তে এবং শত্রুর খুশী হওয়া থেকে)। [126]
(ঘ) اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ زَوَالِ نِعْمَتِكَ، وَتَحَوُّلِ عَافِيَتِكَ، وَفُجَاءَةِ نِقْمَتِكَ، وَجَمِيْعِ سَخَطِكَ
আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন যাওয়া-লি নি‘মাতিকা ওয়া তাহাউউলি ‘আ-ফিয়াতিকা ওয়া ফুজা-আতি নিক্বমাতিকা ওয়া জামী‘ই সাখাত্বিকা’
(হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি আমার থেকে আপনার নে‘মত চলে যাওয়া হ’তে, আপনার দেওয়া সুস্থতার পরিবর্তন হ’তে, আপনার শাস্তির আকস্মিক আক্রমণ হ’তে এবং আপনার যাবতীয় অসন্তুষ্টি হ’তে)।[127]
(ঙ) اَ للهُ اللهُ رَبِّي لاَ أُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا
আল্লাহ আল্লাহ রব্বী লা উশরিকু বিহী শাইয়ান
আল্লাহ আল্লাহ আমার প্রতিপালক! আমি তার সাথে কোন কিছুকে শরীক করি না।[128]
[124] . তিরমিযী, মিশকাত হা/২৪৫৪, ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, অনুচ্ছেদ-৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৭৭৭; বায়হাক্বী হা/৩৫৯৮।
[125] . বুখারী হা/৯৩৩, ১০২১; আবুদাঊদ হা/১১৭৪; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৫৯০২, অধ্যায়-২৯, অনুচ্ছেদ-৭ ।
[126] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২৪৫৭, ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, ‘আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা’ অনুচ্ছেদ-৮।
[127] . মুসলিম, মিশকাত হা/২৪৬১।
[128] . আবুদাঊদ হা/১৫২৫ ‘ছালাত’ অধ্যায়-২, ‘ইস্তিগফার’ অনুচ্ছেদ-৩৬১।
আল্লাহ তাঁর বিশ্বাসী বান্দাদের প্রতি উদাত্ত আহবান জানিয়ে বলেন,
وَتُوْبُوْا إِلَى اللهِ جَمِيْعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُوْنَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ- ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর দিকে ফিরে যাও। তাহ’লে তোমরা সফলকাম হবে’ (নূর ২৪/৩১)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, হে মানুষ! তোমরা আল্লাহর দিকে ফিরে যাও। কেননা আমি দৈনিক একশ’ বার তওবা করি।[129] তিনি বলেন, ‘আল্লাহ সবচেয়ে খুশী হন বান্দা তওবা করলে’। [130] তিনি আরও বলেন,
كُلُّ بَنِى آدَمَ خَطَّاءٌ وَخَيْرُ الْخَطَّائِينَ التَّوَّابُونَ ‘
সকল আদম সন্তান ভুলকারী। আর ভুলকারীদের মধ্যে সেরা তারাই, যারা তওবাকারী’।[131]
তওবা শুদ্ধ হবার শর্তাবলী : আল্লাহ ও বান্দার মধ্যকার বিষয় হ’লে তওবা শুদ্ধ হওয়ার শর্ত হ’ল তিনটি।
(১) ঐ পাপ থেকে বিরত থাকবে
(২) কৃত অপরাধের জন্য অনুতপ্ত হবে
(৩) ঐ পাপ পুনরায় না করার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হবে। আর যদি পাপটি বান্দার সাথে সম্পৃক্ত হয়, তাহ’লে তাকে ৪র্থ শর্ত হিসাবে বান্দার নিকটে ক্ষমা চাইতে হবে। কোন হক বা কিছু পাওনা থাকলে তাকে তা বুঝে দিতে হবে। নইলে তার তওবা শুদ্ধ হবে না’।[132]
তওবার দো‘আ :
(১) أَسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِيْ لآ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّوْمُ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ
আস্তাগফিরুল্লা-হাল্লাযী লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল ক্বাইয়ূমু ওয়া আতূবু ইলাইহে’
আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি। যিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও বিশ্বচরাচরের ধারক এবং আমি তাঁর দিকেই ফিরে যাচ্ছি (বা তওবা করছি।[133]
(২) لآ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّيْ كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِيْنَ
‘লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহা-নাকা ইন্নী কুনতু মিনায যোয়া-লিমীন’ (হে আল্লাহ! তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তুমি মহা পবিত্র। নিশ্চয়ই আমি অন্যায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যখন কোন মুসলিম কোন সমস্যায় এই দো‘আর মাধ্যমে তার পালনকর্তাকে আহবান করে, যা ইউনুস মাছের পেটে গিয়ে করেছিলেন, তখন আল্লাহ তার আহবানে সাড়া দেন। [134]
(৩) رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَتُبْ عَلَيَّ إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ
রব্বিগফিরলী ওয়া তুব ‘আলাইয়া, ইন্নাকা আনতাত তাউওয়া-বুর রহীম’
(হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা কর ও আমার তওবা কবুল কর। নিশ্চয়ই তুমি তওবা কবুলকারী ও দয়াবান) ১০০ বার।[135]
[131] . তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, দারেমী, মিশকাত হা/২৩৪১, ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, ‘ক্ষমা প্রার্থনা ও তওবা করা’ অনুচ্ছেদ-৪।
[132] . নববী, রিয়াযুছ ছালেহীন ‘তওবা’ অনুচ্ছেদ।
[133] . তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/২৩৫৩, ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, অনুচ্ছেদ-৪; ছহীহাহ হা/২৭২৭।
[134] . আম্বিয়া ২১/৮৭; আহমাদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/২২৯২, ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, ‘আল্লাহর নাম সমূহ’ অনুচ্ছেদ-২।
[135] . আবুদাঊদ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/২৩৫২, ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, অনুচ্ছেদ-৪।
নবীজির (সা.) মোট কতজন সন্তান-সন্ততি ছিল?
ইবনে কাসীর (রহ.) বলেন, এ-বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই যে, শুধু ইবরাহিম (রা.) ছাড়া রাসুল (সা.)-এর সব সন্তান খাদিজা (রা.)-এর গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ। ইবরাহিম (রা.)-এর জন্ম মারিয়া বিনতে শামউন কিবতিয়াহ (রা.)-এর গর্ভ থেকে। (যাদুল মায়াদ, খন্ড- ১, পৃষ্ঠা ৮১) ইবনুল কাইয়িম (রহ.) বলেছেন, নবীজির প্রথম সন্তান কাসিম। তারপর পর্যায়ক্রমে যয়নব, রুকাইয়াহ, উম্মে কুলসুম, ফাতেমা। এরপর জন্ম নিয়েছেন আবদুল্লাহ; অবশ্য তার জন্মকাল নিয়ে মতবিরোধ আছে। এরপর ইবরাহিম (রা.) তিনি মদিনায় জন্ম গ্রহণ করেন। (আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া, খন্ড- ৫, পৃষ্ঠা ৩০৬-৭) প্রত্যেকের পরিচয় সংক্ষেপে তুলে ধরা প্রয়োজন বলেই মনে করেছি আমরা।
কাসিম : তিনি নবীজির প্রথম সন্তান। নবুয়তের পূর্বে তার জন্ম হয়েছে। তার কারণে নবীজির উপনাম হয়েছে (আবুল কাসিম)। তিনি কতদিন বেঁচে ছিলেন, তা নিয়ে মতপার্থক্য আছে; অনেকে বলেন, ১৭ মাস। নবীজি (সা.)-এর সন্তানদের মধ্যে তিনিই প্রথম মারা যান।
আব্দুল্লাহ : বলা হয়, তিনি মক্কায় বাল্যকালেই মারা গেছেন। তবে তার জন্ম কি নবুয়তের পরে না পূর্বে, এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কয়েকজন নবুয়তের পরে হওয়ার মতকে সহীহ বলেছেন। তার উপাধি ছিলো তাইয়িব ও তাহির (উত্তম ও পবিত্র)। তবে কারও মতে তাইয়িব ও তাহির হলো শেষ দুই সন্তানের উপাধি। ইবনুল কাইয়িম (রহ.) বলেছেন, না, দুটিই আবদুল্লাহ রা.-এর উপাধি। (যাদুল মায়াদ, খন্ড- ১, পৃষ্ঠা ১০৩)
যয়নব : তিনি রাসুল (সা.)-এর বড় মেয়ে। ইবনে ইসহাক (রহ.) বলেছেন, তিনি নবীজির ত্রিশ বছর বয়সকালে জন্মগ্রহণ করেছেন। নবীজি (সা.) তাকে খাদিজা (রা.)-এর ভাগ্নে আবুল আস ইবনে রবী’র সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলেন। এই বিয়েও হয় খাদিজা (রা.)-এর আগ্রহে। কারণ আবুল আসকে তিনি আপন সন্তানের মতো দেখতেন। বাণিজ্যে, বিত্তে ও বিশ্বাসে আবুল আস ছিলেন মক্কার একজন গণ্যমান্য ব্যক্তি। নবীজি (সা.)-এর নবুয়তের সম্মানে ভূষিত হলে খাদিজা (রা.) ও তার সকল কন্যা ইসলাম তার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করেন; কিন্তু আবুল আস শিরকের গলিতেই থেকে যান। নবীজি (সা.) তার অন্য দুই মেয়ে রুকাইয়া (রা.) ও উম্মে কুলসুমকে (রা.) আবু লাহাবের দুই ছেলে উতবাহ ও উতাইবার সঙ্গে বিবাহ দিয়েছিলেন। কিন্তু কুরাইশের সামনে আল্লাহর বিধান পরিষ্কার হয়ে গেলে তারা বললো, তোমরা মুহাম্মদের সম্পৃক্ততা থেকে মুক্ত হয়ে যাও। তার মেয়েদের তার কাছে ফিরিয়ে দাও, তাদের নিয়ে তাকে ব্যস্ত থাকতে দাও। আবু লাহাবের ছেলেরা তাদের আহ্বানে সাড়া দেয় এবং মিলনের পূর্বেই তারা স্ত্রীদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বিনিময়ে উতবার সাথে এরপর আবান ইবনে সাঈদ ইবনে আস-এর কন্যাকে বিয়ে দেওয়া হয়। আর এই বিচ্ছেদের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা নবীজির মেয়েকে উতবার হাত থেকে নিষ্কৃতি দিয়ে সম্মানিত করেন। তারা আবুল আসের কাছেও আসে এবং তাকেও বলে, তোমার স্ত্রীকে ছেড়ে দাও, পরিবর্তে তুমি কুরাইশের যে-মেয়েকে চাও, বিয়ের ব্যবস্থা করবো। আবুল আস বললেন, আল্লাহর কসম, আমি স্ত্রীকে ছাড়তে পারবো না এবং আমার স্ত্রীর পরিবর্তে কুরাইশের অন্য কোনো মেয়েকেও আমি চাই না। নবীজি (সা.) তার প্রশংসা করতেন।
নবীজি (সা.) যয়নবকে (রা.) তার কাছে ফিরিয়ে দেন প্রথম বিয়ের ভিত্তিতেই এবং নতুন কিছুই আরোপ করেন নি। (ইবনে হিশাম, খন্ড- ২, পৃষ্ঠা ৬৫১-৬৫৯) এভাবে এই সম্মানিত পরিবারটি আবার মিলিত হলো, যদিও বেশি দিন স্থায়ী হয় নি। দুই বছর পর অষ্টম হিজরিতে যয়নব রা. ইন্তেকাল করেন। তার গর্ভে দুটি সন্তান জন্মগ্রহণ করে আলী ও উমামা (রা.)।
রুকাইয়া : রুকাইয়া রা. জন্মগ্রহণ করেন, তখন নবীজির বয়স ৩৩ বছর। মক্কায় থাকাকালে ওসমান ইবনে আফফান (রা.) তাকে বিয়ে করেন। আবু লাহাবের ছেলে উতবা মিলনের পূর্বে তাকে ছেড়ে দিলে এই বিয়ে সংঘটিত হয়। তিনি তার স্বামীর সাথে দুইবার হিজরত করেছেন, হাবশায় ও মদিনায়। উজ্জ্বল সৌন্দর্যের অধিকারী ছিলেন তিনি। নবীজি বদর যুদ্ধে যাত্রা করার প্রাক্কালে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার জন্য ওসমানকে (রা.) তিনি মদিনায় রেখে যান। বলে যান, নিশ্চয় যারা বদর যুদ্ধে শহীদ একজনের সমপরিমাণ সাওয়াব ও গনিমত তোমার জন্য থাকবে। (বুখারী, হাদিস ৩৬৯৮) এই অসুস্থতায়ই রুকাইয়া (রা.) মৃত্যুবরণ করেন। যায়েদ ইবনে হারেসা (রা.) এসেছিলেন বদর যুদ্ধে জয়ী হওয়ার সুসংবাদ দিতে। এসে দেখেন, তার কবরের ওপরে মাটি সমান করা হচ্ছে। তার ঘরে এক ছেলে আব্দুল্লাহ জন্ম গ্রহণ করেন। তার নামেই ওসমান (রা.) উপনাম নিয়েছিলেন। তবে আব্দুল্লাহ ছয় বছর বয়সে মারা যান। এরপর ওসমান (রা.) তার ছেলে ‘আমর’-এর নামে উপনামে গ্রহণ করেন।
উম্মে কুলসুম : উম্মে কুলসুম (রা.)-এর নাম (কননা, উম্মে কুলসুম মানে কলুসুমের আম্মা।) জানা যায় না; তিনি এ-উপনামেই পরিচিত ছিলেন। নবীজি তাকে ওসমান (রা.)-এর কাছে বিয়ে দেন তার বড় বোন রুকাইয়া মারা যাওয়ার পরেই। এটা ছিলো তৃতীয় হিজরির ঘটনা। ওসমান (রা.)-এর স্ত্রী হিসেবেই তিনি আজীবন অতিবাহিত করেন। ৯ হিজরিতে আল্লাহ তাকে মৃত্যু দা করেন। নবীজি নিজে তার জানাযা পড়িয়েছেন, তার কবরের পাশে বসেছেন, এ-সময় চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরছিলো। দাফনের আগে তিনি সাহাবীদের জিজ্ঞেস করেন, তোমাদের মধ্যে কি কেউ আছে গত রাতে সহবাস করে নি? আবু তালহা (রা.) বলেন, আমি। নবীজি বলেন, তুমি কবরে নামো। আবু তালহা (রা.) তার কবরে নামেন। (বুখারী, হাদিস ১২৮৫)ওসমানকে (রা.) যিন্নূরাইন (দুই জ্যোতির অধিকারী) উপাধি দেওয়া হয়। কেননা, তিনি নবীজির দুই মেয়েকে বিবাহ করেন। ওসমান (রা.)-এর স্ত্রী থাকাকালে উম্মে কুলসুমের কোনো সন্তান হয় নি।
ফাতিমা : তার জন্মসন সম্পর্কে নিশ্চিত জানা যায় নি। ইবনুল জাওযি (রহ.) বলেন, নবুয়তের ৫ বছর পূর্বে তার জন্ম হয়। ইবনে আব্দুল বার (রহ.) বলেন, তার জন্ম হয়েছে নবীজির ৪১ বছর বয়সে। (৪৯ আল-মাওয়াহিবুল লাদুনিয়্যাহ, খন্ড- ২, পৃষ্ঠা ৬৩)
নবীজি তাকে আলী (রা.)-এর কাছে বিয়ে দেন। এই বিয়ে সংঘটিত হয় হিজরতের দ্বিতীয় বছরে। (বিস্তারিত জানতে দেখুন, লেখক কৃত ‘মিন মায়ীনিস সীরাত’, দ্বিতীয় সংস্করণ, পৃষ্ঠা ২২৫) নবীজির কাছে তার আপনজনদের মধ্যে মধ্যে সবচে’ প্রিয় ছিলেন তিনি। নবীজি তার ক্ষোভে ক্ষুব্ধ হতেন, তার সন্তোষে সন্তুষ্ট হতেন। হাদিসে এসেছে, মিসওয়ার ইবনে মাখরামা বলেন, আলী (রা.) আবু জাহেলের মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ফাতেমা (রা.) তা শুনে ফেলেন। তারপর নবীজির কাছে এসে বললেন, আপনার সম্প্রদায় মনে করে, আপনার মেয়েদের কিছু হলেও আপনি ক্ষুব্ধ হন না। এ-দিকে আলী আবু জাহেলের মেয়েকে বিবাহ করতে যাচ্ছে। নবীজি (সা.) এ-কথা শোনামাত্রই দাঁড়িয়ে যান। বর্ণনাকারী বলেন, আমি তার (ফাতিমা) উপস্থিতিতে নবীজিকে বলতে শুনেছি, আমি আবুল আসের কাছে এক মেয়ে বিয়ে দিয়েছি। সে আমাকে কথা দিয়েছে এবং কথা রেখেছে। আর ফাতিমা আমার কলিজার টুকরা। আমি তার কষ্ট অপছন্দ করি। আল্লাহর কসম, আল্লাহর নবীর মেয়ে এবং আল্লাহর শত্রুর মেয়ে এক ব্যক্তির কাছে একত্র হতে পারে না। এরপর আলী (রা.) তার প্রস্তাব বাতিল করেন। অন্য বর্ণনায় আছে, হিশাম ইবনে মুগীরা তার মেয়েকে আলী ইবনে আবু তালিবের কাছে বিয়ে দেবার অনুমতি চেয়েছেন। কিন্তু নবীজি বলে দেন, অনুমতি দেবো না, অনুমতি দেবো না, অনুমতি দেবো না। যদি আবু তালিবের ছেলে চায়, তাহলে আমার মেয়েকে তালাক দিয়ে তার মেয়েকে বিয়ে করুক। কারণ, ফাতেমা আমার কলিজার টুকরা। তার সংশয় আমাকে সংশয়ে ফেলে। তার কষ্ট আমাকে কষ্ট দেয়। (বুখারী, হাদিস ৩৭২৯)
ফাতেমা (রা.) হলেন এই উম্মতের নারীদের সর্দার। ফাতিমা (রা.) ইন্তেকাল করেন নবীজির মৃত্যুর ছয় মাস পরেই। তিনি জননী ছিলেন তিনটি ছেলে সন্তানের হাসান, হুসাইন ও মুহসিনে। মুহসিন ছোট থাকতেই মারা যান। এবং দুই মেয়ে সন্তানের উম্মে কুলসুম ও যয়নব। নবীজির জন্য ফাতেমা ছাড়া আর কোনো উত্তরসূরি ছিলো না। তাই তার সম্মানিত বংশধারার বিস্তার হয়েছে শুধু দুই দৌহিত্র হাসান ও হুসাইনের (রা.) মাধ্যমে। হাসান (রা.) সম্পর্কিত বংশধারাকে বলা হয় হাসানি এবং হুসাইন (রা.) সম্পর্কিত বংশধারাকে বলে হুসাইনি। ফাতেমা (রা.)-এর মেয়ে উম্মে কুলসুমকে বিয়ে করেছিলেন ওমর (রা.)। তার ঘরে যায়েদ ও রুকাইয়া নামে দুটি সন্তান হয়। তবে তাদের দুজনের কোনো উত্তরসূরি হয় নি। তারপর তার বিবাহ হয় আউন ইবনে জাফরের সাথে। তার মৃত্যুর পরে বিবাহ হয় আউনের ভাই মুহাম্মদ ইবনে জাফরের সাথে। তিনিও মারা গেলে তাদের আরেক ভাই আব্দুল্লাহ ইবনে জাফরের সাথে বিবাহ হয় তার। তার স্ত্রী থাকাকালেই তিনি ইন্তেকাল করেন। দ্বিতীয় ভাই মুহাম্মদ ইবনে জাফরের ঔরসের একটি ছোটো মেয়ে ছাড়া এই তিনজন থেকে তার আর কোনো সন্তান হয় নি তার। সুতরাং সেদিক থেকেও তার কোনো ওয়ারিস নেই। আব্দুল্লাহ ইবনে জাফর পরে তার বোন যয়নব বিনতে ফাতেমাকে বিয়ে করেন। তার কয়েকটি সন্তান হয়। (আল-মাওয়াহিবুল লাদুনিয়্যাহ, খন্ড- ২, পৃষ্ঠা ৬৬)
ইবরাহিম : ইবরাহিম (রা.) জন্ম গ্রহণ করেন অষ্টম হিজরির যিলহজ মাসে। তার মাতা হলেন মারিয়া কিবতিয়া (রা.)। আনাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, কোনো এক রাতে আমার একটি সন্তান ভূমিষ্ঠ হলো। আমার পিতৃপুরুষের নামে তার নাম রেখেছিলাম ইবরাহিম। তারপর নবীজি তাকে উম্মে সাইফ-এর কাছে অর্পণ করলেন; যিনি ছিলেন আবু সাইফ নামক এক কামারের স্ত্রী। (মুসলিম, হাদিস ২৩১৫) নবীজি প্রায়ই মদিনার উঁচু ভূমিতে যেতেন, যেখানে ইবরাহিমের দুধ মায়ের বাড়ি। সেখানে গিয়ে ইবরাহিমকে দেখতেন, তাকে চুমু দিতেন, তারপর ফিরে আসতেন।
আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, নবীজির মতো সন্তানদের প্রতি এতোটা মমতাবান আমি আর কাউকে দেখি নি। তিনি বলেন, মদিনার উঁচু এলাকার এক ঘরে ইবরাহিম দুধপান করতো। নবীজি সেখানে যেতেন, আমরাও তার সাথে থাকতাম। তিনি ঘরে প্রবেশ করতেন এবং সেই ঘর তখন ধোঁয়ায় ছেয়ে থাকতো। কারণ তার দুধপিতা ছিলেন লোহার কর্মকার। তিনি ইবরাহিমকে কোলে নিতেন, চুমু দিতেন, তারপর ফিরে আসতেন। (মুসলিম, হাদিস ২৩১৬) অন্য বর্ণনায় আছে, তাকে চুমু দিতেন এবং তার ঘ্রাণ নিতেন। (বুখারী, হাদিস ১৩০৩)
ইবরাহিমের জীবনসীমা দীর্ঘ হয় নি, মারা গেছেন দুধপানের বয়সেই। নবীজি বলেছেন, ইবরাহিম আমার সন্তান, সে স্তন্যপানের সময়েই মারা গেছে। তার দুইজন দুধমা আছেন, যারা জান্নাতে তার দুধপানের মেয়াদ পূর্ণ করবে। (মুসলিম, হাদিস ২৩১৬) ইবরাহিম (রা.)-এর শেষ মুহূর্তগুলোর প্রকৃতি সহীহ বুখারীতে স্পষ্ট বিবৃত হয়েছে। আনাস (রা.) বলেন, আমরা ইবরাহিমকে দেখতে গেলাম। এর খানিক পরেই সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো। নবীজির দু’চোখ গড়িয়ে পানি পড়তে লাগলো। তা দেখে আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) বললেন, আল্লাহর রাসুল, আপনি কাঁদছেন? তিনি বলেন, হে আউফের ছেলে, এটাই তো দয়া। তারপর বললেন, চোখ অশ্রু ঝরায়, হৃদয় বিষণ্ন হয়। আমার প্রতিপালক যে কথায় সন্তুষ্ট, তা-ই আমরা বলি। ইবরাহিম, তোমার বিচ্ছেদে আমরা ব্যথিত। (বুখারী, হাদিস ১৩০৩) তার মৃত্যুর দিন সূর্যে গ্রহণ লেগেছিলো। লোকজন বলাবলি করলো, ইবরাহিমের মৃত্যুতে সূর্যগ্রহণ হয়েছে। নবীজি বললেন, চন্দ্রে বা সূর্যে কারো মৃত্যুর কারণে গ্রহণ লাগে না। কারো বেঁচে থাকার কারণেও না। তোমরা গ্রহণ দেখলে নামাজ পড়ো, আর দোয়া করো। (মুসলিম, হাদিস ৯১৫)
মূল— সালেহ আহমদ শামী। ভাষান্তর— মনযূরুল হক। সূত্র— আকিক পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত মুহাম্মদ (সা.) ব্যক্তি ও নবী নামক গ্রন্থ থেকে সংগৃহীত।
মৃত ভাইয়ের সম্পত্তিতে আপনার অধিকার কতটুকু?
- প্রথমত, যার ভাই বিয়ে করেছে কিন্তু সন্তান হয়নি এমতাবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন, তাহলে তার ভাই বোনরা উক্ত ভাই থেকে উত্তরাধিকার হিসেবে সম্পদ পাবে।
- দ্বিতীয়ত, যার ভাই বিয়ে না করেই অবিবাহিত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন, তাহলেও তার ভাই বোনরা উক্ত ভাই থেকে উত্তরাধিকার হিসেবে সম্পদ পাবে।
- তৃতীয়ত, যার ভাই বিয়ে করেছে কিন্তু সন্তান হয়নি এমতাবস্থায় তিনি এবং তার স্ত্রী মৃত্যুবরণ করেছেন, তাহলে তার ভাই বোনরা উক্ত ভাই থেকে উত্তরাধিকার হিসেবে সম্পদ পাবে।
- চতুর্থত, যার ভাই অবিবাহিত বা বিয়ে করেছে কিন্তু সন্তান হয়নি এমতাবস্থায় তিনি এবং তার স্ত্রী মৃত্যুবরণ করেছেন বা করেননি এবং তার কোন ভাই জীবিত নেই শুধু বোন রয়েছে, তাহলে তার বোন বা বোনরা উক্ত ভাই থেকে উত্তরাধিকার হিসেবে সম্পদ পাবে।
- পঞ্চমত, মৃত ভাইয়ের এক ভাই জীবিত আরেক ভাই মৃত তখন কেউ পাবে কেউ পাবে না।
ষষ্ঠত, মৃত ভাইয়ের কন্যা সন্তান আছে কিন্তু পুত্র সন্তান নেই, তখন আপনি যেভাবে সম্পত্তি পেতে পারেন।
যাই হোক, কোন পরিস্থিতিতে মৃত ভাইয়ের সম্পত্তি পাবেন সেটা তো জানা গেল, এখন দেখবো কোন শর্তে কতটুকু পাওয়া যাবে, তা বিস্তারিত দেখা যাক।
যদি আপনার ভাই বিয়ে করেছে কিন্তু সন্তান হয়নি এমতাবস্থায় আপনার ভাই মৃত্যুবরণ করেছে, তাহলে আপনি আপনার মৃত ভাইয়ের উত্তরাধিকার হিসেবে সম্পত্তি পাবেন। যেহেতু সন্তান নেই, আপনার ভাইয়ের স্ত্রী ভাইয়ের সম্পত্তি থেকে চার ভাগের এক ভাগ (১/৪ অংশ)। বাকী চার ভাগের তিন ভাগ (৩/৪ অংশ) অন্যান্য ওয়ারিশদের মাঝে বণ্টন করা হবে। এখন কথা হচ্ছে, যদি মৃত ভাইয়ের বাবা, অর্থাৎ আপনাদের বাবা মা জীবিত থাকে তাহলে তারাও তাদের হিস্যা অনুসারে সম্পত্তি পাবে। পিতা মাতা তাদের মৃত সন্তানের সম্পত্তি থেকে কি হারে সম্পত্তি পাবে, তা অন্য অণুচ্ছেদে রয়েছে, সেটা চেক করলে দেখতে পাবেন। এখন কথা হল, স্ত্রী, মাতা পিতাকে (যদি থাকে) দেওয়ার পর বাকী সম্পত্তিতে আপনি ভাই বাঁ আপনারা যতজন ভাই থাকবেন, তারা প্রত্যেকে সমান ভাবে অংশ পাবেন। আর আপনি একজন হলে অবশিষ্ট সম্পত্তি পুরোটাই আপনি পাবেন। এখানে বলে রাখা ভালো, যদি মৃত ভাইয়ের ভাই এবং বোন উভয়ই থাকে, তাহলে সম্পত্তি ছেলে মেয়ের মাঝে যেভাবে বণ্টন হয়, অর্থাৎ ছেলে মেয়ের দ্বিগুণ বা মেয়ে ছেলের অর্ধেক, এই অনুপাতে বণ্টন হবে। অর্থাৎ, মৃত ভাইয়ের ভাই এবং বোন উভয়ই থাকলে জীবিত ভাই: জীবিত বোন=২:১.
এবার আসা যাক, যদি আপনার ভাই বিয়ে না করেই অবিবাহিত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, তাহলে আপনার মৃত ভাইয়ের সম্পত্তি কীভাবে বণ্টন হবে?
উত্তর হচ্ছে, এখানে যেহেতু আপনার ভাই অবিবাহিত, তাহলে স্ত্রীর অংশটি বণ্টনের প্রয়োজন পড়ছে না। তখন সরাসরি বাবা মা আর ভাই বোন। বাবা মাকে দেওয়ার পর ভাই বোনের মাঝে ২:১ অনুপাতে সম্পত্তি বণ্টন হবে।
তারপর, যার ভাই বিয়ে করেছে কিন্তু সন্তান হয়নি এমতাবস্থায় তিনি এবং তার স্ত্রী মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের অবস্থা হবে পূর্বের শর্ত তথা প্যারা অনুসারে। অর্থাৎ, স্ত্রীর অংশটি বণ্টনের প্রয়োজন পড়ছে না। তখন সরাসরি বাবা মা আর ভাই বোন। বাবা মাকে দেওয়ার পর ভাই বোনের মাঝে ২:১ অনুপাতে সম্পত্তি বণ্টন হবে।
এবার আসি, যার ভাই অবিবাহিত বা বিয়ে করেছে কিন্তু সন্তান হয়নি এমতাবস্থায় তিনি এবং তার স্ত্রী মৃত্যুবরণ করেছেন বা করেননি এবং তার কোন ভাই জীবিত নেই শুধু বোন রয়েছে, তাহলে তার বোন বা বোনরা উক্ত ভাই থেকে উত্তরাধিকার হিসেবে সম্পদ পাবে। সেই ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, মৃত ভাইয়ের যদি কোন জীবিত ভাই না থাকে তাহলে বোন যদি একজন হয় তাহলে মোট সম্পত্তির অর্ধেক পাবে আর যদি একাধিক বোন থাকে তাহলে মোট সম্পত্তির তিন ভাগের দুই ভাগ (২/৩ অংশ) পাবেন। একাধিক বোনের ক্ষেত্রে উক্ত ২/৩ অংশ সমান ভাবে বণ্টন করা হবে।
এতটুকু যারা বুঝতে পেরেছেন তারা প্রশ্ন করতে পারেন, আপনার মৃত ভাইয়ের একজন জীবিত ভাই অর্থাৎ আপনি রয়েছেন, একজন মৃত ভাই ছিল, সাথে দুইজন বোন রয়েছে, তাহলে তার সম্পত্তি কীভাবে বণ্টন হবে?– এই জায়গায় উত্তরাধিকার আইনের একটা থিউরি হচ্ছে যে, যার সম্পত্তি বণ্টন করা হবে তিনি যে মুহূর্তে মারা যাবেন ঠিক তখন তার যতজন উত্তরাধিকার জীবিত রয়েছেন, তাদের মাঝেই কেবল সম্পত্তি বণ্টন করা হবে। কোন মৃত উত্তরাধিকারের মাঝে সম্পত্তি বণ্টন হয় না। (লাওয়ারিশ প্রথা বাতিল কেবল তার ব্যতিক্রম।) তাই, আপনার মৃত ভাইয়ের সম্পত্তি বণ্টন করার সময় আপনার যে ভাই বা বোন মৃত, তিনি তথা তার কোন ওয়ারিশ সম্পত্তি পাবেন না। তবে হ্যাঁ, যদি আপনার মৃত ভাইয়ের ওয়ারিশ হিসেবে আপনারা কোন ভাইই জীবিত না থাকেন, তাহলে আপনাদের ছেলেরা উত্তরাধিকার হিসেবে সম্পত্তি পাবে। কিন্তু, উত্তরাধিকার হিসেবে এক ভাই জীবিত আছেন, আবার আরেক ভাই মারা গেছে ছেলে সন্তান জীবিত রেখে, সেক্ষেত্রে জীবিত ভাই সম্পত্তি পাবে, ভাইয়ের ছেলে সম্পত্তি পাবে না। কেননা, একই সাথে দুই ডিগ্রীতে সম্পত্তি বণ্টন হয় না। ভাই জীবিত থাকলে ভাইয়ের ছেলে বঞ্চিত হবে আর ভাই না থাকলে তখনি কেবল ভাইয়ের ছেলে ওয়ারিশ হবে। আরও সহজ ভাবে বললে, চাচা এবং ভাতিজা একই সাথে উত্তরাধিকার হিসেবে সম্পত্তি পেতে পারে না। তবে, ফুফু এবং ভাতিজা একই সাথে উত্তরাধিকার হিসেবে সম্পত্তি পেতে পারে।
আরও একটি কন্ডিশন আছে, যদি মৃত ভাইয়ের কোন পুত্র সন্তান না থাকে, তাহলেও জীবিত ভাই বা ভাইয়ের পুত্র উত্তরাধিকার হিসেবে সম্পত্তি পাবেন। উপরে আমরা আলোচনা করেছি সন্তান না থাকা নিয়ে, এখানে কিন্তু পুত্র সন্তান নিয়ে কথা হচ্ছে। আপনার মৃত ভাইয়ের পুত্র সন্তান নেই কিন্তু কন্যা সন্তান রয়েছে। কন্যা একজন হলে মোট সম্পত্তির অর্ধেক পাবে আর যদি একাধিক কন্যা হয়ে তাহলে মোট সম্পত্তির তিন ভাগের দুই ভাগ (২/৩ অংশ) পাবেন। একাধিক কন্যার ক্ষেত্রে উক্ত ২/৩ অংশ সমান ভাবে বণ্টন করা হবে। স্ত্রী এবং কন্যা উভয়কে দেওয়ার পরও কিছু সম্পত্তি অবশিষ্ট থেকে যাবে যা মৃত ব্যক্তির জীবিত ভাই থাকলে ভাই পাবে আর যদি জীবিত ভাই না থাকে তবে মৃত ভাইয়ের পুত্র সন্তান থাকলে সে পাবে। কতটুকু পাবে তা হিস্যা হিসেবে উল্লেখ্য নয়, আসাবা হিসেবে অর্থাৎ অবশিষ্ট যা থাকবে তাই পাবে। এই হল, আপনার মৃত ভাইয়ের সম্পত্তি থেকে আপনি যেভাবে সম্পত্তি পেতে পারেন এবং কোন কোন পরিস্থিতিতে।
ধন্যবাদ।
মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে কে কতটুকু সম্পত্তি পায়
এই সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের সূরা নিসাতে জোর দিয়ে বলা হয়েছে। তাই এই বিষয়ে জানা উচিত। এতে কোন মুসলমান পুরুষ বা নারী উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী তাঁর ভাগে কতটুকু সম্পত্তি পাবেন সেই সম্পর্কে জানতে পারবে।
এখানে শুধু আমরা স্বামী-স্ত্রী, পিতা-মাতা ও পুত্র-কন্যার উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী প্রাপ্য অংশ নিয়ে আলোচনা করব।
তবে কোন মুসলমান মারা গেলে তার সম্পত্তি বণ্টনের আগে কিছু আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে হয়। চলুন আগে জেনে নেই কী সেই সব আনুষ্ঠানিকতা।
১. মৃত ব্যক্তির পর্যাপ্ত সম্পত্তি থাকলে সেখান থেকে তার দাফন কাফনের যাবতীয় খরচ মেটাতে হবে।
২. তিনি যদি জীবিত থাকা অবস্থায় কোন ধার-দেনা করে থাকেন তবে তাও রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে পরিশোধ করে দিতে হবে।
৩. তাঁর স্ত্রী বা স্ত্রীদের দেনমোহর পরিশোধিত না হয়ে থাকলে বা আংশিক অপরিশোধিত থাকলে তা পরিশোধ করে দিতে হবে। মোট কথা স্ত্রীর সম্পূর্ণ দেনমোহর স্বামী মৃত অথবা জীবিত যাই থাকুক না কেন তা স্বামীর সম্পত্তি থেকে আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণ পরিশোধ করে দিতে হবে।
৪. মৃত ব্যক্তি কোন দান কিংবা উইল করে গেলে তা প্রাপককে দিয়ে দিতে হবে।
উপরের সব কাজ সম্পন্ন করার পরে মৃত ব্যক্তির অবশিষ্ট সম্পত্তি ফারায়েজ আইন অনুযায়ী তাঁর উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টন করে দিতে হবে।
এবার জেনে নিই কি অনুপাতে বা কীভাবে এই সম্পত্তি বণ্টন হবে।
১. স্বামীর অংশ : স্বামী ২ ভাবে মৃত স্ত্রীর সম্পত্তির ভাগ পেয়ে থাকে। স্বামী কখনো তাঁর মৃত স্ত্রীর সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবে না। মৃত স্ত্রীর কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তান থাকলে স্বামী স্ত্রীর সম্পত্তির ১/৪ অংশ পাবে। মৃত স্ত্রীর কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তান কেউই না থাকলে স্বামী স্ত্রীর সম্পত্তির ১/২ অংশ পাবে।
২. স্ত্রীর অংশ : স্ত্রীও ২ ভাবে তাঁর মৃত স্বামীর সম্পত্তি পেয়ে থাকে। বিধবা স্ত্রী কোন ভাবে তাঁর স্বামীর সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবে না। মৃত স্বামীর কোন সন্তান বা তাঁদের পুত্রের সন্তান থাকলে স্ত্রী, স্বামীর সম্পত্তির ১/৮ অংশ পাবে। যদি মৃত স্বামীর কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তান কেউই না থাকলে তবে স্ত্রী, স্বামীর সম্পত্তির ১/৪ অংশ পাবে। স্ত্রী একাধিক হলেও সবাই মিলে ১/৪ অংশ সমান ভাগেই পাবে।
৩. বাবার অংশ : বাবা তাঁর মৃত সন্তানের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী ৩ ভাবে হয়ে থাকে। যদি মৃত সন্তানের পুত্র, পুত্রের পুত্র বা পুত্রের পুত্রের পুত্র এভাবে যতই নিচের হোক না কেন যদি থাকে, তবে মৃত সন্তানের পিতা পাবেন সন্তানের সম্পত্তির ১/৬ অংশ।
যদি মৃত সন্তানের শুধু মাত্র কন্যা সন্তান বা তাঁর পুত্রের কন্যা সন্তান থাকলে তবে পিতা সন্তানের সম্পত্তির ১/৬ অংশ পাবেন।
এই ক্ষেত্রে কন্যাদের ও অন্যান্যদের দেয়ার পর অবশিষ্ট যে সম্পত্তি থাকবে তাও পিতা পাবেন। আর যদি মৃত সন্তানের কোন পুত্র-কন্যা বা পুত্রের সন্তান কিছুই না থাকে তাবে বাকী অংশীদারদের তাঁদের অংশ অনুযায়ী দেয়ার পর অবশিষ্ট যা থাকবে তার সবটুকুই বাবা পাবেন।
তবে মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান ও বাবা কেউ না থাকলে তাঁর সম্পত্তি তাঁর জীবিত ভাই বা ভাইরা পাবে। আবার ভাই না থাকলে তাঁর ভাইয়ের সন্তানরা পাবে।
৪. মায়ের অংশ : মা তাঁর মৃত সন্তানের সম্পত্তি পেয়ে ৩ ভাবে পেয়ে থাকে। - মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তানাদি যত নিম্নেরই হোক থাকলে অথবা যদি মৃত ব্যক্তির আপন, পূর্ণ বৈমাত্রেয় বা বৈপিত্রেয় ভাইবোন থাকলে তবে মাতা ছয় ভাগের এক ভাগ (১/৬) পাবেন।
মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তানাদি যত নিম্নের হোক না থাকলে এবং মৃত ব্যক্তির যদি একজনের বেশি ভাই বা বোন না থাকে তবে মাতা তিন ভাগের এক ভাগ (১/৩) পাবেন। কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তানাদি যত নিম্নের হোক না থাকলে অথবা কমপক্ষে দুইজন ভাইবোন না থাকলে এবং যদি মৃত ব্যক্তির স্বামী বা স্ত্রীর অংশ বাদ দেয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকবে, তার তিন ভাগের এক ভাগ (১/৩) মাতা পাবেন। মৃত ব্যক্তির এক ভাই থাকলেও মাতা ১/৩ অংশ পাবেন।
৫. পুত্র সন্তানের অংশ : মৃত ব্যক্তির ছেলে বা ছেলেরা সকল ক্ষেত্রেই সম্পত্তি পায়। যেক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির ছেলে ও মেয়ে রয়েছে সেই ক্ষেত্রে ছেলে বা ছেলেরা, মেয়ে বা মেয়েদের চেয়ে দ্বিগুন সম্পত্তি পাবে। মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে মাতাপিতা ও স্বামী-স্ত্রী নির্দিষ্ট সম্পত্তি পাওয়ার পর অবশিষ্ট সম্পত্তি ছেলে মেয়ের মধ্যে বন্টন করা হবে। তবে মেয়ে না থাকলে অংশীদারদের অংশ দেয়ার পর অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে বাকী সম্পূর্ণ সম্পত্তি ছেলে বা ছেলেরাই পাবে।
৬. কন্যা সন্তানের অংশ : উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে কন্যারা তিনভাবে মাতাপিতার সম্পত্তি পেতে পারে। একমাত্র কন্যা হলে তিনি রেখে যাওয়া সম্পত্তির দুই ভাগের এক ভাগ বা (১/২) অংশ পাবে। একাধিক মেয়ে হলে সবাই মিলে সমানভাগে তিন ভাগের দুই ভাগ বা (২/৩) অংশ পাবে। যদি পুত্র থাকে তবে পুত্র ও কন্যার সম্পত্তির অনুপাত হবে ২:১ অর্থাৎ এক মেয়ে এক ছেলের অর্ধেক অংশ পাবে। যাহোক কন্যা কখনো মাতাপিতার সম্পত্তি হতে বঞ্চিত হয় না।
পিতা মারা গেলে তিনি জীবিত থাকা অবস্থায় যে সম্পত্তি পেতেন তা তাঁর মৃত্যুর পরও তাঁর উত্তরাধিকারীরা পাবে।
১৯৬১ সালের আগে এই নিয়ম ছিল না। পরে একটি আইন পাস করে এই নিয়ম চালু করা হয়। কারণ এতিমরা যাতে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত না হয় সেই সম্পর্কেও ইসলামে নির্দেশ দেয়া আছে। আবার মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে কোন সন্তানকে ত্যাজ্য বলে ধরা হয় না। ফলে সম্পত্তি থেকে তাকেও বঞ্চিত করা যায় না। তবে কোন ব্যক্তি রেজিস্ট্রিকৃতভাবে সম্পত্তি দান বা হস্তান্তর করে গেলে এবং সন্তানকে বঞ্চিত করার লক্ষ্যে সন্তানের অংশ উল্লেখ না করে গেলে ঐ সন্তান আর সম্পত্তি পাবে না। সৎ ছেলে-মেয়ে, সৎ বাবা বা সৎ মায়ের সম্পত্তি পায় না।
একই ভাবে সৎ বাবা বা সৎ মা, সৎ ছেলে-মেয়ের সম্পত্তি পায় না। কেউ কাউকে হত্যা করলে হত্যাকারী তাঁর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয় না। জীবিত থাকা অবস্থায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ হলে কেউ কারো সম্পত্তি পাবে না। জারজ সন্তান তার মা ও মায়ের আত্নীয়দের থেকে সম্পত্তি সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী পাবে (মুসলিম হানাফী আইন অনুসারে)।
মৃত ব্যক্তির কোন উত্তরাধিকার না থাকলে এবং তা তিনি জীবিতকালে কাউকে না দেয়ার ব্যবস্থা করে গেলে সরকার তার সম্পত্তির ওয়ারিশ হবে। উত্তরাধিকার সম্পর্কে উপরোক্ত সাধারণ কয়েকটি বিষয় মনে রাখলে উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সম্পত্তি বন্টনের জটিলতা দূর হবে।
ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে মহানবী (সা.) যে দোয়া পড়তে বলেছেন
أعوذُ
بعِزَّةِ اللهِ وقُدرتِه من شرِّ ما أَجِدُ وأُحاذِرُ
উচ্চারণ : আউজু বি-ইজ্জাতিল্লহি ওয়া কুদরাতিহি মিন শাররি মা আজিদু ওয়া উহাজিরু।
অর্থ : আল্লাহর নামে— আমি আল্লাহর অসীম সম্মান ও তার বিশাল ক্ষমতার অসিলায় আমার অনুভূত এই ব্যথার ক্ষতি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি
ঋণ থেকে মুক্তি পেতে মহানবী (সা.) যে দোয়া পড়তে বলেছেন
اللَّهُمَّ اكْفِنِي بِحَلاَلِكَ عَنْ حَرَامِكَ،
وَأَغْنِنِي بِفَضْلِكِ عَمَّنْ سِوَاكَ
বাংলাউচ্চারণ :
আল্লা-হুম্মাকফিনী বিহালা-লিকা ‘আন হারা-মিকা ওয়া আগনিনী বিফাদ্বলিকা ‘আম্মান সিওয়া-ক।
অর্থ : হে আল্লাহ! হারামের পরিবর্তে তোমার হালাল রুজি আমার জন্য যথেষ্ট কর। আর তোমাকে ছাড়া আমাকে কারো মুখাপেক্ষী করো না এবং স্বীয় অনুগ্রহ দ্বারা আমাকে স্বচ্ছলতা দান কর।
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়টি উমরা করেছেন এবং কয়টি হজ্ব করেছেন? বিদায় হজ্ব কত সনে হয়েছিল? রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চারটি উমরা করেছেন। প্রত্যেকটি যিলকদ মাসে। প্রথমটি হুদায়বিয়ার উমরা, যা ষষ্ঠ হিজরীতে হয়েছে। কাফেরদের প্রতিরোধের কারণে বাইতুল্লাহ শরীফে এ বছর যাওয়া হয়নি। হুদায়বিয়াতেই ইহরাম ত্যাগ করেছিলেন। দ্বিতীয় উমরা পরবর্তী বছর হয়েছে। তৃতীয় উমরাতুল জি’রানা। হুনাইন থেকে ফেরার পথে জি’রানা থেকে ইহরাম বেঁধে ছিলেন। চতুর্থটি বিদায় হজ্বের সাথে করেছেন। তাহলে সর্বমোট উমরা চারটি হলেও পৃথক সফরে পূর্ণ উমরা হয়েছে মোট দুইটি।
আর হিজরতের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি মাত্র হজ্ব করেছেন। সেটি হল বিদায় হজ্ব। বিদায় হজ্ব দশম হিজরীতে হয়েছে। হিজরতের আগে কয়টি হজ্ব করেছেন এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা বলা যায় না। জামে তিরমিযীর এক বর্ণনায় দুইটির কথা আছে। তবে অন্যান্য দলীল দ্বারা তাবেয়ীন ও মুহাদ্দিসগণ আরো বেশি সংখ্যক হজ্বের কথা উল্লেখ করেছেন। এমনকি ইবনুল আমীর রাহ. বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরতের আগে প্রতি বছরই হজ্ব করতেন। এটাই স্বাভাবিক। এর সঠিক সংখ্যা আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন।
[তথ্যসূত্র : সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ ৮/৪৪৪-৪৪৯; শরহুল মাওয়াহিবিল লাদুন্নিয়াহ ৪/১৪১; আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া ৭/৪০৬; সহীহ বুখারী ১/২৩৮; সহীহ মুসলিম ১/৩৯৪; জামে তিরমিযী ১/১৬৮; সুনানে ইবনে মাজাহ পৃ. ২২০; মাআরিফুস সুনান ৬/২০; ফাতহুল বারী ৩/৭০২; উমদাতুল কারী ১০/১১৩; যাদুল মাআদ ৩/২৫৬; আল কামিল ফিততারীখ ২/৩০৫]হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কোনো দুঃখ-কষ্ট বা চিন্তা, অস্থিরতা তথা হতাশাগ্রস্ত হতেন তখন বলতেন-
يَا حَيُّ يَا قَيُّوْمُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيْثُউচ্চারণ : ইয়া- হাইয়ু ইয়া- ক্বাইয়ূ-মু বিরাহমাতিকা আস্তাগিছ।
অর্থ : ‘হে চিরঞ্জীব! হে চিরস্থায়ী! আপনার রহমতের মাধ্যমে আপনার নিকটে সাহায্য চাই।’ (তিরমিজি, মুসতাদরেকে হাকেম, মিশকাত)
لَا
اِلَهَ اِلَّا اَنْتَ سُبْحَانَكَ اِنِّى كَنْتُ مِنَ الظَّالِمِيْنَ
উচ্চারণ : ‘লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জ্বলিমিন।’
অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই; আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। নিঃসন্দেহে আমি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত।’ (তিরমিজি)
রাসুল (সা.)-এর দাফন বিলম্বিত হয়েছিল কেন?
মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘ভূপৃষ্ঠের সব কিছুই ধ্বংসশীল, একমাত্র আপনার মহিমাময় ও মহানুভব পালনকর্তার সত্তা ছাড়া। (সুরা আর রাহমান : ২৬-২৭) আরো ইরশাদ করেন, ‘প্রত্যেক প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে।’ (আলে ইমরান : ১৮৫) অন্যত্র ইরশাদ করেন, ‘আর প্রত্যেক সম্প্রদায়ের একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ রয়েছে। যখন তাদের মেয়াদ এসে যাবে, তখন তারা না এক মুহূর্ত পিছে যেতে পারবে, আর না এগিয়ে আসতে পারবে।’ (সুরা আল আরাফ : ২৪, সুরা ইউনুস : ৪৯) কাজেই পৃথিবীতে জন্ম গ্রহণকারী সকলেরই মৃত্যু হবে। নবী-রাসুলরা যেহেতু মানুষ ছিলেন, সেহেতু তাঁদের মৃত্যু হওয়া স্বাভাবিক । আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন: ‘যে মৃত্যু হতে তোমরা পলায়ন করছ, তা তোমাদের সঙ্গে মিলিত হবেই।’ (সুরা জুমুআহ, আয়াত: ৮)। আল্লাহহ রাব্বুল আলামিন মানবজাতিকে প্রথমে রুহের জগতে রেখেছিলেন, তারপর দুনিয়ার জগতে পাঠিয়েছেন, এরপর বারজাখ জগতে থাকতে হবে এবং সর্বশেষ আখিরাত বা পরকালীন জগতে যেতে হবে। মৃত্যু হলো পরজগতে যাওয়ার সেতুস্বরূপ।
সাধারণ মানুষের মৃত্যু তাদের অজান্তে হলেও নবী-রাসূলদের তা পূর্বেই অবহিত করা হয়। বুখারি শরিফের হাদিসের বর্ণনামতে , নবী-রাসুলদের এই স্বাধীনতা দেওয়া হয় যে আপনি কি পৃথিবীতে থাকতে চান? না কি চলে যেতে চান। কিন্তু নবী-রাসুলরা চলে যাওয়াকেই প্রাধান্য দিয়েছেন (বুখারি, হাদিস : ৬৫০৯)
বিশুদ্ধ হাদিস ও ঐতিহাসিকদের তথ্যমতে, নবীজি (সা.)-৬৩ বছর বয়সে ১১ হিজরীর রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ সোমবার দ্বিপ্রহরে ইন্তেকাল করেন। আর দাফন হয়েছিল বুধবার এশার সময়। মৃত্যুশয্যায় রাসূল সা. এর হাতে ছিলো মিসওয়াক আর মুখে ছিল নামাজের কথা। আবদুর রহমান ইবনে আবু বকর রাসুল (সা.)-এর কাছে একটি মিছওয়াক হাতে নিয়ে এসেছিলেন, রাসুল (সা.) বারবার মিছওয়াকের দিকে তাকাতে দেখে হজরত আয়েশা বলেন, ‘আপনি কি মিছওয়াক করবেন?’ তখন তিনি মাথা মোবারক নেড়ে সম্মতি জানালে হজরত আয়েশা (রা.) একটি মিছওয়াক নিয়ে মুখে চিবিয়ে নরম করে রাসুল (সা.)-কে দেন। তিনি সেই মিছওয়াক দিয়ে মিছওয়াক করেন। রোগযন্ত্রণা কখনো বৃদ্ধি পাচ্ছিল আবার কখনো হ্রাস পাচ্ছিল। ওফাতের দিন সোমবার তিনি অনেকটা সুস্থ ছিলেন। কিন্তু সময় যত গড়াতে থাকে, তিনি তত ঘন ঘন বেহুঁশ হতে থাকেন। এ অবস্থায় তাঁর পবিত্র জবানে উচ্চারিত হতে থাকে, আল্লাহ যাঁদের প্রতি অনুকম্পা করেছেন, তাঁদের দলভুক্ত করুন, । কখনো বলতে থাকেন, আল্লাহুম্মার রফিকাল আ’লা ‘হে আল্লাহ, আপনি মহান বন্ধু!’ আবার কখনো বলতে থাকেন, এখন আর কেউ নেই, তিনিই মহান বন্ধু। এ কথাটি তিনবার উচ্চারণ করেন। তখন তাঁর পবিত্র আত্মা প্রিয় বন্ধু আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যায়।
রাসূল (সা.)-এর ইন্তেকালের পর সাহাবিরা তাঁর দাফনক্রিয়া সম্পন্ন করতে তিন দিন সময় পার করেছেন। এ কথাটি খুবই প্রচলিত। আসলে বাস্তবতা কি এমনই ছিল?
প্রশ্ন হচ্ছে, আসলে প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দাফন সম্পন্ন হতে কত সময় লেগেছিল? উত্তরে উদাহরণ হিসেবে আমরা বলতে পারি ৩১ জানুয়ারি থেকে ১ মার্চ যেমন তিন মাস হয় না (বরং ত্রিশ দিন বা এক মাস হয়), তেমনি তিন দিনের নাম বললেই তিন দিন (৭২ ঘণ্টা) হয় না। বিশুদ্ধ হাদিস ও ঐতিহাসিকদের তথ্যমতে, নবীজি (সা.)-এর ইন্তেকাল হয়েছিল সোমবার দ্বিপ্রহরে মতান্তরে বিকেলে আর দাফন হয়েছিল বুধবার এশার সময়। তাহলে আরবি হিসাবে (সূর্যাস্ত থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত এক দিন ধরে) সোমবার দিনের ১ ঘণ্টা বা ২ ঘণ্টা, মঙ্গলবার (সোমবার সূর্যাস্তের পর থেকে মঙ্গলবার সূর্যাস্ত পর্যন্ত) ২৪ ঘণ্টা এবং বুধবারের (সূর্যাস্তের পর থেকে এশা পর্যন্ত) ১ ঘণ্টা বা ২ ঘণ্টা (মোট ২৬ বা ২৮ ঘণ্টা)। বাংলা হিসাবে (সূর্যোদয় থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত এক দিন ধরে) সোমবারের (সোমবারের আসর থেকে মঙ্গলবারের সূর্যোদয় পর্যন্ত) ১৩ ঘণ্টা বা ১৪ ঘণ্টা এবং মঙ্গলবারের (সূর্যোদয় থেকে এশা পর্যন্ত) ১৩ ঘণ্টা বা ১৪ ঘণ্টা (সাকল্যে ২৬ থেকে ২৮ ঘণ্টা)। ইংরেজি হিসাবে (মধ্যরাত থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত এক দিন ধরে) সোমবারের (আসর থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত) ৭ ঘণ্টা বা ৮ ঘণ্টা এবং মঙ্গলবারের (রাত ১২টা থেকে এশা পর্যন্ত) ১৯ ঘণ্টা বা ২০ ঘণ্টা (সাকল্যে ২৬ থেকে ২৮ ঘণ্টা)।
ওপরের বিবরণ থেকে দেখা যায়, আরবি হিসাবে তিন দিন (সোমবার, মঙ্গলবার ও বুধবার), বাংলা ও ইংরেজি হিসাবে দুই দিন (সোমবার ও মঙ্গলবার); কিন্তু সময় ২৬ ঘণ্টা থেকে সর্বোচ্চ ২৮ ঘণ্টা মাত্র; যাকে তিন দিন তো দূরের কথা দুই দিনও বলা যাবে না। কারণ, কোনো সংখ্যা অর্ধেকের কম হলে পূর্ণ সংখ্যা বলা যায় না। সাধারণত অর্ধেকের কম হলে তা ধর্তব্যও হয় না। আর এই এক দিন বিলম্ব হওয়ার অনেক যৌক্তিক কারণ রয়েছে, যা প্রামাণ্য সিরাত গ্রন্থসমূহে বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে। প্রিয় নবীজি (সা.) ইন্তেকালের আগে একাধিকবার অজ্ঞান হয়েছিলেন এবং পুনরায় সুস্থ হয়েছিলেন। তাই ১২ রবিউল আউয়াল ইন্তেকাল করলেও তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। দীর্ঘ সময় পর যখন তাঁর ইন্তেকাল নিশ্চিত হয়, তখন মধ্যরাত। সকালবেলায় যখন তাঁর মৃত্যুর খবর সাহাবায়ে কিরাম শুনলেন, তখন অনেকেই তা স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেননি। যেমন হজরত উমর (রা.) নবীজি (সা.)-এর ইন্তেকালের খবর শুনে পাগলপ্রায় হয়ে গেলেন। তিনি তরবারি নিয়ে বের হলেন আর বললেন: ‘যে বলবে হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইন্তেকাল করেছেন, আমি তাকে হত্যা করব।’ এই অবস্থায় হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) সাহাবায়ে কিরামকে মসজিদে নববিতে ডেকে একত্র করে একটি সংক্ষিপ্ত ভাষণ দিলেন। তাতে তিনি বললেন, আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেছেন: ‘কুল্লু নাফছিন যায়িকাতুল মাউত’, অর্থাৎ ‘জীবনমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ১৮৫)। তিনি আরও বলেন, কোরআনে রয়েছে: ‘হজরত মুহাম্মদ (সা.) অবশ্যই একজন রাসুল, তাঁর পূর্বে বহু রাসুল (আ.) গত হয়েছেন। তবে যদি তিনি মৃত্যুবরণ করেন অথবা শহীদ হন, তবে কি তোমরা পেছন দিকে ফিরে যাবে?’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ১৪৪)। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আরও বলেছেন: ‘(হে নবী! সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিশ্চয় আপনি মরণশীল এবং তারাও মরণশীল।’ (সুরা জুমার, আয়াত ৩০)।
হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.)-এর বক্তব্যে সাহাবায়ে কিরাম নিশ্চিত হলেন, হজরত নবী করিম (সা.) ইন্তেকাল করেছেন। এরপর প্রিয় নবীজি (সা.)-কে শেষ দেখা ও তাঁর প্রতি সালাত ও সালাম, দোয়া-কালাম পেশ করতে থাকলেন তাঁরা। একের পর এক সাহাবি আসতে থাকলেন। এই ধারাবাহিকতা চলতে থাকল সন্ধ্যা পর্যন্ত। তারপর নবীজি (সা.)-কে দাফন করা হয়। উল্লেখ্য, প্রচলিত নিয়মে জামাত করে নবীজির জানাজার নামাজ পড়া হয়নি, এর প্রয়োজনও ছিল না। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)।রাসূল সা.কে গোসল দিয়েছেন হজরত আব্বাস (রা.), হজরত আলী (রা.), হজরত আব্বাস (রা.)-এর দুই ছেলে ফজল ও সাকাম, রাসুল (সা.)-এর আজাদকৃত ক্রীতদাস সাকরাম, ওসামা বিন যায়েদ ও আউস ইবনে খাওলা (রা.)। গোসলের পর বিশ্বনবী (সা.)-কে তিনটি ইয়েমেনি সাদা কাপড়ে কাফন পরানো হয়, অতঃপর ১০ জন ১০ জন করে সাহাবায়ে কেরাম হুজরায় প্রবেশ করে পর্যায়ক্রমে জানাজার নামাজ আদায় করেন। নামাজে কেউ ইমাম ছিলেন না। সর্বপ্রথম বনু হাশিম গোত্রের সাহাবিরা, তারপর মুহাজির, অতঃপর আনসার, তারপর অন্যান্য পুরুষ সাহাবি, অতঃপর মহিলা ও সর্বশেষে শিশুরা জানাজার নামাজ পড়ে। রাসূল সা. এর দাফন বিলম্বিত হওয়ার মৌলিক কারণ তিনটি বলা যায়, ১. রাসূল সা. এর ওফাতের ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছতে বিলম্বিত হওয়া।২.দাফনের স্থান নির্ধারণ। ৩. খলিফা নির্বাচনে ঐক্যমত হওয়ায় দেরী হওয়া
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَ أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَ أَعُوذُ بِكَ مِنَ ضَلَعِ الدَّيْنِ، وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়া আউযু বিকা মিনাল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া আউযু বিকা মিন দ্বালা’য়িদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজাল।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)
অর্থ : হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে আপনার আশ্রয় চাই, অপারগতা ও অলসতা থেকে আপনার আশ্রয় চাই, কৃপনতা ও ভীরুতা থেকে আপনার আশ্রয় চাই আর ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকেও আপনার আশ্রয় চাই।
কারো থেকে ভয় থাকলে পড়বে :
اَللَّهُمَّ إِنَّا نَجْعَلُكَ فِيْ نُحُوْرِهِمْ وَنَعُوْذُ بِكَ مِنْ شُرُوْرِهِمْ-
(ক) আল্লা-হুম্মা ইন্না নাজ‘আলুকা ফী নুহূরিহিম ওয়া না‘ঊযুবিকা মিন শুরূরিহিম’ (হে আল্লাহ! আমরা আপনাকে ওদের মুকাবিলায় পেশ করছি এবং ওদের অনিষ্ট সমূহ হ’তে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি)। [102] (খ) অথবা বলবে,
اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا عَمِلْتُ وَمِنْ شَرِّ مَا لَمْ أَعْمَلْ
আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন শাররি মা ‘আমিলতু ওয়া শাররি মা লাম আ‘মাল’
(হে আল্লাহ! আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি, ঐসব কাজের অনিষ্টকারিতা হ’তে, যা আমি করেছি এবং যা আমি করিনি)।[103]
[102] . আহমাদ, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/২৪৪১, ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, অনুচ্ছেদ-৭।
কবর যিয়ারতের সুন্নত সম্মত দোয়া :
اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ وَ الْمُسْلِمِيْنَ وَ اِنَّا اِنْ شَاءَ اللهُ بِكُمْ لَلَاحِقُوْنَ – نَسْأَلُ اللهَ لَنَا وَ لَكُمُ الْعَافِيْة
উচ্চারণ : আসসালামু আলাইকুম আহলাদ দিয়ারি মিনাল মুমিনিনা ওয়াল মুসলিমিনা ওয়া ইন্না ইংশাআল্লাহু বিকুম লালাহিকুনা – নাসআলুল্লাহা লানা ও লাকুমুল আফিয়াহ।’
অর্থ : হে কবরবাসী মুমিন মুসলমান! তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক; আর যখন আল্লাহ চাইবেন, আমরাও অবশ্যই তোমাদের সঙ্গে মিলিত হবো; আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য এবং তোমাদের জন্য শান্তি প্রার্থনা করছি।
অন্য হাদিসে এসেছে-
اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ المُّؤْمِنِيْن اَنْتُمُ السَّابِقُوْنَ وَ نَحْنُ لَلَاحِقُوْنَ بِكُمْ اِنْ شَاءَ اللهُ – نَسْأَلُ اللهَ لَنَا وَ لَكُمُ الْعَافِيْة
উচ্চারণ : আসসালামু আলাইকুম দারা ক্বাউমিম মুমিনিনা আংতুমুস সাবিকুনা ওয়া নাহনু লালাহিকুনা বিকুম ইংশাআল্লাহ – নাসআলুল্লাহা লানা ও লাকুমুল আফিয়াহ।’
অর্থ : হে মুমিন কবরবাসী! তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক; তোমরা এখানে (কবরে) আগে এসেছ; আর যখন আল্লাহ চাইবেন, আমরাও অবশ্যই তোমাদের সঙ্গে মিলিত হবো; আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য এবং তোমাদের জন্য শান্তি প্রার্থনা করছি।
সুনানে আন নাসাঈ হাদিস নং ২০৩৯
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আরো বর্ণিত আছে, তিনি বলতেন,
ما من رجل يمر بقبر أخيه كان يعرفه في الدنيا فيسلم عليه إلا رد الله عليه ژوحه كى يرد عليه السلام
যে কোন ব্যক্তি পরিচিত কোনো বান্দার কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে এবং সালাম দেয় তখন আল্লাহ তাআলা তার প্রতি উত্তর দেওয়ার জন্য কবরস্থ ব্যক্তির রুহ বা আত্মা তার কাছে ফেরত দেন।
হাদীসটি ইবনে আব্দুল বার বর্ণনা করেছেন। শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ সহ অনেকেই সহীহ বলেছেন, আর শাইখ আলবানী হাদীসটিকে দুর্বল বলেছেন।
আর মহান আল্লাহ মৃত মুমিন ব্যক্তির জন্য দোয়া কারী জীবিত ব্যক্তিকে সাওয়াব দেন; যেমনটি যখন সে জানাযার সালাত পড়লে সাওয়াবপ্রাপ্ত হয়; একারণেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ কাজটি মুনাফিকের জন্য করতে বারণ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,
আর তাদের মধ্যে কারো মৃত্যু হলে আপনি কখনো তার জন্য জানাযার সালাত পড়বেন না এবং তার কবরের পাশে দাঁড়াবেন না।
সূরা আত তাওবা আয়াত নং ৮৪
সুতরাং শরী’আত সমর্থিত জিয়ারতে মৃত ব্যক্তির নিকট জীবিত ব্যক্তির কোনো প্রয়োজন, কোনো চাওয়া, কোনাে ওসীলা প্রদান ইত্যাদি কিছুই নেই; বরং সেখানে জীবিত ব্যক্তির দ্বারা মৃত ব্যক্তির উপকৃত হওয়ার বিষয়টি রয়েছে, যা তার জন্য জানাযার সালাত আদায় করার মতােই; আর আল্লাহ তা’আলা এ ব্যক্তির দো’আ ও ইহসানের কারণে তার প্রতি রহম করেন এবং এ কাজের বিনিময়ে ব্যক্তিকে সওয়াব প্রদান করেন; যেমনটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন,
إذا مات الإنسان انقطع عمله إلا من ثلاثة إلا من صدقة جارية أو علم ينتفع به أو ولد صالح يدعو له
যখন কোনো ব্যক্তি মারা যায়, তখন তার তিনটি আমল ব্যতীত সব বন্ধ হয়ে যায়, সদকা জারিয়া, উপকারী ইলম অথবা নেক সন্তান যা তার জন্য দো’আ করবে।
সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৬৩১; মুসনাদে আহমাদ (২/৩৭২)।
(ক) ঝড়ের সময় দো‘আ :
اَللَّهُمَّ إِنِّىْ أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا وَخَيْرَ مَا فِيْهَا وَخَيْرَ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ وَأَعُوْذُبِكَ مِنْ شَرِّهَا وَشَرِّ مَا فِيْهَا وَمِنْ شَرِّ مَا اُرْسِلَتْ بِهِ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা খায়রাহা ওয়া খায়রা মা ফীহা ওয়া খায়রা মা উরসিলাত বিহী; ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন শার্রিহা ওয়া শাররি মা ফীহা ওয়া মিন শাররি মা উরসিলাত বিহী’।
অনুবাদ : হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকটে এর মঙ্গল, এর মধ্যকার মঙ্গল ও যা নিয়ে ওটি প্রেরিত হয়েছে, তার মঙ্গল সমূহ প্রার্থনা করছি এবং আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি এর অমঙ্গল হ’তে, এর মধ্যকার অমঙ্গল হ’তে এবং যা নিয়ে ওটি প্রেরিত হয়েছে, তার অমঙ্গল সমূহ হ’তে’।[107] অন্য বর্ণনায় এসেছে, اَللَّهُمَّ لَقْحًا لاَ عَقِيْمًا আল্লা-হুম্মা লাক্বহান লা ‘আক্বীমান’ (হে আল্লাহ! মঙ্গলপূর্ণ কর, মঙ্গলশূন্য নয়)। [108]
(খ) বজ্রের আওয়ায শুনে দো‘আ :
سُبْحَانَ الَّذِىْ يُسَبِّحُ الرَّعْدُ بِحَمْدِهِ وَالْمَلآئِكَةُ مِنْ خِيْفَتِهِ، ( الرعد 13)
উচ্চারণ : সুবহা-নাল্লাযী ইয়ুসাবিবহুর রা‘দু বিহামদিহী ওয়াল মালা-ইকাতু মিন খীফাতিহি’।
অনুবাদ : মহা পবিত্র সেই সত্তা যাঁর গুণগান করে বজ্র ও ফেরেশতামন্ডলী সভয়ে’।[109]
(গ) ঝড়-বৃষ্টির ঘনঘটায় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সূরা ইখলাছ, ফালাক্ব ও নাস সকালে ও সন্ধ্যায় তিনবার করে পড়তে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, এগুলিই তোমার জন্য যথেষ্ট হবে অন্য সবকিছু থেকে’।[110]
উল্লেখ্য যে, এই সময় আল্লা-হুম্মা লা তাক্বতুলনা বিগাযাবিকা অলা তুহলিকনা বি‘আযাবিকা ওয়া ‘আ-ফিনা ক্বাবলা যালিকা মর্মে বর্ণিত হাদীছটি ‘যঈফ’। [111]
[108] . ছহীহ ইবনু হিববান, সিলসিলা ছহীহাহ হা/২০৫৮; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৬৭০।
[109] . রা‘দ ১৩/১৩; মুওয়াত্ত্বা, মিশকাত হা/১৫২২, ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘ঝড়-ঝঞ্ঝা’ অনুচ্ছেদ-৫৩।
[110] . আবুদাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ, মিশকাত হা/২১৬২-৬৩ ‘কুরআনের ফাযায়েল’ অধ্যায়-৮, পরিচ্ছেদ-২।
[111] . আহমাদ তিরমিযী, মিশকাত হা/১৫২১, ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘ঝড়-ঝঞ্ঝা’ অনুচ্ছেদ-৫৩।
মিথ্যা শপথ করলে যে গুনাহ হয়
শপথ করে মানুষ কথায় জোর তৈরি করে। মূলত মানুষ কথা, কাজ, কৃত ওয়াদা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সুদৃঢ় করার জন্য শপথ করে। আর শপথ ব্যক্তিকে আরও দায়িত্ববান করে তোলে এবং একটা আস্থার জায়গা তৈরি করে। ফলে মিথ্যা শপথ করা বা শপথ করে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা বড় ধরনের পাপ।
মিথ্যা শপথ একটি কবিরা গুনাহ
কাউকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য বা ঠকানোর জন্য কিংবা অন্য কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে শপথ করা নিতান্ত গর্হিত কাজ। এমন কাজ কেউ করে থাকলে আল্লাহ তাআলা তাকে শাস্তি দেবেন। কারণ, মিথ্যা শপথ কবিরা গুনাহ।
আবদুল্লাহ বিন আমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘কবিরা গুনাহগুলো হচ্ছে, আল্লাহ তাআলার সঙ্গে কাউকে শরিক করা, মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া, অবৈধভাবে কাউকে হত্যা করা এবং মিথ্যা শপথ করা।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৬৭৫)
মিথ্যা শপথ করে পণ্য বিক্রিকারীর শাস্তি
মিথ্যা শপথ করে পণ্য বিক্রিকারীর সঙ্গে মহান আল্লাহ কিয়ামতের দিন কথা বলবেন না, তার দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না। তার জন্য আছে কঠিন শাস্তি। আবু জার গিফারি (রা.) থেকে বর্ণিত নবী (সা.) বলেন, ‘তিন ব্যক্তি এমন যে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তাদের সঙ্গে কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেনও না, এমনকি তাদের গুনাহ থেকে পবিত্রও করবেন না। উপরন্তু তাদের জন্য আছে কঠিন শাস্তি। বর্ণনাকারী বলেন, রাসুল (সা.) কথাগুলো তিনবার বলেছেন।
মানুষের নাম বিকৃতি করলে যে গুনাহঃ
বর্তমানে অনেককে দেখা যায়, তারা অন্যের নাম বিকৃত করেন। প্রায়ই কাউকে ব্যঙ্গ বা ট্রল করে মন্তব্য করেন বা কথা বলেন। বিশেষ করে ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক ও লাইকিসহ আরও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যঙ্গ ও ট্রলে সয়লাব। তাছাড়া বন্ধু মহল ও গল্প-গুজবের আসর এবং বিভিন্ন আড্ডায়ও অন্যের নাম বিকৃত করা কিংবা তাকে নিয়ে সমালোচনা করা ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দুঃখজনক হলো- নাম নিয়ে ব্যঙ্গ করার এই প্রবণতা দিন দিন মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। অথচ ইসলামি শরিয়ত মানুষের নাম নিয়ে ব্যঙ্গ করাকে মারাত্মক গুনাহ ও গর্হিত কাজ বলে ঘোষণা করেছে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাআলা সবাইকে সতর্ক করে বলেন—
‘হে ঈমানদাররা! কোনো মুমিন সম্প্রদায় যেন অপর কোনো মুমিন সম্প্রদায়কে উপহাস না করে; কেননা যাদের উপহাস করা হচ্ছে তারা উপহাসকারীদের চেয়ে উত্তম হতে পারে এবং নারীরা যেন অন্য নারীদের উপহাস না করে; কেননা যাদের উপহাস করা হচ্ছে তারা উপহাসকারিণীদের চেয়ে উত্তম হতে পারে। আর তোমরা একে অন্যের প্রতি দোষারোপ কোরো না এবং তোমরা একে অন্যকে মন্দ নামে ডেকো না; ঈমানের পর মন্দ নাম অতি নিকৃষ্ট। আর যারা তাওবা করে না তারাই তো জালিম।’ (সুরা হুজুরাত, আয়াত : ১১)
মুসলিমের ইজ্জত রক্ষা আবশ্যক
এক হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) অন্য মুসলিম ভাইয়ের মান-সম্মান, ইজ্জত-আব্রু ও ধন-সম্পদ রক্ষা করতে বলেছেন। সেগুলো নষ্ট করা কিংবা তাতে অবৈধ হস্তক্ষেপ করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক মুসলিমের জন্য অপর মুসলিমের জান, মাল ও ইজ্জত হারাম।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৫৬৪)
আবু জার (রা.) বলেন, তারা সত্যিই ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত। তবে তারা কারা হে আল্লাহর রাসুল! রাসুল (সা.) বলেন, ‘টাখনু বা পায়ের গিঁটের নিচে কাপড় পরিধানকারী, কাউকে কোনো কিছু দিয়েই খোঁটা দানকারী এবং মিথ্যা শপথ করে পণ্য বিক্রেতা।’ (মুসলিম, হাদিস : ১০৬)
বিভিন্ন দায়িত্ব গ্রহণের সময় শপথ করলে...
সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন পদে ও প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব গ্রহণের প্রাক্কালে শপথ করা হয়। কিন্তু পরে যদি এই শপথ মানুষের অধিকার হরণের কাজে ব্যবহৃত হয়, তা মারাত্মক অন্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে।
গুজব ছড়ানো সমর্থন করে না ইসলাম
ইসলামের দৃষ্টিতে মানবজীবনের প্রতিটি মুহূর্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরকালে মানুষকে তার প্রতিটি কাজের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। সুতরাং একজন মুসলিম কল্যাণশূন্য কোনো কাজে লিপ্ত হবে না। আর যে কাজে নিজের ও সমাজের কোনো ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে, তা থেকে অবশ্যই বিরত থাকবে। গুজব একটি নেতিবাচক কাজ।
গুজব মানেই ভিত্তিহীন কোনো কথার প্রচার। চাই তা মানুষ হাসানোর জন্য হোক বা মানুষের ভেতর ভয় ও আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য করা হোক। ইসলাম কোনো অবস্থায়ই গুজব ছড়ানোকে সমর্থন করে না। ইসলামের শিক্ষা হলো, মানুষ সর্বতোভাবেই তা পরিহার করবে। বরং প্রয়োজন ছাড়া কোনো কথা সে বলবে না। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে চুপ থাকে সে মুক্তি পায়।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৫০১)
শোনা কথা প্রচার মিথ্যার অন্তর্ভুক্ত
অনেকের মধ্যে নিজের বিশ্বাস প্রচারের প্রবণতা দেখা যায়, যারা প্রচারিত কোনো সংবাদ নিজের মতো, মতবাদ ও দৃষ্টিভঙ্গির অনুকূলে হলে তা যাচাইয়ের প্রয়োজন বোধ করে না। পাওয়ামাত্রই প্রচার শুরু করে। ইসলাম এই প্রবণতা পরিহারের নির্দেশ দিয়েছে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘সব শোনা কথার প্রচার ব্যক্তির মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য যথেষ্ট।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৯২)
হাদিসবিশারদরা এই হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, কোনো কথা শুনেই প্রচারের প্রবণতা মিথ্যায় লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ায়। ফলে সে পৃথিবীতে লজ্জিত হয় এবং পরকালেও তার জন্য রয়েছে শাস্তির বিধান।
সংবাদ প্রচারের আগে অবশ্যই যাচাই করতে হবে
সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত অনেক সংবাদের সঙ্গে সামাজিক স্বার্থ জড়িত থাকে। এমন সংবাদের প্রচার মানুষকে ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে রক্ষা করে এবং কখনো কখনো বড় ধরনের বিপর্যয় থেকেও আত্মরক্ষার উপলক্ষ হয়। এমন জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যাপারেও ইসলামের নির্দেশনা হলো, সংবাদ প্রচারের আগে অবশ্যই তা যাচাই করে নিতে হবে। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমাদের কাছে যদি কোনো ফাসেক ব্যক্তি কোনো সংবাদ নিয়ে আসে, তবে তা যাচাই করো। অজ্ঞতাবশত কোনো গোষ্ঠীকে আক্রান্ত করার আগেই, (না হলে) তোমরা কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হবে।’ (সুরা হুজুরাত, আয়াত : ৬)
অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তার অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই কান, চোখ, অন্তরের প্রতিটি বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে।’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩৬)
গুজব-অপবাদের ব্যাপারে কোরআনে হুঁশিয়ারি
যে নেতিবাচক সংবাদের সঙ্গে সমাজ, জাতি ও উম্মাহর স্বার্থের সম্পর্ক নেইÑ শুধু ব্যক্তিগত রাগ, ক্ষোভ ও অভিমান থেকে হয়ে থাকে, তা প্রচার করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা, তা অপবাদের স্তরভুক্ত হবে। পবিত্র কোরআনে অপবাদের ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি রয়েছে। এমন নেতিবাচক সংবাদের যদি কোনো ভিত্তিও থেকে থাকে, তবে তা গিবত বা পরনিন্দা বিবেচিত হবে। শরিয়তে গিবতও জঘন্যতম অপরাধ। আল্লাতায়ালা বলেন, ‘তোমরা পরস্পরের দোষচর্চা করো না। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? নিশ্চয়ই তোমরা তা অপছন্দ করবে। তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।’ (সুরা হুজুরাত, আয়াত : ১২)
বিভ্রান্তি ও আতঙ্ক সৃষ্টি করা মুনাফিকের অভ্যাস
গুজব ছড়ানোর পেছনে প্রধান উদ্দেশ্য থাকে মানুষকে বিভ্রান্ত করা। তাদের আতঙ্কিত করা। মানুষের ভেতর বিভ্রান্তি ও আতঙ্ক সৃষ্টি করাকে কোরআনে মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যদি তারা তোমাদের সঙ্গে বের হতো, তবে শুধু বিভ্রান্তিই বৃদ্ধি পেত। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য তারা তোমাদের ভেতর ছোটাছুটি করত। তোমাদের ভেতর তাদের কথা শোনার (বিশ্বাস করার) লোক রয়েছে। আল্লাহ অত্যাচারীদের সম্পর্কে অবগত আছেন।’ (সুরা তাওবা, আয়াত : ৪৭)
গুজবে আতঙ্কিত না হওয়া মুমিনের গুণ
সমাজে বা সামাজিক মাধ্যমে এমন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে মুসলিম সমাজের উচিত তাতে আক্রান্ত না হওয়া। তার প্রসারে সহযোগিতা না করা। বরং যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণের মাধ্যমে তা সমাধানের চেষ্টা করা। পবিত্র কোরআনেও এমনটাই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যখন তাদের কাছে নিরাপত্তা বা ভয়ের কোনো সংবাদ পৌঁছায়, তখন তারা তা প্রচার করে। যদি তারা তা (সংবাদটি) রাসুল বা তাদের দায়িত্বশীল ব্যক্তির দৃষ্টিগোচর করত, তবে তাদের (দায়িত্বপ্রাপ্ত) অনুসন্ধানকারীরা তার যথার্থতা নির্ণয় করতে পারত। তোমাদের প্রতি যদি আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমত না থাকত, তবে সামান্যসংখ্যক ব্যতীত সবাই শয়তানের অনুসরণ করত।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৮৩)
গুজব রটানো শয়তানের কাজ
আলোচ্য আয়াত থেকে গুজব রটানো শয়তানের কাজ বলেই প্রমাণিত হয়। আবদুল্লা ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসেও গুজবকে শয়তানের কাজ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘শয়তান মানুষের রূপ ধরে তাদের কাছে আসে এবং তাদের মিথ্যা কথা শোনায়। অতঃপর লোকজন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং তাদের কেউ বলে, আমি এমন এক ব্যক্তিকে এ কথা বলতে শুনেছি, যার চেহারা চিনি, কিন্তু নাম জানি না।’ (সহিহ মুসলিম)
সুতরাং মুসলমানের দায়িত্ব হলো, সমাজে কোনো আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে তার প্রচার ও প্রসার থেকে বিরত থাকা। বাস্তবতা অনুসন্ধান করে নিজে সতর্ক হওয়া এবং যথাযথ কর্র্তৃপক্ষকে তা অবগত করা। সর্বোপরি নিজের, পরিবারের, সমাজ ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া করা।
আবু উমামাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘কেউ (মিথ্যা) শপথের মাধ্যমে কোনো মুসলিমের অধিকার হরণ করলে আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম অবধারিত করে দেন। এবং তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৩৭)
শরীরে ব্যান্ডেজ থাকলে অজু-গোসল করবেন যেভাবে
সুস্থ ও নিরাপদ থাকা সব সময় কাম্য। এরপরও মানুষ অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বিভিন্ন রকমের দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হয়ে যায়। কাটাছেঁড়া, অপারেশন ও ক্ষত নিরাময়সহ নানা ধরনের চিকিৎসা হয়ে থাকে। তখন শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ব্যান্ডেজ লাগানো হয়ে থাকে। তখন কীভাবে অজু করতে হবে? কিংবা যদি গোসল ফরজ হয়— গোসলের নিয়ম কী হবে?
এই প্রশ্নের উত্তর হলো- ভাঙা-মচকা ইত্যাদি কারণে যদি শরীরের কোনো অঙ্গে পট্টি বা ব্যান্ডেজ থাকে, তবে অজু বা গোসল করার সময় সে স্থান ধোয়ার পরিবর্তে তার ওপর মাসাহ (ভেজা হাত বোলানো) করবে। আর অবশিষ্ট সুস্থ অংশটুকু সম্ভব হলে অন্যান্য অঙ্গের ন্যায় ধুয়ে নিতে হবে। আর যদি তা ধুতে গেলে ব্যান্ডেজ ভিজে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে তাহলে পায়ের এ অংশও মাসেহ করতে পারবেন।
তবে মনে রাখতে হবে, এ জন্য তায়াম্মুম করা বৈধ হবে না। কেননা ইসলামী শরিয়তে মাসাহকে গোসল বা ধোয়ার বিকল্প নির্ধারণ করা হয়েছে।
অজুতে কোনো অঙ্গ শুকনো থেকে গেলে যা করবেন
অজুর কোনো অঙ্গের কোনো অংশ শুকনো থাকলে
অজুর ক্ষেত্রে অজুর অঙ্গগুলোতে পরিপূর্ণভাবে পানি পৌঁছানো বা ভেজানো আবশ্যক। অজুর মূল অঙ্গ ৪টি : চেহারা, হাত, পা, মাথা। মাথা মাসেহ করা ফরজ। আর বাকি তিন অঙ্গ ধোয়া ফরজ।
এ তিন অঙ্গের কোনো একটি স্থান শুকনো থাকলে— অজু হবে না। অজুর শেষে যদি কোনো উপায়ে জানা যায়, এই তিন অঙ্গের কোথাও শুকনো রয়ে গেছে। তাহলে শুধু শুকনো জায়গা পানি দিয়ে ধুয়ে নিলেই হবে; নতুন অজু করতে হবে না। (আহসানুল ফাতাওয়া, খণ্ড : ০২, পৃষ্ঠা : ৩১৬)
আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে তিনি বলেন, এক সফরে রাসুল (সা.) আমাদের পেছনে রয়ে গেলেন। পরে তিনি আমাদের কাছে পৌঁছালেন, এদিকে আমরা (আসরের) নামাজ আদায় করতে দেরি করে ফেলেছিলাম এবং আমরা অজু করছিলাম। আমরা আমাদের পা কোনো মতে পানি দিয়ে ভিজিয়ে নিচ্ছিলাম। তখন তিনি উচ্চস্বরে বললেন– وَيْلٌ لِلأَعْقَابِ مِنَ النَّارِ বা ‘পায়ের গোড়ালিগুলোর (শুষ্কতার) জন্য জাহান্নামের শাস্তি রয়েছে।’ তিনি দুই বার বা তিনবার এ কথা বললেন। (বুখারি, হাদিস : ৬০; মুসলিম, হাদিস : ২৪১)
অজু শেষ হওয়ার পাঁচ-দশ মিনিট পর বা কিছুক্ষণ পর— যদি কেউ বুঝতে পারে যে, তার কোনো একটা অঙ্গ শুকনো আছে; সেক্ষেত্রে তাকে কি পুনরায় অজু করতে হবে? নাকি শুধু শুকনো জায়গা ধুলেই হবে?
এই বিষয়টা অনেকেই জানতে চান। তাদের জন্য সংক্ষিপ্ত আলোচনা।
যত দিন শরীরে ব্যান্ডেজ থাকবে, তত দিন পর্যন্ত মাসাহ করা যাবে। এতে কোনো সমস্যা নেই। মাসাহ করার পদ্ধতি হলো ব্যান্ডেজের জায়গাটুকু পলিথিন জাতীয় কিছু পেঁচিয়ে গোসল করবে। এরপর পলিথিন খুলে যে অংশটুকু ধোয়া হয়নি তার ওপর মাসাহ করবে। কিন্তু যদি এভাবেও অজু বা গোসল করা না যায় তবে তার পরিবর্তে তায়াম্মুম করবে। (বাদায়িউস সানায়ে : ১/৯০)
তথ্যসূত্র : সুনানে বায়হাকি, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ২২৮; আল-মুহিতুল বুরহানি, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৩৫৭; বাদায়েউস সানায়ে, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৯০; শরহুল মুনইয়া, পৃষ্ঠা: ১১৬; আল-বাহরুর রায়েক, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ১৮৭
যাদুটোনা থেকে বাঁচার আমল
পৃথিবীতে দুষ্ট মানুষের অভাব নেই। নানাভাবে তারা মানুষকে কষ্ট দেয়। কেউ সরাসরি ক্ষতি করে, আর কেউ পরোক্ষভাবে। পরোক্ষ ক্ষতির ক্ষেত্রে ষড়যন্ত্রমূলক নানা চেষ্টা-তদবির করে থাকে। সেগুলোর একটি হলো- যাদুটোনা করা। তাছাড়া জিন কিংবা শয়তানও নানা ধরনের ক্ষতি করতে পারে।
যাদুটোনা থেকে বেঁচে থাকতে বিভিন্ন আমল করতে হয়। যাদুটোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। প্রথমত যাদুকর কিভাবে যাদু করেছে সেটা আগে জানতে হবে।
যদি জানা যায় যে, যাদুকর কিছু চুল নির্দিষ্ট কোনো স্থানে অথবা চিরুনির মধ্যে অথবা অন্য কোনো স্থানে রেখে দিয়েছে। যদি স্থানটি জানা যায়— তাহলে সে জিনিসটি পুড়িয়ে ফেলে ধ্বংস করে ফেলতে হবে; যাতে যাদুর কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়, যাদুকর যা করতে চেয়েছে— সেটা ব্যর্থ হয়ে যায়।
দ্বিতীয়ত যাদু নষ্ট করার ক্ষেত্রে ঝাড়ফুঁকের বড় ধরনের প্রভাব রয়েছে। ঝাড়ফুঁকের পদ্ধতি হচ্ছে- যাদুতে আক্রান্ত রোগীর ওপর অথবা কোনো একটি পাত্রে আয়াতুল কুরসি অথবা সুরা আরাফ, সুরা ইউনুস, সুরা ত্বহার যাদুবিষয়ক আয়াতগুলো পড়বে। এগুলোর সাথে সুরা কাফিরুন, সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস পড়বে এবং রোগীর জন্য দোয়া করবে।
আনাস বিন মালিক (রা.) বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এই দোয়া পড়ে অসুস্থ ব্যক্তিদের ঝাড়ফুঁক করতেন। দোয়াটি হলো-
আরবি :
اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبْ الْبَاسَ اشْفِهِ وَأَنْتَ الشَّافِي لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা রাব্বান নাসি উজহিবাল বা’সি, ইশফিহি ওয়া আনতাশ-শাফি, লা শিফায়া ইল্লা শিফায়ুকা শিফায়ান লা ইউগাদিরু সাকমা।
অর্থ : হে আল্লাহ! মানুষের প্রতিপালক, কষ্ট দূরকারী। আমাকে আরোগ্য দিন, আপনি আরোগ্যকারী—আপনি ছাড়া কোনো আরোগ্যকারী নেই। এমন আরোগ্য দিন যেন কোনো রোগ না থাকে। (বুখারি, হাদিস : ৫৭৪২)
জিব্রাইল (আ.) আল্লাহর নবী (সা.)-কে যে দোয়া পড়ে ঝাড়ফুঁক করেছেন— সেটাও পড়া যেতে পারে। সে দোয়াটি হচ্ছে-
আরবি :
بِسْمِ الله أرْقِيكَ، مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ، اللهُ يَشْفِيكَ، بِسمِ اللهِ أُرقِيكَ
উচ্চারণ : বিসমিল্লাহি আরক্বিক মিন কুল্লি শাইয়িন য়ুযিক। ওয়া মিন শাররি কুল্লি নাফসিন আও আইনিন হাসিদিন; আল্লাহু ইয়াশফিক। বিসমিল্লাহি আরক্বিক।
অর্থ : আল্লাহর নামে আমি আপনাকে ঝাড়ফুঁক করছি। সকল কষ্টদায়ক বিষয় থেকে। প্রত্যেক আত্মা ও ঈর্ষাপরায়ণ চক্ষুর অনিষ্ট থেকে। আল্লাহ আপনাকে আরোগ্য করুন। আল্লাহর নামে আমি আপনাকে ঝাড়ফুঁক করছি। (মুসলিম, হাদিস : ২১৮৬; তিরমিজি, হাদিস : ৯৭২)
এই দোয়াটি তিনবার পড়ে ফুঁ দিবেন। এছাড়াও সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস তিনবার পড়ে ফুঁ দিবেন। আমরা যে দোয়াগুলো উল্লেখ করলাম এ দোয়াগুলো পড়ে পানিতে ফুঁ দিতে হবে। এরপর যাদুতে আক্রান্ত ব্যক্তি সে পানি পান করবে। আর অবশিষ্ট পানি দিয়ে প্রয়োজনমতো একবার বা একাধিক বার গোসল করবে। তাহলে আল্লাহর ইচ্ছায় রোগী আরোগ্য লাভ করবে।
আলেমগণ এ আমলগুলোর কথা উল্লেখ করেছেন। শাইখ আব্দুর রহমান বিন হাসান (রহঃ) ‘ফাতহুল মাজিদ শারহু কিতাবিত তাওহিদ’ গ্রন্থের ‘নাশরা অধ্যায়ে’ এ বিষয়গুলো ও আরও কিছু বিষয় উল্লেখ করেছেন।
যাদুটোনা থেকে বাঁচতে যে দোয়া পড়বেন
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, নবী (সা.) নিম্নোক্ত দোয়ার মাধ্যমে হাসান ও হুসাইন (রা.)-এর জন্য আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। তিনি বলতেন, এই দোয়ার মাধ্যমে তোমাদের পিতা [ইবরাহিম (আ.)] ইসমাঈল ও ইসহাকের জন্য আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন।
দোয়াটি হলো :
উচ্চারণ : আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন কুল্লি শায়তানিন, ওয়া হাম্মাতিন, ওয়া মিন কুল্লি আইনিন লাম্মাতিন।
অর্থ : আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কলেমার দ্বারা প্রত্যেক শয়তান, বিষাক্ত প্রাণী এবং প্রত্যেক কুদৃষ্টির অনিষ্ট থেকে আশ্রয় কামনা করছি। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৩৭১)
উসমান বিন আফফান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার এই দোয়া পড়বে, আল্লাহ তাআলা তাকে সব ধরনের বিপদাপদ থেকে রক্ষা করবেন। অন্য বর্ণনায় আছে, আল্লাহ তাআলা তাকে সব ধরনের রোগব্যাধি থেকে হেফাজত করবেন। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৩৮৮)
দোয়াটি হলো (আরবি) :
بِسْمِ اللهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
উচ্চারণ : বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়াদুররু মাআসমিহি শাইউন ফিল আরদি ওয়ালা ফিস সামা-ই ওয়া হুয়াস সামিউল আলিম।
অর্থ : আল্লাহ তাআলার নামে, যার নামের বরকতে আকাশ ও মাটির কোনো কিছুই কোনো অনিষ্ট করতে পারে না। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।
যাদুটোনা দূরের চিকিৎসা ও আমল
সাতটি কাঁচা বরই পাতা সংগ্রহ করে পাতাগুলো গুড়া করবে। এরপর গুড়াগুলো পানিতে মিশিয়ে সে পানিতে উল্লেখিত আয়াত ও দোয়াগুলো পড়ে ফুঁ দিবে। তারপর সে পানি পানি করবে; আর কিছু পানি দিয়ে গোসল করবে। যদি কোন পুরুষকে স্ত্রী-সহবাস থেকে অক্ষম করে রাখা হয় সেক্ষেত্রেও এ আমলটি উপকারী। সাতটি বরই পাতা পানিতে ভিজিয়ে রাখবে। তারপর সে পানিতে উল্লেখিত আয়াত ও দোয়াগুলো পড়ে ফুঁ দিবে। এরপর সে পানি পান করবে ও কিছু পানি দিয়ে গোসল করবে।
যাদুগ্রস্ত রোগী ও স্ত্রী সহবাসে অক্ষম করে দেওয়া ব্যক্তির চিকিৎসার জন্য বরই পাতার পানিতে যে আয়াত ও দোয়াগুলো পড়তে হবে সেগুলো নিম্নরূপ:
১. সুরা ফাতিহা পড়া।
২. আয়াতুল কুরসি পড়া। (আয়াতুল কুরসি সম্পর্কে জেনে নিতে ক্লিক করুন এখানে।)
৩. সুরা আরাফের যাদু বিষয়ক আয়াতগুলো পড়া। সে আয়াতগুলো হচ্ছে-
قَالَ إِنْ كُنْتَ جِئْتَ بِآيَةٍ فَأْتِ بِهَا إِنْ كُنْتَ مِنَ الصَّادِقِينَ (106) فَأَلْقَى عَصَاهُ فَإِذَا هِيَ ثُعْبَانٌ مُبِينٌ (107) وَنَزَعَ يَدَهُ فَإِذَا هِيَ بَيْضَاءُ لِلنَّاظِرِينَ (108) قَالَ الْمَلَأُ مِنْ قَوْمِ فِرْعَوْنَ إِنَّ هَذَا لَسَاحِرٌ عَلِيمٌ (109) يُرِيدُ أَنْ يُخْرِجَكُمْ مِنْ أَرْضِكُمْ فَمَاذَا تَأْمُرُونَ (110) قَالُوا أَرْجِهْ وَأَخَاهُ وَأَرْسِلْ فِي الْمَدَائِنِ حَاشِرِينَ (111) يَأْتُوكَ بِكُلِّ سَاحِرٍ عَلِيمٍ (112) وَجَاءَ السَّحَرَةُ فِرْعَوْنَ قَالُوا إِنَّ لَنَا لَأَجْرًا إِنْ كُنَّا نَحْنُ الْغَالِبِينَ (113) قَالَ نَعَمْ وَإِنَّكُمْ لَمِنَ الْمُقَرَّبِينَ (114) قَالُوا يَا مُوسَى إِمَّا أَنْ تُلْقِيَ وَإِمَّا أَنْ نَكُونَ نَحْنُ الْمُلْقِينَ (115) قَالَ أَلْقُوا فَلَمَّا أَلْقَوْا سَحَرُوا أَعْيُنَ النَّاسِ وَاسْتَرْهَبُوهُمْ وَجَاءُوا بِسِحْرٍ عَظِيمٍ (116) وَأَوْحَيْنَا إِلَى مُوسَى أَنْ أَلْقِ عَصَاكَ فَإِذَا هِيَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُونَ (117) فَوَقَعَ الْحَقُّ وَبَطَلَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ (118) فَغُلِبُوا هُنَالِكَ وَانْقَلَبُوا صَاغِرِينَ (119) وَأُلْقِيَ السَّحَرَةُ سَاجِدِينَ (120)قَالُوا آمَنَّا بِرَبِّ الْعَالَمِينَ (121) رَبِّ مُوسَى وَهَارُونَ (122)
অর্থ : সে বলল, তুমি যদি কোন নিদর্শন নিয়ে এসে থাক, তাহলে তা পেশ কর যদি তুমি সত্যবাদী হয়ে থাক। তখন তিনি নিজের লাঠিখানা নিক্ষেপ করলেন এবং তৎক্ষণাৎ তা জলজ্যান্ত এক অজগরে রূপান্তরিত হয়ে গেল। আর বের করলেন নিজের হাত এবং তা সঙ্গে সঙ্গে দর্শকদের চোখে ধবধবে উজ্জ্বল দেখাতে লাগল। ফেরাউনের সাঙ্গ-পাঙ্গরা বলতে লাগল, নিশ্চয় লোকটি বিজ্ঞ-যাদুকর। সে তোমাদের দেশ থেকে তোমাদের বের করে দিতে চায়। এ ব্যাপারে তোমাদের মতামত কী? তারা বলল, আপনি তাকে ও তার ভাইকে অবকাশ দান করুন এবং শহরে বন্দরে সংগ্রাহক পাঠিয়ে দিন। যাতে তারা পরাকাষ্ঠাসম্পন্ন বিজ্ঞ যাদুকরদের এনে সমবেত করে। বস্তুতঃ যাদুকররা এসে ফেরাউনের কাছে উপস্থিত হল। তারা বলল, আমাদের জন্যে কি কোন পারিশ্রমিক নির্ধারিত আছে, যদি আমরা জয়লাভ করি? সে বলল, হ্যাঁ এবং অবশ্যই তোমরা আমার নিকটবর্তী লোক হয়ে যাবে। তারা বলল, হে মূসা! হয় তুমি নিক্ষেপ কর অথবা আমরা নিক্ষেপ করছি। তিনি বললেন, তোমরাই নিক্ষেপ কর। যখন তারা বান নিক্ষেপ করল তখন লোকদের চোখগুলো যাদুগ্রস্ত হয়ে গেল, মানুষকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে তুলল এবং মহাযাদু প্রদর্শন করল। তারপর আমি ওহীযোগে মূসাকে বললাম, এবার নিক্ষেপ কর তোমার লাঠিখানা। অতএব সঙ্গে সঙ্গে তা সে সমুদয়কে গিলতে লাগল, যা তারা যাদুর বলে বানিয়েছিল। এভাবে সত্য প্রকাশ হয়ে গেল এবং ভুল প্রতিপন্ন হয়ে গেল যা কিছু তারা করেছিল। সুতরাং তারা সেখানেই পরাজিত হয়ে গেল এবং অতীব লাঞ্ছিত হল। এবং যাদুকররা সেজদায় পড়ে গেল। বলল, আমরা ঈমান আনছি মহা বিশ্বের প্রতিপালকের প্রতি। যিনি মূসা ও হারুনের প্রতিপালক। (সুরা আরাফ, আয়াত: ১০৬-১২২)
৪. সুরা ইউনুসের যাদুবিষয়ক আয়াতগুলো পড়া। সেগুলো হচ্ছে-
وَقَالَ فِرْعَوْنُ ائْتُونِي بِكُلِّ سَاحِرٍ عَلِيمٍ (79) فَلَمَّا جَاءَ السَّحَرَةُ قَالَ لَهُمْ مُوسَى أَلْقُوا مَا أَنْتُمْ مُلْقُونَ (80) فَلَمَّا أَلْقَوْا قَالَ مُوسَى مَا جِئْتُمْ بِهِ السِّحْرُ إِنَّ اللَّهَ سَيُبْطِلُهُ إِنَّ اللَّهَ لَا يُصْلِحُ عَمَلَ الْمُفْسِدِينَ (81) وَيُحِقُّ اللَّهُ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُجْرِمُونَ
অর্থ- আর ফেরাউন বলল, আমার কাছে নিয়ে এস সুদক্ষ যাদুকরদিগকে। তারপর যখন যাদুকররা এল, মূসা তাদেরকে বললেন:নিক্ষেপ কর, তোমরা যা কিছু নিক্ষেপ করে থাক। অতঃপর যখন তারা নিক্ষেপ করল, মুসা বললেন, যা কিছু তোমরা এনেছ তা সবই যাদু-এবার আল্লাহ এসব ভণ্ডুল করে দিচ্ছেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ দুস্কর্মীদের কর্মকে সুষ্ঠুতা দান করেন না। আল্লাহ সত্যকে সত্যে পরিণত করেন স্বীয় নির্দেশে যদিও পাপীদের তা মনঃপুত নয়। (সুরা ইউনুস, আয়াত: ৭৯-৮২)
৫. সুরা ত্বহার আয়াতগুলো পড়া। সেগুলো হচ্ছে-
قَالُوا يَا مُوسَى إِمَّا أَنْ تُلْقِيَ وَإِمَّا أَنْ نَكُونَ أَوَّلَ مَنْ أَلْقَى (65) قَالَ بَلْ أَلْقُوا فَإِذَا حِبَالُهُمْ وَعِصِيُّهُمْ يُخَيَّلُ إِلَيْهِ مِنْ سِحْرِهِمْ أَنَّهَا تَسْعَى (66) فَأَوْجَسَ فِي نَفْسِهِ خِيفَةً مُوسَى (67) قُلْنَا لَا تَخَفْ إِنَّكَ أَنْتَ الْأَعْلَى (68) وَأَلْقِ مَا فِي يَمِينِكَ تَلْقَفْ مَا صَنَعُوا إِنَّمَا صَنَعُوا كَيْدُ سَاحِرٍ وَلَا يُفْلِحُ السَّاحِرُ حَيْثُ أَتَى (69)
অর্থ : তারা বলল- হে মুসা, হয় তুমি নিক্ষেপ করো, না হয় আমরা প্রথমে নিক্ষেপ করি। মূসা বললেন, বরং তোমরাই নিক্ষেপ করো। তাদের যাদুর প্রভাবে হঠাৎ তাঁর মনে হলো যেন তাদের রশিগুলো ও লাঠিগুলো ছুটাছুটি করছে। অতঃপর মুসা মনে মনে কিছুটা ভীতি অনুভব করলেন। আমি বললাম, ভয় করোনা, তুমি বিজয়ী হবে। তোমার ডান হাতে যা আছে, তুমি তা নিক্ষেপ করো। এটা তারা করেছে, যা কিছু সেগুলোকে গ্রাস করে ফেলবে। তারা যা করেছে তাতো কেবল যাদুকরের কলাকৌশল। যাদুকর যেখানেই থাকুক, সফল হবে না। (সুরা ত্বহা, আয়াত : ৬৫-৬৯)
৬. সুরা কাফিরুন পড়া।
৭. সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস ৩ বার করে পড়া।
৮. বিভিন্ন দোয়া-দরুদ পড়া।
শয়তান সব সময় যাদের সঙ্গে থাকে
শয়তান মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু। শয়তান মানুষকে ধোঁকা দেয়। মন্দ কাজে প্রলুব্ধ করে। ক্রমে ক্রমে আল্লাহ কুফর ও শিরকে লিপ্ত করে। সবশেষে চিরদুঃখের ও অশান্তির জায়গা জাহান্নামে পৌঁছিয়ে দেয়।
শয়তান থেকে বেঁচে থাকতে আল্লাহ তাআলা কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে বলেছেন। এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনরা, তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কোরো না।’ (সুরা নুর, আয়াত : ২১)
যাদের পেছনে শয়তান লেগে থাকে
শয়তান কাদের পেছনে লেগে থাকে এবং কাদের ভুল পথে পরিচালিত করে— তাদের ব্যাপারে পবিত্র কোরআনের অনেকগুলো আয়াতে এ বিষয়ে বর্ণিত হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা এক আয়াতে বলেন, ‘আমি কি তোমাদের জানাব কার কাছে শয়তান অবতীর্ণ হয়? শয়তান অবতীর্ণ হয় ঘোর মিথ্যাবাদী ও পাপীর কাছে।’ (সুরা শুআরা, আয়াত : ২২১-২২২)
পাষাণ হৃদয়ের মানুষের সঙ্গী শয়তান
যারা অন্যের পেছনে লেগে থাকে এবং পাষাণ হৃদয়ের হয়— তাদের পেছনেও শয়তান লেগে থাকে। তাদের জন্য অকল্যাণ, অমঙ্গল ও নানা রকম ক্ষতি নিয়ে আসে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এটা এই জন্য যে শয়তান যা প্রক্ষিপ্ত (পাঠ) করে, তিনি তা তাদের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ করেন— যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে এবং যারা পাষাণ হৃদয়। নিশ্চয়ই জালিমরা দুস্তর মতভেদে আছে।’ (সুরা হজ, আয়াত : ৫৩)
আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফিলের সহচর শয়তান
অনেক মানুষ আল্লাহকে ভুলে যায়। তারা মহান প্রতিপালক ও স্রষ্টা আল্লাহর স্মরণে গাফিলতি করে। তার ইবাদত-বন্দেগি থেকে দূরে সরে থাকে। আর এমন সব লোকদের পেছনে শয়তান লেগে থাকে।
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর স্মরণে বিমুখ হয়, আমি তার জন্য নিয়োজিত করি এক শয়তান। অতঃপর সে হয় তার সহচর। শয়তানরাই মানুষকে সৎপথ থেকে বিরত রাখে, অথচ মানুষ মনে করে তারা সৎপথে আছে।’ (সুরা জুখরুফ, আয়াত : ৩৬-৩৭)
যারা আল্লাহকে স্মরণ করে না, তারা শয়তানের দোসর
আল্লাহর কথা যাদের মনে পড়ে না এবং যারা মন আল্লাহকে স্মরণ করে না; শয়তান তাদের পেছনে লেগে থাকে। তাদের বিপথে পরিচালিত করে— তাদের দুনিয়া-আখিরাত বরবাদ করে দেয়।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘শয়তান তাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করেছে। ফলে তাদের ভুলিয়ে দিয়েছে আল্লাহর স্মরণ। তারা শয়তানের দল। সাবধান! শয়তানের দল অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত।’ (সুরা মুজাদালা, আয়াত : ১৯)
শয়তান থেকে নিরাপদ থাকার দোয়া
لا إلهَ إلاَّ اللَّه وحْدهُ لاَ شَرِيكَ لهُ، لَهُ المُلْكُ، ولَهُ الحمْدُ، وَهُو عَلَى كُلِّ شَيءٍ قَدِيرٌ
উচ্চারণ : লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু। লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু। ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির।
অর্থ : আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি একক, তার কোনো শরিক নেই, রাজত্ব একমাত্র তারই, সমস্ত প্রশংসাও একমাত্র তারই জন্য, আর তিনি সকল বিষয়ের ওপর ক্ষমতাবান। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৩৫১৮)
এই দোয়ার ফজিলত সম্পর্কেও নানা বর্ণনা এসেছে। তাই আল্লাহ কাছে আশা করা যায়, তিনি সব রকম সওয়াব ও ফজিলত দান করবেন।
যেসব খাবার হারাম
প্রত্যেক মুসলমানের জন্য হালাল বা বৈধ খাবার গ্রহণ করা অপরিহার্য। হাদিসের ভাষায় হালাল খাবার গ্রহণ দোয়া কবুলের পূর্বশর্ত। কোরআনের বহু আয়াত ও হাদিসে বারবার হারাম খাবার থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ কোরো না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৮)
আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি দীর্ঘ পথ অতিক্রম করল, বিক্ষিপ্ত চুল, ধুলাবালিযুক্ত শরীর, দুই হাত আসমানের দিকে উঠিয়ে দোয়া করতে থাকে : হে প্রভু! হে প্রভু! অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পোশাক হারাম এবং হারাম দ্বারা শক্তি সঞ্চয় করা হয়েছে। তাহলে কিভাবে তার দোয়া কবুল করা হবে?’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৬৮৬)
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, অস্বাস্থ্যকর খাবার হারামের পাশাপাশি ইসলাম পবিত্র, স্বাস্থ্যসম্মত ও উপকারী সবধরনের খাবার গ্রহণে উৎসাহ দিয়েছে। মূলত ইসলাম অপবিত্র ও অবৈধ পানাহার নিষিদ্ধ করেছে।
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনুল কারিমে বলেন, ‘আপনি বলে দিন, যা কিছু বিধান ওহির মাধ্যমে আমার কাছে পৌঁছেছে, আহারকারী যা আহার করে তাতে তার জন্য আমি কোনো হারাম খাবার পাই না; কিন্তু মৃত অথবা প্রবাহিত রক্ত অথবা শুকরের মাংস— এটা অপবিত্র অথবা অবৈধ। (সুরা আনআম, আয়াত : ১৪৫)
সাধারণত যেসব খাবার আমরা গ্রহণ করে থাকি, তা দুই প্রকার। একটি পশু-পাখি, অপরটি উদ্ভিদ ও শাকসবজি। এসব খাবারের ভেতর কী কী হারাম বা জায়েজ নেই— তা জেনে রাখা জরুরি। এক্ষেত্রে কিছু মূলনীতি খেয়াল রাখলে হালাল-হারাম বুঝতে পারা সহজ।
পশু-পাখির ক্ষেত্রে কিছু নিদর্শন ও বিধি-বিধান লক্ষ্য করলে হালাল-হারাম নির্ণয় করা সহজ। যে প্রাণীতে হারামের কোনো চিহ্ন পাওয়া যাবে, তা খাওয়া জায়েজ নেই।
দাঁতবিশিষ্ট হিংস্র জন্তু : যেমন- বাঘ-সিংহ, নেকড়ে বাঘ, চিতা বাঘ, হাতি, কুকুর, শিয়াল, শূকর, বিড়াল, কুমির, কচ্ছপ, সজারু ও বানর ইত্যাদি।
পাঞ্জাধারী হিংস্র পাখি : যেমন, ঈগল, বাজ, শ্যেন, পেঁচা ইত্যাদি। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) দাঁতবিশিষ্ট প্রত্যেক হিংস্র জন্তু ও নখ দিয়ে শিকারকারী প্রত্যেক হিংস্র পাখি খেতে নিষেধ করেছেন। ’ (মুসলিম, হাদিস নং : ১৯৩৪)
নির্দিষ্ট কিছু পশু : নির্দিষ্টভাবে যেসব পশু খেতে নিষেধ করা হয়েছে, তা খাওয়া হারাম। যেমন, গৃহপালিত গাধা। জাবের (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) খায়বরের দিন গৃহপালিত গাধা খেতে নিষেধ করেছেন এবং ঘোড়ার গোশত খেতে অনুমতি দিয়েছেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৪২১৯; মুসলিম, হাদিস : ১৯৪১)
আরেকটি উদাহরণ, শূকর। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃতপ্রাণী, রক্ত ও শূকরের গোশত।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত : ৩)
নোংরা ও নাপাক কোনো কিছু : আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তাদের জন্য তিনি (রাসুল) পবিত্র বস্তু হালাল করেন আর অপবিত্র বস্তু হারাম করেন।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ১৫৭)
যেমন- মৃত জন্তু, পোকা-মাকড়, কীট-পতঙ্গ, প্রবাহিত রক্ত এবং সেসব খাবারে কোনো প্রকার উপকার নেই যেমন বিষ, মদ, খড়কুটা, মাদকদ্রব্য, তামাক ও অন্যান্য নেশজাতীয় দ্রব্য ইত্যাদি।
শরিয়তকর্তৃক নিষিদ্ধ প্রাণী : যেসব প্রাণী হত্যা করতে শরিয়ত নিদের্শ দিয়েছে বা যেসব প্রাণী হত্যা করতে নিষেধ করেছে, তা খাওয়া হারাম। যেমন- ইঁদুর, সাপ, টিকটিকি, বিচ্ছু, কাক, চিল ইত্যাদি। কারণ, হাদিসে এগুলোর ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। ইসলামকর্তৃক নিষিদ্ধ প্রাণীও হারাম; যেমন- হুদহুদ, দোয়েল, ব্যঙ, পিঁপড়া ও মৌমাছি ইত্যাদি।
জবাইয়ে আল্লাহ নাম না নিলে : আল্লাহ নাম নেওয়া ছাড়া জবাইকৃত হালাল পশু-পাখিও হারাম। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমরা তা থেকে আহার করো না যার উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয়নি এবং নিশ্চয় তা সীমালঙ্গন।’ (সুরা আন-আম, আয়াত : ১২১)
অশুদ্ধভাবে জবাই হলে : হালাল প্রাণী জবাই শুদ্ধ না হলে, জবাইকৃত সে প্রাণীও হারাম। আবার জীবিত প্রাণী থেকে আলাদা করা গোশতও মৃত প্রাণীর মতো হারাম। জবাই করার কিছু ইসলামী নিয়ম-নীতি ও শর্ত রয়েছে। সেগুলো পূর্ণ না হলে, জবাইকৃত হালাল জন্তুও হারাম হয়ে যায়। যেমন- গরুর গলার নিচে জবাই করা বিধান; পাশাপাশি নির্দিষ্ট পরিমাণ রগ কাটাও হালাল হওয়ার পূর্বশর্ত। শর্ত পাওয়া না গেলে জবাইকৃত জন্তুও হারাম হয়ে যায়।
নোংরা পোকামাকড় : আর নাপাক বস্তু থেকে সৃষ্ট পোকা-মাকড় এবং যার শরীরে প্রবাহিত রক্ত নেই, সেগুলোও নাপাক। যেমন- তেলাপোকা ইত্যাদি।
মৃত প্রাণী ও প্রবাহিত রক্ত : সব ধরনের মৃত প্রাণী এবং প্রবাহিত রক্ত হারাম। তবে দুই ধরনের মৃত প্রাণী ও রক্ত হালাল। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমাদের জন্য দু’প্রকার মৃত প্রাণী ও দু’প্রকার রক্ত হালাল করা হয়েছে। মৃত প্রাণী হলো, মাছ ও পঙ্গপাল। আর রক্ত হলো, কলিজা ও প্লীহা।’ (মুসনাদ আহমদ, হাদিস : ৫৭২৩; ইবনু মাজাহ, হাদিস : ৩২১৮)
হারাম ভক্ষণকারী জন্তু : যেসব পশু বা পাখির অধিকাংশ খাদ্যই নাপাক, সেগুলোর ওপর আরোহণ করা, সেগুলোর গোস্ত-ডিম খাওয়া এবং দুধ পান করা হারাম।
যেসব উদ্ভিদজাতীয় খাবার হারাম
খাদ্য ও পানীয়ের মূল প্রকৃতি হচ্ছে বৈধ ও হালাল হওয়া। সে সূত্রে বিভিন্ন উদ্ভিদ, ফল, শস্য ইত্যাদি থেকে তৈরিকৃত পানীয় হালাল। তবে যত ধরনের খাবার ও পানীয় নেশা তৈরি করে, তা খাওয়া বা পান করা জায়েজ নেই। যেমন, গাঁজা, আফিম, ইয়াবা, বিয়ার, শ্যাম্পেইন, হেরোইনসহ এ জাতীয় অন্যান্য নেশাজাতীয় দ্রব্য।
এছাড়াও যা কিছু শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর, তাও জায়েজ নেই। যেমন- বিষ, সিগারেট ও এ জাতীয় অন্যান্য খাবার ও পানীয়। যেগুলোর ক্ষতি ও অপকারিতা সবার কাছে স্পষ্ট।
হারাম খাবার কখন খাওয়া যাবে?
কেউ যদি কঠিন খাদ্য সংকটে পড়ে এবং তার কাছে হালাল খাবারের মজুদ না থাকে। হারাম না খেলে সে মারা যাবে। এ অবস্থায় জীবিত থাকতে পারে সে পরিমাণ হারাম খাবার গ্রহণ বৈধ। তবে তা যদি বিষ হয় তবে তা নিষিদ্ধ আছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘সুতরাং যে বাধ্য হবে, অবাধ্য বা সীমালঙ্গনকারী না হয়ে, তাহলে তার কোনো পাপ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৭৩)
বাস্তবিকভাবে আল্লাহ তাআলা যা হারাম করেছেন, তা কেবল মানুষের উপকার ও কল্যাণার্থে। কিন্তু কিছু মানুষ অনেক সময় তা বুঝতে পারে না। আল্লাহ তাআলা আমাদের বোঝার ও মেনে চলার তাওফিক দান করুন।
-মুওসুআতুল ফিকহিল ইসলামী’র ‘আকসামুল আতইমা আল-মুহাররামা’ অবলম্বনে মুফতি আসিম নাজিব
ইয়াজুজ-মাজুজ কারা এবং কখন আবির্ভাব হবে প্রথমে কুর-আন ও হাদিসে ইয়াজুজ-মাজুজের সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাকঃ
ইয়াজুজ-মাজুজ কিয়ামতের আলামতগুলোর মধ্যে “ইয়াজুজ-মাজুজ”-এর উত্থান অন্যতম। কিন্ত আমাদের অনেকেই ইয়াজুজ-মাজুজ সম্পর্কে জানা তো দূরে থাক,এদের নামই শোনেন নি! এ কারণেই খুব সংক্ষেপে ইয়াজুজ-মাজুজ সম্পর্কে কিছু লেখা হল।
☞ ইয়াজূজ মাজূজ সম্প্রদায় আদম (আঃ)-এর বংশধর। তারা ক্বিয়ামতের প্রাক্কালে ঈসা (আঃ)-এর সময় পৃথিবীতে উত্থিত হবে। শাসক যুলক্বারনাইন তাদেরকে এখন প্রাচীর দিয়ে আটকিয়ে রেখেছেন (সূরা কাহফ, আয়াত ৯২-৯৭)। [এখানে একটা কথা বলে রাখি,অনেকেই হুমায়ূন আহমেদের বই পড়ে এটা মনে করেন যে যুলক্বারনাইন হচ্ছেন আলেকজান্ডার,এবং তিনি একজন নবী। প্রকৃতপক্ষে,এটা সম্পূর্ণ ভুল। কারণ, যুলক্বারনাইন মুমিন ছিলেন আর আলেকজান্ডার কাফের। আর প্রসিদ্ধ মতানুযায়ী,যুলক্বারনাইন নবী ছিলেন না,ছিলেন এক সৎ ঈমানদার বাদশা। পৃথিবীর প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ভ্রমণ করেছেন বলে তাঁকে যুলক্বারনাইন বলা হয়।]
☞ ঐ প্রাচীর ভেঙ্গে তারা সেদিন বেরিয়ে আসবে এবং সামনে যা পাবে সব খেয়ে ফেলবে। এমনকি তাদের প্রথম দলটি নদীর পানি খেয়ে শেষ করে ফেলবে এবং শেষদলটি এসে বলবে ‘হয়ত এখানে কোন একসময় নদী ছিল’ । তাদের সাথে কেউ লড়াই করতে পারবে না। ☞ এক সময় তারা বায়তুল মুক্বাদ্দাসের এক পাহাড়ে গিয়ে বলবে,”দুনিয়াতে যারা ছিল তাদের হত্যা করেছি। এখন আকাশে যারা আছে তাদের হত্যা করব।” তারা আকাশের দিকে তীর নিক্ষেপ করবে। আল্লাহ তাদের তীরে রক্ত মাখিয়ে ফেরত পাঠাবেন। ☞ এসময় ঈসা (আঃ) তাদের জন্য বদদো‘আ করবেন। এতে স্কন্ধের দিক থেকে এক প্রকার পোকা সৃষ্টি করে আল্লাহ্ তাদেরকে ধ্বংস করবেন। তারা সবাই মারা যাবে ও পঁচে দুর্গন্ধ হবে। সারা পৃথিবী জুড়ে তাদের লাশ থাকবে । আল্লাহ শকুন পাঠাবেন। লাশগুলোকে তারা নাহবাল নামক স্থানে নিক্ষেপ করবে। মুসলিমরা তাদের তীর ও ধনুকগুলো ৭ বছর জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করবে। ( বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫৪৭৫) ।
পরিচয়ঃ
ইয়াজুজ মাজুজ এরা তুরস্কের বংশোদ্ভুত দুটি জাতি। কুরআন মাজীদে এ জাতির বিস্তারিত পরিচয় দেয়া হয়নি। হাদীস শরীফে বলা হয়েছে তাদের নাক চ্যাপ্টা, ছোট ছোট চোখ বিশিষ্ট। এশিয়ার উত্তর পুর্বাঞ্চলে অবশিত এ জাতির লোকেরা প্রাচীন কাল হতেই সভয় দেশ সমুহের উপর হামলা করে লুটতরাজ চালাত। মাঝে মাঝে এরা ইউরোপ ও এশিয়া উভয় দিকে সয়লাবের আকারে ধবংসের থাবা বিস্তার করতো। বাইবেলের আদি পুস্তকে(১০ম আধ্যায়ে) তাদেরকে হযরত নুহ (আ:) এর পুএ ইয়াকেলের বংশধর বলা হয়েছে। মুসলিম ঐতিহাসিক গন ও একথাই মনে করেন রাশিয়া ও ঊওর চীনে এদের অবস্থান বলে বর্ণনা পাওয়া যায়। সেখানে অনুরুপ চরিত্রের কিছু উপজাতি রয়েছে যারা তাতারী, মঙ্গল, হুন ও সেথিন নামে পরিচিত। তাছাডা একথাও জানা যায় তাদের আক্রমন থেকে আত্নরক্ষার জন্ন ককেম্পসের দক্ষিণাঞ্চলে দরবন্দ ও দারিয়ালের মাঝখানে প্রাচীর নির্মান করা হয়েছিল। ইসরাঈলী ঐতিহাসিক ইউসীফুল তাদেরকে সেথীন জাতি মনে করেন এবং তার ধারণা তাদের এলাকা কিষ্ণ সাগরের উওর ও পুর্ব দিকে অবস্থিত ছিল। জিরোম এর বর্ণনামতে মাজুজ জাতির বসতি ছিল ককেশিয়ার উওরে কাস্পিয়ান সাগরের সন্নিকটে। ইয়াজূজ এবং মাজূজের উদ্ভব ● ইয়াজূজ এবং মাজূজ হচ্ছে আদম সন্তানের মধ্যে দু-টি গোত্র, যেমনটি হাদিসে এবং বিভিন্ন গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। তাদের মধ্যে কিছু মানুষ অস্বাভাবিক বেঁটে, আবার কিছু অস্বাভাবিক লম্বা। কিছু অনির্ভরযোগ্য কথাও প্রসিদ্ধ যে তাদের মাঝে বৃহৎ কর্ণবিশিষ্ট মানুষও আছে, এক কান মাটিতে বিছিয়ে এবং অপর কান গায়ে জড়িয়ে বিশ্রাম করে। ● বরং তারা হচ্ছে সাধারণ আদম সন্তান। বাদশা যুলকারনাইনের যুগে তারা অত্যধিক বিশৃঙ্খল জাতি হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিল। অনিষ্টটা থেকে মানুষকে বাঁচাতে যুলকারনাইন তাদের প্রবেশ পথ বৃহৎ প্রাচীর নির্মাণ করেছিলেন। ● নবী করীম (সা:) বলে গেছেন যে, ঈসা নবী অবতরণের পর তারা সেই প্রাচীর ভেঙে বেরিয়ে আসবে। আল্লাহ্র আদেশে ঈসা (আ:) মুমিনদেরকে নিয়ে তূর পর্বতে আশ্রয় নেবেন। অতঃপর স্কন্ধের দিক থেকে এক প্রকার পোকা সৃষ্টি করে আল্লাহ্ তাদেরকে ধ্বংস করবেন। নিচে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল: ঐতিহাসিক সেই প্রাচীর নির্মাণ: ● যুলকারনাইনের আলোচনা করতে গিয়ে আল্লাহ্ পাক বলেন- আবার সে পথ চতলে লাগল। অবশেষে যখন সে দুই পর্বত প্রাচীরের মধ্যস্থলে পৌঁছল, তখন সেখানে এক জাতিকে পেল, যারা তাঁর কথা একেবারেই বুঝতে পারছিল না। তারা বলল: হে যুলকারনাইন! ইয়াজূজ ও মাজূজ দেশে অশান্তি সৃষ্টি করেছে। আপনি বললে আমরা আপনার জন্য কিছু কর ধার্য করব এই শর্তে যে, আপনি আমাদের ও তাদের মধ্যে একটি প্রাচীর নির্মাণ করে দেবেন। সে বলল: আমার পালনকর্তা আমাকে যে সামর্থ্য দিয়েছেন, তাই যথেষ্ট। অতএব, তোমরা আমাকে শ্রম দিয়ে সাহায্য কর। আমি তোমাদের ও তাদের মধ্যে একটি সুদৃঢ় প্রাচীর নির্মাণ করে দেব। তোমরা লোহার পাত এনে দাও। অবশেষে যখন পাহাড়ের মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থান পূর্ণ হয়ে গেল, তখন সে বলল: তোমরা হাঁপরে দম দিতে থাক। অবশেষে যখন তা আগুনে পরিণত হল, তখন সে বলল: তোমরা গলিত তামা নিয়ে এসো, আনি তা এর উপর ঢেলে দেই। অতঃপর ইয়াজূজ ও মাজূজ তার উপরে আরোহণ করতে পারল না এবং তা ভেগ করতেও সক্ষম হল না…[সূরা কাহফ, আয়াত ৯২-৯৭] কে সে যুলকারনাইন? ● তিনি হচ্ছেন এক সৎ ইমানদার বাদশা। নবী ছিলেন না (প্রসিদ্ধ মতানুযায়ী), পৃথিবীর প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ভ্রমণ করেছেন বলে তাঁকে যুলকারনাইন বলা হয়। অনেকে আলেকজান্ডারকে যুলকারনাইন আখ্যা দেন, যা সম্পূর্ণ ভুল। কারন, যুলকারনাইন মুমিন ছিলেন আর আলেকজান্ডার কাফের। তাছাড়া তাদের দুজনের মধ্যে প্রায় দুই হাজার বৎসরের ব্যবধান। (আল্লাহ্ই ভাল জানেন).
রোগী পরিচর্যার দো‘আ
রোগীর মাথায় ডান হাত রেখে বা দেহে ডান হাত বুলিয়ে দো‘আ পড়বে-
أَذْهِبِ الْبَأْسَ رَبَّ النَّاسِ وَاشْفِ أَنْتَ الشَّافِي لاَ شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ شِفَاءً لاَّ يُغَادِرُ سَقَمًا-
(১) উচ্চারণ : আযহিবিল বা’স, রব্বান না-স! ওয়াশ্ফি, আনতাশ শা-ফী, লা শিফা-আ ইল্লা শিফা-উকা, শিফা-আল লা ইউগা-দিরু সাক্বামা।
অনুবাদ : ‘কষ্ট দূর কর হে মানুষের প্রতিপালক! আরোগ্য দান কর। তুমিই আরোগ্য দানকারী। কোন আরোগ্য নেই তোমার দেওয়া আরোগ্য ব্যতীত; যা কোন রোগীকে ধোঁকা দেয় না’। [112]
(২) অথবা
لاَ بَأْسَ طَهُوْرٌ إنْ شآءَ اللهُ
‘লা বা’সা ত্বহূরুন ইনশা-আল্লাহ’। ‘কষ্ট থাকবে না। আল্লাহ চাহে তো দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবেন’। [113]
(৩) অথবা দেহের ব্যথাতুর স্থানে (ডান) হাত রেখে রোগী তিনবার ‘বিসমিল্লাহ’ বলবে। অতঃপর সাতবার নিম্নের দো‘আটি পাঠ করবে,
أَعُوْذُ بِعِزَّةِ اللهِ وَقُدْرَتِه مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ وَأُحَاذِرُ
আ‘ঊযু বি‘ইযযাতিল্লা-হি ওয়া ক্বুদরাতিহি মিন শাররি মা আজিদু ওয়া উহা-যিরু’ (আমি যে ব্যথা ভোগ করছি ও যে ভয়ের আশংকা করছি, তার অনিষ্ট হতে আমি আল্লাহর সম্মান ও শক্তির আশ্রয় প্রার্থনা করছি)’।
রাবী ওছমান বিন আবুল ‘আছ (রাঃ) বলেন, আমি এটা করি এবং আল্লাহ আমার দেহের বেদনা দূর করে দেন।[114]
(৪) অথবা সূরা ফালাক্ব ও নাস পড়ে দু’হাতে ফুঁক দিয়ে রোগী নিজে অথবা তার হাত ধরে অন্য কেউ যতদূর সম্ভব সারা দেহে বুলাবে। [115]
[113] . বুখারী, মিশকাত হা/১৫২৯, ‘জানায়েয’ অধ্যায়-৫, ‘রোগী পরিচর্যা ও তার ছওয়াব’ অনুচ্ছেদ-১।
[114] . মুসলিম, মিশকাত হা/১৫৩৩।
[115] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৫৩২, ‘জানাযেয়’ অধ্যায়-৫, অনুচ্ছেদ-১।
সোনা-রুপার যাকাত দেয়া ফরজ; ইরশাদ হয়েছে:
(وَٱلَّذِينَ يَكۡنِزُونَ ٱلذَّهَبَ وَٱلۡفِضَّةَ وَلَا يُنفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ فَبَشِّرۡهُم بِعَذَابٍ أَلِيمٖ ٣٤ ) [التوبة:34]
{এবং যারা সোনা ও রূপা পুঞ্জীভূত করে রাখে, আর তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে না, তুমি তাদের বেদনাদায়ক আযাবের সুসংবাদ দাও।} [সূরা তাওবা:৩৪]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘সোনা–রুপার মালিক যদি এ সবের হক আদায় না করে, তবে তা দিয়ে কিয়ামতের দিন আগুনের পাত তৈরি করা হবে, অতঃপর তা আগুনে গরম করা হবে এবং তা দিয়ে তার পার্শ্বদেশে, কপালে ও পিঠে ছেঁকা দেয়া হবে। পাত ঠান্ডা হয়ে গেলে আবারও তা গরম করে আনা হবে। আর এটা হবে এমন এক দিনে, যা হবে পঞ্চাশ হাজার বছরের পরিমাণ দীর্ঘ। বান্দাদের মাঝে শেষ ফয়সালা হওয়া পর্যন্ত এ প্রক্রিয়া চলমান থাকবে। ফয়সালা শেষ হলে তাদের একদলকে জান্নাতের ও অপর দলকে জাহান্নামের পথ দেখিয়ে দেয়া হবে।’ (বর্ণনায় মুসলিম)
সোনা-রুপার ওপর যাকাত ফরজ হওয়ার শর্তাবলী
১ -এক বছর অতিক্রান্ত হওয়া
২ – পূর্ণ মালিকানা
৩ – নিসাব পূর্তি
সোনা-রুপার নিসাব
১ – সোনার নিসাব বিশ দিনার তথা (৮৫) গ্রাম। একদিনার পরিমাণ = ৪.২৫ গ্রাম। অতএব যাকাতের নিসাব হবে: ৪.২৫*২০=৮৫ গ্রাম নিরেট সোনা।
রুপার নিসাব হলো দু’শ দিরহাম অর্থাৎ (৫৯৫) গ্রাম। রুপার এক দিরহামের পরিমাণ হলো ২.৯৭৫ গ্রাম, তাই রুপার নিসাব হবে ২.৯৭৫*২০০= ৫৯৫ গ্রাম নিরেট রুপা।
৩ -টাকাকড়ির যাকাত আদায়ের মুহুর্তে, সোনা অথবা রুপার মূল্যের ভিত্তিতে নির্ণয় করতে হবে। যদি টাকাকড়ি এ দুটির যেকোনো একটির নিসাবের সমান হয় তাহলে যাকাত ফরজ হবে।
উদাহরণত: যদি এক গ্রাম সোনার মূল্য ৩০ ডলার হয়, এবং কোনো ব্যক্তির কাছে অবশ্য প্রয়োজনীয় খরচের বাইরে (৮৫*৩০=২৫৫০) দু হাজার পাঁচশ পঞ্চাশ ডলার জমা থাকে এবং এর ওপর এক বছর অতিক্রান্ত হয়, তবে তাতে যাকাত ফরজ হবে।
সোন-রুপায় যাকাতের পরিমাণ
সোনা-রুপা ও টাকাকড়িতে ফরজ হওয়া যাকাতের পরিমাণ হলো রুবউল উশর অর্থাৎ (২.৫%)। সে হিসেবে প্রতি বিশ দিনারে যাকাত হবে অর্ধ দিনার। আর যা এর অতিরিক্ত হবে, তা কম হোক বা বেশি হোক, এ অনুপাতেই হিসাব করে যাকাত দিতে হবে।
রুপার ক্ষেত্রে প্রতি দু’শ দিরহামে পাঁচ দিরহাম যাকাত হিসেবে বের করতে হবে। আর যা এর অতিরিক্ত হবে তা এ অনুপাতে হিসাব করে যাকাত দিতে হবে। এর প্রমাণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী, ‘যদি তুমি দু’শ দিরহামের মালিক হও এবং এর উপর এক বছর পার হয়ে যায়, তবে তাতে পাঁচ দিরহাম দিতে হবে। আর সোনার ক্ষেত্রে যতক্ষণ তুমি বিশ দিনারের মালিক না হবে তোমাকে কিছু দিতে হবে না। তাই যখন তোমার কাছে বিশ দিনার হয়ে যাবে এবং এর ওপর এক বছর অতিক্রান্ত হবে তাতে অর্ধ দিনার যাকাত দিতে হবে। আর যা এর অতিরিক্ত হবে, তা সে অনুপাতে হিসাব করে যাকাত দিতে হবে।’ [বর্ণনায় আবু দাউদ]
একটি প্রায়োগিক উদাহরণ
এক ব্যক্তির কাছে (৯০০০) নয় হাজার ডলার রয়েছে এবং তা তার মালিকানায় থাকাবস্থায় এক বছর পার হয়েছে। এমতাবস্থায় কি তার উপর যাকাত ফরজ হবে?
এ ক্ষেত্রে প্রথমে আমরা সোনা অথবা রুপার আলোকে নিসাব হিসাব করব। আর তা হবে নিম্নরূপ:
নিসাব : পঁচাশি গ্রাম নিরেট সোনা
= ৮৫* যাকাত ফরজ হওয়ার দিন এক গ্রাম সোনার মূল্য। ধরে নিলাম যে তা ৩০ ডলার।
= ৮৫*৩০= ২৫৫০ ডলার।
তাহলে নিসাব হলো ২৫৫০ ডলার। অতএব উল্লিখিত ব্যক্তির সম্পদ নেসাব পরিমাণ হয়েছে এবং এর ওপর এক বছর অতিক্রান্তও হয়েছে। অতঃপর তার ওপর যাকাত ফরজ হয়েছে।
দ্বিতীয়ত: প্রদেয় যাকাতের পরিমাণ বের করব নিম্নবর্ণিতভাবে:
প্রদেয় যাকাতের পরিমাণ : ২.৫%
=৯০০০*২.৫স্ট১০০ = ২৫৫ ডলার.
তাহলে উল্লিখিত ব্যক্তির সম্পদে প্রদেয় যাকাতের পরিমাণ হলো ২৫৫ ডলার।
অলংকারের যাকাত
অলংকার দু’প্রকার: সোনা-রুপার অলংকার। সোনা-রুপা ব্যতীত অন্যকোনো ধাতুর অলংকার।
১– সোনা–রুপার অলংকার
প্রথম প্রকার: সঞ্চয় ও সংরক্ষণের জন্য তৈরিকৃত অলংকার অথবা এমন অলংকার যা ব্যবসার উদ্দেশে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ধরনের অলংকারে যাকাত দিতে হবে।
ব্যবহারের জন্য তৈরিকৃত অলংকার। এ প্রকৃতির অলংকারেও জিম্মাদারি থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য যাকাত প্রদান করা উত্তম। জনৈক নারী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এলেন। সাথে ছিল তার মেয়ে। মেয়ের হাতে সোনার দুটি পুরো চুড়ি ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন,‘তুমি কি এর যাকাত দাও? সে বলল,‘না।’ তিনি বললেন,‘তোমার কি ভালো লাগবে, যদি আল্লাহ তাআলা এ দুটির পরিবর্তে পরকালে তোমাকে দুটি আগুনের চুড়ি পরিয়ে দেন?’ বর্ণনাকারী বলেন ‘অতঃপর মেয়েটি চুড়ি দুটি খুলে ফেলল এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে সোপর্দ করল ও বলল,‘এ দুটি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্য।’ (বর্ণনায় আবু দাউদ)
আলেমদের কেউ কেউ অলংকারে যাকাত নেই বলে মন্তব্য করেছেন; তাদের যুক্তি অলংকার এমন সম্পদ নয় যা (লাভের আশায়) পরিবর্ধিত করার জন্য সংরক্ষণ করা হয়। বরং তা কেবল ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য রাখা হয়, পোশাক, ফার্নিচার ও ঘরের আসবাপত্রের মতোই। উপরন্তু অলংকার হলো সৌন্দর্য অর্জনার্থে নারীর প্রয়োজনীয় বিষয়। আর যাকাতের ক্ষেত্রে মূল বিবেচনার বিষয় হলো সম্পদের বর্ধনশীলতা, যা যাকাত প্রয়োগের জন্য জরুরি।
তবে সতর্কতার দাবি হলো সৌন্দর্যলাভ ও বৈধ ব্যবহারের জন্য তৈরিকৃত অলংকারের যাকাত দেয়া। যাকাতের জিম্মাদারি থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য এটাই উত্তম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,‘যাতে তোমার সন্দেহ লাগে তা পরিত্যাগ করে যা তোমার কাছে নিঃসন্দেহ মনে হয় তা ধরো।’(বর্ণনায় বুখারী)
২– সোনা–রুপা ব্যতীত অন্যকোনো অলংকারে যাকাত
যেমন ব্রোঞ্জ, মতি-মুক্তা ইত্যাদির ক্ষেত্রে যাকাত প্রযোজ্য হবে না, এসবের মূল্য যতোই হোক না কেন। তবে যদি ব্যবসায়িক উদ্দেশে ব্যবহৃত হয় তাহলে ব্যবসায়িক পণ্য হিসেবে তাতে যাকাত আরোপিত হবে।
Age Difference Calculator | Percentage Calculator | jobs in Delhi | Age Calculator
ReplyDelete